শেয়ারবাজার কেলেংকারির ঘটনায় বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালু ও বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগপন্থি ব্যবসায়ী গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। কেলেংকারির হোতাদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ফালু ছাড়া বিতর্কিত ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদলও রয়েছেন। তাদের বন্ধু আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ ব্যবসায়ীও এদের মধ্যে রয়েছেন। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা প্রাথমিক তদন্তে শেয়ারবাজারের দরপতনের সঙ্গে তাদের সংশিস্নষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। এ কারণেই লুৎফর রহমান বাদলকে গত রবিবার সিঙ্গাপুর পালিয়ে যাওয়ার সময় বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়।
ফালু বর্তমানে ব্যাংককে অবস্থান করলেও সেখানে তার কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করছে সরকার।
গত ২০ জানুয়ারি শেয়ারবাজারের সবচেয়ে বড় ধসের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। পাশাপাশি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছে।
মোসাদ্দেক আলী ফালু, লুৎফর রহমান বাদলসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। বছর কয়েক আগেও অপরিচিত লতিফ সিকিউরিটিজের কর্ণধার বাদল বিএনপির সময়ে ফালু আর বর্তমান সরকারের সময়ে প্রভাবশালী এক নেতার হাত ধরে বনে যান দেশের অন্যতম ধনকুবের।
দুই বছরে জিএমজি এয়ারলাইন্স, ঢাকা ওয়েস্টিনসহ প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম মালিক হয়েছেন লুৎফর রহমান বাদল। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিজনেস ক্যাপিটাল শেয়ার ও সিকিউরিটিজ, ইউনিয়ন ইনসুরেন্স, এলআর এ্যাগ্রো ফার্ম, ঢাকা-সাংহাই সিরামিক, এনটিভি, আরটিভি ও নুরানী হিমাগার। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানকেই তিনি শেয়ারবাজারের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। আর ইচ্ছামতো বাজার নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন। এভাবেই সম্প্রতি এই চক্রটি প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজার থেকে হাতিয়ে নিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
জানা গেছে, ঘনিষ্ঠ হওয়ায় মোসাদ্দেক আলী ফালুই মূলত এই চক্রের শীর্ষ আওয়ামীপন্থি এক ব্যবসায়ীকে বুঝিয়েছিলেন বাদল শেয়ারবাজার খুব ভালো বুঝেন। সূত্র জানায়, মূলত লুৎফর রহমান বাদলই সক্রিয়ভাবে সব কাজ করে থাকেন। পেছন থেকে তাকে সমর্থন দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স করা লুৎফর রহমান বাদলের রয়েছে অবিশ্বাস্য রকম ম্যানেজিং ক্যাপাসিটি। বর্তমানে ফালুসহ আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে নিয়ে মিডিয়ায়ও বিনিয়োগ করছেন তিনি।
অন্যদিকে একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী ফালু ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিব। পরে হলেন রাজনৈতিক সচিব। এরপর বিস্ময়করভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীকে সঙ্গে পাওয়ায় সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন তিনি। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, লুৎফর রহমান বাদল বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে নানা ধরনের প্রলোভন দিয়ে শেয়ারবাজারে আনেন।
এক ব্যবসায়ী বলেন, ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে ৮০০ কোটি টাকা রিটার্ন দেয়া হবে এই বলে তাকে প্রলোভন দিয়েছিলেন বাদল। ওই ব্যবসায়ীর দাবি, এই সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি টাকা আয় করছে ফালু-বাদলদের এই চক্রটি। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সঙ্গে থেকে তারা এই সুবিধা নিচ্ছেন। এদের সঙ্গে আছেন শেয়ারবাজার-সংশিস্নষ্ট সাবেক এবং বর্তমান কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চক্রটি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে হুমকি-ধামকি দিয়েও সুবিধা আদায় করে থাকে।
মহাজোট সরকার আসার পরপরই তারা চাপ দিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের চার পরিচালক ইয়াসিন আলী, মুরাদ ইব্রাহিম, তারেক চৌধুরী ও নাসিরউদ্দিনকে পদত্যাগে বাধ্য করে। এ ঘটনার পরপরই আইএফআইসি ব্যাংকের অমিত ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন লুফর রহমান বাদল। কিন্তু সব ক্ষমতা চলে যায় মোসাদ্দেক আলী ফালুর হাতেই। এই চক্রের অনেক অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রমাণ এখন গোয়েন্দাদের হাতে। এ নিয়ে আরও খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
যে কোন সময় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী এখন বিষয়টি জানেন বলে সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।