আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুবলীগের নামে চঞ্চলের উত্থান কাহিনী

অল্প দিনের ব্যবধানে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকার অটোরিকশার হেলপার সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল এখন ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) সাংগঠনিক সম্পাদক।

রাজধানীর বিভিন্ন থানায় খুন, চাঁদাবাজি, জবরদখল, মাদক ছাড়াও প্রায় দুই ডজন মামলার আসামি চঞ্চল হঠাৎ করেই যেন পেয়ে গেছেন আলাদিনের চেরাগ। স্বল্প সময়ে তিনি বনে গেছেন শত কোটি টাকার মালিক। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে হাতুড়ে ডাক্তার খ্যাত আওলাদ হোসেনের ছেলে চঞ্চলের ক্ষমতার উৎস ও উত্থানের নেপথ্য কাহিনীসহ গুলশান, বাড্ডা, তেজগাঁও এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনের চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা যায়, হোটেলপাড়ায় নারী সরবরাহের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অটোরিকশার হেলপার চঞ্চলের অন্ধকার জগতে যাত্রা।

২০০৩ সালেও তিনি জীবন-জীবিকার তাগিদে তিন চাকার অটোরিকশায় রাতে যাত্রীসেবা দিতেন। ২০০৫ সালের দিকে এই টানাপড়েনের মধ্যেই পরিচয় হয় বাড্ডার আবাসিক হোটেলের এক বয় রহমানের সঙ্গে। সোনারগাঁও এলাকার বাসিন্দা রহমানের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে হোটেলে আসা নাইট কুইনদের রাতের শিফটে পরিবহনের কাজ শুরু করেন চঞ্চল। দেখতে খানিকটা সুদর্শন হওয়ায় সহজেই রাতের রানীদের অনেকের সঙ্গেই গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। দিন দিন প্রসারিত হয় নেটওয়ার্ক।

চঞ্চলের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় খুন, চাঁদাবাজি, জবরদখল, মাদক নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও প্রায় দুই ডজন মামলা রয়েছে। হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি হয়েও ক্ষমতার দাপটে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র বহন করেন তিনি। অভিযোগ আছে, এক মন্ত্রীর আশীর্বাদে চঞ্চল ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আটটি অস্ত্রের লাইসেন্স, যেগুলো বিভিন্ন সময় ব্যবহৃত হয় 'চঞ্চল বাহিনী'র সদস্যদের নানা অপকর্মর্ে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বড় কোনো ব্যবসায়ী না হয়েও শুধু ওই মন্ত্রীর কাছের লোক পরিচয়ে কথিত যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল বাগিয়ে নিয়েছেন অস্ত্রের লাইসেন্স। অস্ত্রের লাইসেন্স বাগিয়ে নেওয়ার পর এই যুবলীগ নেতা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সব সময় তিনি কোমরে অস্ত্র গুঁজে চলাফেরা করে থাকেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অস্ত্র বের করে হুমকি-ধমকি দেন।

বিগত সাড়ে চার বছরে গুলশান-বাড্ডা এলাকায় স্বঘোষিত ক্ষমতাবান ছিলেন চঞ্চল। স্থানীয় থানা কোন আসামিকে ছাড়বে আর কাকে আসামি বানিয়ে ধরতে হবে, তা নির্ধারণ করে দিতেন তিনি। ধরা-ছাড়ার এ বাণিজ্যে গত কয়েক বছরে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত কয়েক কোটি টাকা।

ক্ষমতার দাপট ধরে রাখতে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে যুবলীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন চঞ্চল। সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সমিতির অফিসে বসে চঞ্চল চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে থাকেন। এখানে বসেই গুলশানের বিদ্যুৎ অফিসের (ডেসা) ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন তিনি। গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় নানা অপকর্মের হোতা চঞ্চলের ভয়ে থানা পুলিশও সব সময় তটস্থ থাকে বলে জানান তারা। প্রায় বছরখানেক আগে বাড্ডার হল্যান্ড সেন্টারের পাশে বঙ্গবন্ধুর আত্দস্বীকৃত খুনি কর্নেল রশিদের মালিকানাধীন প্রায় ২৭ কাঠা জমি দখল করে নেন যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল ও গুলশান থানার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফারুক মিলন।

ওই জমির অপর মালিকানা দাবিদারদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়ে তাদের হয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে জমিটি দখল করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ ছাড়া বাড্ডার ফুজি টাওয়ারের পেছনে বিরোধপূর্ণ প্রায় ১৬ কাঠা জমি দখল করেন চঞ্চল। প্রায় দুই বছর আগে ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতা চঞ্চল ও ফারুক মধ্য বাড্ডার গুদারাঘাটে সরকারি জমি দখল করে সেখানে গড়ে তোলেন কাঁচাবাজার। এখান থেকে তারা এখন প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। সম্প্রতি জাল কাগজপত্র তৈরি করে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, গুলশান থানা যুবলীগ ও ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর মে মাস পর্যন্ত চঞ্চল যুবলীগের সঙ্গে কোনো পর্যায়েই জড়িত ছিলেন না। মহানগর, থানা, এমনকি ওয়ার্ড কমিটির কোথাও তার নামও ছিল না। যুবলীগ উত্তরের নেতারা ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলদার ও অস্ত্রবাজরা কীভাবে মহানগরীর বড় পদ পেলেন তা অনেকের কাছে রহস্যময়।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.