সবাইকে শুভেচ্ছা...
ঘটনা দুটো নিয়ে আগেও হয়ত লেখালেখি করেছি। এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না কোথায় এবং কবে। যেহেতু লেখার পরিসর ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ তাই ধরে নিচ্ছি হবে হয়ত কোন এক ব্লগে। নিয়মিত পাঠকদের মনে থাকার কথা। সে যাই হোক, অনিচ্ছা সত্ত্বে আবারও টানতে হচ্ছে প্রসঙ্গ দুটো।
তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন এবং অত্যন্ত সময়যোগী। আওয়ামী লীগের এমপি গোলাম মাওলা রনির জন্য আমার বিশেষ কোন অনুভূতি নেই। কারণ তিনিও আওয়ামী লীগার এবং দেশজুড়ে আওয়ামী তান্ডবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস একটা সময় আসবে যখন বহুল ব্যবহত ’তুই রাজাকার’ বাক্য আওয়ামী লীগকেও ধাওয়া করবে এবং রাজাকার শব্দকে প্রতিস্থাপন করবে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ ’তুই আওয়ামী লীগ’ বাক্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে একজন লীগারের পরিচয়।
এ পরিচয় হতে জনাব রনি রেহাই পাবেন এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। কথায় বলে আম বাগানে একটা দুইটা কাঁঠাল গাছ বাগানটার পরিচয় বদলে দেয় না। আমবাগান আমবাগান-ই থেকে যায়। এখানে প্রশ্ন উঠবে জনাব রনি কি তাহলে আওয়ামী বাগানে অন্য কোন ফুল? গোবরে পদ্মফুল? এসব বিচারের সময় এখনো আসেনি। এই সাংসদকে নিয়ে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে নতুন একটা সিরিয়াল নাটক ইন্ট্রোডিউস করা হয়েছে।
আমার মত আমজনতার কাছে এ নাটকের গ্রহণযোগ্যতা শ্রেফ আওয়ামী নাটক হিসাবেই। গেল সাড়ে চার বছরে এসব দেখতে দেখতে আমার মত অনেকেই এখন an expert headmaster বনে গেছে। রনি উপাখ্যান নিয়ে আলোচনা মানে আবারো আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে ফিরে যাওয়া এবং দলের এক নাম্বার হতে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের বঙ্গবন্ধু ’চেতনা’ বাস্তবায়নের ফিরিস্তি দেয়া। পদ্মাসেতুর খলনায়ক আবুল হোসেনের মন্ত্রিত্ব পাওয়ার অধ্যায় দিয়ে রনি অধ্যায়ের শুরু। প্রধানমন্ত্রী উনার কোন এক বিদেশ সফরে সঙ্গী বানিয়ে ছিলেন সাংসদ আবুল হোসেনকে।
সাথে ছিল উজির নাজির কোতয়ালের বিশাল এক বহর। জনাব রনিকে প্রধানমন্ত্রী কোন দুঃখে সাথে নিয়েছিলেন তা কেবল তিনিই বলতে পারবেন। তবে এ বদান্যতা যে প্রধানমন্ত্রীর জন্য বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
পাঠকদের কি মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ লেখক আলেক্স হেইলির ’রুটস’ উপন্যাসের কথা মনে আছে? যাদের উপন্যাসটা পড়ার সৌভাগ্য হয়নি অনুরোধ করবো এর উপর নির্মিত টিভি সিরিজটা দেখে নিতে। সাদা আমেরিকায় কালো আফ্রিকানদের আগমন এবং তাদের কৃতদাস জীবন নিয়ে এর চাইতে ভাল কোন বই অথবা টেলে নভেলা নির্মিত হয়েছে কিনা বলতে পারবো না।
চীন দেশ হতে কৃতদাস ধরে আনার সফর ছিলনা সেটা। চীন দেশ আফ্রিকার গাম্বিয়া অথবা মোজাম্বিক নয় যেখান হতে ভাগ্যহতদের ধরে আনা যাবে। রুটস উপন্যাসের কুন্তা কিন্তে চরিত্রের মতই ছিল আবুল, রনিদের চরিত্র। অধিকন্তু অনেকটা গোপাল ভাড় বানিয়ে এদের নিয়ে চীন দেশে গিয়েছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। দিনান্তে ক্লান্তি মুছে ফেলার অংশ হিসাবে ভাঁড়দের নিয়ে আসর জমিয়েছিলেন তিনি।
