আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুঁজিবাজারের প্রভাব পড়ছে সমাজে, সংসারে : ভাঙছে পরিবার, সম্পর্ক

কিন্ত যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হীত স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিত, জানাও সে নরাধম জানাও সত্বর অতীব ঘৃনীত সেই পাষন্ড বর্বর

“অর্থ গেল, সংসারও গেল-ভাই আগে জানলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতাম না। লোভে পড়ে সর্বস্ব শেষ করে ফেলেছি। লাভ তো দূরের কথা, এখন আসলও শেষ হয়ে গেছে। ” কান্নাভেজা কণ্ঠে এ কথাগুলো বললেন যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা আব্দুল মোমেন। তিনি বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “নিজের গচ্ছিত টাকা ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে এক বছর আগে তিন লাখ টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলাম।

স্ত্রীকে কথা দিয়েছিলাম শেয়ারবাজার থেকে যে লাভ হবে, সে অর্থ দিয়ে তাকে বাড়ি বানিয়ে দেবো। আরো অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্ত সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। ” তিনি জানান, এখন তার রাতে ঘুম হয় না। স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে গেছে তিন মাস আগে।

তার দাম্পত্যজীবন এখন হুমকির মুখে। সোমবার শেয়ারবাজারের ব্যাপক পতনে দিশেহারা বিনিয়োগকারীদের কয়েকজন এমনই প্রতিক্রিয়া জানান। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “সর্বনাশা শেয়ারবাজার আমার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির জমি বিক্রয় করে নগদ পাঁচ লাখ টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলাম। কথা ছিল, শেয়ার বিক্রি করে যে লাভ হবে, সে লভ্যাংশ থেকে আমার স্ত্রীর অন্য দুই ভাই ও বোনকে পড়াশুনার খরচ বহন করা হবে।

” তিনি বলেন, “শেয়ার বিক্রি করে প্রথমে বেশ লাভ হয়েছিল। কিন্ত বেশি লাভের আশায় স্ত্রীকে রাজি করিয়ে সে লাভের টাকাও বিনিয়োগ করি। গেল বছর ডিসেন্বর মাস থেকে শেয়ারের অব্যাহত দরপতনে এখন আমার পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। চোখে অন্ধকার দেখছি। গতমাসে হৃদরোগে শ্বশুর মারা গেছেন।

এ মৃত্যের জন্য স্ত্রী আমাকে দায়ী করে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছে। অবস্থা এমন যে ১০ বছর সংসার করার পর এখন ডিভোর্সের দিকে চলে যাচ্ছে আমাদের দাম্পত্য জীবন। ” অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো: ওসমান আলী বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “বুড়ো বয়সে কারো প্রতি নির্ভরশীল হবো না ভেবে পেনশনের সব অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্ত পোড়াকপাল নিয়ে আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। স্ত্রীর চিকিৎসা করতে পারছি না।

নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এখন আমার কী হবে? আগে জানলে সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থ অভিশপ্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতাম না। ” রাজশাহীর সজিব চৌধুরী লেখাপড়া শেষ করে চাকরির চেষ্টা না করে, বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে শেয়ার ব্যবসায় এসেছিলেন বছর তিনেক আগে। শুরুতে লাভ হলেও ধরে রাখতে পারেননি সে টাকা। বেশি লাভ হলে মনের মানুষকে বিয়ে করে ঘরে তুলে আনার স্বপ্নে তার দিনগুলো কাটছিল ভালোই।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বিয়ের কথা বলেছিলেন তার প্রেমিকাকে। কিন্তু শেয়ারবাজার পতনের কারণে সজিবের স্বপ্ন ভেঙে যায়। সজিব বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “আমি আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে আরো কিছুদিন সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তার অভিবাবক আর সময় দিতে চাননি। গত মাসে ওর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে।

” সোমবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সজিব শেয়ার মার্কেটের সামনে বিক্ষোভ করেছে। খেয়েছে পুলিশের তাড়া। তিনি বলেন, “অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসা করাতে পারছি না। ” গোপীবাগের বাসিন্দা সজিবের বাড়িওয়ালা ইতিমধ্যে সময়মত বাড়িভাড়া না দিতে পারায় তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। পুঁজি হারিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে এমন অনেক অভিযোগ-অনুযোগ নিয়ে প্রতিদিন বিনিয়োগকারীরা হাহাকার করছেন।

অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এসইসি, ডিএসসিসহ সংশ্লিষ্টরা নানামুখী কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার পরও কেন দরপতন ঠেকানো যাচ্ছে না? এ প্রশ্নের উত্তর কেউ সঠিকভাবে দিতে পারছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে অর্থনীতিবিদদের প্রেসক্রিপশনও কাজে আসছে না। তাহলে পুঁজিবাজার কোন দিকে যাবে? তা কে নির্ধারণ করে দেবে? সরকার না বিরোধীদল? এ প্রশ্ন করেছেন বিনিয়োগকারীরা। জামিল আহমেদ বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেছেন, “সব হারিয়ে আমরা যখন পথে নেমেছি। তখন প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কতিপয় মন্ত্রী ও এমপি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে ঘিয়ের মধ্যে আগুন জ্বালানোর মতো অবস্থা হয়েছে।

যারা আমাদের পরিত্রাণের পথ দেখাবেন, তারাই এখন বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছেন। ” তিনি বলেন, “আমরা লাভ চাই না। সরকার আমাদের আসল ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করুক। ” বিনিয়োগকারী মাহবুব বলেন, “আমরা শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা চাই। সংসারে শান্তি চাই।

সব হারিয়ে আমরা এখন পথের বাসিন্দা হয়েছি। ” বরিশালের মাহবুব বলেন, “আমরা ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছি। এখন সব হারিয়ে ফেলেছি। এই নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে। স্ত্রীর সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পথে।

” তিনি বলেন, “শেয়ারবাজার ধংস হয়ে গেলে কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসবে। ” এতে করে দেশে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন। শেয়ারবাজারের ব্যাপক পতনে বিনিয়োগকারীদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ডিএসই কর্মকর্তা বজলুর রশিদ। তিনি বলেন, এতে করে পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হবে। তিনি জানান, শেয়ারবাজার নিয়ে প্রতিনিয়ত অনেক খবর আমাদের কাছে আসে, এর মধ্যে পারিবারিক কলহের খবর সবচেয়ে বেশি থাকে।

লিন্ক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.