আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্পঃ ছায়াসঙ্গী

আমিই সেই জন, যাকে খুঁজিয়াছ অকারন... *** মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শফিউর রহমান ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছেন। ছেলেটার নাম মুহিব। অল্পবয়স। এই বয়সের ছেলেগুলো অস্থিরধরনের হয়ে থাকে। অকারনে একজায়গায় বসে থাকতে পারে না।

উশখুশ করতে থাকে। এটাই তারুন্যের ট্রেডমার্ক। তাদের চোখে একধরনের উজ্জ্বলতা খেলা করে। অন্যবয়সের চোখে যেটা অনুপস্থিত। কিন্তু মুহিবের চোখদু'টো নির্লিপ্ত-শূন্য।

অনেকটা মরা মাছের চোখের মত। তবে তার শুকনো চেহারায় কিছু একটা আছে। মায়া মায়া লাগে। ছেলেটির সমস্যাটাও বেশ অদ্ভুত। এতক্ষন ধরে যা শুনলেন তাতে তাকে ভয়াবহও বলা যায়।

'স্যার, আমি একটা সমস্যায় আছি। আমাকে বাঁচান। ' ছেলেটি এসেই মাথা নিচু করে কথাগুলো বলেছিল। 'আমার কাছে সবাই সমস্যা নিয়েই আসে। কেউ এখানে বেড়াতে আসে না ইয়াংম্যান।

তাছাড়া আমার চেহারাও খুব একটা সুবিধার না যে মানুষ আমাকে দেখতে আসবে। স্কুললাইফে আমার একটা নিকনেম ছিল। নামটা বেশ সুন্দর- পেঁচা। দ্য আউল। ' মুহিব হেসে দিল।

সহজ-সরল হাসি। শফিউর রহমান হাঁফ ছাড়লেন। এসবক্ষেত্রে রোগীকে সহজ করে তোলা বেশ বড় ব্যাপার। একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সাফল্যের অনেকটাই নির্ভর করে এর উপর। 'চা খাবে? চা খেতে খেতে না হয় তোমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।

' ছেলেটা নিঃশব্দে চা খেতে অভ্যস্ত না। সে মৃদুশব্দে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। 'স্যার, আমার নাম মুহিব। মুহিব আরমান। ' সে থামল।

যেন বুঝতে পারছে না কোত্থেকে শুরু করবে। কিছুটাসময় বিরতি দিয়ে আবার শুরু করল। 'আমি অ্যাকাউন্টিং-এ মাস্টার্স করেছি বছরখানেক আগে। এখন একটা চাকরির চেষ্টায় আছি। ঢাকায় একলাই থাকি।

এক রুমের ছোট একটা বাসা ভাড়া নিয়ে। আর বাড়িওয়ালার বাচ্চাদুটোকে পড়া দেখিয়ে দেই। অনেকটা লজিং টাইপের ব্যবস্থা। ' সে চায়ের খালি কাপটা টেবিলের দিকে ঠেলে দেয়। 'সমস্যাটার শুরু মাসখানেক আগে।

একে সমস্যা বলব কিনা বুঝতে পারছি না। এটা আরো বেশি কিছু। সেদিন একটা ইন্টারভিউ ছিল। যথারীতি ইন্টারভিউ ভালো হয় নি। ভাইভাবোর্ডে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করেছে।

মনটা খুব খারাপ। সারাদিন রাস্তায় অগোছালো হাঁটাহাঁটি করলাম। ঘরে ফিরলাম রাত করে। আমার রুমটা ছাদের উপরে- চিলেকোঠার মত। রাতে বেশ হাওয়া পাওয়া যায়।

ক্লান্ত ছিলাম, কিছু খাইওনি- অস্বস্তি লাগছিল। ভাবলাম গোসল করে আসলে হয়ত ভালো লাগবে। ' 'গোসল থেকে বের হয়েই চমকে উঠলাম। আমার চেয়ারে কেউ একজন বসে আছে। উল্টোদিকে ফিরে রয়েছে বলে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না।

ভাবলাম গোসল করার সময় হয়ত আগন্তক ঘরে ঢুকেছে। কিন্তু তা কি করে হয়? স্পষ্ট মনে আছে আমি নিজের হাতে ছিটকিনি লাগিয়ে চেক করেছি। এটা আমার বহু পুরনো অভ্যাস। ভুল করার প্রশ্নই আসে না। ' মুহিব পকেট থেকে রুমাল বের করে তৈলাক্ত কপালের ঘাম মুছল।

