আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেয়ারবাজারে ধসের রেকর্ড : সংকটে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর ভাগ্য

আমি সাধারন মানুষ, সাধারন কিছু চিন্তা আমার এগুলো নিয়েই তো আমি

Gaffar গভীর সংকটের দিকে যাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার ও ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর ভাগ্য। একের পর এক ধসের রেকর্ড করছে শেয়ারবাজার। আগামী রোববার লেনদেন বন্ধ থাকবে। স্থিতিশীলতা আনতে বিনিয়োগকারীদের আরজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু কীভাবে তা হবে? নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো পদক্ষেপই বাজারকে স্বাভাবিক করতে পারছে না।

ফলে অশান্ত হয়ে উঠছে বিনিয়োগকারীরা। মতিঝিলের রাস্তায় রুদ্ধশ্বাস আর বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ, আর্তনাদের মাঝে পুলিশি অ্যাকশন পরিস্থিতিকে আরো বেশি বেসামাল করে তুলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তার শেষ লেনদেন দিবসের এ চিত্র অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ শেয়ারবাজারকে কোথায় নিয়ে যাবে তা নিয়ে বেশ উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় ফেলে দিয়েছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। যদিও বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) রোববার লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। সোমবার লেনদেন বিষয়ে রোববারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এসইসির সদস্য ইয়াসিন আলী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এক প্রেসব্রিফিঙে এ কথা জানান। সপ্তার শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার সার্কিট ব্রেকার অতিক্রম করায় শুরুর মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই লেনদেনের যবনিকাপাত ঘটে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। অন্যদিকে চট্টগাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ১১ মিনিটেই লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। গত বুধবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সূচক ২২৫ পয়েন্ট বাড়লে বা কমলে লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনের শুরুতে ব্যাপক দরপতনে ৫ মিনিটেই সাধারণ সূচক ৬শ পয়েন্ট পড়ে যায়।

ফলে সার্কিট ব্রেকারের ২২৫ পয়েন্টের সীমা অতিক্রম করায় লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে মোট ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে দাম কমে ১৭২টির, বাড়ে ৮টির এবং অপরিবর্তিত থাকে দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। মোট ৬৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সিএসইতে লেনদেন শুরুর ১১ মিনিটে সূচক ৭৯৫ পয়েন্ট অতিক্রম করায় লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার ২ ঘণ্টা পিছিয়ে দুপুর ১টায় দুই পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেন স্থগিত আগ্রাসীভাবে অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রি করার দায়ে ৬ ব্রোকারেজ হাউজের লেনদেন স্থগিত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। স্থগিতকৃত ব্রোকারেজ হাউজগুলো হলো- আইআইবিএফসি সিকিউরিটিজ, পিএফআই সিকিউরিটিজ, এনসিসি ব্যাংক লি. সিকিউরিটিজ, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এলাইন্স সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লি. সিকিউরিটিজ। আগামী ৩০ দিনের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়। আগামী রোববার ট্রেড বন্ধ থাকবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এসইসির সংবাদ সম্মেলনে এসইসির সদস্য মো. ইয়াসিন আলী এ তথ্য জানান। দরপতনের হোতাদের শাস্তির দাবি ডিএসইর শেয়ারবাজারে দরপতনের কারসাজির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের নেপথ্যে কোনো কারসাজি রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য যে ৪৮টি কোম্পানি রোড শো করেছে তাদের আর্থিক বিবরণী পুনরায় পর্যালোচনা করতে হবে। এতে কোনো কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে ভুল পাওয়া গেলে সে কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জনগণ দেখতে চায়।

তিনি বলেন, বুকবিল্ডিং পদ্ধতির কারণে কোম্পানির শেয়ারের দর অতি মূল্যায়িত হয়েছে। এতে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা ঘটেছে। বুকবিল্ডিং সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে কোম্পানি, বিনিয়োগকারীসহ সকলে যাতে সঠিক মূল্য পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। শাকিল রিজভী বিনিয়োগকারীদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যারা ভালো শেয়ার কিনেছেন, ধৈর্য ধরুন, বিক্রি করবেন না। কারণ লভ্যাংশ পেতে হলে ধরে রাখতে হবে।

তিনি শেয়ারবাজারে ধসের জন্য সরকার দায়ী নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জোর দাবি করেন। বিক্ষোভ, মিছিল, গ্রেফতার বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু প্রথম ৫ মিনিটেই সূচক পড়ে যায় ৬০০ পয়েন্ট। পরিস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিকভাবে লেনদেন বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়।

