আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইংরেজদের সাথে মীর জাফরদের চুক্তি। ধারাবাহিক-১



এটা ১৭৫৭ সালের কথা। ১৯৫৭ এবং পলাশী দুটো আমাদের এক কঠিন ইতিহাসের স্বাক্ষী। পলাশী এক ঐতিহাসিক নাম, এক ষড়যন্ত্রের নাম। যে ষড়যন্ত্রের পরিণতিতে বাংলার স্বাধীনতা ২০০ বছরের জন্য হারিয়ে গিয়েছিল। আমরা আজ বলব সেই সর্বনাশী পলাশির কথা।

সবাই জানেন, পলাশীর যুদ্ধটা ছিল একটা ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধ। নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে মীর জাফর, জগৎশেঠ, রাজবল্লভরা, রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে বিদেশী বেনিয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাথে যে ষড়যন্ত্র করেছিল, তারই পরিণামে সংঘটিত হয়েছিল ওই পলাশীর যুদ্ধ। ইংরেজ বেনীয়াদের সঙ্গে মীরজাফরদের একটি চুক্তিও হয়েছিল। ওই চুক্তিতে দুয়ের মধ্যে লেন-দেন এর কথাও ছিল। অনেক ত্যাগের পর আমরা ইংরেজদেরকে বিতারিত করতে সক্ষম হয়েছি।

এরপরও এই অঞ্চল ও এই দেশকে নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হয়েছে। ক্ষমতা পাওয়ার লোভে এ দেশেরই কিছু লোক ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে মীরজাফরের মতো কিছু গোপন চুক্তিও করেছিল। সেই সব চুক্তি গুলো ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশের চিন্তা থেকে প্রথম মীরজাফর আর ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মধ্যে গোপন চুক্তিটি প্রকাশ করা হলো। চুক্তিটি ছিল নিম্মরূপঃ- ধারা-১ : নবাব সিরাজউদৌলার সঙ্গে শান্তিচুক্তির যেইসব ধারা সম্মতি লাভ করিয়াছিল, আমি সেইসব ধারা মানিয়া চলিতে সম্মত হইলাম। ধারা-২ : ইংরেজদের দুশমন আমারও দুশমন, তারা ভারতবাসী হোক অথবা ইউরোপীয়।

ধারা-৩ : জাতিসমূহের স্বর্গ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় ফরাসীদের সকল সম্পত্তি এবং ফ্যাক্টরীগুলি ইংরেজদের দখলে থাকিবে এবং আমি কখনো তাহাদিগকে (ফরাসীদেরকে) এই তিনটি প্রদেশে আর কোন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করিতে দিব না। ধারা-৪ : নবাব সিরাজ কর্তৃক কলিকাতা দখল ও লুণ্ঠনের ফলে ইংরেজ কোম্পানী যেইসব ক্ষতির সম্মুখীন হইয়াছে তাহার বিবেচনায় এবং তার জন্য মোতায়েনকৃত সেনাবাহিনীর জন্য ব্যয় নির্বাহ বাবদ আমি তাহাদিগকে এক ক্রোড় তঙ্কা প্রদান করিবো। ধারা-৫ : কলিকাতার ইংরেজ অধিবাসীদের মালামাল লুণ্ঠনের জন্য আমি তাহাদিগকে পঞ্চাশ লক্ষ তঙ্কা প্রদান করিতে সম্মত হইলাম। ধারা-৬ : কলিকাতার জেন্টু (হিন্দু) মূর (মুসলমান) এবং অন্যান্য অধিবাসীকে প্রদান করা হইবে বিশ লক্ষ তঙ্কা। (ইংরেজরা হিন্দুদেরকে ‘জেন্টু’ এবং মুসলমানদেরকে ‘মূর’ ও ‘মেহোমেটান’ বলে চিহ্নিত করত।

) ধারা-৭ : কলিকাতার আর্মেনীয় অধিবাসীদের মালামাল লুণ্ঠণের জন্য তাহাদিগকে প্রদান করা হইবে সাত লক্ষ তঙ্কা। ইংরেজ, জেন্টু, মূর এবং কলিকাতার অন্যান্য অধিবাসীদের প্রদেয় তঙ্কার বিতরণ ভার ন্যস্ত রহিল এডমিরাল ওয়াটসন, কর্ণেল ক্লাইভ, রজার ড্রেক, ইউলিয়াম ওয়াটস, জেমস কিলপ্যাট্রিক এবং রিচার্ড বীচার মহোদয়গণের উপর। তাঁহারা নিজেদের বিবেচনায় যাহার যেমন প্রাপ্য তাহা প্রদান করিবেন। ধারা-৮ : কলিকাতার বর্ডার বেষ্টনকারী মারাঠা ডিচের মধ্যে পড়িয়াছে কতিপয় জমিদারের কিছু জমি; ওই জমি ছাড়াও আমি মারাঠা ডিচের বাইরে ৬০০ গজ জমি ইংরেজ কোম্পানীকে দান করিব। ধারা-৯ : কল্পি পর্যন্ত কলিকাতার দক্ষিণস্থ সব জমি ইংরেজ কোম্পানীর জমিদারীর অধীনে থাকিবে এবং তাহাতে অবস্থিত যাবতীয় অফিসাদি কোম্পানীর আইনগত অধিকারে থাকিবে।

ধারা-১০ : আমি যখনই কোম্পানীর সাহায্য দাবি করিব, তখনই তাহাদের বাহিনীর যাবতীয় খরচ বহনে বাধ্য থাকিব। ধারা-১১ : হুগলীর সন্নিকট গঙ্গা নদীর নিকটে আমি কোন নতুন দুর্গ নির্মাণ করিব না। ধারা-১২ : তিনটি প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হইবা মাত্র আমি উপরিউক্ত সকল তঙ্কা বিশ্বস্তভাবে পরিশোধ করিবো। অসমাপ্ত......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.