ফুল আঁকা নীল রঙের রুমাল। ঘরে এসি চলছে। তবুও ঘামছে ছেলেটা। শফিউর রহমান বেল টিপে পানি দিতে বললেন। পানি দিয়ে গেল।

'আমি ভীতু না। দুঃসাহসী না হলেও সাহসী বলা যায়। ভূতের ভয় কোনকালেই ছিল না। তবুও মনে মনে যথেষ্ঠ চমকে গেলাম। এক অপার্থিব অনুভূতি।

একবার ভাবলাম দৌড়ে বের হয়ে আসি। পরক্ষনেই তা বাতিল করে দিলাম। দেখাই যাক না কাহিনী কি। স্বাভাবিকভাবেই সামনে এগুলাম। যেন এই সময়ে আমার ঘরে কেউ একজন বসে থাকতেই পারে।

এটা তেমন কোন গুরুতর কিছু না। ' মুহিব থামল। একচুমুকে ঠান্ডা পানির গ্লাসটা খলি করে ফেলল। 'তারপর?' শফিউর রহমান টেবিলের ওপর ঝুঁকে এলেন। তার চোখে নগ্ন কৌতুহলের ঝিলিক।

'সে একটা ম্যাগাজিন পড়ছিল। আমার পায়ের আওয়াজ পেয়েই হোক বা অন্য কোন কারনেই হোক লোকটা আমার দিকে ফিরল। সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। কি ঠান্ডা আর ভয়ংকর হাসি। তা দেখে আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠল।

আমি সাথে সাথে জমে গেলাম। মাথার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেল। লোকটাকে আমি চিনি। বুদ্ধি হবার পর থেকেই চিনি। তার ঐ চেহারাটা আমি আয়নায় অসংখ্যবার দেখছি।

চেহারাটা অন্য কারও না; আমার নিজের চেহারা সেটা। আর লোকটা আমি। আমিই চেয়ারে বসে আছি। ' 'মানে আরেকটা তুমি?' 'জি স্যার' ছেলেটির গলার স্বর কেঁপে যায়। 'সায়েন্সে না পড়লেও আধিভৌতিক কোনকিছু বিশ্বাস করি না।

আমার লজিক বেশ জোরালো। আমি বুঝলাম আমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। সারাদিন অনেক খাঁটুনি গেছে। ক্লান্তি আর খিদেই এর জন্য দায়ী। তাই আমি চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবলাম, যা দেখছি সবই মনের ভুল।

আমার সামনে কেউ নেই। ঘরে আমি একা। মনে মনে আয়াতুল কুরসী পড়ে চোখ খুললাম। ' 'আর দেখলে তুমি তখনো চেয়ারে বসে আছ?' 'না। আমি চেয়ারটা শূন্য দেখলাম।

কেউ সেখানে বসে নেই। ' 'বাহ তাহলেতো হলই। একজন মনোবিজ্ঞানীর মতই এগিয়েছ তুমি ইয়াংম্যান। তারপর?' 'আমি আমার বিছানায় এসে বসলাম। ঘরের বাতাস গরম লাগছিল।

দরজাটা খুলে দেব কিনা ভাবলাম। এমনসময় বাথরুমের দরজাটা খুলে গেল। একটু আগের সে বেরিয়ে এল। সে মানে আমি। আমাকে বলল, ভীষন গরম পড়েছে।

তাই না? এবার আর আগের মত ভয় পেলাম না। চোখ বন্ধ করে আগের মত ভাবলাম। আয়াতুল কুরসীও বাদ গেল না। কিন্তু চোখ খুলে দেখি সে চেয়ারটা নিয়ে আমার সামনেই বসে আছে। মুখে সেই অদ্ভুত হাসি।

আমার সারা শরীর হিম হয়ে এল। ' 'তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আমি তার সাথে বাস করছি। আমি কিভাবে বেঁচে আছি তা শুধু আমি জানি। রাস্তার একটা কুকুরও আমার চেয়ে ভালো থাকে। নানাভাবে তাকে দূর করতে চেয়েছি।

