আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনের মন্দির

http://www.myspace.com/423882880/music/songs/31785002

১. কবিতার মতো কাছে আসি, কল্পনার কাছাকাছি হৃদয়-বিহঙ্গ মেলে অস্থির ডানা, ছোঁয় আকাশ... মারুফ ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স করে উচ্চতর ডিগ্রী নিতে স্কলারশিপে চলে যায় যুক্তরাষ্ট্র। মেধাবী মারুফের সাথে যুক্তরাষ্ট্রেই পরিচয় হয় শম্পার সাথে। হাসি-খুশি প্রাণচ্ছোল শম্পার বেড়ে ওঠা আমেরিকাতেই কিন্তু চলনে-বলনে বাঙ্গালিয়ানা তাকে ভিনদেশে অন্য যেকোনো বাঙ্গালী মেয়ে থেকে একদমই আলাদা করে দেয়। প্রথম পরিচয় হয় ক্যাম্পাসের ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানে। শম্পা সেখানে আবৃত্তি করছিল শামসুর রাহমানের একটি কবিতা আর মারুফ আবৃত্তি করছিলো একুশ নিয়ে স্বরচিত পংক্তিমালা।

সেইদিন প্রোগ্রামে এক মিনিটের জন্যেও মারুফ শম্পাকে চোখের আড়াল করেনি। নাছোড়বান্দা চোখদুটোকে সেদিন পেয়ে বসেছিলো ফাল্গুনের অপরূপ শোভা! মনের ভিতরটা গুনগুনিয়ে উঠে- আমাকে অন্ধ করে দিয়ে ছিলো চাঁদ...আমাকে নি:স্ব করে দিয়ে ছিলো চাঁদ... : হাই, অকবির নাম মারুফ। : অকবি বলছেন কেন! ভালোই তো লাগলো! : আর কবিকে? : মানে? : শেষ পর্যন্ত কবিতাই জিতে গেলো! সেই যাই হোক...আবৃত্তি মনে ধরেছে। কবিতা কিন্তু কন্ঠের কাছে হেরে গেলো! হা হা হা মারুফের সাথে শস্পার পরিচয় পর্বের কথপোকথন এমনই ছিলো। মারুফের হালকা হাস্যরস শম্পাকে আনন্দিত করে।

তারপর দিন যতো গড়ায়, কবি আর পাঠিকা মুক্ত বিহঙ্গের মতো নিজেদের ভাসিয়ে দেয় হৃদয়-আকাশে। একটু একটু করে কাছে আসে। ক্যাম্পাস থেকে মন দেয়া নেয়া চলে লং ড্রাইভে, এক স্টেইট থেকে অন্য স্টেইটে! দেয়া নেয়ার এক বালুকা বেলায় মারমেইড ক্যাফেতে নিবিড় চোখ মেলে শম্পার হাতখানি আলতো করে ধরে কাছে আনে মারুফ। : আজ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তোমার অনুমতি চাইছি! : মানে! : এই মূহুর্তে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই! May I have the honor! নিস্তব্ধ সমুদ্রে তীরে উত্তাল হয় স্রোত। শম্পা হাত বাড়িয়ে দেয়, অনামিকায় বেঁধে নেয় মধুর জীবন।

সময় করে দুজনই চলে আসে বাংলাদেশে। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিশাল আয়োজন। সুখের সংসার বলতে যা কিছু- মারুফ শম্পার জীবনে নতুন করে শুরু হয়। আমেরিকায় ফিরে এসে দুজনেরই পাল্লা দিয়ে বাড়ে কর্ম ব্যস্ততা। কিন্তু এর মধ্যেই ছোট করে ওয়েডিং রিসেপশনের একটা প্রোগ্রাম হয়।

শম্পার অনেক বন্ধুদের সাথে সেদিন প্রথমবারের মতো পরিচয় হয় মারুফের! সেদিনই মারুফ বুঝতে পারে আমেরিকায় বেড়ে ওঠা শম্পার বন্ধুত্বের নেটওয়ার্কটা কতো বিশাল! ২. Put on a show, i wanna see how you lose control... এরই মধ্যে একদিন বান্ধবী জুনের বার্থডেতে একা একা গিয়ে গিফট কিনে আনে শম্পা। সন্ধ্যায় পার্টিতে মারুফসহ পৌঁছে যায় সবার আগেই। জুন শম্পার ছোটবেলার বন্ধু এবং ওরা পাকিস্তানি। পাকিস্তানি পরিবারের মেয়ে হয়েও ওয়েস্টার্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছে ওদের মন-মানসিকতা! অতএব জন্মদিনের পার্টি বলতে মারুফ যে রকম ভেবেছিলো ঠিক ঘটেছে উল্টোটা! একদম ওয়েস্টার্ন ঘরানার একটা পার্টি! এর মধ্যে জুনের বয়ফ্রেন্ড সালমান শম্পার হাত ধরে নিয়ে যায় নাঁচবে বলে! You oughta know, tonight is the night to let it go... Put on a show, i wanna see how you lose control... জে সিনের ডাউনের তালে তালে আলো-আধারিতে শম্পার হাত ধরে নাচছে সালমান আর ওদিকে জুন মারুফকে যারপরনাই রিকোয়েস্ট করেও ড্যান্স ফ্লোরে আনতে পারে না। মারুফের মুখে আনন্দ মনে বিষ! মুড অফ, কোনো কথা-বার্তা না বলেই গাড়ি ড্রাইভ করে মারুফ।

