আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফালু আটক কিন্তু ধুরন্ধর সাকাচৌ না আবার অল্পেই ছাড়া পেয়ে যায়!

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

সকাল থেকে নানারকম খবর চাউর হওয়ার পর শেষমেশ গতকাল রোববার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহচর ও সাবেক রাজনৈতিক সচিব, ঢাকা-10 আসনের সাবেক এমপি, দৈনিক আমার দেশ এবং টিভি চ্যানেল এনটিভি ও আরটিভির স্বত্বাধিকারী মোসাদ্দেক আলী ফালুকে যৌথবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। খালেদা জিয়ার একানত্দ আস্থাভাজন হিসেবে খ্যাত মোসাদ্দেক আলী ফালু গতকাল রাত সাড়ে 9টার পরে বনানীর হাওয়া ভবন থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার পথে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে নিয়ে যায়। ফালু হাওয়া ভবনে গিয়েছিলেন দলীয় কিছু কাজকর্ম শেষ করার জন্য। সেখানে তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেন।

এ সময় তিনি জানান, যৌথবাহিনী তাকে অনুসরণ করছে এবং তিনি তাদের আটক তালিকার অন্যতম টার্গেট। এরপর ফালু হাওয়া ভবনে বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়া ও খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমাদের সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়ে আসার পরেই তাকে আটক করা হয়। যৌথবাহিনীর র্যাব সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকেই ফালুকে যৌথবাহিনী অনুসরণ করতে থাকে। কিন' তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতে অংশ নেওয়ায় সে সময় তাকে আটক করা যায়নি।

এ পর্যায়ে ফালু নিজেও যৌথবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু প্রয়োজনীয় কাজকর্মের জন্য তাকে সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। শেষমেশ রাতে হাওয়া ভবনে বৈঠক শেষে বের হওয়ার পর তাকে আটক করা হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চার্জশিটভুক্ত আসামি, সন্ত্রাসী ও অস্ত্র চোরাকারবারিদের গডফাদার হিসেবে বহুল আলোচিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) 5 বছর 8 মাস পরে আবারো গ্রেপ্তার হলেন। এ নিয়ে সাকা চৌধুরী তার জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার হলেন। বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাজনীতিতে নানা ধরনের কূৎসিত উক্তির জন্যে যথেষ্ট কুখ্যাতি অর্জন করেছেন।

চট্টগ্রামে যদি কোনো যুদ্ধাপরাধী বা স্বাধীনতাবিরোধী জীবিত রাজনীতিকের নাম নিতে হয়, তাহলে প্রথমেই সাকা চৌধুরীর নাম চলে আসে। চট্টগ্রামবাসীর কাছে সাকা অনেক অঘটন ও ষড়যন্ত্রের নেপথ্য খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত। 1971 সালে চট্টগ্রামের রাউজানে শিক্ষাব্রতী নতুন চন্দ্র সিংহসহ আরো অনেককে হত্যা, অগি্নসংযোগ, লুটপাটসহ নানা ধরনের অপকর্মের মধ্য দিয়ে তৎকালীন তর"ণ সাকা চৌধুরীর অপকর্মের হাতেখড়ি হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুধুমাত্র রাউজান থানাতেই সাকা চৌধুরীসহ তার সহযোগী অন্যদের বির"দ্ধে 6টি মামলা হয়। মামলাগুলো 41(1)72, 4(3)72, 9(3)72, 18(4)72, 4(4)72 ও 5(4)72।

এ মামলায় তার বির"দ্ধে চার্জশিটও দেওয়া হয়েছিল। কিন' তার পক্ষ থেকে এর বির"দ্ধে হাইকোর্টে রিট করে মামলাগুলো স্থানানত্দর করা হয়। 1998 সালের 15 জুনে এসব মামলা পুনর"জ্জীবিত করে তদনত্দের আদেশ দেওয়া হয়েছিল সিআইডিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। কিন' সিআইডির তদনত্দকারী অফিসার মামলার কোনো নথিপত্র না পাওয়াতে মামলা আর এগোয়নি অর্থাৎ মামলার নথিপত্রও গায়েব করে ফেলা হয়েছে। 1996 সালের 14 অক্টোবর সাকা চৌধুরীর মালিকানাধীন জাহাজ এমভি কিউসিটিল থেকে তৎকালীন বাজার মূল্যে প্রায় আড়াই কোটি টাকার স্বর্ণের বার আটক করা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে।

318টি স্বর্ণের বারের প্রতিটির ওজন ছিল 10 তোলা করে। ওই মামলায় তার প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাজা হলেও সাকা চৌধুরীর কিছুই হয়নি। স্বর্ণ চোরাচালানের ওই চাঞ্চল্যকর মামলাতেও কৌশলে রেহাই পেয়ে যান সাকা চৌধুরী। 2001 সালের 29 মে বিকালে চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জে তাদের পৈত্রিক মালিকানাধীন বিশাল বাড়ি 'গুডস হিল'-এর সামনে সাকা চৌধুরীর ক্যাডারদের গুলিতে নিহত হয় ছাত্রদলের ক্যাডার শহীদুল আলম নিটোল। ঘটনার পরপরই সাকা চৌধুরী তার 6 ক্যাডারসহ ওই বাড়ি থেকে একটি পাজোরো জিপে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে পিসত্দল ও গুলিসহ আটক করে।