সে আমার ছায়ার মতই লেগে আছে। দুইটা আমি একই ঘরে দিনের পর দিন থাকছি। এটা অনেকটা বিরাটকার কোন শূয়োপোকা বিছানায় নিয়ে ঘুমানোর মত অনুভূতি। একটা অবাস্তব স্বত্ত্বা, কিন্তু তার অস্তিত্ব এতটাই তীব্র যে তা অস্বীকার করা যায় না। এভাবে চলতে থাকলে আমি নিশ্চিত পাগল হয়ে যাব।

প্লীজ স্যার আমাকে বাঁচান। ' তার কন্ঠ থেমে আসে। 'সে কি করে তোমার সাথে?' 'সত্যি বলতে তেমন কিছুই না। শুধু নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। সারাক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।

তার চোখে-মুখে বিদ্রুপ খেলা করে। সে একটানা কথা বলে যায়। আমার অতীতের ভুল- বর্তমানের দুরবস্থা- ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়ে কথা বলে সে। আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা জাগিয়ে রাখে। অধিকাংশ রাতেই এখন আমি ঘু্মাতে পারি না।

' 'তাকে কখন কখন দেখো?' 'প্রথমদিকে মাঝে মাঝে অল্পসময়ের জন্য আসত। এরপর দ্রুত ঘটতে থাকে ব্যাপারটা। এখন আমি যতক্ষন ঘরে থাকি সেও থাকে। ' 'আই সি। তাকে কি শুধু ঘরেই দেখতে পাও? নাকি বাইরেও দেখ?' 'না।

শুধু ঘরেই। তাই এখন না পারতে ঘরে যাই। সারাদিন বাইরেই থাকি। পার্কে পার্কে ঘুমাই। ' 'আর কেউ কি তাকে দেখেছে?' 'না।

সে আর কারও সামনে যায় না। ' 'তার মানে তুমি বিশ্বাস করছ আরেকটা তুমি আছে?' 'বিশ্বাস করছি না। কিন্তু অবিশ্বাসও করতে পারছি না। ' শফিউর রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ছেলেটা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

তিনি আরেক গ্লাস পানি দিতে বললেন। 'তোমার বাবা-মা?' 'ছোটবেলায়ই বাবা-মা মারা যান। গ্রামে এক চাচার কাছে থেকে কলেজ পাশ করি। এরপর ঢাকায় চলে আসলাম। খেয়ে-না খেয়ে, দুইটা-চারটা টিউশনি করে কোনরকমে পড়াশুনা করেছি।

গ্রামের সেই চাচাও মারা গেছেন কিছুদিন আগে। ' শফিউর রহমান সাহেব তার সামনের কাগজে পেন্সিল দিয়ে আঁকিবুকি করতে লাগলেন। দূর থেকে কেউ দেখলে ভাববে তিনি হয়ত স্কেচ করছেন। 'মুহিব' 'জ্বী স্যার' 'যা বলছি মন দিয়ে শোন। তুমি বড় হয়েছ একা একা।

বলা যায় সারাটা জীবনই একা পার করে এসেছ তুমি। মন খুলে কথা বলার জন্য একজন লোকও কখনো তোমার পাশে ছিল না। যার সাথে তুমি কথা বলতে পার, হাসতে পারো। তোমার এই নিঃসীম একাকীত্বই তোমার দ্বিতীয় স্বত্ত্বা সৃষ্টি করেছে। অনেককাল থেকে তুমি একা জীবনযাপন করছ।

তাই তোমার অবচেতন মন আরেকটি 'তুমি'কে তৈরী করেছে তোমার সঙ্গী হিসেবে। ' 'তোমার দ্বিতীয়স্বত্ত্বাকে প্রথমবার তুমি মোটেও বিশ্বাস করনি দেখেই সে চলে গিয়েছিল। পরে তোমার সেই বিশ্বাস আস্তে আস্তে দুর্বল হওয়ার সাথে সাথে তার অস্তিত্ব দৃঢ় হয়। এখন তুমি নিজেই বিশ্বাস করছ এই পৃথিবীতে দুজন 'তুমি' আছ। তোমাকে এই বিশ্বাস থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