এতে পুলিশের সাথে বিনিয়োগকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ পরিস্থিতিতে ডিএসই সামনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মতিঝিল, দিলকুশায় বিক্ষোভ করার সময় পুলিশ অন্তত ২৬ জনকে আটক করেছে বলে মতিঝিল থানা সূত্রে জানা গেছে। এদিকে দরপতনে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সামনেও বিক্ষোভ করছে বিনিয়োগকারীরা। এতে সিএসই ভবনের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দরপতনে লেনদেন বন্ধের পর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা কয়েক দফা সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ তাদের হটিয়ে দিতে লাঠি চার্জ করেছে। এ সময় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ১টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেন শুরু হয়। এর ৫ মিনিটের মধ্যেই সূচকের অস্বাভাবিক পতনের কারণে লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়।

এর সাথে সাথে রাস্তায় নেমে আসেন বিনিয়োগকারীরা। এ সময় তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন, শেখ মুজিব রোড, বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুর করে। অবরোধে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশের ধাওয়ায় বিনিয়োগকারী ও পথচারীরা আশপাশের বিভিন্ন ভবন, ব্যাংক, বণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও দোকানে আশ্রয় নেয়। বেলা দেড়টার দিকে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার বিভিন্ন সড়কে থাকা বেশকিছু ব্রোকারেজ হাউজ থেকে বিনিয়োগকারীরা দুটি মিছিল বের করে।

মিছিল দুটি সিইসির দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করেত পুলিশ আবারো লাঠিচার্জ করে। এদিকে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ইনভেস্টর ফোরাম অব চিটাগাঙের প্রতিনিধিরা সিএসই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে বৃহস্পতিবারের লেনদেন সম্পূর্ণ বাতিল করাসহ ৯ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেন ফোরামের নেতৃবৃন্দ। বিকেলে বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন।

সিলেটে লেনদেন শুরুর মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ব্যাপক দরপতন ও লেনদেন বন্ধ হয়ে গেলে বিভিন্ন ব্রোকার হাউস থেকে শ শ বিনিয়োগকারী রাস্তায় নেমে আসেন। তারা নগরীর চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে মিছিল-সমাবেশ করেন। এ সময় গাড়ির কয়েকটি পুরনো টায়ারেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীরপাড়স্থ বাসা ঘেরাও করলে দ্রুত সেখানে পুলিশ ছুটে যায়। পুলিশ বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এছাড়া বিনিয়োগকারীরা নগরীর তালতলাস্থ বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়েও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। বিনিয়োগকারীরা আগামী রোববার সিলেটে হরতাল পালনেরও ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল দুপুরে রাজশাহী নগরীর ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সামনে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। পরে নগরীতে মিছিল বের করা হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সাথে বিনিয়োগকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

পরে বিনিয়োগকারীরা নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় আইসিবির সামনে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। কুমিল্লায় শেয়ার বাজারে অস্বাভাবিক দরপতনে কুমিল্লার ৯টি ব্রোকারেজ ও সিকিউরিটিজ হাউজের বিনিয়োগকারীরা ট্রেড বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে এবং শহরের কান্দিরপাড়ে একত্রিত হয়। তারা পূবালী চত্বরে ভাঙচুর করে এবং রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালায় ও শহরের বিভিন্ন সড়কে খণ্ডখণ্ড মিছিল করে শেয়ারের দরপতনের পেছনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। নোয়াখালীতে দুপুর ২টার দিকে জেলা শহরের দুটি ব্রোকার হাউজ আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ ও সগির অ্যান্ড কোম্পানি থেকে শতাধিক বিনিয়োগকারী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে শেষ হয়। খুলনায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত ৭ জন আহত হয়। গতকাল দুপুরে নগরীর ডাকবাংলো, শিববাড়ি মোড় এবং পিকচার প্যালেস মোড়ে অবস্থিত ব্রোকার হাউজ থেকে শ শ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী রাস্তায় নেমে আসে।

এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা নগরীর প্রাণকেন্দ্র পিকচার প্যালেস মোড় অবরোধ ও দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। এ সময় তারা পুলিশের ব্যারিকেডে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় অনুষ্ঠিত সমাবেশে তারা শেয়ার বাজারে অব্যাহত দরপতনের জন্য অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এসএসই ও ডিএসইর চেয়ারম্যানকে দায়ী করে তাদের অপসারণের দাবি জানান। বরিশালে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছে। গতকাল দুপুরে বিক্ষোভকারীদের মিছিলের সামনে পড়লে সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুসের গাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

পরবর্তীতে তাকে মুক্ত করে দেয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা সদর রোডে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। ঘণ্টাব্যাপি সড়ক অবরোধ চলাকালে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভ চলাকালে নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুরে ফেনীতে শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে।

বিনিয়োগকারীরা শহরের এসএসকে রোডে রয়েল ক্যাপিটেল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফেনী প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমবেত হয়। পরে অন্যান্য ব্রোকারেজ হাউস থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এসে মহীপালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কাঠে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করেন ও চৌরাস্তায় সমাবেশ করেন। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আধাঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গভীর সংকটের দিকে যাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার ও ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর ভাগ্য।

