আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিপাহ ভাইরাস : প্রয়োজন সচেতনতা

এ বছরও দেখা দিয়েছে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে চার জন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হয়েছে আরও বেশ কয়েকজন। এই রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুহার শতকরা ৩৮ থেকে ৭৫ ভাগ। এর ব্যাপক বিস্তার না ঘটলেও উচ্চ মৃত্যুহার মানুষের আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

নিপাহ ভাইরাস হলো এক ধরনের জুনোটিক (প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের মাঝে সংক্রমিত) ভাইরাস। ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার 'নিপাহ' নামে একটি গ্রামে সর্বপ্রথম এ ভাইরাস শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে ওই গ্রামের নামানুসারে এ ভাইরাসের নামকরণ করা হয়। নিপাহ ভাইরাসের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে এমন একটি ভাইরাস ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার একটি শহরে চিহ্নিত করা হয়। ওই শহরের নামে ভাইরাসটির নাম করা হয় হেনড্রা ভাইরাস।

কিভাবে ছড়ায় : বাদুড়ে খাওয়া ফলমূল খেলে কিংবা বাদুড়ের লালা বা প্রস্রাব দিয়ে সংক্রমিত খেজুরের রস খেলে এসব ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে বিগত মহামারীগুলোতে খেজুরের রস পান করার মাধ্যমেই মানুষের দেহে ভাইরাস প্রবেশ করেছিল। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর লালার মাধ্যমেও অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। ধারণা করা হয়, বাদুড়ের নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতি নিপাহ ও হেনড্রা ভাইরাসের বাহক। উত্তর-পূর্ব-দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, ভারতের শিলিগুড়ি এবং বাংলাদেশের ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জ জেলায় এই ভাইরাস চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই ভাইরাসের বাহক হওয়া সত্ত্বেও বাদুড় এ রোগে আক্রান্ত হয় না। বাদুড় থেকে প্রাণী ও মানুষের মাঝে কিভাবে এ রোগের বিস্তার ঘটে তা নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হয়, সংক্রমিত টিস্যু বা বডি ফ্লুইডের সংস্পর্শের মাধ্যমে রোগের বিস্তার ঘটে থাকে। নিপাহ ভাইরাস হেনড্রা ভাইরাসের তুলনায় প্রাণী থেকে মানুষে অধিক হারে সংক্রমণ ঘটায়। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের নিশ্চিত প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

লক্ষণ : নিপাহ ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড ৪ থেকে ১৮ দিন। এই রোগের উপসর্গ সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রায় জ্বর, মাংশপেশিতে ব্যথা, পরবর্তীতে মস্তিষ্ক প্রদাহ, ঘুম-ঘুম ভাব, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, খিঁচুনি, পেটে ব্যথা, চোখে অন্ধকার দেখা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া প্রভৃতি অবস্থার সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তীব্র শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।

অচেতন বা অজ্ঞান হয় ৭৪%, খিঁচুনি বা স্পাজম হয় ৩৩%, মাথাব্যথা ৪২% এবং শ্বাসকষ্ট হয় ৮% রোগীর। এসব লক্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ৯২% রোগীর। গবেষকরা এই রোগটিকে মস্তিষ্কের প্রদাহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। নিপাহ ভাইরাসের নিরাময় যোগ্য ও কার্যকর কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। নিবিড়ভাবে রোগীকে পর্যবেক্ষণ ও সাপোর্টিং চিকিৎসা প্রদান অত্যন্ত জরুরি।

শুরুতে অ্যান্টিভাইরাস ড্রাগ প্রদান করা গেলে রোগের ভয়াবহতা ও মেয়াদ কমানো সম্ভব বলে ধারণা করা হয়। যদিও এই চিকিৎসার কার্যকারিতা ও ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

চিকিৎসা : নিপাহ ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। চিকিৎসা দিতে হয় লক্ষণভিত্তিক।

প্রতিরোধ : নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য কোনো টিকা নেই।

যেহেতু সংক্রমিত খেজুরের রস ও বাদুড়ে খাওয়া ফলমূলের মাধ্যমে ভাইরাসগুলো মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে, তাই কাঁচা খেজুরের রস ও বাদুড়ে খাওয়া ফলমূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খেজুরের রস ভালো করে ফুটিয়ে নিলে নিপাহ ভাইরাস মরে যায়। তাই ফুটিয়ে খেতে হবে। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে সাবধান থাকতে হবে।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।