মানুষের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশের ধ্বনিকে ভাষা বলে। মানবজাতি কখন কোথায় ভাষা ব্যবহার করেছে সে ইতিহাস ভাষাতাত্ত্বিকদের অজানা। ভাষার উদ্ভব উৎস তাদেরকে AbymÜvbx করেছে বটে; কিš‘ ভাষার আবিf©vব তত্ত্বের কোনো সঠিক ও নিf©রযোগ্য তথ্য আবিষ্কার করা যায়নি। নানা ধরনের থিওরি বা তত্ত্ব আবিষ্কারের মোদ্দা কথা হচ্ছে ভাষা আল্লাহ প্রদত্ত এর সৃষ্টিকZ©v আল্লাহ তাআলা। পৃথিবীতে বহু ভাষার প্রচলন ও মানবজাতির ভাষার ভিন্নতা আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতের একটি শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
আল্লাহ বলেন,
‘আর তারই কুদরতের অন্যতম নিদk©ন হচ্ছে নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলের সৃজন এবং পৃথক হওয়া তোমাদের ভাষা ও ব‡Y©র। নিশ্চয়ই এতে কুদরতের নিদর্শনসমূহ রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য। ’ (সূরা রুম : ২২)
তবে যিনি যে ভাষা তার মায়ের কাছ থেকে জন্মসূত্রে লাভ করেছেন সেটাই তার মাতৃভাষা, প্রাণের ভাষা। পৃথিবীর যেকোনো ভাষাভাষীর কাছে মাতৃভাষার আকl©ণ বেশি, মাতৃভাষার মh©vদা অতুলনীয় অনুপম। যে কারো কাছে মাতৃভাষাই শ্রেষ্ঠ এবং মাতৃভাষা চির অহঙ্কার ও গৌরবের।
লাল-সবুজের বাংলাদেশে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাভাষা।
বিশ্বখ্যাত ভাষাতত্ত্ববি` ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, পৃথিবীতে ২ হাজার ৭৯৬টি ভাষা প্রচলিত আছে। তবে ভাষার প্রকৃত পরিসংখ্যান আজো নিY©xত হয়নি। মাতৃভাষার প্রতি মানুষের Abyরাগ চিরকালীন। বwY©ল পৃথিবীকে আরো স্বাপ্নিক ও আলোকিত করতে বাংলাভাষার প্রতি আমাদের মমত্ববোধ যেকোনো ভাষার চেয়ে বোধ করি বেশি।
দেশমাতৃকার জন্য আত্মত্যাগ ও প্রাণোৎসর্গের ঘটনা জানা থাকলেও কোনো জাতি তার মাতৃভাষার জন্য জীবনকে বিসর্জন দিয়ে শাহাদাতের মh©vদা নিয়েছে এমন নজির ইতিহাসে নেই।
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব অনস্বীকাh©| অপরিসীম গুরুত্বের সাথে মাতৃভাষাকে স্মরণ করে ইসলাম। মাতৃভাষা শিক্ষা ও বিকাশে ইসলামের রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। আল্লাহ তাআলা নবী রাসূলদের কাছে যুগে যুগে যেসব আসমানি কিতাব প্রেরণ করেছেন, তা তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রেরণ করেছেন।
আল্লাহ বলেন,
‘আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার জাতির লোকদের মাতৃভাষাতেই প্রেরণ করেছি।
(সূরা ইবরাহিম : ৪)
যেমন আল্লাহ্র প্রেরিত প্রধান চার কিতাবও অবতীY© হয়েছে প্রেরিত রাসূল ও জাতির মাতৃভাষায়।
হজরত মুসা আঃ এবং তার জাতি ইহুদিদের মাতৃভাষা হিব্রু ছিল বলে তার প্রতি অবতীর্ণ তাওরাতের ভাষা ছিল ইবরানি বা হিব্রু।
হজরত ঈসা আঃ ও তার জাতি খ্রিষ্টানদের মাতৃভাষা গ্রিক ছিল বলে তার প্রতি অবতীর্ণ ইনজিলের ভাষা ছিল সুরইয়ানি বা গ্রিক।
হজরত দাউদ আঃ-এর ওপর অবতীর্ণ জvবুরের ভাষা ছিল ইউনানী।
