আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের বিপদ: নিপাহ ভাইরাসজনিত এনসেফালাইটিস



১. ভাইরাসের সবচাইতে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সে বিশেষ কোন প্রাণীর জন্য তৈরি। যে ভাইরাস পাখির কোষে আক্রমণ করতে পারে সে ইঁদুরের কোষে পারে না। ভাইরাসের আক্রমণের প্রথম অংশ প্রাণিকোষের ভেতরে ঢোকা। কোনো প্রাণিকোষের বাইরে সে জড়বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। ভাইরাসের একটি বিশেষ ক্ষমতা হচ্ছে সে যেকোন প্রাণিকোষের ভেতরেই বাচ্চা দিতে পারে।

সব মিলিয়ে ব্যাপারটা এরকম, ভাইরাস সব প্রাণিকোষের ভেতরেই বাচ্চা দিয়ে সেই কোষের দফারফা করে দিতে পারে কিন্তু সব প্রাণিকোষের ভেতরে সে প্রবেশ করতে পারে না। এইখানে হয়তো আনন্দে বগল বাজানো যেত এই ভেবে যে, ভাইরাস তাহলে মারাত্মক কিছু না। যেকোন কোষের ক্ষতি করতে পারলেই বা কী! ক্ষতি করার আগে তাকে তো কোষের ভেতরে ঢুকতে হবে! ওইখানে বাবা ভাইরাস তুমি আটকা! চাইলেই আমার কোষের ভেতরে তুমি ঢুকতে পারছ না! কিন্তু আনন্দে বগল বাজানো যায় না। কারণ ভাইরাসের আছে অনন্য একটা ক্ষমতা। সেটা হচ্ছে তারা নিজেকে বদলে নিতে পারে।

তারা পরস্পরের সঙ্গে মিলে ক্ষমতা ভাগ করে নিতে পারে! একটা ভাইরাসের যদি যুদ্ধবিমান থাকে আর একটা ভাইরাসের যুদ্ধ জাহাজ তাহলে তারা সন্ধি করে দুজনেই জল-আকাশ দুই জায়গাতেই আক্রমণের ক্ষমতা অর্জন করে ফেলতে পারে! নিজেকে বদলে নেয়ার অথবা নতুন ক্ষমতা অর্জন করে নেয়ার ভাইরাসের এই ক্ষমতা অবশ্য সীমাহীন নয়। যে ভাইরাসটি আজকে রুই মাছের ক্ষতি করছে সে আচমকা হামিং বার্ডের ক্ষতি করে ফেলতে পারবে এরকমটা খুব সহজে হওয়া কথা না। কিন্তু যে ভাইরাসটি রুই মাছের ক্ষতি করছে সে নিজেকে একটুখানি বদলে নিয়ে কাতলা মাছের ক্ষতি করার ক্ষমতা খুব সহজেই অর্জন করে ফেলতে পারে। ২. বাদুড় এমনিতে আমার পছন্দ। ছোটবেলায় বাচ্চা সাইজের বাদুড় ধরে দেখেছি বেশ তুলতুলে।

ধরে নিয়ে গবেষণা করার চেষ্টা করলে খামচি কামড় দেয়ার চেষ্টা করে বটে তবে সেটা নিশ্চয়ই দোষের কিছু না! বাদুড়ের যে ব্যাপারটিতে আমার খানিকটা আপত্তি আছে সেটা হচ্ছে তারা স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরাই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যারা উড়তে পারে। স্তন্যপায়ী বলে এদের কোষের সঙ্গে অথবা কোষের কার্যকলাপের সঙ্গে অন্যসব স্তন্যপায়ী প্রাণীর অনেকখানি মিল আছে। আজকে যদি সাতক্ষীরায় একটা লোক কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয় আর দুদিন পরে সিলেটে কেউ সেই একই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাহলে স্বাস্থ্য গবেষকদের মধ্যে বেশ একটা আতঙ্কের সৃষ্টি হবে সেই ভাইরাসের ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দেখে। আমি নিজে গবেষক গোত্রের কেউ না হলেও এরকম কোনো ঘটনা দেখলে আমি সবার আগে জানতে চাইব বাদুড়ের শরীরে কোনোভাবে ওই ভাইরাসটি বেঁচে থাকতে পারে কি না! কারণ যে ভাইরাসটি মানবকোষে সংক্রমণ ঘটায় তার পক্ষে পাখিদের সংক্রমণ ঘটানো সহজ নয়।

