একুশের একগুচ্ছ কবিতা
১। একুশ ও বসন্ত
একদিন বসন্তে চূড়া-থই-থই ফিনকি দিয়ে ফুল
একদিন বসন্তে কা-কা-বুলেট, ভীষণ কর্কশ
অনেকদিন ওরকম লাল ফুল প্রজনন করেনি ইতিহাস
আমি কতোকাল ধরে প্রসূনধাত্রীবিদ্যার পাঠে আমাদের বঙ্গীয় পাঠশালায় একা একা বসে আছি
পিঠাপিঠি সতীর্থরা লাল কৃষ্ণচূড়া বধে কালের কুঠার হাতে ছুটছে
আমি বহুকাল একটি লাল প্রজাপতির সাথে কালো কৃষ্ণচূড়া ফোটা দেখেছি
একদিন দেখেছি ফুল বুকের ভেতর সুবাস রেখে শহীদের জন্য প্রস্ফূটন বিরহকাল কাটায়
এখন চূড়া থই থই ফিনকি দিয়ে অবাক-ফোটা ফুল আর ফুটে না;
২। মাথা থেকে মগজ ও ধোঁয়া বেরুচ্ছে
প্রভাত আমাদের জন্য ফুল ফেরী করে, এখন একুশ আর ঐক্যবদ্ধ শপথ শেখায় না
আমি প্রভাতের ফুল ফেরিওয়ালা
প্রভাত আমাদের জন্য অপেক্ষায় থাকে, সূর্যভাঙা রোদের এই লাল-বেলায় একুশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ।
আমার শরীরে লাল ফুলের মতো ফিনকি উছল রক্ত
আমার মাথা থেকে লাভাস্রোতের মত বুদ্ধিধারা
আমার মাথা থেকে তোমাদেরই বুলেটের ধোঁয়া বেরুচ্ছে
এই অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্ধ্যায় অবিনাশী সংগীতের প্রথম কলি ভাঁজতে ভাঁজতে এই এক স্বর্গচ্যূত ক্ষণে আমি শহীদ হয়ে যাচ্ছি…।
বাংলার সব ঘর শহীদের ঘর
একুশ বর্তমান, মানুষের অন্তর অন্তহীন মমতায় অস্তিত্বের অংশ করে
শিশুরাও সব খেলা ছেড়ে একুশ এলে শহীদ মিনার মিনার খেলে
আর কোন ভাষা যারা জানে না
অন্য কোন ভাষায় ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখে না
বস্তিতে, সকল গরিবের ঘরে সমবেত শিশুরা একুশ এলে
পৃথিবীর সেরা স্থপতির মতো শহীদ মিনার গড়ে। ।
৩। স্থাপনার স্থপতি
দেখুন, আমরা একটি শহীদ মিনার গড়ে তুলতে চাই
আমরা আমাদের হাত জড়ো করেছি………
দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম মায়ের মুখের দিকে
আমরা অনেক আদর কুড়িয়েছে, এই ভরসার প্রতীক মায়ের দোয়া
আমরা একটি শহীদ মিনার গড়ে তুলতে চাই
আমরা কিছু কলাগাছ, যার কোষে কোষে পাললিক পেলবতা
আমরা কিছূ বাশ, যারা বিষের বাঁশীতে প্রেম ও বিপ্লব হাতধরাধরি
কিন্তু, আমরা সূর্য পাবো কোথায়!
আমরাতো ছোট… শিশু
ভেবে ভেবে, আমরা আমাদের লাল টুকটুকে হৃদপিন্ড জড়ো করেছি। ।
৪। ফুলের ফিনকি ধারা
আজ কুড়াই ফুল, আজকে আমি আমার জন্য ফুল দিয়েছি
আজ স্বপ্ন কুড়াই, আজকে আমি আমার ফুলের ফিনকি ধারা
আজকে আমি ফের দেখেছি রঙের ধারায় আমার আগামী
আজকে আমি ফুল দেখেছি,রোষাগ্নি তার পাঁপড়ি জুড়ে
লালে লালে লাল করেছে, আজকে আমি রঙ দেখেছি। ।
একুশ আসে একুশ চলে যায়, প্রাণপ্রতিমা একুশ আসে একুশ চলে যায়
আমরা সবাই প্রভাতফেরীর শেষে, ফুলের কছে আর ফিরি না
ফুলকে আমি ফুল বলি না, ফুলকে বলি ফিনকি
ফুলের রঙে রক্ত আমার রঙ্গনে আরক্ত
ফুলকে আমি কুসুমধারায় রক্তে রাখি দোলার খেলায়
কৃষ্ণচূড়া ফুটলে আমি ফুলের বনে ফের ফিরে যাই
ফুলকে আমি আমি ফুল বলি না, ফুলকে বলি একুশ
৫। শৈশবের প্রভাতফেরী
সারা রাত জেগে ছিলাম, নিদ্রাপত্রে লিখেছি চিঠি, পত্র পল্লবে চারদিকে অনেক একুশের চিঠি
ওরা আমাদের ঝাড়ে-বংশে আমাদের নির্মূল করতে চেয়েছিলো
সারা রাত জেগে ছিলাম, আমার সাথে বারবার রাতের চোখাচোখি
আমি কিন্তু নিশিক্লান্ত নই একদমই, কাল প্রভাতফেরী আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।