আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুবক বয়সের বাত রোগ-এনকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস

প্রবাসী

(এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস)ANKYLOSING SPONDYLITIS কোমর ব্যাথার কারন অধিকাংশ ক্ষেত্রে অজানা। যে সমস্ত সুনির্দিষ্ট কারন আছে তার মধ্যে সবচে বেশী হল এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস রোগ। স্পন্ডাইলো(Spondylos) কথাটার অর্থ মেরুদন্ড। সেরোনেগেটিভ স্পন্ডাইলোয়ার্থ্রোপ্যাথী (Seronegative spondyloarthropathy)বাত রোগ সমুহের এক গ্রুপের নাম। প্রায় ৮থেকে ১০টা রোগ এই গ্রুপের মধ্যে পড়ে।

এই রোগ গুলোতে মেরুদন্ডের সাথে গিঠ এবং অনান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়ে থাকে। এদেরকে সেরোনেগেটিভ বলা হয় কারন বাত রোগের প্রধান পরীক্ষা RA Test এই রোগে নেগেটিভ থাকে রক্তে RA Factor থাকে না। কারনঃ- সঠিক কারন জানা নেই বংশগতঃ-এই রোগের বংশগত সুস্পষ্ট প্রভাব আছে । HLA-B27 নামক জিন(gene) পাওয়া যায় শতকরা ৯৫ ভাগের ও বেশী ক্ষেত্রে। লিঙ্গঃ-অনান্য বাত রোগ যেখানে মেয়েদের বেশী হয় এই রোগ আবার পুরুষদের বেশী হয়।

মহিলা পুরুষ আনুপাতিক হার প্রতি ৪ জনের তিন জন পুরুষ ১জন মেয়ে। বয়সঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুরুতে রোগীদের বয়স থাকে ৩০ এর নীচে। যদিও ৫০ এর বেশী বা ১৫ বছরের নীচেও দেখা যায় কখনো কখনো। এই দিক থেকে যদি কোন অল্প বয়সের পুরুষরোগী দীর্ঘকাল কোমর ব্যাথা তে ভুগে থাকেন তবে অবশ্যই এই রোগটা মাথায় রাখতে হবে। ইনফেকশানঃ- আমাদের অন্ত্রে থাকা ব্যাক্টেরিয়া “ক্লেবসিয়েল্লা”(klebsiella) সরাসরি না হোলেও কিছু ভুমিকা রাখে।

আমাদের একটা হাড় আরেকটা হাড়ের সাথে গিঠে দিয়ে জোড়া। আর গিঠে হাড় গুলো বিভিন্ন ধরনের রগ, ক্যাপ্সুল, লিগামেন্ট ইত্যাদি দিয়ে জোড়া থাকে। যেখানে হাড়ের সাথে এ গুলো জোড়া থাকে তাকে বলে “ এন্থেসিস”(Enthesis)। এই জোড়ার স্থান বা এন্থেসিস এর প্রদাহ হল এই রোগের প্রধান আক্রমন ক্ষেত্র(Enthesitis)। রোগের উপসর্গ এবং লক্ষনঃ- দীর্ঘমেয়াদী(chronic). রোগ এটি।

নিরাময়যোগ্য না হওয়ায় আজীবনের রোগ ও বটে। মাঝে মাঝে বাড়া কমা হোলেও একেবারে নির্মুল হয় না আবার জিবনের ঝুকি ও কম, রোগটা বাড়ে খুব আস্তে আস্তে বছরের পর বছর ধরে। কোমর ব্যাথাঃ-প্রধান লক্ষন। কোমরের গিঠ (Sacroiliac Joint)থেকে শুরু হয় রোগটা। অনান্য কোমর ব্যথাতে যেখানে কাজ় করলে বাড়ে এক্ষত্রে তা কাজ করলে ব্যথা কমে, এবং বিশ্রাম নিলে বাড়ে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যথা শুরু হয় শেষ রাতের দিকে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কোমর জাম মেরে ধরে থাকে। বেলা বাড়া ও হাটা চলা শুরু করলে ব্যাথা আস্তে আস্তে কমতে থাকে । কোমরের সবচে নীচের গিঠে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে তা উপরে ছড়িয়ে পড়ে। মেরুদন্ডের গীঠ গুলো একটার সাথে আরেকটা ফিউজড হয়ে পুরো মেরুদন্ডে এক সময় বাকানোর ক্ষমতা থাকে না,(Bamboo spine) এটা যখন বুকের গীঠে ছড়িয়ে যায় বুক ফোলানো এবং শ্বাস প্রশ্বাস ক্ষমতা হ্রাস পায়। এটি প্রধানত গিঠের রোগ হলেও অনান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও আক্রান্ত হতে পারে, সে হিসেবে এটা সারা শরীরের রোগ ও বটে।

