আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই..পাই যদিবা.ক্ষণেক্ষণে হারাই
Click This Link এর পর........
হুম। এবার বলি পাগল ছেলেটার কথা। স্বভাবে উড়নচন্ডী ছেলেটার কাছে প্রেম ভালবাসা ব্যাপারটা খুব যে বাঁধাধরা,এবং করতেই হবে-এমন ব্যাপারটা খুব একটা কাজ করেনা। মাঝে মধ্যে মনে হয় ওর হয়ত কোন বন্ধনে জড়ানোর কথা ই না। যেমন চলছে জীবন ,চলুক না!কি হবে এসব ভেবে!
ওর জন্য এই সমস্ত পৃথিবীতে কোথাও কেউ আছে,শুধু ওরই প্রতীক্ষায়-এই চাওয়াটাও মাঝে মধ্যে বড্ড বেশি বেশি মনে হয়।
কারও বাঁচার কারণ হওয়া,বা কাউকে ঘিরে বাঁচতে চাওয়ার ইচ্ছাটা অবশ্য মাঝেমধ্যে একেবারে হয়না বললে মিথ্যা বলা হবে। তারপরও এসব নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না সে। ভাবে,জীবন ,যেমন তার গতিতে যাচ্ছে,তাকে তার মতই চলতে দেয়া হোক।
হুটহাট প্রেমে পড়ে যাওয়ার মত ছেলে সে না। বেশ গভীরভাবেই সে সবকিছু চিন্তা করে।
নিরুকে ভাললাগছিল খেপাতে,কিন্তু পরে আবার কেমন যেন লাগছিল-বেশি বলে ফেললাম??এরকম ভেবে। বেশ অনেকদিন কোন যোগাযোগ ও হয়নি,শ্যামা আর তার ভালবাসার মানুষের মধ্যে সমস্যা চলছে,ওরা ওদের দুজনেরই খুব কাছের মানুষ,দুইজনই চায় ওরা ভাল থাকুক,এই ব্যাপারটা শেয়ার করার থেকেই কথাবার্তাটা আসলে শুরু হয়।
সে প্রায়ই বিষন্ন হয়ে যেত,ভাবত কেন এত কষ্ট হচ্ছে ওর এত প্রিয় দুজন মানুষের?কিছু কি করার নাই ওর?এভাবে চোখের সামনে দুজন বন্ধুকে কষ্ট পেতে দেখতে যে আর ভাল লাগছেনা তার।
শ্যামাকে ধরে রাখতে পারে শুধুই নিরু,তাই নিরুকে খুঁজে ফেরা। ঐদিন যখন শ্যামা কাঁদছিল,নিজের ছোট বোনের মত করে আদর লাগছিল তখন,নাহ,ও পারেনা কারও কান্না থামিয়ে দিতে।
তাই শ্যামার সবচেয়ে কাছের মানুষকেই বলে দেয়া-একটু দেখো তো ওকে,একটু সাপোর্ট দিও!
আর এভাবেই আস্তে আস্তে দেখা হতে থাকা।
একসময় শ্যামা আর পলিনের বাইরেও,লুকিয়ে মিশে যাওয়া একটা নির্ভরতা। হুম সেটা নিরুর প্রতি।
মেয়েটাকে যত দেখে ততই মুগ্ধ হয় সে। এত চমৎকার ভাবে সম্পর্কগুলোকে আগলে রাখতে পারে মেয়েটা।
কেন জানি ওর সাথেই থাকতে ইচ্ছা করে। ক্লাস শেষ হয়ে গেলে ইচ্ছা করে ওর জন্য অপেক্ষা করতে। মেয়েটা কি কিছু বুঝতে পারছে??
আর সেই কি কিছু বুঝছে?কেন এমন হচ্ছে?
ঐদিন যখন নিরু আর ও চারুকলার ফ্রাইড চিকেন খেয়ে টিএসসির পুকুর টাতে এসে বসল
যখন বৃষ্টি শুরু হল,তখন যখন মেয়েটা পানিতে নেমে কৃত্রিম সেই পুকুর পারটাতে ধরে হেঁটে যাচ্ছিল,ওর কেন চোখ ভরে যাচ্ছিল?