শেষনবী ও বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাঃ-এর মাতৃভাষা আরবি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর প্রতি যে কুরআন অবতীর্ণ হয় তার ভাষা আরবি।
এসব আসমানি কিতাব যদি মাতৃভাষায় নাজিল না করতেন তবে এগুলো নাজিলের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতো। হিদায়াত ও অনুধাবনের পরিবর্তে চরম শ্রদ্ধাভরে বুকসেলফে সাজানো ছাড়া আর কোনো লাভ হতো না। কেননা এসব আসমানি কিতাব নাযিলের মৌল উদ্দেশ্য হচ্ছে পুণ্য হাসিলের জন্য এর মর্ম অনুধাবন করা। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে এর আলোকে জীবনব্যবস্খা কায়েম করা।
কুরআনে এসেছে,
‘আর যদি আমি কুরআন অনারবদের ভাষায় নাজিল করতাম তবে তারা অবশ্যই বলত-এর আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বিবৃত হয়নি কেন? এ কেমন কথা, অনারবি কিতাব এবং আরবিভাষী রাসূল! আপনি বলুন¬ এ কুরআন মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও ব্যাধির প্রতিকারস্বরূপ।
কিন্তু যারা ঈমান আনে না তাদের কাছে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন তাদের জন্য অÜত্বস্বরূপ। (সূরা হা-মীম আস-সাজদা : ৪৪)
আল্লাহ অন্য একটি আয়াতে বলেন,
‘আমি তো কুরআন আরবিতে নাজিল করেছি এ জন্য যে, তোমরা তা বুঝবে’ (সূরা ইউসুফ : ২)
হাদিস থেকে জানা যায়, ইসলাম শুধু মাতৃভাষা নয় মাতৃভাষার আঞ্চলিক বা উপ-ভাষাও সমর্থন করে। কেননা উপ-ভাষার মূল ভাষার ব্যত্যয় ঘটে না।
রাসূল সা: বলেন,
‘কুরআন সাতটি উপ-ভাষায় নাজিল হয়েছে। ’
ইমাম আবু হানিফা রা: মাতৃভাষার গুরুত্ব অনুধাবন করে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি তার দেশবাসীর জন্য মাতৃভাষা ফারসি ভাষায় আল কুরআন অনুবাদ করার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং তা নামাজে তিলাওয়াতের অভিমত প্রদান করেন। অবশ্য এই অভিমত তিনি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের স্বার্থে প্রত্যাহার করে নেন। এ ঘটনায়ও ইসলামে মাতৃ©ভাষা মূল্যায়নের প্রমাণ মেলে।
এ ছাড়া মনের আকা•Lv কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে নিবেদন করতে হলেও মাতৃভাষা ব্যতীত সম্ভব হয় না। কেননা মাতৃভাষার মাধ্যমে মনের অভিব্যক্তি যেভাবে প্রকাশ করা যায়।
অন্যভাষায় তা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। মনের আকুতি প্রকাশ করে বিনতি পূর্বক প্রার্থনায় মন ও আত্মার মাঝে এক স্বর্গীয় অনুভূতি তৈরি হয়। বান্দার আর্তি আল্লাহর কাছে কবুল হওয়া না হওয়ার দোলায় দুলেও মাতৃ©ভাষায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পেরে সাময়িক জাগতিক শান্তির ছোঁয়া পায়।
বঙ্গবাণী কবিতায় আবদুল হাকিম তাই যথার্থই বলেছেন, ‘ যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ, সেই বাক্য বুঝে প্রভু আগে নিরঞ্জন’
অনুরূপ স্বদেশী ভাষা কবিতায় রামনিধিগুপ্ত বলেছেন, ‘নানান দেশের নানান ভাষা, বিনে স্বদেশীভাষা মিটে কী আশা’
বিশ্বনবীর মাতৃভাষায় ইসলাম প্রচারঃ