সেখানেই মাথায় আসে বুদ্ধিটা। আবুল সহ কয়েকজন ভাঁড়কে ডেকে বললেন, তোমরা দৌড়াও। এবং এ দৌড়ে যে জয়ী হবে তাকেই মন্ত্রী বানানো হবে। গোলাম মাওলা রনীর মতে সে দৌড়ে জয়ী হয়েই কালকিনীর আবুল হোসেন মন্ত্রিত্ব লাভ করেছিল। রনির এহেন বক্তব্যের বিরুদ্ধে সরকার প্রধানের দপ্তর হতে জোড়ালো কোন প্রতিবাদ জানানো হয়নি।
স্বভাবতই ধরে নিতে পারি ঘটনা সত্য। তবে আবুল হোসেনের মন্ত্রিত্ব এবং পরবর্তীতে দেশপ্রেমিক খেতাব পাওয়ার আরও একটা কারণ বাজারে ভেসে বেড়ায়। কথিত আছে সময়টা তখন শেখ পরিবারের জন্য ভাল সময় নয়। মুজিব সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে কেবল। দৈবক্রমে বেচে যাওয়া দুই বোনের অবস্থা তথৈবচঃ।
বিশেষ করে আর্থিক দিক হতে। এমন দুঃসময়ে মরার উপর খাড়ার গায়ের মত দেখা দেয় রেহানার স্বামী জনাব সিদ্দিকের ব্রেন টিউমার। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। অনেকের দুয়ারে ধর্না দিয়েও কাজ হয়নি। ঠিক এমন একটা অনিশ্চিত সময় এগিয়ে আসেন মাদারীপুরের সৈয়দ আবুল হোসেন নামের একজন ব্যবসায়ী।
অর্থকড়ি দিয়ে ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগওয়ানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এবং সেখানেই সরানো হয় টিউমার। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি সৈয়দ সাহেবেকে। বলা হয় জনাব আবুল হোসেন এ যাত্রায় নগদ ৬০ কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেছিলেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বড় বোনের মন্ত্রীসভায় ছোট বোনের প্রতিনিধি হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। হতে পারে সবটাই গসিপ, ভূয়া।
কিন্তু পদ্মাসেতু নিয়ে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে যা ঘটে গেল তার প্রেক্ষাপটে আবুল হোসেনের ’দেশপ্রেমিক’ খেতাব প্রাপ্তি কিছুটা হলেও গসিপের পক্ষে সাফাই গায়। পারিবারিক দুধকলা কেবল এক বোন ভোগ করবে আর বাকি জন আঙ্গুল চুষবে, এর নাম সুবিচার নয়। ক্ষমতা ভাগবাটোয়ারার সমীকরণ মেলাতেই নাকি আবুল হোসেনকে মন্ত্রীসভায় অর্ন্তভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছিলেন সরকার প্রধান। একই কারণে বিদায়ও করতে পারেন নি যখন প্রয়োজন ছিল।
যাই হোক, ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে।
সরকারী দলের সাংসদ জনাব রনি আবুল প্রসঙ্গে টকশো’তে খোলামেলা কথা বলার কারণেই সরকার প্রধানের রোষানলে পরেন। ব্লগ, ফেইস-বুক এবং টকশো’তে অতিকথনের কিছু দিনের ভেতর জনাব রনি বুঝে যান দ্বিতীয় যাত্রায় সাংসদ বনার সম্ভাবনা একেবারেই উবে গেছে। হয়ত তা বুঝেই বাড়িয়ে দেন আওয়ামী অন্তর্বাস ও এর নোংরা লন্ড্রি নিয়ে কথা বলার মাত্রা।
আমার সুদীর্ঘ প্রবাস জীবনের ফাঁকে কটা বছর দেশে কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছিল। এ সময়টা দেশে অতিবাহিত না করলে হয়ত দেশকে ভাল করে চেনা হতনা।
হয়ত অনেকের মত প্রবাসে আমিও দেশপ্রেমের সস্তা কীর্তন গেয়ে কাটিয়ে দিতাম বাকি জীবন। তো শীতের চমৎকার এক সকালে হাতে দৈনিক একটা পত্রিকা নিয়ে আঙ্গিনায় বসে রোদ পোহাচ্ছি। এমন সময় আমার ছোট ভাই এসে জানালো স্থানীয় সাংবাদিক সমিতির মাননীয় সভাপতি আমার সাথে দেখা করবেন। স্যারের দেখা মেলতে একটু অবাক হয়ে গেলাম। একই স্কুলের ছাত্র আমরা।