যে মুহূর্তে তুমি পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারবে ঠিক সেই মুহূর্তে তোমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তোমার ছায়াসঙ্গী দূরে চলে যাবে। ' মুহিব মাথা নিচু করে রইল। তাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। 'এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে খুব খারাপ হবে।

তোমাকে মানুষের সাথে মিশতে হবে। সময় কাটাতে হবে। একা থাকা মানুষের স্বভাব না। মানুষের বাঁচতে হলে পরিবার লাগে, বন্ধুবান্ধব লাগে। মানুষ লাগে।

তোমার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে বলেই প্রকৃতি তোমার সামনে তোমার একটা স্বত্তা এনে হাজির করেছে। তুমি নিয়মে ফিরলে প্রকৃতিও তার অনিয়ম ভেঙ্গে ফেলবে। টিট ফর ট্যাট। ' মুহিব উঠে দাঁড়ালো। 'স্যার আজ তাহলে আসি।

দোয়া করবেন। ' বাইরে তখন সন্ধ্যার স্পর্শ লাগতে শুরু করেছে। অন্ধকার জমাট বাঁধছে। *** 'তুমি আসলে কেউ না' 'আমি কেউ না?' 'না। তুমি আমার কল্পনা।

' 'তাই নাকি। শুনে ভাল্লাগলো। ' নীরবতা। 'আমি কিন্তু প্রমান করে দিতে পারি আমার অস্তিত্ব আছে। প্রমান চাও?' মুহিব কিছু বলল না।

প্রমান চাওয়া মানেই তাকে অর্ধেক স্বীকার করে নেয়া। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দ্বিতীয় মুহিব উঠে যায়। একটা ব্লেড দিয়ে ফিরে আসে। নিজের বাম হাতের তালুতে পোচ বসায়। প্রথমে কিছুই বোঝা যায় না।

কয়েক সেকেন্ডের মাঝে সেখানে রক্তের একটা ধারা দেখা যায়। কালচে লাল রক্ত। বিছানার চাদরে গিয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা। রক্তটা অবাস্তব না। কালচে এবং বাস্তব।

মুহিব চোখ বন্ধ করে ফেলল। তার গা গুলাচ্ছে। 'ডাক্তার কি বলল তোমাকে?' 'তা জেনে কি করবে?' 'কিছু না। কৌতুহল। জানোইতো কৌতুহল মানুষের আদিম প্রবৃত্তি।

যার জন্ম এই পৃথিবীতে না; স্বর্গে। কৌতুহলের কারনেই আদম আর হাওয়াকে বেহেস্ত থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। তাই না?' দ্বিতীয় মুহিব বলতে থাকে। 'তুমি নিশ্চয়ই তাদের আপেল খাওয়ার ঘটনাটি জানো। শয়তান একটা সাপ সেজে...' 'তুমি থামবে দয়া করে?' মুহিবের কন্ঠে আদেশের চেয়ে অসহায়ত্ব বেশি ফুটে ওঠে।

'থামব কেন? কথা বল। শফিউর সাহেবতো তোমাকে কথা বলতে বলেছেন। তাই না? কথা বল। ' মুহিব ঘামছে। ঘামতে ঘামতেই সে চোখবুজে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগল।

একটু ঘুম তার খুব দরকার। আগামীকাল একটা ইন্টারভিউ আছে। 'ঘুমাবে ভাবছ? ঘুমিয়ে কি লাভ বল। তারচেয়ে এসো কথা বলি। তোমার কথা বলা দরকার।

' মুহিব দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে থাকে। ইদানীং মাথায় অসহ্যরকম ব্যাথা হচ্ছে। চাপা কিন্তু স্পষ্ট। 'ঘুমাতে পারবে না। অযথা চেষ্টা করে লাভ নেই।

চার রাত ধরে ঘুমাও নি তুমি। আর কিছুদিন অপেক্ষা কর। ' মুহিব ছটফট করতে থাকে। তার মনে হয় সহস্র বছর ধরে সময় থমকে আছে। রাতগুলো এত দীর্ঘ হয় কেন? ইন্টারভিউটা যাচ্ছেতাই হয়েছে।