যে পিসত্দলটি পাওয়া যায় তার কাছ থেকে সেটির লাইসেন্সের মেয়াদ 2000 সালেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া নিয়মানুযায়ী তিনি 50 রাউন্ড গুলি রাখতে পারতেন, কিন' তার কাছে তখন 61 রাউন্ড গুলি পাওয়া গিয়েছিল। সেই প্রথমবার গ্রেপ্তারের পর হাউমাউ করে কেঁদেছিল সাকা চৌধুরী। সে সময় পুলিশ তার বাড়ি তল্লাশি করে 173 রাউন্ড রাইফেলের গুলি, টেলিস্কোপযুক্ত 2টি অত্যাধুনিক বন্দুক 2টি এয়ারগান, 250 রাউন্ড পিসত্দলের গুলি, 3টি বুলেটপ্র"ফ জ্যাকেট, 52টি বন্দুকের কাতর্ুজ, 6টি কিরিচ, 3টি শক্তিশালী ওয়াকিটকি, রাইফেলের বুলেট রাখার বেল্টসহ আরো অনেক কিছু জব্দ করেছিল। ছাত্রদল ক্যাডার নিটোল হত্যা মামলায় সাকা চৌধুরীসহ আরো বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছিল।

কিন' সাকা চৌধুরী তখন সাংসদ হওয়ায় জামিনে মুক্তি পান তার পরদিন চট্টগ্রামের সিএমএম আদালত থেকে। নিটোল হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপির বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারীরা সাকা চৌধুরীকেই দায়ী করে আসছেন। এ মামলারও কোনো অগ্রগতি নেই। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে 2004 সালের 1 এপ্রিল দিবাগত গভীর রাতে কর্ণফুলী নদীতীরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) জেটি থেকে যে বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড ও অন্যান্য গোলাবার"দ আটক করা হয় তার পিছনেও সাকা চৌধুরীর সক্রিয় যোগাযোগ ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশীবিদেশী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিতও হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সাকা চৌধুরীর পারিবারিক মালিকানাধীন কন্টেইনারবাহী জাহাজ 'এমভি কিউসিঅনার'-এ করেই 10 ট্রাকেরও বেশি পরিমাণ অস্ত্র গ্রেনেড ও অন্যান্য গোলাবার"দ আনা হয়েছিল। যা ওই জাহাজ থেকে শক্তিশালী ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে বহিঃসমুদ্রে নোঙর করা ওই জাহাজ থেকে খালাস করে সিইউএফএল জেটিতে নামানো হচ্ছিল। পারিবারিকভাবে মুসলিম লীগের রাজনীতি শুর" করে পাকিসত্দানী হানাদার বাহিনীর দালাল কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর (ফকা চৌধুরী) জ্যেষ্ঠ পুত্র সাকা চৌধুরী মুসলিম লীগ, জাতীয় পার্টি ও এনডিপি হয়ে বর্তমানে বিএনপির রাজনীতিতে শীর্ষ নেতৃত্বে। সাকা চৌধুরী গত ওআইসি নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হন তার স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কারণে- এমনটাই ধারণা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। দক্ষিণপন্থী কট্টর রাজনীতিবিদ ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে পটু এই রাজনীতিবিদের সঙ্গে পাকিসত্দানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি ইসলামি দেশের অত্যনত্দ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এলাকাতে তার নিজস্ব সশস্ত্র বিশাল ক্যাডার বাহিনী রয়েছে যারা এসব এলাকায় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, জায়গাজমি দখল, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকমর্ীদের নির্যাতন, ধমর্ীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে বেড়ায়। সমপ্রতি অন্য ভাইদের সঙ্গে সাকা চৌধুরীর পারিবারিক ব্যবসায় প্রচণ্ড বিরোধ বেধে যায়। ফলে সাকা চৌধুরী তার ভাইদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে নিজেই একটি শিপিং কোম্পানি চালু করেছেন। চট্টগ্রামের জাকির হোসেন সড়কে একটি বাড়ি দখলের ঝামেলায়ও জড়িয়ে পড়েছিল সাকা চৌধুরীর পুত্র। চট্টগ্রামবাসীর আশঙ্কা_ যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, অস্ত্র ও সোনা চোরাচালানীসহ সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে পরিচিত, অত্যনত্দ ধুরন্ধর প্রকৃতির এই প্রভাবশালী রাজনীতিক না আবার অল্প সময়েই আটকাবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে যান!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.