সব কথা বলা যাবে, সত্যটা বলা যাবে না।
রণযাত্রা
আহমেদ মামুন।
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আর্তে উঠলাম। হাতে সময় আছে মাত্র দশ মিনিট। আব্বা বারান্দায় বসে পত্রিকা পড়ছেন।
আমাকে দেখে পত্রিকা ভাজ করে সামনে রাখলেন। কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করলেন। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে দীর্ঘ বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন। আমাকে তিনি তাঁর সামনে রাখা খালি চেয়ারে বসতে বললেন। আব্বা অবসর প্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্য।
তিনি তাঁর বিখ্যাত রোবট গলায় বললেন, বাবা সব সময় পেছনের সারিতে হাঁটবে। কখনোই ফ্রন্টলাইনে যাবে না। প্রাচীন রোমের যোদ্ধারা ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধ করতে রাজি হতেন না। তাই দাসদের পায়ে শিকল বেঁধে ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা বানানো হতো। আর সব সময় ওখানে চোখ-কান খোলা রেখে চলবে।
সামান্য শব্দে সর্তক হয়ে যাবে। শব্দ শুনার সাথে সাথে মাটিতে শুয়ে পড়বে। তারপর ক্রলিং করে নিরাপদ অবস্থানে চলে যাবে। মনে আছে কী ভাবে ক্রলিং করতে হয়।
আমি বাবাকে আর সুযোগ না দিয়ে ঘরের মধ্যে পা বাড়ালাম।
ছোটচাচার মেয়ে শাম্মী দাড়িয়ে আছে। আমি চলে যাব শুনার পর থেকে ও লুকিয়ে কাঁদছে। অতি আবেগবতী কন্যা আমার হাতের মুঠোয় একটা তাবিজ দিয়ে বলল, ‘আদম আলী হুজুরের কাছ থেকে আনিয়েছি। তিনি বলেছেন এটা সাথে থাকলে আপদ বিপদ কাছে ঘেষবে না। ’
আমি মুচকি হেসে বললাম, কি বলিস পাগলী! পিস্তলের গুলি বুকের কাছে এসে থেমে যাবে তাবিজের মাজেজায়।
ম্যাট্রিক্স রিলোডেড মুভির মত। চোখ বন্ধ করে কল্পনা কর, আমি দাড়িয়ে আছি আমার সামনে থেমে আছে একঝাঁক তপ্ত শিশার বুলেট। শাম্মী আমার মুখ চেপে ধরল। বাকিটুকু আর বলতে পারলাম না।
আম্মা জায়নামাজের উপর বসে আছেন।
হাতে তসবি। আমার মাথায় ফু দিয়ে বললেন, ‘বাবা ওখান থেকে কেউ ফিরে শহীদ হয়ে কেউ গাজী হয়ে। আমার পরম করুণা ময়ের কাছে একটাই চাওয়া তুমি গাজী হয়ে ফিরে এসো।
আমি মায়ের বাধন মুক্ত হয়ে বললাম, ওহো আজ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন। তোমরাতো দেরি করিয়ে দিবে।
এখন যেতে না পারলে গাড়ি পাব না।
আমার দেশ
ভিমরুল-২০০৬
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।