এইবার অবশ্য কোন অবাস্তব প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু মুহিবের চোখ লাল ছিল। আর মাথায় অসহ্যরকম যন্ত্রনা। মগজে কেউ যেন রাজস্থানী ছুরি দিয়ে থেমে থেমে কোপ বসাচ্ছে। কি জানতে চাওয়া হয়েছে বুঝে ওঠার আগেই ইন্টারভিউ শেষ।

'আপনার চোখ এত লাল কেন? এনি প্রব্লেম?' ভাইভাবোর্ডের একজন প্রশ্ন করেছিল। 'স্যার কয়েকদিন ধরে ঘুমের প্রব্লেম হচ্ছে। ' মুহিব ইতস্তত করে জবাব দেয়। 'ঘুমের সমস্যাতো ভালো কথা না। ডাক্তার দেখান।

রেস্ট নেন। আমরা পরে আপনাকে জানাবো। ' 'থ্যাঙ্কিউ স্যার' ফ্যাকাশে মুখে মুহিব যখন বের হয়ে আসল ওর চোখে পানি জমতে শুরু করেছে। সে জানে এবারও চাকরিটা হচ্ছে না। দ্রুত রাস্তায় নেমে পড়ল সে।

তাকে নাখালপাড়ায় যেতে হবে। সেখানে রাসেল থাকে। মুহিবের ভার্সিটি-ফ্রেন্ড। পলিটিক্স করে হাত পাকিয়েছে। টাকাও কামিয়েছে বেশ।

কোন এক অজানা কারনে রাসেল ওকে বেশ পছন্দ করে। যেকোন সমস্যায় মুহিবকে তার কাছে যেতে বলে রেখেছে। এতদিন দরকার পড়ে নি। রাসেলকে পাওয়া যাবে কিনা কে জানে। মুহিবের তাকে এখন খুব দরকার।

*** মুহিব যখন ঘরে ফিরল তখন রাত একটা। সারাদিন বাড়িওয়ালার নাতনীটাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। এই হাসপাতাল থেকে ঐ হাসপাতালে। মেয়েটার নাম টুসি। ক্লাস টু তে পরে।

ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিল। ছাদের রেলিং দেয়া হয় নি এখনো। বিকেলে কোন এক ফাঁকে ছাদে উঠেছিল। সারা গা রক্তে মাখামাখি। খুব বাজে অবস্থা।

'কি ব্যাপার এত দেরী করলে যে আজ?' মুহিব চুপ করে থাকে। আজ সে কোন কথা বলবে না বলে ঠিক করেছে। 'টুসির খবর শুনেছতো?' কন্ঠটায় এমন কিছু ছিল যে মুহিবের সারা শরীর কেঁপে ওঠে। 'তুমি আমার কাছে প্রমান চাচ্ছিলে না সেদিন? হ্যাঁ-না কিছুইতো বললে না। ভাবলাম নীরবতাই সম্মতির লক্ষন...' কি করেছে শয়তানটা? মুহিবের হাত-পা কাঁপা শুরু করল থরথর করে।

নিজেকে আর স্থির রাখতে পারল না। বালিশের নিচে রাখা পিস্তলটা বের করে আনল। কালো রঙের বস্তুটা আলোয় চকচক করছে। অস্ত্রটা রাসেলের। অনেক বলে-কয়ে নিয়ে এসেছিল।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই সামনে থাকা মুহিবের মাথায় ঠেকাল নলটা। প্রথমে চমকে গেলেও সামলে নিল সে। জিভ দিয়ে ঠোঁটটা চেটে নিল একবার। কপালের কাছে ঘামের একটা সরুরেখা। চোখের মনিতে ভয় না বিদ্রুপ ঠিক বোঝা যায় না।

'বিদায়' ট্রিগারটা চেপে দেয়ার আগমুহূর্তে ফিসফিস করে ওঠে মুহিব। মুহিব মেঝেতে পড়ে আছে। বড় আয়নাটার সামনে কুঁকড়ে আছে মাথায় গুলিবিদ্ধ দেহটা। তার হাতেই পিস্তলটি। শক্ত করে ধরে আছে।

কালচে লাল রক্তের একটা স্তর মেঝেতে। রক্তের একটা ধারা দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খানিকটা ইতস্তত যেন। বাইরে সুন্দর পূর্নিমা। কেউ দেখলে ভাববে রক্তগুলোর বুঝি জ্যোৎস্না-স্পর্শের শখ জেগেছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।