আমাদের সe©শেষ প্রিয়নবী বিশ্বনবীর মাতৃভাষা ছিল আরবি। আর সe©শেষ আসমানিগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে প্রিয়নবীর মাতৃভাষাতেই।
অতঃপর তিনি মাতৃভাষাতেই কুরআনের বাণী প্রচার করে জগৎকে আলোকিত করেছেন।
আল্লাহ পাক নবীজীর মাতৃভাষাতে কুরআন নাজিল করে তা সহজ করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন-
অতঃপর আমরা এ কুরআনকে তোমার মাতৃভাষায় সহজ করে দিয়েছি। যাতে মুত্তাকিদেরকে এর (বেহেশতের) সুসংবাদ দিতে পার আর এর সাহায্যে কলহে লিপ্ত জাতিকে (দোজখের) ভয় দেখাতে পারো। (সূরা মারইয়ামঃ আয়াত-৯৭)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, এটা রুহুল আমিন-জিব্রাইলের মাধ্যমে আপনার অন্তকরণে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে।
যাতে ভয় প্রদর্শনকারী হতে পারো। (সূরা শুয়ারাঃ আয়াত ১১৩-১১৫)
কুরআন আরবি ভাষায় নাজিল হওয়ার কারণ উল্লেখ করে আল্লাহ বলেনঃ
নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে আরবি ভাষায় নাজিল করেছি এ জন্য যে যাতে তোমরা তা বুঝতে পারো। (সূরা ইউসুফঃ ২ আয়াত)
একজন রাসূল হিসেবে মুহাম্মদ সাঃ-এর সর্বপ্রথম কর্তব্য ছিল তাঁর নিজস্ব পরিবার ও নিজস্ব জাতির কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া। তাঁর জাতি আরবদের মাতৃভাষা আরবি ছিল বলে তাঁর জাতির কাছে তার দাওয়াত আরবিতেই হওয়া যুক্তিসঙ্গত। আরবি ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় তিনি দাওয়াত দিলে কিংবা কোনো অনারব ভাষায় কুরআন নাজিল হলে তারা কিছুই বুঝত না।
তাদের হিদায়াত করা সম্ভব ছিল না।
এ বিষয়ে আল্লাহ্তা’আলা বলেনঃ
আমি যদি আরবি ভিন্ন অন্য কোনো ভাষায় কুরআন পাঠাতাম তাহলে তারা বলতঃ এর বাক্যগুলো ভালো করে বুঝিয়ে বলা হলো না কেন? সেকি! কিতাব আরবিতে নয় অথচ পয়গম্বর আরব। ’ (সূরা হামিম আস্ সাজদাহ্ঃ ৪৪ আয়াত)
হজরত মুহাম্মদ সাঃ পh©ন্ত প্রত্যেক জাতির জন্য অন্তত একজন করে নবী নির্দিষ্ট ছিল। (সূরা ইউনুসঃ ৪৭ আয়াত)
আর এই জন্যই প্রত্যেক রাসূলের ভাষা ছিল তাঁর জাতির তাঁর অঞ্চলের মাতৃভাষা।
আল্লাহ্তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার জন্য।
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন আর যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়, (সূরা ইবরাহিমঃ ৪ আয়াত)
আল্লাহ্ অন্যত্র ইরশাদ করেনঃ
আর রহমান-দয়াময় আল্লাহ্। তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা। (সূরা আর রহমানঃ ১-৪ আয়াত)
ভাষা ও বণে©র নিদশ©ন সম্পকে© এরশাদ হয়েছে
‘তার আরো একটি নিদশ©ন হচ্ছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও নিদশ©ন বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদশ©নvবলি রয়েছে।
’ (সূরা আর-রুম, আয়াত ২২)
‘করুণাময় আল্লাহ, শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ এবং তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন। ’ (সূরা আর-রহমান, আয়াত ১-৪)
