ব্লগে আসার বা থাকার কোন কারন খুজে পাই না,তবু পুরনো টানে বার বার আসি সামুতে
কফিনের কোনার ছোট ফুটোটি দিয়ে আরও এক ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ল। তার দিকে কারও দৃষ্টি গেল না। আর যাবেই বা কিভাবে?সামনে যে সাদা ধুতি পরিহিতা এক মধ্যবয়স্কা,একটি কিশোর আর এক কিশোরীকে নিয়ে কফিনকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কাঁদছে।
তার একটু দুরেই সীমানাহীন বাড়িটির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে আছে দেশের স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস। তার গায়ে লেখা “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার”।
প্রধানমন্ত্রী বাসটিকে উপহার দিয়েছেন বটে,সে উপহার শুধু জীবিত ছাত্র নয়,সামনে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে মৃত ছাত্র বহনের জন্যও।
মায়াদেবীর জন্য আজ সবার মায়ার অভাব নেই। অবশ্য পৃথিবীর কোন মায়াই মায়াদেবীকে তার হারান সাত রাজার ধনটিকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। টাই আর সবার মতোই লাশের সাথে আসা অপুর বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক রুস্তম সাহেবও নির্বিকার। এক আধ বার মায়াদেবীর দিকে হাত বারিয়ে যেতে চেয়েছেন কিন্তু তার বিবেক যে তাকে বাঁধা দিচ্ছে।
যে সুখের জন্য মায়াদেবী এতটা বছর অপেক্ষা করেছিলেন,স্বামীর মৃত্যুর পর আদরের বড় সোঁতাটিকে কপালের সিঁদুর মুছে হাতের শাখা ভেঙে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন আর তার এই জমানো তিলের হাড়িটা একটা বুলেটের আঘাতেই যে ভাঙ্গে যাবে তা কি কেউ ভেবেছিল।
স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর হিন্দু সমাজের কত বড় বড় ঋষি মনিষীই না তাকে কপালের সিঁদুর মুছতে নিষেধ করেছিলেন,হাতের শাখা না ভাঙতে বলেছিলেন। কিন্তু মায়াদেবী তা করতে পারেন নি একটি কারণেই। অপুর মুখের দিকে তাকিয়ে।
স্বামীর মৃত্যুর সময় অপুর বয়স ছিল ১২,ষষ্ট শ্রেণীর ছাত্র সে,অর্জুন সবে তিন বছরে পা দিয়েছে।
আর মৈত্রী ত পৃথিবীর আলোই দেখেনি। সংসারের সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে,সব কিছুর বিনিময়ে অপুকে S.S.C,H.S.C পাশ করিয়ে ভরতি করিয়েছিলেন স্বনামধন্য এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার বুক ভরা স্বপ্ন,তার অপু একদিন মানুষের মত মানুষ হবে।
******************
একি এলাকার ছেলে সুনীল। একটি রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য।
অপুর পড়াশোনার সুবিধার কথা ভেবে আর বিশেষ করে এক বিধবা মায়ের অনুরোধের কথায় প্রভোস্ট স্যারের সাথে কথা বলে হলে সিট করে দেয়।
অপুর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কচি সবুজ বৃক্ষের দাল পালা বিকশিত হতে শুরু করে। তার বিভাগের সন স্যারই তার প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার নম্বরে বিস্মিত। গ্রাম থেকে আসা একটা ছেলে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম!ছেলেটি আসলেই মেধাবী। ক্যাম্পাসে কোন রাজনৈতিক দলের নেতাই তাকে কোন দলে নেয়ার চেষ্টা করে নি।
সুনীল ও তাকে রাজনৈতিক দীক্ষা দেই নি।
*****************
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে সুনীলের দলের লকেরা প্রুতিপক্ষ দলের সমর্থক দের মারধর করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। প্রতিদিনের মত সেদিন ও টেবিলে পড়তে বসেছে অপু। উত্তেজিত প্রতিপক্ষ সেদিন সুনীলের সমর্থক ও পরিচিতদের উপর প্রতিশোধ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
অপু অতটা বোঝে নি,হটাত গলাগুলির শব্দে তার বোধ হয়। এর মধ্যে সুনীলের একটা ফোন পায়। সুনীল অপুকে বলে,ক্যাম্পাসের আমাদের মারামারি লেগেছে। তুই রুমে তালা লাগিয়ে বাইরে পালিয়ে যা।
অনু সুনীলের কথামত তালা লাগাতে যায়।
ততক্ষণে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের একটা বুলেট তার মাথার বা পাশে লাগে। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়ে,একবার মাথা তুলে তাকাতে চায়। কিন্তু হিংস্র হায়েনার শক্ত বুলেটের চাপে চুপসে যায় সে।
হৃদয় নিংড়ানো শত ধিক্কার আর বঞ্চনা জানাই তাদের,যাদের আঙ্গুলি হেলনে অপুর মত নিষ্পাপ প্রাণ অকালে ঝড়ে যায়। মায়াদেবীর মত মায়ের বুক খালি হয়।
আর মৈত্রীর মত অবুঝ শিশুর চোখের কনে অশ্রু জমা হয়। কিংকর্তব্যবিমুঢ হয়ে যাই আমরা। ধিক্কার জানাই তাদের যারা এ ব্যাপারে উৎসাহিত করে। আমরা আর যেন কিংকর্তব্যবিমুঢ না থাকি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।