বাংলা ভাষােক ভালবািস প্রতি বত্সরের ন্যায় এবারও খেজুরের রস কাটার মৌসুমে ভয়াবহ নিপাহ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়াছে। ইতোমধ্যেই দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চল হইতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর খবর আসিয়াছে। ঢাকা, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, নাটোর এবং গাইবান্ধায় নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলিয়াছে। চলতি জানুয়ারি মাসেই মৃত্যুদূতরূপী এই ভাইরাস আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনেরই জীবন কাড়িয়া নিয়াছে। উল্লেখ্য, কাঁচা খেজুরের রস পান করিলে এই রোগ হইবার আশঙ্কা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, জীবাণুবাহী বাদুড় কাঁচা খেজুরের রসের হাঁড়িতে মুখ দিলে উহার লালার সহিত রস মিশ্রিত হইয়া যে বিষাক্ত অবস্থার সৃষ্টি করে উহাই এই রোগের জন্য দায়ী। অর্থাত্ বাদুড়ের লালায় যে নিপাহ ভাইরাস থাকে উহাই খেজুর রসের মাধ্যমে মানব দেহে সংক্রমিত হয়। ইহার কোন প্রতিষেধক কিংবা চিকিত্সা নাই। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনা এক্ষেত্রে অত্যন্ত বেশি। সরকারি তথ্য মোতাবেক দেখা যায় যে, ২০০১ সালে রোগটি প্রথম শনাক্ত হইবার পর হইতে এ পর্যন্ত দেশের ২১টি জেলায় ২০৩ জন ইহাতে আক্রান্ত হয় এবং তন্মধ্যে ১৫৭ জনেরই মৃত্যু ঘটিয়াছে।
অবশ্য রোগটি শনাক্ত হইবার পূর্বে ইহা অজ্ঞাত রোগ হিসাবে চিহ্নিত ছিল। অন্যান্য সংক্রামক রোগের তুলনায় ইহা অধিক ভয়াবহ। তাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হইলে বলিতে গেলে আর রক্ষা নাই এমনটিই সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। কোন কোন ক্ষেত্রে বরাত গুণে কেহ কেহ এই রোগের কবল হইতে বাঁচিয়া ওঠে বটে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তেমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। সুতরাং, উপরে উল্লিখিত পরিসংখ্যান হইতে এই রোগটির ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
আমরা বিগত প্রায় এক যুগ ধরিয়া শীতকালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখিতে পাইতেছি। আবার খেজুরের কাঁচা রসই এই ভাইরাসের বাহন ইহাও বিশেষজ্ঞরা সাব্যস্ত করিয়াছেন। কিন্তু প্রশ্নটি হইল, এই এক যুগের আগের সময়কালে কি বাদুড়ের লালা হইতে রসের কলসীতে এই ভাইরাসের সংমিশ্রণ ঘটিত না? কেননা বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে শীতকালে কাঁচা রস পানের বিষয়টি একটি অতি স্বাভাবিক ও সাধারণ ঘটনা। ইতোপূর্বে এই রস পানের ফলে প্রাণহানির সংবাদ কেহ শুনিয়াছে কিনা তাহা বলা দুষ্কর। তবে বিগত এক যুগে এই রসের সহিত বাদুড়ের লালার সংমিশ্রণ জনিত কারণে ভাইরাসের যে অস্তিত্ব ধরা পড়িয়াছে উহা হয়তো বা আগেও ছিল কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার অভাবে তাহা শনাক্ত করা যায় নাই।
এক্ষণে উহা যখন শনাক্ত করা সম্ভব হইয়াছে তখন এই রোগ হইতে রক্ষা পাইবার উপায় সম্পর্কেই প্রথমত সংশ্লিষ্ট মহলকে ভাবিতে হইবে বৈকী! মুশকিল এই যে, ইহার কোন প্রতিষেধক নাই আর সেমত অবস্থায় গণসচেতনতাই হইতে পারে ইহার একমাত্র রক্ষাকবচ। সকলকে খেজুরের কাঁচা রস পান করা হইতে বিরত রাখিতে হইলে এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করিয়া তুলিতে হইবে। মানুষ যখন জানিতে ও বুঝিতে পারিবে যে, কাঁচা রস তাহার জীবন প্রদীপ নির্বাপিত করিয়া দিতে পারে তখন নিশ্চয়ই সে এ ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকিবে।
নিপাহ ভাইরাসের অস্তিত্ব ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় পাওয়া গিয়াছে আর মালয়েশিয়াই এই ভাইরাসের উত্পত্তিস্থল। জনস্বাস্থ্য লইয়া যাহারা কাজ করেন তাহাদের কর্তব্য এই বিষয়টি সম্পর্কে সারা বছরই সচেতনতা সৃষ্টির কাজে ব্যাপৃত থাকা।
গণমাধ্যমেরও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালনের সুযোগ রহিয়াছে। আর তাহা হইলেই কেবল নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ এবং উহাতে মৃত্যুর হারও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় হরাস করা সম্ভব হইবে। আমরা সংশ্লিষ্ট মহলকে তাই এ সকল বিষয়ে সবিশেষ নজর দিতে বলিব। এ সকল ক্ষেত্রে হেলা-ফেলা ভাব অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কেননা ইহার সহিত মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নটি জড়িত।
সুতরাং এ ব্যাপারে উদাসীনতা কোন প্রকারেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।