পৃথিবীতে অসংখ্য ভাষা রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ভাষা বাংলা, এমনিভাবে নানা দেশের মানুষের ভাষা নানান ধরনের। আবার একই দেশে রয়েছে অনেক ধরনের ভাষা। আবার একই ভাষার উচ্চারণগত ভিন্নতাও লক্ষ করা যায়।
ভাষা ও বণে©র এই বিচিত্রতা বিশ্বজ্ঞানমণ্ডলের শোভা বৃদ্ধি করেছে এবং নানা ধরনের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক জানার ও জানানোর স্পৃহা গতিশীল করেছে। মাতৃভাষার মাধ্যমে অন্য ভাষার মানুষের চিন্তা-চেতনা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সহজে রপ্ত করা যায় এবং আত্মার গভীরে তা আত্মস্থ করা যায়। মাতৃভাষা অতি সহজেই একজন মানুষের ব্যত্ত্নিসত্তার অন্তগ©ত হয়ে যায়। অথচ অন্য ভাষা আয়ত্ত করতে হলে যথেষ্ট অনুশীলনের প্রয়োজন হয়। অন্য ভাষা বহু কষ্টে আয়ত্তে আনা সম্ভব হলেও তার প্রতিটি শব্দ ও বাক্যের অথ© কিন্তু অনুধাবনে আসে মাতৃভাষার মাধ্যমেই|
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন।
তারা পৃথিবীতে এসেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। যুগে যুগে আল্লাহতায়ালা যে অঞ্চলে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন সেই নবী বা রাসূলকে সে অঞ্চলের মানুষের ভাষাভাষী করেছেন। এ সম্পকে পবিত্র কুরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে
‘আমি সব নবীকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদশ©ন করেন। তিনি পরাµvন্ত, প্রজ্ঞাময়।
’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৪)
আবার এমনটিও লক্ষ করা যায়, কোনো নবী বা রাসূল জন্মগ্রহণ করেছেন এক ভাষাভাষী অঞ্চলে কিন্তু তাকে অন্য ভাষাভাষী অঞ্চলে গিয়ে বসবাস করতে হয়েছে। সেই অঞ্চলের মানুষের ভাষা তিনি আয়ত্তে এনেছেন এবং সেই ভাষাতেই তার প্রচারকাযê করেছেন। যেমন আল্লাহর নবী হজরত লুত আঃ জন্মগ্রহণ করেছিলেন উবêর হেলাল অঞ্চলে বলে পরিচিত মেসোপটেমিয়া অথ©¨vr বত©মান ইরাক অঞ্চলে। তিনি পরবতীকালে ফিলিস্তিন অঞ্চলে চলে যান এবং সেই অঞ্চলের মানুষের ভাষায় প্রচারকায© চালান। এমনিভাবে দেখা যায়, প্রত্যেক নবী-রাসূলই তার মাতৃভাষাতেই মানুষের কাছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন, মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পথে আহ্বান করেছেন|
আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ-এর মাতৃভাষা ছিল আরবি।
তার কাছে আসমানি কিতাব পবিত্র কুরআন মজিদ নাজিল হয় মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদশ©ন ও সত্য-মিথ্যার পাথ©ক্যকারী রূপে। আর এই কুরআন মজিদের ভাষা আরবি।
প্রিয় নবী সাঃ-এর মাতৃভাষা আরবিতে কুরআন মজিদ নাজিল হওয়া প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন
‘আমি আপনার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা স্মরণ রাখে। ’ (সূরা আদদুখান, আয়াত ৫৮)।
‘এমনিভাবে আমি আপনার প্রতি আরবি ভাষায় কুরআন নাজিল করেছি, যাতে আপনি মক্কা ও তার আশপাশের লোকদের সতকê করেন এবং সতক© করেন সমাবেশের দিন সম্পকে।
’ (সূরা আশ-শুরা, আয়াত ৭)