কেন ও বলেছিল নিরুকে
"প্লিস,আসো,আমার ভয় হচ্ছে"
ভয়টা কিসের ছিল?
নাহ,সেটা পানি বা বৃষ্টির জন্য ছিলনা,সেটা ছিল নিজেকে খুঁইয়ে দেয়ার ভয়,নিরুর প্রতি আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পরার ভয়।
লাল-কমলা ফতুয়া আর নীল জিন্স পরা নিরু যখন বৃষ্টি ঢাকার জন্য ওর ওড়নাটা মাথায় তুলে দিল-সেই মেয়েটার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল সে।
মুগ্ধতাটা কি করে জানি বেড়েই যাচ্ছিল,বাসায় ফিরে নিরুর ছবিটা খুলে এক দৃষ্টিতে বার বার তাকিয়ে থাকা,কেন এত ভাল লাগছে?
ওর লেখা আগের সব কবিতাগুলো যখন লেখা তখনতো নিরুকে চিনতও না সে,কিন্তু কেন মনে হচ্ছে এটা শুধুই নিরুকে নিয়ে লেখা?
মেয়েটাকে খেপাতে খুব ভাল লাগে ওর,মেয়েটাকে রেগে গেলে খুব মজার লাগে দেখতে,নাকটা লাল হয়ে যায়,আর ঘামতে থাকে খুব।
ফোস ফোস করে তখন বলে-
- তুমি বেশি বাড়ছ,তোমাকে যদি আমি সাইজ না করছি,দেইখো!!
মাইর দিব কিন্তু বললাম
এটা বলতে বলতেই নিরু মারার জন্য হাত বাড়ায়,আর তখন সে আবারও বলে
-তাই??তুমি আমাকে মাইর দিবা?নাগাল পাবা তো?মই লাগবে তো তোমার!!
নিরু তখন আরও খেপে যায়,মেয়েটাকে এভাবে জালাতে কেন জানি ভাল লাগে খুব,কয়েকদিন যদি না জালানো হয়,নিজেরই কেমন লাগতে থাকে।
এই মেয়েই আবার যখন নিজেকে নিয়ে পচাতে থাকে ওর কেন এত কষ্ট হয়?
মেয়েটার নিজেকে নিয়ে অনেক কেমন যেন সংকীর্ণতা,একদম ভাল লাগে না এটা ওর। ও মেয়েটাকে বলেছে ,ভালবাসে,মেয়েটা শুধু কেন বারবার বলে,ওকে ছোট হতে হবে মেয়েটার জন্য??
ও তো কারও কিছু তোয়াক্কা করেনা,ওর কাছে এই মেয়েটাতো দেবী,ওর নিজের মনের যেই মন্দির টা আছে,সেখানে এই মেয়েটাকে ভালবাসার পূজা করতে চায় ও,মেয়েটা কেন এটা বুঝেনা?
আর এত সহজভাবে মিশে যাওয়া মেয়েটাকে কেন কেউ অপছন্দ করবে?ওর বন্ধু সার্কেল তো এমন না। মেয়েটার মধ্যে নিজেকে নিয়ে যেই ছোট ভাবার ব্যাপারটা সেটা ও কি করে দূর করবে?ও নিজেও তো এমন কিছুনা,যে ওর জন্য কোন রাজকন্যা লাগবে!নিরু হয়ত পৃথিবীর সবচে সুন্দর মেয়ে না,কিন্তু ওর জন্য তো নিরু ওর জীবনের সবচেয়ে চমৎকার মেয়েটা,যাকে ওর নিজের ভাবতে ইচ্ছা করে,হোক ও খুবই সাধারণ,ওর চোখে এই মেয়েটাই অসাধারণ -ওরই নিরুপমা,কি করে বুঝাবে ও এই পাগল মেয়েটাকে??
নিরুকে বলার আগে নিজেকে অনেক বুঝে দেখতে চেয়েছে সে। নাহ,এটা কোন ঝোক না,আসক্তি আকর্ষণ আর ভালবাসার প্রত্যেকটা সরলরেখার পার্থক্যগুলো কে খুব ভালভাবে পরখ করে দেখেছে।
আর বারবারই বুঝেছে-এটা আসক্তি বা আকর্ষণ না,তাহলে এই মেয়েটা ওর হোক বা না হোক,মেয়েটা কাঁদলে ওর কেন এত কষ্ট লাগে?কেন পারেনা নিজেকে ধরে রাখতে?