একমাত্র ওই বাদুড় ছাড়া। বাদুড়ের সংগে মানুষের অনেক মিল। তারা দুজনেই স্তন্যপায়ী প্রাণী। আর এক বাদুড়ই পারে এইমাত্র সাতক্ষীরার সন্দেশ খেয়ে পরের মুহূর্তেই চা খাওয়ার জন্য সিলেট যেতে। বাদুড়ের প্রতি তাই আমার একটাই ক্ষোভ।

আরে ব্যাটা তুই স্তন্যপায়ী কেন হলি! আর হলিও যদি তাহলে তুই উড়তে কেন পারিস! আর উড়তেই যদি পারবি তাহলে এতগুলো ভাইরাসের বাহক(career) কেন হলি! (বাহক বা ক্যারিয়ার হচ্ছে তারা যারা কোনো জীবাণু বয়ে বেড়ায়। মশা যেমন ম্যালেরিয়ার জীবাণুর বাহক। ) বাদুড় একই সঙ্গে অনেকগুলো বিপজ্জনক ভাইরাসের বাহক। (১) বাদুড়ের ভেতরে এইসব ভাইরাস আরামে পড়ে থাকে। আর সুযোগ পেলেই ছড়িয়ে পড়ে নাস্তানাবুদ করে দেয় অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের।

৩. মানুষের মাথার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা একদিক থেকে সুবিধার নয়। জীবাণুরোধী ওষুধ খেলেই তা রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু রক্তের সব ওষুধ মাথায় প্রবেশাধিকার পায় না। আর তাছাড়া মানুষের মাথায় শরীরের সব ধরনের প্রতিরক্ষা কোষের অবাধ যাতায়াত নেই। জীবাণুর জন্যেও অবশ্য ব্যাপারটা সত্যি।

শরীরের অন্যসব অঙ্গে যেমন, সেরকম সহজে জীবাণুরা মাথায় প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু একবার প্রবেশ করতে পারলে বেশ বড় রকমের ঝামেলা বাধে। মাথায় একে তো সব ধরনের রক্ষী কোষ থাকে না তার উপর ওষুধ খেলেও তা সবক্ষেত্রে গন্তব্যে পৌঁছে না। তাই একবার সেখানে জীবাণু প্রবেশ করতে পারলে বলে তারা নির্বিঘ্নেই বসত করতে পারে। মাথায় যদি জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে তাহলে তাকে দুইটা নামে ডাকা যায়, প্রথমটা মেনিনজাইটিস।

খুলির ভেতর মগজের সবচে বাইরের যে স্তর সেখানে জীবাণুর (যে কোনো ধরণের জীবাণু) সংক্রমণ হলে তাকে বলে মেনিনজাইটিস। মাথায় জীবাণু সংক্রমণের দ্বিতীয় রকমটিকে বলে এনসেফালাইটিস। সংক্রমণকে এনসেফালাইটিস বলা হয় যদি জীবাণুর সংক্রমণ মগজের বাইরের আস্তর ভেদ করে ভেতরে পৌঁছে তবে। ভাইরাল এনসেফালাইটিস মানে ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্টি হওয়া এনসেফালাইটিস। [ওডিন (আমার তন্ময় দা) বলে এইখানে একজন ডাক্তার আছেন।

আছে আমার দোস্ত মেহদীও। তারা কেউ যদি এই ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলত!] ৪. সম্প্রতি দেশে যে ভাইরাল এনসেফালাইটিসের (Encephalitis: দেশের শীর্ষ পত্রিকাগুলোর অন্তত একটিকে দেখেছি এই শব্দটিকে 'এনকেফালাইটিস' লিখতে!) সংক্রমণ দেখা দিয়েছে সেটির জন্য দায়ী নিপাহ ভাইরাস। এটি অবশ্য এবারই দেশে প্রথম নয়। বাংলাদেশে এই সংক্রমণ শুরু হয়েছে ২০০১ সাল থেকে। WHO বলছে ১৯৯৮-৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় শুরুর পর ১৯৯৯ সালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় সিঙ্গাপুরে।

