https://www.zulutradesforex24.zulutrade.com
বর্তমান বাজারকে কি পতনশীল বাজার (Bear market) বলা যায়?
==========================================
শেয়ারবাজারে বর্তমানে আমরা এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। বিয়ার মার্কেটের সমস্ত চিহ্ন (signs) দিনে দিনে পরিস্ফুট হতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান বাজারকে নিশ্চিতভাবেই একটি বিয়ার মার্কেট বলা যায়।
বাজারের পতনের হার অনুযায়ী বিয়ার মার্কেটকে আমরা দুইভাগে ভাগ করতে পারি-
১। চক্রানুক্রমিক পতনশীল বাজার (Cyclical Bear Market) এবং
২।
চক্র নিরপেক্ষ পতনশীল বাজার (Secular Bear Market)।
Barton Biggs তার বিখ্যাত বই Hedgehogging এ এই দুইটি বিয়ার মার্কেটের চরিত্র বিশ্লেষন করেছেন এইভাবে-
"To me, a secular bear market is a decline in the major stock averages of at least 40% - and considerably more in secondary stocks - where the decline lasts at least three to five years. The fall is then followed by a long hangover that drags on for a number of years as the excesses are purged. There can be cyclical bull markets during this period, but it will be a long time before a new secular bull market begins in which the popular averages exceed the old highs and climb towards new peaks.
By contrast, a cyclical bear market is a fall of at least 15% but less than 40% that rarely lasts more than a year. A panic is a very short, sharp break. Length is an important part of the secular bear market definition, because time and sustained pain are what alter behavior patterns and change society."
বিয়ার মার্কেট বিশেষজ্ঞ Uncle Harry Schultz তার বিখ্যাত গ্রন্থ "After A Crash: Bear Market Money Making" এ বিয়ার মার্কেটের চরিত্র তুলে ধরেছেন এইভাবে-
"As a loose rule of thumb, you can say that historically most stocks lose half their value in the average bear market".
বিয়ার মার্কেটের চিহ্নসমুহ( Signs of a Bear market):
====================================
১। বিয়ার মার্কেটে উত্থানের চেয়ে পতন বেশী হবে। সূচক ১০০০ পয়েন্ট উঠলে ১২০০ পয়েন্ট নামবে, যখন পুর্ববর্তী Low এর চেয়ে পরবর্তী Low বেশী হবে এবং পুর্ববর্তী High এর চেয়ে পরবর্তী High কম হবে
২। বিয়ার মার্কেটের চিহ্নসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল- টার্নওভার দিন দিন কমে যাওয়া।
মার্কেট যতই পড়তে থাকবে, টার্ণওভার ও ততই কমতে থাকবে। মাঝে মধ্যে দুই একদিন এভারেজ টার্নওভার দেখা যাবে, কিন্তু তা স্থায়ী হবার সম্ভাবনা কম।
৩। পেপার পত্রিকায় তথাকথিত মার্কেট এক্সপার্টদের বক্তব্য বিবৃতি কমে আসবে, পত্রিকাগুলো শেয়ারবাজারের খবর খুব গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করবে না।
৪।
সাধারন বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে কমন প্রশ্ন হবে- "এখন কি করবো?" বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গাটি নড়বড়ে হয়ে গেলে, টার্ণওভারের উলটা চিত্র দেখা যাবে। অনেক বেশী ভলিউমে ট্রেড হবে কিন্তু সর্বনিম্ন দামে সবাই শেয়ার বিক্রি (Trigger Sell) করে বাজার থেকে বের হয়ে যেতে চাইবেন। কিন্তু তখন শেয়ার কেনার জন্য বলতে গেলে লোকই পাওয়া যাবে না। যারা মার্জিন লোন নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন, তারাও আতংকে ব্যাপকহারে বিক্রি শুরু করে দেবেন। যাদের কাছে নগদ টাকা আছে তারাও শেয়ার না কিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করবেন।
বাজার উঠার কোন দৃশ্যমান চিহ্ন খুব দ্রুত পরিলক্ষিত হবে না।
৫। দীর্ঘমেয়াদী বিয়ার মার্কেটের আরেকটি লক্ষন হল- শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত হবে না, সুযোগ বুঝে শেয়ারের দাম বেড়ে আবার অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়বে। ফলে নিশ্চিতভাবে শেয়ারের দাম আবার পড়তে থাকবে। শেয়ারের দাম যতদিন অতিমূল্যায়িত থাকবে মন্দাও তত দীর্ঘস্থায়ী হবে।
