আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিপাহ ভাইরাস ও তার প্রতিকার



বাংলাদেশে আবার নিপাহ ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব দেখা গিয়েছে। নিপাহ ভাইরাস রোগটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে। যে পরিবারে একজন নিপাহ ভাইরাস রোগী পাওয়া যায়, ওই পরিবারে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ার খুব আশঙ্কা থাকে। অসর্কতার কারণে গতবছর এক ইন্টার্নি চিকিৎসকও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাই নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে জানা ও আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকা খুবই প্রয়োজন।

নিপাহ ভাইরাসঃ মালয়েশিয়ায় ১৯৯৮ সালে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ার পর ২০০১ সালে মেহেরপুরে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই সময় থেকে চলতি সংক্রমণের আগ পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৭৪ জনের মধ্যে ১২৭ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। এবারও যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের অধিকাংশই মারা গিয়েছে। রোগের লক্ষণঃ নিপাহ ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ৮ থেকে ১২ দিন পর রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রথমে প্রচণ্ড জ্বর, মাথাব্যথা, খিচুনি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

এক পর্যায়ে রোগী প্রলাপ বকতে শুরু করে এবং অজ্ঞান হয়ে পড়ে। অর্থাৎ এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হবেন। তিনি মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে পারেন। এক পর্যায়ে তার খিচুনিও দেখা দিতে পারে এবং এ রোগে মস্তিস্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়। নিপাহ ভাইরাসের বাহকঃ নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে।

বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এই সময়টাতেই খেঁজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। আর বাদুড় গাছে বাঁধা হাড়ি থেকে রস খাওয়ার চেষ্টা করে বলে ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। সেই বাদুড় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং সেই রস খেলে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভাইরাস। সাবধানতাঃ যেহেতু নিপাহ ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ৮ থেকে ১২ দিন পর রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়।

তাই নিকট সময়ে বা কমপক্ষে গত একমাসে যারা খেজুরের রস খেয়েছেন, তাদের সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে এ রোগ। তাই যারা রোগীদের সেবা দিয়েছেন এবং মৃতদের সৎকার করেছেন, তাদের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে খেজুর গুড় ও রস, আখের রস, পেঁপে, পেয়ারা, বরইয়ের মতো ফল না খাওয়াই ভালো। এ রোগে আক্রান্তদের পরিচর্যা করতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

রোগীর ব্যবহৃত কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী ভালোভাবে পরিষ্কার না করে আবার ব্যবহার করা যাবে না। রোগীর পরিচর্যা করার পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। রোগীর কফ ও থুতু যেখানে সেখানে না ফেলে একটি পাত্রে রেখে পরে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগীর সঙ্গে একই পাত্র খাওয়া বা একই বিছানায় ঘুমানো যাবে না। রোগীর শুশ্রুষা করার সময় মুখে কাপড়ের মাস্ক পরে নিতে হবে।

যে এলাকা নিপাহ ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব দেখা দেয় সে এলাকায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ হওয়ার পর আরো অন্তত ২১ দিন পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসাঃ এখন পর্যন্ত এ রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। ঠিকমতো শুশ্রুষা হলেই রোগী বেঁচে যেতে পারে। আর এ জন্য আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। আক্রান্ত রোগীর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে জীবন রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

তাই রোগের লক্ষণ দেখামাত্রই রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার সুবিধা জনসাধারণের সহজলভ্য করার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।