শম্পা বুঝতে পারেনা! এর পর থেকেই একই ছাদের নিচে মনের ব্যবধান বড় হতে থাকে দুজনের! শম্পার পার্টি এভয়েড করে মারুফ!এর মধ্যে একদিন অনেক রাত করে ফেরে শম্পা! মারুফ তাকে আনতে যায়নি। ফোন ধরে নি! শম্পা বুঝতে পারেনা মারুফ কি চায়! মারুফতো তার বন্ধুত্বের আদ্যপান্ত সবই জানে! তারপরও ভুলবুঝির খসড়া বড় হতে থাকে! শম্পা একদিন প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে মারুফকে! : তুমি এমন করছো কেন? : ক্যামন : গতকাল আমাদের অ্যানিভারসরি ছিলো, আমি ডিনারে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করেতে ঘুমিয়ে গেছি! what's wrong with u...! do u hear me? মারুফ জানালার বাইরে বসন্তের সবুজ প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে বলে, : আমাকে একা থাকতে দাও, প্লিজ! লাগেজ রেডি। অভিমানী শম্পা নিজেই ড্রাইভ করে টেক্সাস থেকে ছোটে নিউইয়র্কের দিকে! ম্যাজিক 95.5 fm-এ বাজে গ্লোরিয়া গেনরের বিরহী মনের দৃঢ় প্রত্যয়- ...you think I'd lay down and die Oh no, not I I will survive... বিরহের সময়সীমা দীর্ঘ হতে থাকে। সেপারেশন থেকে অনেক সময় realization হয়! তারই অপেক্ষা কিন্তু ঘটে তার উল্টোটা! মারুফের আইনজীবি ডিভোর্স লেটার পাঠায় শম্পার কাছে। শম্পা দেরি করেনা এক মূহুর্ত।

চোখ মুছে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে। মোবাইল থেকে মারুফের নম্বর চিরতরে ডিলিট করার আগে একবার ফোন দেয়, : Thank u. : ok. আর বেশি কিছু কথা হয়না ওদের মধ্যে। কথা শেষে সরাসরি ফোনবুকে। নম্বর ডিলিট। স্ক্রিনে ভেসে আসে- Delete? Yes/No।

শম্পা দূরের ঝাপসা ব্রুকলীন ব্রিজের দিকে তাকিয়ে Yes বাটনে চাপ দেয়! সময় চলে যায়। শম্পা নিজের জগতটাকে আবার আকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। নিউইয়র্কের কোনো একটা কলেজে লেকচারার হিসেবে জয়েন করে। চির চেনা জীবন, বন্ধু বান্ধব আর শিক্ষকতা নিয়ে কেটে যায় শম্পার! মারুফ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরিটাকে আকড়ে ধরে পড়ে থাকে। দুজনের স্মৃতি মাখা ৪ কামড়ার সাজানো-গোছানো কটেজ ছেড়ে বাসা নেয় অন্য আরেক জায়গায়।

একা একা সারারাত-সারাদিন, কবিতার খাতায় বাড়ে ধূলোর স্তর। জীবন বয়ে চলে জীবনের মতো! ৩. সে সুধাবচন, সে সুখপরশ, অঙ্গে বাজিছে বাঁশি । তাই শুনিয়া শুনিয়া আপনার মনে হৃদয় হয় উদাসী– কেন না জানি । ফেব্রুয়ারি মাসে দুই সপ্তাহের জন্য মারুফ দেশে আসে। বই প্রকাশক বন্ধু নাসিম খুব করে ধরেছে কবিতার পান্ডুলিপি জমা দেয়ার জন্য।

২১ এর বই মেলায় প্রকাশিত হবে। ধূলো পড়া কবিতার ডায়রিটা বন্ধুকে দিয়ে ক্ষান্ত হয় মারুফ। বই প্রকাশিত হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। বইয়ের নাম - দূরুত্বের নির্মল শোকগাথা। নিউইয়র্কে শম্পার হাতে বইটির একটি কপি পৌঁছে দেয় নিহার।