২০০১ সালে এই রোগ ছড়ায় একই সঙ্গে ভারত এবং বাংলাদেশে। এরপর ভারতে ২০০৭ এর সংক্রমণ বাদ দিলে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত কেবল বাংলাদেশেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। ২০১১ তে বর্তমান প্রাদুর্ভাবের ঘটনাটি সহ মোট ১০ বার নিপাহ ভাইরাসজনিত এনসেফালাইটিসের এই প্রাদুর্ভাব ঘটল বাংলাদেশে। (২) বিডিনিউজ ২৪ বলছে এবার নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা গেছে কর্তৃপক্ষের হিসাবে এখন পর্যন্ত ১৭ জন। একই খবরে তারা বলেছে বাংলাদেশে ২০০১ থেকে এ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত ১৭৪ জনের মধ্যে মারা গেছেন ১২৭ জন।

(৩) ৫. নিপাহ ভাইরাস প্যারামিক্সোভিরিডি পরিবারের হেনিপাভাইরাস গোত্রের দুটি মাত্র প্রজাতির একটি (Nipah Virus: আমি জানি না কেন পত্রিকাওয়ালারা 'নিপাহ'-এর 'হ'টাকে গায়েব করে এটাকে 'নিপা' বানিয়ে ফেলেছেন)। এই ভাইরাসের বাহক বাদুড়। বাদুড়ের লালাতে এই ভাইরাস থাকতে পারে। তাই বাদুড়ের লালার সংস্পর্শে এসেছে এরকম যেকোন খাবার থেকে ছড়াতে পারে এই ভাইরাস। আক্রান্ত মানুষ থেকেও এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে সুস্থ মানুষের মধ্যে।

(৪.১) এবং ব্যাপারটি সেখানেই শেষ নয়। বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে বলে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণের হার খুব বেশি। বাতাসে ছড়ানোর ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলা দরকার। বাতাস বলতে, হাঁচি-কাশি বা অন্য কোনোভাবে বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়া রোগীর ফুসফুস বা মুখের জলীয় পদার্থ যা বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে। এরকম সবকিছুর মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর থেকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই রোগ। (৪.২) কারণ অবশ্যই হাসপাতালের মান। সংক্রমণশীল রোগের রোগীদের জন্য হাসপাতালে বিশেষ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেয়ার সুবিধা না থাকলে এরকম ঘটতে পারে সহজেই। বাংলাদেশের সেরা হাসপাতালগুলোতেও সেরকম সুবিধা আছে বলে আমার জানা নেই। নিপাহ ভাইরাস শুকরের মধ্যে উচ্চমাত্রায় সংক্রমিত হতে পারে।

সংক্রমিত হতে পারে গৃহপালিত আর সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যেও। এইসব প্রাণী থেকে অন্য প্রাণী অথবা মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে এই ভাইরাস। তবে সবচাইতে বড় বিপদের কথা হচ্ছে এই ভাইরাসের প্রাকৃতিক খনি বাদুড়। বাদুড়ের নিপাহ ভাইরাস জনিত এনসেফালাইটিস হয় বলে কোনো প্রমাণ নেই তবে এই প্রাণীর মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে দূরদূরান্তে। (৪.৩) ৬. শুকরের উপর গবেষণায় দেখা গেছে নিপাহ ভাইরাস প্রথম সংক্রমণ ঘটায় শ্বসনতন্ত্রে।