একের পর এক ধসের রেকর্ড করছে শেয়ারবাজার। আগামী রোববার লেনদেন বন্ধ থাকবে। স্থিতিশীলতা আনতে বিনিয়োগকারীদের আরজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু কীভাবে তা হবে? নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো পদক্ষেপই বাজারকে স্বাভাবিক করতে পারছে না। ফলে অশান্ত হয়ে উঠছে বিনিয়োগকারীরা।

মতিঝিলের রাস্তায় রুদ্ধশ্বাস আর বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ, আর্তনাদের মাঝে পুলিশি অ্যাকশন পরিস্থিতিকে আরো বেশি বেসামাল করে তুলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তার শেষ লেনদেন দিবসের এ চিত্র অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ শেয়ারবাজারকে কোথায় নিয়ে যাবে তা নিয়ে বেশ উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় ফেলে দিয়েছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। যদিও বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) রোববার লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। সোমবার লেনদেন বিষয়ে রোববারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসইসির সদস্য ইয়াসিন আলী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এক প্রেসব্রিফিঙে এ কথা জানান।

সপ্তার শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার সার্কিট ব্রেকার অতিক্রম করায় শুরুর মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই লেনদেনের যবনিকাপাত ঘটে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। অন্যদিকে চট্টগাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ১১ মিনিটেই লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। গত বুধবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সূচক ২২৫ পয়েন্ট বাড়লে বা কমলে লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনের শুরুতে ব্যাপক দরপতনে ৫ মিনিটেই সাধারণ সূচক ৬শ পয়েন্ট পড়ে যায়। ফলে সার্কিট ব্রেকারের ২২৫ পয়েন্টের সীমা অতিক্রম করায় লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।

এ সময়ে মোট ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে দাম কমে ১৭২টির, বাড়ে ৮টির এবং অপরিবর্তিত থাকে দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। মোট ৬৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সিএসইতে লেনদেন শুরুর ১১ মিনিটে সূচক ৭৯৫ পয়েন্ট অতিক্রম করায় লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার ২ ঘণ্টা পিছিয়ে দুপুর ১টায় দুই পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয়।

লেনদেন স্থগিত আগ্রাসীভাবে অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রি করার দায়ে ৬ ব্রোকারেজ হাউজের লেনদেন স্থগিত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। স্থগিতকৃত ব্রোকারেজ হাউজগুলো হলো- আইআইবিএফসি সিকিউরিটিজ, পিএফআই সিকিউরিটিজ, এনসিসি ব্যাংক লি. সিকিউরিটিজ, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এলাইন্স সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লি. সিকিউরিটিজ। আগামী ৩০ দিনের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়। আগামী রোববার ট্রেড বন্ধ থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এসইসির সংবাদ সম্মেলনে এসইসির সদস্য মো. ইয়াসিন আলী এ তথ্য জানান।

দরপতনের হোতাদের শাস্তির দাবি ডিএসইর শেয়ারবাজারে দরপতনের কারসাজির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের নেপথ্যে কোনো কারসাজি রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য যে ৪৮টি কোম্পানি রোড শো করেছে তাদের আর্থিক বিবরণী পুনরায় পর্যালোচনা করতে হবে। এতে কোনো কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে ভুল পাওয়া গেলে সে কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জনগণ দেখতে চায়। তিনি বলেন, বুকবিল্ডিং পদ্ধতির কারণে কোম্পানির শেয়ারের দর অতি মূল্যায়িত হয়েছে।

এতে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা ঘটেছে। বুকবিল্ডিং সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে কোম্পানি, বিনিয়োগকারীসহ সকলে যাতে সঠিক মূল্য পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। শাকিল রিজভী বিনিয়োগকারীদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যারা ভালো শেয়ার কিনেছেন, ধৈর্য ধরুন, বিক্রি করবেন না। কারণ লভ্যাংশ পেতে হলে ধরে রাখতে হবে। তিনি শেয়ারবাজারে ধসের জন্য সরকার দায়ী নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জোর দাবি করেন।

বিক্ষোভ, মিছিল, গ্রেফতার বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু প্রথম ৫ মিনিটেই সূচক পড়ে যায় ৬০০ পয়েন্ট। পরিস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিকভাবে লেনদেন বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সাথে বিনিয়োগকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

এ পরিস্থিতিতে ডিএসই সামনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মতিঝিল, দিলকুশায় বিক্ষোভ করার সময় পুলিশ অন্তত ২৬ জনকে আটক করেছে বলে মতিঝিল থানা সূত্রে জানা গেছে। এদিকে দরপতনে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সামনেও বিক্ষোভ করছে বিনিয়োগকারীরা। এতে সিএসই ভবনের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দরপতনে লেনদেন বন্ধের পর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা কয়েক দফা সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করে।