যে মারুফ এবং শম্পা- দুজনেরই বন্ধু। শম্পা বইটা হাতে নিয়ে একটু আড়ালে যায়। পাতা উল্টায়! চলে গেছি- সহজ করে যায় বলা সব কিছু এতো সহজ যদি, ভুলে থাকা কঠিন কেন? কঠিন কেন দূরত্বের সমীকরণ? উৎসর্গ- একাকীত্ব, আমার অম্ল-বিধুর সহযাত্রী উৎসর্গের পাতায় লেখাগুলো দেখে শম্পা বইখানি ভাঁজ করে রাখলো। মনের কথাগুলো মারুফ এখনো চমৎকার করে তুলে ধরতে পারে। শম্পা ভেবে ছিলো মারুফ একদমই যান্ত্রিক হয়ে গেছে, কবিতা-টবিতা ওর হৃদয় থেকে মরে গেছে।

কিন্তু অকবির কবিত্ব মরে নি। শম্পা হাসে । নিহারের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে মারুফকে ফোন দেয়। : একাকীত্ব কি কারো মধুর সহযাত্রী হতে পারেনা? : ক্যামন আছো তুমি? : যেমন থাকার কথা ছিলো! তুমি? : অম্ল-বিধুরতায় যেমন থাকে মানুষ! : তোমার বই হাতে পেলাম মাত্র! : কবিকেতো ভুলেই গেছো! : সব কিছু এতো সহজ যদি, ভুলে থাকা কঠিন কেন? লাইনগুলোতো তোমারই লেখা... পাতায় পাতায় জাগে প্রাণ। হৃদয়ে জাগে ভালোবাসার গান।

কবিতারই জয় হলো। শম্পা সপ্তাহখানিক পরে টেক্সট করলো মারুফকে। and I suffer. As u. Suffer as you do In the abyss loneliness. মারুফ রিপ্লাই দেয়। টেক্সাস থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছাতে যতোগুলো ঘন্টা লাগে। ১৭ ব্যারো স্ট্রিটের ওয়ান ইফ বাই ল্যান্ডে দেখা করে দুজন।

ওয়েটারকে ডেকে শম্পা বিফ ওয়েলিংটন অর্ডার দেয়। দুজন দজনকে যেন কখনোই দূরে রাখেনি। দীর্ঘদিন যেন দুজনকেই দুজন ধরে রেখেছিলো হৃদয়ের গোপন ব্যথায়। মারুফ শম্পার হাত ধরে। অনামিকায় আংটি পরিয়ে দেয়।

শম্পা খেয়াল করে দেখে বিয়ের সেই আংটি যেটি সে ফেলে এসেছিলো। মারুফ সেই আংটিটি সযত্নে রেখে দিয়েছে, ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছে এতো বছর পরও! শম্পা আংটি খুলে ফেলে। মারুফ স্তব্ধ হয়ে যায়, শম্পা চোখের দিকে তাকায়! : মানে কি? : মানে কিছু না! : তাহলে রিং খুলে ফেললে যে! : আমার আর এটার দরকার নেই! তোমাকে কাছে পেয়েছি, সেটা কি কম? ৪. ভালোবাসি, ভালোবাসি– এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি । মারুফ বাংলাদেশে ফোন দিয়ে মাকে সব জানায়। মা-বাবা খুশী না হয়ে বরং প্রচন্ড রকমের আপসেট হয়।

একই ভাবে শম্পার বাবা-মাও! এটা কি করে সম্ভব! ধর্মের বিধিনিষেধ আর নিয়মনীতিতে আটকে যায় জীবনের হাসি আনন্দ! এটা কি ধরনের ইয়ার্কি! বিয়ে কি ছেলে-খেলা...আত্মীয়-স্বজনদের টিপন্নী শুনতে শুনতে দিন গুণে ওরা। সিন্ধান্ত হয় পূর্বতন স্বামীর কাছে ফিরে যেতে শম্পাকে হিল্লা বিয়ে দেয়ার। কিন্তু শম্পা আর মারুফ পরিত্রাণ খোঁজে, চালিয়ে যায় তাদের কাছে আসার অভিসার! বিশ্বের বিখ্যাত সব মুসলিম স্পিকার আর স্কলারদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে ওরা। মিশর, টার্কি, ইরান, যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামিক জিনিয়াসদের সাথে যোগযোগ করে ওরা জানতে পারে হিল্লা বিয়ে নিষ্প্রয়োজন। যুক্তি তর্ক আর প্রমাণ দিয়ে ওরা জয় করে বাধা।

ওরা ফিরে আসে ওদের মনের মন্দিরে। জয় হয় ভালোবাসার, জয়ী হয় কাছে আসা!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.