লসিকাতন্ত্র(রক্তের মতো এক ধরনোর তরল পরিবাহী তন্ত্র। অনেকটা রক্ত পরিবহনের মত করেই পরিবাহিত হয়। ) আর সংবহণতন্ত্রের(রক্ত পরিবহনতন্ত্র) অনেক অংশে এই ভাইরাসের উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উপস্থিতি দেখা গেছে। দেখা গেছে, শ্বসনতন্ত্রে বাচ্চাকাচ্চায় জ্ঞাতিগোষ্ঠীতে বেড়ে গিয়ে এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটায় স্নায়ুতন্ত্রে। মাথায় 'ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার' (blood-brain barrier) বলে একটি পর্দা আছে।

বলা যায় এটি মস্তিষ্কে ঢোকার সদরদুয়ার। এই দুয়ার ভেদ করে সবাই প্রবেশ করতে পারে না। এমনকি শরীরের সব রক্ষীকোষও না। এই পর্দাটি শরীরে প্রবাহিত রক্ত আর স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কে প্রবাহিত বিশেষ তরলের (Cerebrospinal fluid) মধ্যে একটি অতি প্রয়োজনীয় বিভেদ সৃষ্টি করে রাখে। স্নায়ুতন্ত্রে সংক্রমিত নিপাহ ভাইরাস এই 'ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার' ভেদ করে মস্তিষ্কে পৌঁছে যেতে পারে।

সেখানেই মূলত এনসেফালাইটিস রোগটির সূত্রপাত। (৫) নিপাহ ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড (incubation period) ৪ থেকে ৪৫ দিন। তার মানে, এই ভাইরাস সংক্রমণের পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৪ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। (৬) নিপাহ ভাইরাসজনিত এনসেফালাইটিসের অনেকরকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মাথাব্যথা, জ্বর, মাংসপেশীর খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণহীনতা, গলা ফুলে যাওয়া, বমি, জ্ঞান হারানো, প্রলাপ বকা, এরকম অসংখ্য উপসর্গ আছে এই তালিকায়।

(৭) এই ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পরেও যারা সৌভাগ্যবশত সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের মধ্যে পরবর্তীতে আবারো এনসেফালাইটিসের লক্ষণ ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনা আছে স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বদলে যাওয়ার, স্থায়ী খিঁচুনি রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার এমনকি ব্যক্তিত্ব পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ারও। (৮) নিপাহ ভাইরাস জনিত এনসেফালাইটিসে মৃত্যুহার ৪০ থেকে ৭৫ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। ২০০৭-৮ এ বাংলাদেশে যে ৩ বার এই রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে তার মধ্যে দুবার মৃত্যুহার ছিল ১০০ ভাগ। সৌভাগ্য বশত সেই দুইবার সংক্রমণের হার ছিল বেশ কম।

(৯) ৭. না। কোনো চিকিৎসা নেই। দুইটি গবেষণায় কিছুটা আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে বলে আমি পড়েছি (পড়ুন: ১০ ও ১১)। কিন্তু সত্যিকারের রোগ নিরাময়কারী ওষুধ অথবা প্রতিরোধী টিকা কোনোটাই মানুষের হাতে এই মুহূর্তে নেই। ক্লোরোকুইন নামের একটি ওষুধ(ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত) ল্যাবরেটরিতে আশাব্যঞ্জক ফলাফল দিলেও প্রাণীর শরীরে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কোনো কার্যকর ফলাফল দেখাতে পারেনি।

(১২) সংক্রমণ এড়িয়ে চলা ছাড়া তাই এই মুহূর্তে কোনো উপায় নেই। সংক্রমণ এড়াতে বাদুড়, বাদুড়ের খাওয়া ফল বা অন্য যেকোন খাবার থাকে দূরে থাকা ভালো। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শও এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যেতে পারেন কেবল চিকিৎসক অথবা অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীরা। এবং সেটা অবশ্যই প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের পর।

৮. নিপাহ ভাইরাসজনিত এনসেফালাইটিস বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক। যে বাদুড় নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় তারা প্রাকৃতিক ভাবেই এই ভাইরাস বহন করে চলে। এখন পর্যন্ত পরিক্ষিত সব বাদুড়ই এই প্রমাণ দিয়েছে। এই বাদুড় সারা বাংলাদেশেই বাস করে। (১৩) এদেশের গ্রামেগঞ্জের সাধারণ মানুষের মধ্যে খাদ্যগ্রহন বিষয়ক সচেতনতা খুবই কম।