পুলিশ তাদের হটিয়ে দিতে লাঠি চার্জ করেছে। এ সময় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ১টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেন শুরু হয়। এর ৫ মিনিটের মধ্যেই সূচকের অস্বাভাবিক পতনের কারণে লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়। এর সাথে সাথে রাস্তায় নেমে আসেন বিনিয়োগকারীরা।

এ সময় তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন, শেখ মুজিব রোড, বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুর করে। অবরোধে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশের ধাওয়ায় বিনিয়োগকারী ও পথচারীরা আশপাশের বিভিন্ন ভবন, ব্যাংক, বণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও দোকানে আশ্রয় নেয়। বেলা দেড়টার দিকে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার বিভিন্ন সড়কে থাকা বেশকিছু ব্রোকারেজ হাউজ থেকে বিনিয়োগকারীরা দুটি মিছিল বের করে। মিছিল দুটি সিইসির দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়।

মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করেত পুলিশ আবারো লাঠিচার্জ করে। এদিকে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ইনভেস্টর ফোরাম অব চিটাগাঙের প্রতিনিধিরা সিএসই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে বৃহস্পতিবারের লেনদেন সম্পূর্ণ বাতিল করাসহ ৯ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেন ফোরামের নেতৃবৃন্দ। বিকেলে বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন। সিলেটে লেনদেন শুরুর মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ব্যাপক দরপতন ও লেনদেন বন্ধ হয়ে গেলে বিভিন্ন ব্রোকার হাউস থেকে শ শ বিনিয়োগকারী রাস্তায় নেমে আসেন।

তারা নগরীর চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে মিছিল-সমাবেশ করেন। এ সময় গাড়ির কয়েকটি পুরনো টায়ারেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীরপাড়স্থ বাসা ঘেরাও করলে দ্রুত সেখানে পুলিশ ছুটে যায়। পুলিশ বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা নগরীর তালতলাস্থ বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়েও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।

বিনিয়োগকারীরা আগামী রোববার সিলেটে হরতাল পালনেরও ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল দুপুরে রাজশাহী নগরীর ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সামনে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। পরে নগরীতে মিছিল বের করা হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সাথে বিনিয়োগকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে বিনিয়োগকারীরা নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় আইসিবির সামনে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।

এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। কুমিল্লায় শেয়ার বাজারে অস্বাভাবিক দরপতনে কুমিল্লার ৯টি ব্রোকারেজ ও সিকিউরিটিজ হাউজের বিনিয়োগকারীরা ট্রেড বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে এবং শহরের কান্দিরপাড়ে একত্রিত হয়। তারা পূবালী চত্বরে ভাঙচুর করে এবং রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালায় ও শহরের বিভিন্ন সড়কে খণ্ডখণ্ড মিছিল করে শেয়ারের দরপতনের পেছনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। নোয়াখালীতে দুপুর ২টার দিকে জেলা শহরের দুটি ব্রোকার হাউজ আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ ও সগির অ্যান্ড কোম্পানি থেকে শতাধিক বিনিয়োগকারী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে শেষ হয়।

খুলনায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত ৭ জন আহত হয়। গতকাল দুপুরে নগরীর ডাকবাংলো, শিববাড়ি মোড় এবং পিকচার প্যালেস মোড়ে অবস্থিত ব্রোকার হাউজ থেকে শ শ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী রাস্তায় নেমে আসে। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা নগরীর প্রাণকেন্দ্র পিকচার প্যালেস মোড় অবরোধ ও দোকানপাট বন্ধ করে দেয়।

এ সময় তারা পুলিশের ব্যারিকেডে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় অনুষ্ঠিত সমাবেশে তারা শেয়ার বাজারে অব্যাহত দরপতনের জন্য অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এসএসই ও ডিএসইর চেয়ারম্যানকে দায়ী করে তাদের অপসারণের দাবি জানান। বরিশালে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছে। গতকাল দুপুরে বিক্ষোভকারীদের মিছিলের সামনে পড়লে সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুসের গাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে তাকে মুক্ত করে দেয়া হয়।

বিক্ষোভকারীরা সদর রোডে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। ঘণ্টাব্যাপি সড়ক অবরোধ চলাকালে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভ চলাকালে নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুরে ফেনীতে শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। বিনিয়োগকারীরা শহরের এসএসকে রোডে রয়েল ক্যাপিটেল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফেনী প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমবেত হয়।

পরে অন্যান্য ব্রোকারেজ হাউস থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এসে মহীপালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কাঠে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করেন ও চৌরাস্তায় সমাবেশ করেন। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আধাঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.