আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোট্ট ভ্রমন কাহিনী আর গড়ের মাঠের সাতকাহন

মৌনতার দীর্ঘশ্বাস...
যে যাই বলুক, পকেটে টাকা না থাকলে মনে শান্তি থাকেনা। কোথাও যেতেও ভাল লাগেনা। গত ৫ দিন ধরে আমার হাত একেবারেই খালি যাচ্ছে। এই কারণে গত পাঁচ দিনে আম কোথাও বের হইনি। ঘরেই শুয়ে বসে কেটেছে দিন-রাত।

পাঁচদিন পর আজকে রবিন ভাইয়ের কাছ থেকে ২০০ টাকা ধঅর নিলাম। টাকা টা পকেটে রাখতেই কেমন যেন একটু সুখানুভূতি অনুভব করলাম মনে। আহ্ শান্তি। টাকা না থাকলে যেমন অশান্তি টাকা থাকলেও অশান্তি। ২০০ টাকা হাতে আসতেই বাউলা মনটা যেন শীতনিদ্রা থেকে জেগে উঠল।

বাইরে যাওয়ার জন্য খোঁচাখুচি শুরু করল। মনটা যেমন বাউলা আমিও আউলা হইলাম। মোবাইলে ব্যালেন্স ছিলনা তাই মোড়ের ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে মোবাইল ব্যালান্স রিচার্জ করলাম। ফোন দিলাম সানভীর ভাইকে। “ভাই অনেকদিন লেকে যাইনা, আজকে শুক্রবার আছে, চলেন একটু লেকে যাই।

” আমিও যেমন আমার বন্ধুও তেমন, বলতে দেরী নাই, “দাড়াও আসতেছি, সিগন্যাল এ আসো। ” মেজাজটাও ফুরফুরে। শিস বাজাতে বাজাতে রেডি হতে লাগলাম। একজনের পরামর্শনুযায়ী কালো রঙের একটা শর্ট পাঞ্জাবী পড়লাম। বাইরে শীত লাগতে পারে ভেবে পাঞ্জাবীর ভেতরে একটা টীশার্টও পড়ে নিলাম।

“হুম, লুকিং ভেরী হ্যান্ডসাম, ম্যান…। ” সিগন্যাল এ দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশের মানুষ দেখছি। রিকশায় কোন সুন্দরী মেয়ে গেলে আঁড়চোখে তাকাচ্ছি আর সানভীরের জন্য অপেক্ষা করছি। সানভীর আসলো, আমরা রাস্তা পার হয়ে লেকের দিকে হাটতে লাগলাম।

লেকে আমাদের একটা প্রিয় জায়গা আছে। আমরা বেশির ভাগ সময় ওইখানেই বসি। এবারও ওইদিকেই হাটতে লাগলাম। আমাদের প্রিয় বসার জায়গাতে বসে চা ওয়ালার কাছ থেকে রং চা খেলাম। কিছুক্ষন বসে থাকার পর রবীন্দ্র সরোবর এ যেতে ইচ্ছা হল।

সাধারণত শুক্রবারে রবীন্দ্র সরোবরের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান থাকে। তাই ভাবলাম গিয়ে দেখে আসি, কিছু হচ্ছে কিনা। হেটে হেটে রবীন্দ্র সরোবরের মুক্তমঞ্চে আসলাম। কিছু হচ্ছেনা। সেখানে এমনিতেই বিকেলবেলা অনেক শান্তিপ্রিয় মানুষ আসে।

আর সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে ব্যস্ত মানুষ গুলো একটু হাঁপ ছাড়তে পুরো পরিবার, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে লেকে এসে ভীড় করে। কি করবে, ঢাকা শহরে এমন খোলামেলা পরিবেশ আর কই পাবে। যেখানেই যাও বড়বড় বিল্ডিং আর গাড়ির ধোঁয়া। আমরা একটু খালি জায়গা দেখে বসলাম। আমার এখানে বসে থাকতে ভাল লাগে।

অনেক রকম মানুষ দেখা যায় এখানে। কত বিচিত্র স্বভাবের। মানুষ দেখে দেখেই বেশ সময় কাটিয়ে দেয়া যায়। আমাদের পাশে কতগুলো ছেলে গীটার বাজিয়ে গান করছে। ভালই গায়।

গান শুনতে শুনতে আশেপাশে দেখতে থাকি। আমাদের কিছু দুরেই একটা মেয়ে তার খাতায় কি যেন আঁকছে খুব মনোযোগ দিয়ে। ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম বায়োলজী সম্পর্কিত কিছু স্কেচ। ব্যবহারিক সম্ভবত। আঁকার হাত ভালই।

হঠাৎই চোখাচোখি হয়ে গেল। মেয়েটা উপজাতি। দেখতে বেশ সুন্দর। সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিল। আমিও অন্যদিকে তাকালাম।

দূরে দেখছি একটা খুব কিউট ছোট্ট মেয়ে ভীষন দৌড়াদৌড়ি করছে, ওর মা কলার ধরে পিছে পিছে হাটছে। ভীষন বেগ পেতে হচ্ছে মেয়েটার সাথে তাল মিলিয়ে রাখতে। বেশ মজা পেলাম এটা দেখে। আহা, ঢাকার বাচ্চারা ছোটাছুটি করার জন্য কোন জায়গা পায়না। এই দেখে আমার নিজের দুরন্ত শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল।

কি দুর্দার দিনগুলিই না ছিল সেইসব। ঠোটের কোণে অজান্তেই হাসি চলে আসে। দিনের আলো নিভে গেল বসে থঅকতে থাকতে। আমার ছাত্র আসবে, তাই আমাকে ঘরে ফিরতে হবে। উঠলাম আমরা।

ফিরে এলাম আবার সেখানে, আমার রুমে। এই মাঝের সময়টাতে খরচ হয়ে গেছে অনেকগুলো টাকা। দুদিন পর আবার শুন্য হয়ে পড়ব। যতদিন না বাড়ি থেকে টাকা আসে। এখনো বাপের হোটেলে খাচ্ছি।

................................ মূল প্রকাশঃ ব্লগ ছবিসূত্র
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.