আমার এক ক্লাশ সিনিয়র। ও প্রসঙ্গে যাওয়ার আগেই তুলে ধরলেন ’সমস্যা’টা। কদিন আগে আমরা যে সম্পত্তিটা ক্রয় করে দলিল করেছি তাতে দেখানো ক্রয় মূল্যটা নাকি সত্য নয়। সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিতেই নাকি আমরা অসততার আশ্রয় নিয়েছি। একজন সাংবাদিক হিসাবে এতবড় একটা জালিয়াতির খবর জনসন্মুখে তুলে ধরা নাকি সাংবাদিকদের ধর্ম।
ঘটনা সত্য। কর ফাঁকি দেয়ার জন্য এমনটা করা হয়েছিল। এবং তার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন খোদ সাব-রেজিষ্ট্রার সাহেবের দালাল। কথা বেশিদূর গড়ালো না। নগদ পনের হাজার টাকায় ফয়সালা হোল।
দাবি ছিল এক লাখের। তারও কিছুদিন আগের ঘটনা। আমাদের প্রতিবেশী হক সাহেব। বয়স প্রায় সত্তুর। কাজকর্ম বলতে বিশেষ কিছু করেন না।
দিনরাত ছেলের নার্সারিতে পরে থাকেন। খুব সুন্দর একটা নার্সারি। চারদিকে সবুজের ছড়াছড়ি। এক সকালের ঘটনা। প্রতিদিনের মত আজও শুয়ে আছেন নার্সারির ছোট ঘরটায়।
অতি সন্তর্পণে ঘরে প্রবেশ করলো বাড়ির যুবতি কাজের বুয়া। অর্ধনগ্ন হয়ে শুয়ে পরলো হক সাহেবের পাশে। ক্যামেরার ফ্লাশ লাইটের আলোতে ঝলসে গেল হক সাহেবের চোখ। চোখ মেলতেই দেখেন এলাহি কারবার। অর্ধনগ্ন যুবতী মহিলা ও ক্যামেরা হাতে একজন সাংবাদিক।
এভাবেই শুরু ব্ল্যাক মেইলিং পর্ব। দাবিকৃত অর্থ পরিশোধ না করায় বহুল প্রচারিত একটা সাপ্তাহিকীতে রসালো ভাবে তুলে ধরা হয় হক সাহেবের কথিত অন্ধকার জীবন।
মফস্বলে যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের মাসিক আয়-রোজগার কত? ব্যাপারটার উপর একটু হাল্কা গবেষণা চালাতে হয়েছিল অন্য কারণে। যৎসামান্য বেতনের একজন সাংবাদিক কি করে আলিশান জীবন যাপন করেন তা ঘাটতে গিয়ে বের হয়ে আসে সাংবাদিকতার কালো অধ্যায়। থানা-পুলিশ, রেজিস্ট্রি অফিস, এসপি, ডিসি, হাসপাতালের ডাক্তার, পৌরসভায় চেয়ারম্যান, কমিশনার, এমপি সহ প্রশাসনের সবাই রসুনের কোয়ার মত এক পশ্চাৎদেশে জড়িত।
ওরা ভাগাভাগি করে জীবন কাটায়। শিকার থানায় ধরা পরলে স্বার্থ উদ্ধারের পর তা তুলে দেয় সাংবাদিকদের হাতে। তারপর পর্যায়ক্রমে বাকি সবার টেবিলে। এ যেন পালাক্রমে গণধর্ষণ। সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলার জন্য দলীয় সাংসদকে আওয়ামী লীগ গ্রেফতার করেছে।
এ নিয়ে দলকানা জলদাসদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। সাংবাদিকতা নাকি পবিত্র পেশা। তাই এ পেশার ফেরেশতাদের গায়ে হাত দেওয়া মানে ন্যায় বিচারের আরশ কাঁপিয়ে দেয়া। আসলেই কি তাই? জনাব রনি নিজ নেত্রীর রোষানলে পরেছেন, তাই জেল খাটছেন। বাকি সব ভূয়া।
সাংবাদিকরা এ দেশেরই সন্তান, এবং রাজনৈতিক মাফিয়া চক্রের সক্রিয় সদস্য। উপরের দুটো উদাহরণ কেবল আমার নিজ শহরের নয়। খবরের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা খবর বের করে দেখুন। কেবল তখনই দেখতে পাবেন সাংবাদিকতার মুখোশধারী সাংবাদিকদের বহুমুখী জীবন। এবং এ জীবন তারেক, মিল্কি ও কালা জাহাঙ্গীরদের জীবন হতে খুব একটা আলাদা নয়।
http://www.amibangladeshi.org/blog/08-04-2013/1392.html
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।