ফলজাতীয় খাবার ধুয়ে খাওয়ার অভ্যাস তাদের অনেকের মাঝেই নেই। এদেশে রোগীর সেবা করেন তার আপনজনেরা। সেটাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু যারা রোগীর সেবা করেন তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর সেবা করার সময় কিভাবে সতর্ক থাকা উচিত সে সম্পর্কে জানেন না। রোগীর ব্যবহৃত খাবার, আসবাব অথবা পোশাক, রোগীর লালা, তার শরীর থেকে নির্গত অন্য যেকোনো তরল অথবা শরীরের কোনো বর্জ্য অথবা আরো যা কিছু রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী হতে পারে সেসব জিনিস রোগীর সেবাকারী স্বজনদের সরাসরি সংস্পর্শে আসে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই।

দক্ষিণ এশিয়ার যে চারটি দেশে নিপাহ ভাইরাস জনিত এনসেফালাইটিসের প্রাদুর্ভাব সবচে বেশি দেখা গেছে (বাংলাদেশে ১০ বার, ভারতে ২ বার, মালেশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে ১ বার(১৪)) সেসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশে মানুষ থেকে মানুষে এই রোগ ছড়ানোর হার সবচাইতে বেশি। বাংলাদেশে সংক্রমণের ৫০ ভাগ ঘটে মানুষের মাধ্যমে। এই রোগের প্রাদুর্ভাবও বাংলাদেশেই বেশি। (১৫) অন্য দেশের বিপরীতে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হওয়া নিপাহ ভাইরাসের অনেকগুলো ধরন আছে। এদের স্ট্রেইন(strains) ভিন্ন ভিন্ন।

তার মানে হচ্ছে সবগুলো একই প্রজাতির ভাইরাস হলেও তাদের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে (১৬)। এই পার্থক্য এইসব ভাইরাসের জন্য কার্যকর ওষুধ অথবা টিকা তৈরির পথে সবচে বড় অন্তরায় হতে পারে! একই কারণে শরীরে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা এই নিপাহ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। এবং বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানসম্মত নয়। ৯. নিপাহ ভাইরাস নিয়ে গবেষণা হয়েছে খুবই অল্প। সারা পৃথিবীতেই ভাইরাস নিয়ে গবেষণার সুযোগ নিতান্ত কম।

অথচ মারাত্মক এইসব ভাইরাস এখনো মানব প্রজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারেনি অনেকটা ভাগ্যের দয়াতেই। কতদিন ভাগ্য দয়া করে বসে থাকবে জানি না। খুব বেশিদিন থাকবে সেরকম কোনো আশাও দেখি না এই সময়ের নতুন রোগগুলো দেখে। আমি খুব আশা করে থাকি, পৃথিবীর মানুষ একদিন একে অন্কে মেরে ফেলার জন্যে অস্ত্র না বানিয়ে কেবল বিজ্ঞানাগার বানাবে। কিভাবে মানুষ মেরে ফেলতে হয় সেই প্রশিক্ষণ দিয়ে বোকা ছেলেমেয়েগুলোকে মানুষের জন্য অভিশাপ না বানিয়ে তাদেরকে গবেষণা করতে শোখানো হবে।

যুদ্ধবিমান আর যুদ্ধ জাহাজ কেনার টাকাগুলো ব্যয় করা হবে গবেষণার পেছনে। বিশ্বের যেকোন দেশেই সবচে বেশি মানুষ মরে যায় রোগের কবলে পড়ে, অশিক্ষায়। অথচ আমার জানা মতে বিশ্বের কোনো দেশেই শিক্ষা অথবা গবেষণার জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ নেই। সব সময়েই যথেষ্ট বরাদ্দ আছে কেবল মানুষ মেরে ফেলার আয়োজনের পেছনে! সবকিছুর পরেও আমি খুব আশা করে থাকি একটা মানুষের পৃথিবী দেখার... [সংগৃহীত]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.