অনেক দিন ধরেই ভাবছিল বলবে কিনা,কখনও কাউকে বলেনি,কখনও কাউকে বলবে ভাবেওনি। সেদিন খুব প্রিপারেশন নিয়ে গিয়েছিল
খুব ইচ্ছা ছিল কোন এক গানের ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে বলবে ও নিরুকে।
নিরুদের ডিপার্টমেন্টের নবীন বরণ ছিল,কালো শাড়ি পরা নিরু আসল। ও ওর ব্যাগথেকে একটা বেলী ফুলের মালা দিল নিরুকে। আর অপেক্ষা করছিল কখন ঐ গানটা হবে,প্রিয় ব্যান্ড এসেছে,তাদের নতুন এলবামের সবগুলো গান হয়ে গেল,কিন্তু ট্র্যাক নম্বর- ২ বাজেনা কেন?
নিরুর দেরি হয়ে যাচ্ছিল,বাড়ি চলে গেল সে।
এবং তারপরই বাজল গানটা,বোকার মত বসে রইল সে।
তার পরেই একদিন সব ঠিক করে বলে দিয়েছিল সে।
নিরু কোন উত্তর দেয়নি এখনও। সেও সময় দিচ্ছে। এত বড় একটা সিদ্ধান্ত সময় নিয়েই নেয়া উচিত,কষ্ট হচ্ছেনা তা না,তবুও,এটাই ঠিক।
********
বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার ট্যুরে এসেছে সে,ইতিমধ্যে কেউ কেউ জেনে গেছে ওর নিরুকে বলে দেয়ার কথা,ঠাট্টামশকরা ভালরকমই পোহাতে হচ্ছে।
কেউ কেউ বলছে ওর এই অবস্হার কথা নিরুকে বলে দিতে,যদি কিছু সহানুভূতি পাওয়া যায়,
কিন্তু ওতো সহানুভূতি চায়না,একদমই না,ও শুধু চায় ভালবাসা,ওর নিরুর ভেতর থেকে আসা ভালবাসা।
হাঁটছিল একা,হঠাৎকরে কেন জানি ইচ্ছা হচ্ছে,নিরুটা যদি পাশে থাকত!
একটা বার ওর হাতটা ধরে হাঁটতে পারত ও!
ফোনের কিপ্যাডটা্য় বারবার নিরুর নাম্বার টা ডায়েল করতে ইচ্ছা হচ্ছে,কিন্তু এটা কি খুব খারাপ হবে?যোগাযোগটা যতটা সম্ভব কম করছে ওরা এই সময়টায়,ও চায়না নিরু প্রভাবিত হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিক।
কিন্তু আর যে পারছেনা ও,একবার শুধু ফোনটা করে ফেললে কি হবে?
ডায়েল করল নম্বরটা,
-হ্যালো!
-নিরু তুমি কি আমার সাথে কখনও কক্সবাজার আসবা?
বলেই ফোনটা কেটে দিল সে। নাহ,উচিত হয়নি বোধহয়,শোনা হল না নিরুর কথা আর!ধুর!নিজের কাছে নিজেকেই কেমন যেন লাগছে!
বার্মিজ মার্কেটে একটা থামি দেখে খুব ভাল লাগল,যা-ই দেখে সব কিনতে ইচ্ছা হচ্ছে নিরুর জন্য।
কিন্তু নিরুর জন্য কেনার অধিকার কি আছে ওর??
ও জানেনা!
***********
আজ জন্মদিন ছিল ওর,কিছু বন্ধুরা ওর জন্য কেক কিনে এনেছে। কাটল ও,এর মধ্যে দুটা কেক তুলে রেখেছে,নিরু আর শ্যামার জন্য,নিরু ক্লাস শেষ করে আসল,নীল জমিনের লাল পাড়ের মনিপুরি সেলোয়ার কামিজটা পরে আছে ও। জন্মদিনের দিনগুলো নিয়ে ওর তেমন উচ্ছাস কাজ করেনা। অপেক্ষা করছিল দেখা হবার,শ্যামা আর পলিন ও আসল,দুজনকে নিয়ে গেল কাটাবনের শর্মা হাউজে।
খাচ্ছিল ওরা,কিন্তু বুঝতে পারছিল,শ্যামা আর পলিন ভাল নেই।
কেউ কিছু বলছেনা,মনটাই খারাপ হয়ে গেল ওর!