(গত ১০ ও ২০ জানুয়ারী ২০১১ এর পরবর্তী শেয়ারবাজারের গতিপ্রকৃতি লক্ষ করুন)।
৬। তারল্য সংকট যত বেশী হবে বাজারে মন্দাও তত দীর্ঘস্থায়ী হবে। ব্যাংকগুলো আমানতের উপর আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন সুদ/লাভ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এফডিআর এর সুদের হারও বাড়ানো হয়েছে।
এর ফলে শেয়ারবাজারে সাধারন বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে ওইসব জায়গায় খাটাবে, ফলে শেয়ারবাজারে তারল্য সংকট আরো প্রকট হবে। মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকার হাউজগুলোকে তাদের ক্লায়েন্টকে মার্জিন ঋন প্রদানের ক্ষেত্রে কোন সীমারেখা রাখা হয়নি। তারল্য সংকট থাকলে অসীম ঋন প্রদানের ক্ষমতা থাকলেও তা দেওয়া সম্ভব হবে না। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো বোনাস বা রাইট দিতে পারে না। ফলে তারা নগদ লভ্যাংশ বন্টন করে দিলে অর্থসংকটে পড়বে।
৭। সাধারন বিনিয়োগকারীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। রাস্তায় নামে মিছিল অবরোধ করলেও খুব ভালো ফল আসবে বলে মনে হয়না। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে যা যা করার প্রয়োজন, তা তা করার ঘোষণা ইতিমধ্যেই দেয়া হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এসব সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখতে অনেক সময় লাগবে।
বিয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ কৌশলঃ
=======================
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে হলে কিছু কৌশল প্রয়োগ করতে হয়। উঠতি মার্কেটে (Bull Market) বিনিয়োগ করে যেমন সহজে লাভ পাওয়া যায়, পড়তি মার্কেটে(Bear Market) তেমন লাভ পাওয়া যায়না। আপনি কৌশলী না হলে আপনার কষ্টার্জিত বিনিয়োগ থেকে লাভ তো আসবেই না, বরং আপনি চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। কিন্তু মূল সমস্যা হল আমরা অনেকেই পড়তি মার্কেটে যথাযথ জ্ঞান ও প্রস্তুতি না নিয়েই বিনিয়োগ করে থাকি, যা প্রকারান্তরে আমাদের পুরো পুঁজি জলাঞ্জলি দেয়ারই শামিল।
বিয়ার মার্কেটে সম্ভাব্য ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য অনেক দেশেই শর্ট সেলিং ( Short selling), অপশনস ও ফিউচার্স ট্রেডিং ব্যবস্থা চালু (Options and Futures Trading) থাকলেও আমাদের দেশে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বিয়ার মার্কেটে টিকে থাকা বেশ কঠিন।
তাই এ মার্কেটে টিকে থাকার জন্য কিছু কৌশল নিম্নে আলোচনা করছি।
১। বটম আউট বিনিয়োগ (Bottom Out Investment):
==================================
বিয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করতে হয় বটম থেকে অর্থাৎ যেখান থেকে মার্কেট ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস পাওয়া যায়। সাধারণ বিয়ার মার্কেট (Typical Bear Market) এর বটম পাওয়া যায় ইংরেজি W এর দ্বিতীয় V এর নিচ থেকে। এখানে অবশ্য একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া দরকার, W এর দ্বিতীয় V এর নিচ থেকে সূচক উঠতে শুরু করার পর যদি দ্বিতীয় V এর ডানের সর্বোচ্চ বিন্দুতে উঠার আগেই আবার নিম্নগামী হতে শুরু করে তাহলে অন্য আরেকটি W তৈরি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
W এর ডানের সর্বোচ্চ বিন্দু থেকে সূচক যদি উঠতে শুরু করে তাহলে বাজার বিয়ার থেকে ধীরে ধীরে বুল এ প্রবেশ করছে বলে ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে ও নিশ্চিত হওয়া দরকার। যদি পরবর্তী পতন W এর ডানের শেষ বিন্দুর উপরে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন মার্কেট আর নিচে নামার সম্ভাবনা নেই। সূচক ২০০ Weighted Moving Average এর নিচে অবস্থান করলে বাজার থেকে বের না হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নেই।
