মানবতাই ধর্ম !
সেদিন অফিসে আমার কলিগ হাসান ভাই আমাকে একটি কাহিনী শোনালেন। যার সংক্ষেপ হল উনার চাচাতো ভাই তার বউকে ডিভোর্স করেছে কারণ তার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিল। এখন হাসান ভাই যেটা চাচ্ছেন তা হল উনি উনার চাচাতো ভাইয়ের বউকে বিয়ে করবেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনার চাচাতো ভাইয়ের বউ যদি সত্যিই অপরাধী হয়ে থাকে আর পাত্রী রাজি কিনা তাও তো একটা ব্যাপার। আবার আপনাদের পরিবারেও এ নিয়ে মনমালিন্য হতে পারে।
জবাবে হাসান ভাই আমাকে যে চমকপ্রদ উত্তরটি দিলেন তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বললেন,উনার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে নাকি উনারই অবৈধ সম্পর্ক চলে আসছিল। আমি তখন বললাম, আপনার চাচাতো ভাইয়ের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করলে উনি যে আবারো পরকীয়ায় জড়াবেন না তার কী নিশ্চয়তা আছে? উনি তখন আমার ডেস্ক থেকে উঠে উনার ডেস্কে বসে অফিসের কাজ কর্ম সব ফেলে গভীর চিন্তায় ডুব দিলেন। ছোটবেলা থেকেই আমি প্রতিনিয়তই পরকীয়া সম্পর্কের কথা শুনে আসছি। কখনো কখনো দেখারও ‘সৌভাগ্য’ হয়েছে।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু নারীদের দোষ দেয়া হয়। কখনো চিন্তা করা হয় না নারীটির স্বামীর কি এই ক্ষেত্রে কোন দোষ আছে বা যার সাথে পরকীয়া করছে সেই লোকের কোন প্রলোভন কিংবা হুমকির ভয়ে সে এই রকম করছে কিনা। সমাজে নারীকে অনেক পুরুষই পণ্য ভেবে ব্যবহার করে, ব্যবহার করার সামগ্রী ভাবে। নারীর প্রয়োজনীয়তা তারা মানলেও স্বীকারে অপারগ। এইসব দার্শনিক ধরণের কথা ভাবতে ভাবতে আমি অফিস শেষে বাসায় ফিরে দেখি আমার স্ত্রী বাসায় নেই ।
কী ব্যাপার রাত নয়টা বাসায় নেই আবার আমার ছেলেটাকে রেখে গেছে? বাসায় আমাদের চারজনের বাস। আমি,আমার স্ত্রী,আমাদের ছেলে আর কাজের মেয়েটা। কাজের মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার তোমার আপা কই? ও বলল-বাইরে যাওয়ার সময় আমারে কয় নাই । আমি ওকে মোবাইলে ফোন করলাম রিসিভ করছে না। কই গেল,আমাকে না বলে কোথাও যায় না।
ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম,বাবা তোমার মা কয়টার সময় বেরিয়েছে? ছেলে জানাল দেড়-দুই ঘন্টা তো হবেই। আমি রেগে মেগে টং হয়ে বসে টিভি দেখতে লাগলাম। কাজের মেয়ে এসে চা দিয়ে গেল। রাগের চোটে তাও খেলাম না । আমার স্ত্রী আসল রাত দশটার পর।
জিজ্ঞেস করলাম কোথায় গেয়েছিলে? বলল বাবুর জন্য জামা কিনতে গিয়েছিলাম। আমি ওর সাথে কোন ব্যাগই দেখলাম না। আমি জিজ্ঞেস করলাম ব্যাগ কই? ও বলল কোন জামাই পছন্দ হয়নি তাই কিনেনি। আমার সাথে সাথে মনে পড়ল হাসান ভাইয়ের বলা ঘটনাটি। আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেল।
তবে কি তাহলে আমার স্ত্রীও.....। আমি আর কিছু না ভেবেই ছেলের সামনেই ওর মাকে চড় মেরে বসলাম। চেঁচাতে লাগলাম-এতো দেরী করে কার সাথে শুয়ে এসেছ এখন আমাকে মিথ্যা বলছ। যেন আমি কিছুই বুঝিনা,বেশ্যা কোথাকার। আমার স্ত্রীকে আমি কখনোই মারিনি।
ও যেন আকাশ থেকে পড়েছে এমন চেহারা করে রাখল। বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করল না। আমি বালিশ নিয়ে ছেলের রুমে এসে না খেয়েই শুয়ে পড়লাম। সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগলাম। কাজের মেয়েকে বললাম গরম পানি করে দিতে।
আমি রাতের অপকর্ম সকালে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে চাইলাম। ভাবতে লাগলাম-শেষ পর্যন্ত আমার বউও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ল। কার সাথে ছিল এতোটা সময়? আমি ভাবতে লাগলাম। অফিসে গিয়ে কাজেও মনোযোগ দিতে পারলাম না। হাসান ভাইকে দেখে আমার ঘৃণায় বমি আসতে লাগল।
খিস্তি দিতে লাগলাম মনে মনে-শালার লুইচ্চা,আরেকজনের বউরে ভাগায় নেস,মাদারচোত কোথাকার। বাসায় ফিরলাম বেশ রাত করে,ইচ্ছে করেই বাইরে খেয়ে নিলাম। ওই বেশ্যা মাগিটার হাতে কিছু খাওয়ার ইচ্ছাই নাই আমার। আজকেই ঘর থেকে বের করে দিব। বাসায় পা দিতে কোলাহল।
এতো মানুষ আসল কোথা থেকে চিন্তা করে বের করতে পারলাম না। আমার মা,বাবা,বড় ভাই, তার পরিবার,পাশের বাসার ভাই,ভাবিসহ পুরো এপার্টমেন্টের মানুষজনে গিজগিজ করছে আমার ফ্ল্যাট। কিছু হয়নি তো? একটা আশঙ্কা নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই চিৎকার- হ্যাপি বার্থডে টু ইউ! আমি স্তম্ভিত হয়ে পড়লাম। আমার যে আজকে জন্মদিন তা মনেই ছিল না। ব্যাপারটা কী? এতো আয়োজন কে করল? দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে আমার স্ত্রী লুনা,হাতে সুন্দর একটা ফুলের তোড়া।
আমার জন্য নাকি? বুঝতেছি না কিছুই। কালকে রাতের ঘটনার পর ওর তো এমনভাবে সাজার কথা না। লুনার পড়নে এই বছর ম্যারেজ ডে তে আমার কিনে দেয়া জামদানি। মুখটা মলিন হয়ে আছে,গত রাতের ঝরের রেশ এখনো কাটেনি মনে হয়। আমি মুখে একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে ওর কাছে যেতেই পাশের ফ্ল্যাটের ভাবি আমাকে আস্তে করে বলল- ভাই একটু শুনে যান।
আমি একটু সাইডে যেতেই তিনি আমাকে বললেন -গতরাতে লুনা আমাকে সারপ্রাইজ দিতে এই সব কিনতে গিয়েছিল, কেকের অর্ডার দিয়ে আমার জন্য উপহার কিনতে গিয়েই ওর দেরী হয়েছিল। আমি বিষন্ন মুখে এইসব শুনলাম। লুনার কাছে যাওয়া মাত্রই প্যাকেট থেকে একটা দামী সিল্কের পাঞ্জাবি বের করে দিয়ে বলল-এটা তোমার জন্য,পছন্দ হয়েছে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।