পুষ্প’র ঝগড়া লেগেই থাকে রিফাতের সাথে। মাঝে মাঝে তা চিল্লাপাল্লা পর্যন্ত গড়ায়। এই মনোমালিন্য বা ঝগড়ার রেশ কাটে কয়েকদিন কথা না বলার মাধ্যমে। দুইজন সময়মত আসবে,পাশাপাশি বসবে,কিন্তু কোন কথা বলবেনা। একে অপরের প্রতি অভিমান যতদিন থাকে এরকম চলতেই থাকে।
এইতো সেইদিনের ঘটনা। পদ্মাপাড়ে দেখা করতে গেছে রিফাত আর পুষ্প। পুষ্পকে শাড়ি পড়ে আসতে বলেছিলো রিফাত। পুষ্প পড়ে আসেনি। রিফাত কোন কারণ শুনতে রাজি না।
তার একটাই কথা,আমি তোমাকে শাড়ি পড়ে আসতে বলেছি। কিন্তু তুমি শাড়ি পড়ে আসোনি কেন??? এই নিয়ে তো হুলস্থূল কাণ্ড বাধিয়ে বসলো রিফাত। পুরো পদ্মার পাড়ের লোক জর হয়ে গেছিলো সেদিন। সবাই ভাবছিলো কিনা কি হয়ে গেছে। পুষ্প অবশ্য সবাইকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করলো।
রিফাত আগে এতটা এরকম ছিলনা। আস্তে আস্তে কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। আগে মান অভিমান হত,তা আবার পরে ঠিকও হয়ে যেত। কিন্তু ইদানীং তা মান আভিমানের পর্যায়ে থাকছে না। এখন পুষ্পের কেন জানি মনে হয় রিফাত প্রত্যেকদিন রাগারাগি করার জন্যই তার সাথে দেখা করতে আসে।
তবু ছেলেটাকে তার ভালো লাগে। কেন ভালো লাগে জানেনা সে।
গত সাতদিন কথা হয়না রিফাতের সাথে। রিফাতই কথা বলেনা তার সাথে। ফোন দিলে ফোন রিসিভ করেনা।
তবুও প্রত্যেক দিনের মত পুষ্প পদ্মার পাড়ে আসে। বসে অপেক্ষা করে রিফাতের জন্য। শুধু মনে হয়, ‘কোন কথা বলার দরকার নেই রিফাতের। শুধু যদি এসে একটুক্ষণ পাশে বসে থাকতো!!!!!!’
রিফাত আজ পুষ্পের সাথে দেখা করবে। তবে আজ পদ্মার পাড়ে না।
বাড়ির বেলকোনিতে দাঁড়াতে বলেছে পুষ্পকে।
পুষ্প দাড়িয়ে আছে বেলকোনিতে। দুপুরের খাঁ খাঁ করা ভাবটা এখন আর নেই। এলেমেলো বাতাস বয়ে চলেছে। চুলগুলো বাতাসে এলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
রিফাতকে দূর থেকে দেখেই চিনতে পারলো পুষ্প। এক সময় বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। পুষ্পের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে। প্রথম যেদিন পুষ্পকে দেখেছিলো ঠিক সেরকম ভাবে তাকিয়ে আছে। হুট করেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল রিফাত।
হন হন করে হাঁটতে শুরু করলো। যেন পালাতে চাইছে সে......
পুষ্প’র কেন জানি মনে হচ্ছে রিফাত আর কোনদিন ফিরে আসবেনা। তার সাথে দেখা করবে না,তার অভিমান ভাঙানোর জন্য নদীতে লাফ দিবেনা। আর কোনদিন না। কথাগুলো ভাবতেই তার চোখের কোণটা ভরে উঠলো।
যেন টলমলে দীঘি...
গত দিনগুলোর প্রত্যেকটা দিন রিফাত পদ্মার পাড়ে গিয়েছে। দূর থেকে পুষ্পকে দেখে চলে এসেছে। রিফাতের হাঁটতে পারছেনা ঠিক করে। অনেক কষ্ট হচ্ছে তার। যেন পেছন থেকে কেউ একজন তাকে টেনে ধরেছে।
অনেক শক্ত সে টান। কোন মতেই ছাড়াতে পারছেনা সে।
সূর্য ডুবতে বসেছে। পশ্চিম কোণের লাল রঙ ছড়িয়ে পড়েছে আকাশময়। এই সময়ের ভিতর একটা বিষণ্ণতা আছে.....সারাদিনের হিসেব কষে না পাওয়া একটা সুর কানে বাজে.....ঠিক এই সময়ে...
-সমাপ্ত-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।