২।
ট্রেন্ড এর সাথে তাল মিলিয়ে চলা( Go with the trends):
=======================================
বিয়ার মার্কেটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হল ট্রেন্ড এর সাথে তাল মিলিয়ে চলা( Go with the trends)। অপরিণামদর্শীরা এবং অতি আশাবাদীরা আপনাকে শেয়ার ধরে রাখার জন্য এবং প্যানিক সেল না দেওয়ার জন্য বলবে। কিন্তু পরের দিন কি ঘটবে তা যদি আপনি না জানেন বা অনুমান করতে না পারেন তাহলে সমূহ ক্ষতির আশংকা আছে। আমি প্যানিক সেল দেওয়ার জন্যও বলছি না বা শেয়ার ধরে রাখার জন্যও বলছি না। আমি শুধু বলছি ট্রেন্ড এর সাথে তাল মিলিয়ে চলুন।
বাজার যখন কিছুটা উঠে আবার নিম্নগামী হতে শুরু করবে তখন আপনার শেয়ার বিক্রি করে দিন। তাতে কিছু শেয়ারে আপনি লাভ পেতে পারেন আবার কিছু শেয়ারে লোকসানের মুখোমুখী ও হতে পারেন। বিয়ার মার্কেটে কয়েকদিনের পতনের পর যখন বাজার আবার উপরের দিকে উঠতে শুরু করে তখন যদি আপনার কোন শেয়ার দাম হারায় তাহলে তা দ্রুত বিক্রি করে দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। বাজার উঠতে শুরু করার পর বাজারের সম্ভাব্য গন্তব্য অনুমান করুন এবং বিক্রি করতে শুরু করুন। বাজার যখন পড়তির দিকে যেতে শুরু করবে তখন আপনার হাতে কোন শেয়ার নেই।
বাজার পড়ছে, আপনি পর্যবেক্ষন করছেন। বাজার পড়তে পড়তে একসময় পতনের গতি কমে যাবে এবং আবার ঊর্ধমূখী প্রবণতার সংকেত দেখাবে। এ সময়ে আপনি আপনার বিনিয়োগ শুরু করুন। তাহলে মোদ্দা কথা দাঁড়াচ্ছে যে, বাজার যখন পড়বে তখন আপনি কেনার মওকা খুঁজবেন আর বাজার যখন উঠবে তখন আপনি বিক্রি করে লাভ নিশ্চিত করবেন।
বলা সহজ কিন্তু করা কঠিনঃ
===================
আমি যা বললাম তা বলা যত সহজ করা তত সহজ নয়।
আপনি কিভাবে বুঝবেন বাজার কখন পড়বে বা কখন উঠবে? একটু সচেতন হলে বা নিয়মিত চার্ট দেখলে বিষয়টি বোঝা তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। যারা চার্ট বোঝেননা তাদের জন্য পরামর্শ হল, নিয়মিত ইনডেক্স দেখুন। যে কোন একটি পতনের নিম্নসীমা থেকে প্রতিদিন সূচক কি পরিমাণ উঠে বা নামে তা দেখুন। সাথে টার্ণওভার নোট রাখুন। যদি দেখেন সূচকের সাথে টার্ণওভার ও বাড়ছে তাহলে ধরে নেবেন মার্কেট উঠতে থাকবে।
আর যদি সূচক বাড়লেও টার্ণওভার কমতে থাকে তাহলে ধরে নেবেন মার্কেট নিম্ন মুখী হবে।
যারা চার্ট বুঝতে পারেন তাদের জন্য পরামর্শ হল, W Formation এর দ্বিতীয় V এর সর্বনিম্ন বিন্দুতে বিনিয়োগ করুন এবং দ্বিতীয় V এর ডানের সর্বোচ্চ বিন্দুতে বিক্রি করুন এবং পূণঃ বিনিয়োগের জন্য পরবর্তী V এর সর্বনিম্ন বিন্দুতে সূচক পৌঁছা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। Fibo retracement কিংবা Elliott Wave এর মাধ্যমেও আপনি বাজারের বটম খুঁজে নিতে পারেন।
কিভাবে বুঝবেন বাজার ঘুরে দাঁড়াবে?
==========================
পূর্ববর্তী পতনের সর্বনিম্ন অবস্থান থেকে বাজার নিচে নামার অর্থ হল বাজার যে কোন মূহুর্তে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এখানেও লক্ষ্য করবেন পতনের হার কিছুটা কমে এসেছে।
একইসাথে টার্ণওভার কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। এই ব্যাপারটিও যদি আপনার কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়, তাহলে পূর্ববর্তী সর্বনিম্ন পতনের অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে আপনার বিনিয়োগ শুরু করুন এবং যেখানে বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সেখানে বিনিয়োগ বন্ধ করুন।
অর্থ ব্যবস্থাপনা ( Money Management) :
===========================
বিয়ার মার্কেটে কখনো আপনার পুরো পুঁজি বিনিয়োগ করবেন না। মার্জিন লোন থাকলে তা সমন্বয় করে নেওয়াই ভালো। নিরাপত্তার জন্য আমি এক তৃতীয়াংশ বিনিয়োগ করার জন্য এবং দুই তৃতীয়াংশ ক্যাশ রাখার জন্য অনুরোধ করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।