যদিও কোমর ই আক্রান্ত হয় প্রথমে আস্তে আস্তে তা অনান্য গিঠ, চোখ,হার্ট ইত্যাদিতেও আক্রমন করতে পারে। অনান্য গীঠে যেমন ,উরসন্ধি বা হিপ জয়েন্ট(Hip Joint),হাটু(knee) আক্রান্ত হয় ২০-৩০% ভাগ ক্ষেত্রে। চোখ আক্রমন করে “আইরাইটিস”(Iritis) করতে পারে। হার্টের ভাল্ব(heart valve) আক্রান্ত হয় কচিৎ কদাচিৎ। ডায়াগনোসিসঃ- এক্স রে (X-Ray)এই রোগ ডায়াগনোসিসের প্রধান পরীক্ষা।

কোমরের এক্সরে তে “ স্যাক্রো ইলিয়াক’(Sacroiliac Joint) জয়েণ্ট এর পরিবর্তন এবং অনান্য উপসর্গ, লক্ষন মিলিয়ে ডায়াগনোসিস করা হোয়ে থাকে। অনান্য পরীক্ষাঃ- রক্ত পরীক্ষা তে ESR বেশি থাকে। HLA B27 সাধারন ভাবে প্রয়জনিয় না হোলেও এই পরীক্ষাটি ডায়াগনোসিস এ সাহায্য করে জয়েন্টের সি টি স্ক্যান(CT Scan) বা এম আর আই(MRI) (Sacro iliac joint), এক্স রে র অনেক আগে প্রাথমিক স্তরে রোগকে সনাক্ত করতে পারে। চিকিৎসাঃ- ব্যাথার ঔষধঃ- ব্যাথা বেশী থাকলেই ঔষধ খাওয়া উচিত। দীর্ঘদিন ঔষধ খাওয়া ভাল নয়।

যখন ব্যাথা বাড়ে বা অসহ্য হয় শুধুমাত্র তখন ই ঔষধ খাওয়া উচিত। অনেকের দীর্ঘদিন খাওয়ার দরকার পড়ে। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্ত প্রস্রাব পরীক্ষা করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। মনে রাখতে হবে ব্যথার ঔষধ শুধুমাত্র উপসর্গ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে রোগের মুলোৎপাটন করে না। স্টেরয়েড;-(Steroid) ব্যাথার নিয়ন্ত্রনে ব্যাবহার করা যেতে পারে স্বল্প সময়ের জন্।

একান্ত বাধ্য না হলে ব্যবহার করা উচিৎ নয় ফিজিওথেরাপীঃ- ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপী উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখতে পারে। পার্শ প্রতিক্রিয়াহীন এই চিকিৎসা ব্যথার ঔষধ খাওয়া থেকে দূরে রাখতে পারে। ব্যায়ামঃ- কোমরের ব্যায়াম এই রোগের জন্য অতি অবশ্য গুরুত্বপুর্ন। বলা হয় ভাত খেতে ভুলে যেতে পারেন ব্যায়াম করতে ভুলবেন না। নিয়মিত ব্যায়াম জয়েন্ট ফিউজড হয়ে যাওয়া রোধ করে গীঠের স্বাভাবিক চলাচল বজিয়ে রাখতে গ্রুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে।

রোগ নির্মুলের ঔষধঃ- সালফা স্যালাজিন(sulphslazine) । এই ঔষধটি রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে অনেক ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিন খাওয়ার দরকার পড়ে। এই ঔষধটির পার্শ প্রতিক্রিয়া অনেক। শুধুমাত্র ডাক্তারের তত্বাবধানে এবং মাঝে মাঝে রক্ত প্রস্রাব পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

কিডনি এবং লিভারের উপরের পার্শ প্রিতিক্রিয়া সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। নতুন ঔষধঃ- ইদানিং কিছূ নতুন এবং বেশী কার্যকরি ঔষধ পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে আছে এটানারসেপ্ট(Etanercept), ইনফ্লিক্সিমাব(Infliximab), ইত্যাদি। ঔষধ গুলো অত্যন্ত দামী। বছরে কয়েক লক্ষ টাকা দরকার পড়ে এবং আমাদের দেশের সাধারনের নাগালের বাইরে।

রোগীর শিক্ষাঃ- রোগটি সম্পর্কে সম্যক ধারনা, কিভাবে কোমরের যত্ন নিতে হবে ইত্যাদি রোগীকে শিখিয়ে দেওয়া ডাক্তারের কর্তব্য। ঔষধ ব্যায়াম ইত্যাদিতে রোগ নির্মুল না হলেও রোগী সুস্থ্য থাকতে পারেন অনেক দিন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।