যাওয়ার সময় নিরুকে বলল সব,ওর জন্মদিনটা এত বাজে গেল আজকে,কাছের দুজন মানুষ ভাল নেই দেখলে কিভাবে ভাল লাগে!তাও ভাগ্যিস নিরুটা ছিল সাথে। না হলে কাকে বলত ও এসব!
************
ক্লাস শেষে বের হল ও,নিরুর ফোন এসেছে,দেখা করবে।
কালকের জন্মদিনের পর মনটা বেশ খারাপ হয়ে আছে। নিরু কি এটা বুঝে?কেন দেখা করবে নিরু?অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মনে।
বের হয়েই দেখল,নিরু ওর দেয়া থামিটা পরে এসেছে,মনটা ভাল হয়ে গেল একদম!কালকের কষ্টটা পুষিয়ে দিতেই নিরু এটা করেছে বুঝতে পারে সে।
তার কষ্টটাকে কেউ এভাবে নিজের মত করে দেখে মন ভাল করে দিতে চাইছে এটা কি কম পাওয়া?
-আরে !তোমাকে তো awefully beautiful লাগছে!
--ধুরো,দেখো সবাই কেমনে তাকায়ে আছে?আমাকে খুব কার্টুন কার্টুন লাগছে,তাইনা?
-আরে ,মানুষ তাকায়ে আছে এই কারণে,কারণ অন্যান্য দিন তোমাকে যেমন কার্টুন কার্টুন লাগে,আজকে হঠাৎ লাগছেনা কেন সেটা বুঝার জন্য
-তুমি!!!আমি তোমাকে খুন করব!!
হুম,মেয়েটাকে এভাবে কেন জানি খালি খেপাতে ইচ্ছা করে!
সারাদিন ঘুরল ওরা,বিকেলে এসে বসল ক্যাফেটেরিয়াতে,
একটা কাগজে লিখছিল নিরু,দেখতে গেল ও,নিরু সরিয়ে ফেলল।
তারপর লিখল
-কেন এমন কর?আমাকে কেন এত নাড়িয়ে দিচ্ছ তুমি??
আমার ভয় হয় খুব!
--আমি যে তোমার মাঝেই নিজেকে খুঁজে পেয়েছি নিরু। কি করব বল?
-ছেড়ে যাবানা তো?
--নাহ,আমি কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবনা,তোমাকেও ছেড়ে যাইতে দিবনা।
-আমাকে কেন ভালবাস?আমি তো খুব সাধারণ,কোন আলাদা কিছু নাই আমার!
--simplicity কি unique না?
তারপর একটা গানের লিরিক লিখল নিরু-
ভালবাসিনা আমি তোমাকে,বলেছিলাম।
ভালবাসিনা আমি তোমাকে
একদমই না!তুমি আমার কে?
--তাই না?
-হুম,তাই।
আমার খুব ভয় হয়,খুব,কেন এমন করতেছ আমার সাথে?কেন আমাকে এভাবে স্বপ্ন দেখাচ্ছ?কেন এত নাড়াচ্ছ আমাকে?
--কারণ আমার একটা মন্দির আছে,সেই মন্দিরে একটা দেবী আছে,আমি সেই দেবীটাকে পূজা করতে চাই
-আমি দেবী না!আমি খুবই সাধারণ একটা মেয়ে!
--আমি তোমাকেই ভালবাসি,এই অসাধারণ রকমের সাধারণ কেই ভালবাসি।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর মেয়েটা লিখল
ভালবাসি আমি তোমাকে,
কখনও বলবনা
আমি তোমার যে!
***************************************************
অনেক বড় হয়ে গেল,জানিনা,আটকাতে পারছিলামনা অনেক কিছুই লিখতে,যে গানটার জন্য পাগল ছেলেটার প্রথমদিন বলা হয়নি নিরুকে সেটা দিলাম-
http://www.youtube.com/watch?v=-EmYt_2sYgw
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।