‘আমি একে আরবি ভাষায় কুরআন রূপে নাজিল করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো। ’ (সূরা ইউসুফ, আয়াত ২)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় হাবিব রাসূলে কারিম সাঃ-কে উদ্দেশ করে এরশাদ করেন
‘আমি কুরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি মুত্তাকিদের সুসংবাদ দেন এবং কলহকারী সম্প্রদায়কে সতকê করেন। ’ (সূরা মরিয়ম, আয়াত ৯৭)।
‘এমনিভাবে আমি আরবি ভাষায় কুরআন নাজিল করেছি এবং এতে নানাভাবে সতকêবাণী ব্যত্ত্ন করেছি, যাতে তারা আল্লাহভীরু হয় অথবা তাদের অন্তরে চিন্তার খোরাক জোগায়।
’ (সূরা তোয়াহা, আয়াত ১১৩)।
‘আরবি ভাষায় এই কুরআন যাতে কোনো বত্র্নতা নেই। যাতে তারা সাবধান হয়ে চলে। ’ (সূরা আয-যুমার, আয়াত ২৮)।
আপনি মানুষকে আপনার রবের পথে বিজ্ঞানসম্মত ও উত্তম ভাষণ দ্বারা আহ্বান করুন এবং তাদের সাথে সদ্ভাবে আলোচনা করুন।
’ (সূরা আন-নাহল, আয়াত ১২৫)
পবিত্র কুরআন মজিদ হতেই আমরা জানতে পারি যে, ইসলামি আদশ© যেমন সাব©জনীন ইসলামের ভাষাও তেমনি সাব©জনীন, এভাবে ভাষা, বY© ও আঞ্চলিকতার সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে ইসলাম শাশ্বত সত্য ধম© প্রচারে মাতৃভাষা চP©vর জোরালো তাগিদ দিয়ে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন
‘আপনি মানুষকে আপনার রবের পথে বিজ্ঞানসম্মত ও উত্তম ভাষণ দ্বারা আহ্বান করুন এবং তাদের সাথে সদ্ভাবে আলোচনা করুন। ’ (সূরা আন-নাহল, আয়াত ১২৫)।
আর এ কারণেই দেখা যায়, পরবতী© সময়ে ইসলাম প্রচারকগণ পৃথিবীর যে অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে গেছেন, সেই অঞ্চলের মানুষের ভাষা আয়ত্ত করে সেই ভাষাতেই ইসলামের সুমহান বাণী তাদের কাছে তুলে ধরেছেন। তাদের মাতৃভাষায় পবিত্র কুরআন মজিদ অনুবাদ করে তাদেরকে কুরআন-হাদিসের জ্ঞান দান করেছেন এবং নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের হুকুম-আহকাম, নিয়মকানুন শিক্ষা দিয়েছেন।
evsjv fvlvi DrKl© mva‡b gymjgvb‡`i Ae`vb
যত দূর জানা যায়, বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাঃ-এর খিলাফতকালের মধ্যভাগ হতে অথ©¨vৎ ৬৪০খ্রিষ্টাব্দের দিকে।
আরব,ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, খোরাসান, তুরস্ক, মিসর প্রভৃতি দেশ হতে ইসলাম প্রচারকগণ বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করার জন্য এসেছেন। তারা এ দেশে এসে এ দেশের মানুষের ভাষা আয়ত্ত করেছেন এবং এ দেশের মানুষের ভাষাতেই ইসলাম প্রচার করেছেন। এ দেশের মানুষ অতি সহজেই তাদের কাছ থেকে ইসলাম সম্পকে© জানতে পারে, ফলে দলে দলে মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। আরো লক্ষ করা যায়, বাংলা ভাষা এক দারুণ অবহেলিত অবস্থা থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত হয় মুসলমানদের আগমনের ফলে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলার সুলতানদের মাধ্যমেই বাংলা ভাষার DrKl© ও বিকাশ সাধিত হয়।
এ সম্পকে© দীনেশ চন্দ্র সেন বঙ্গভাষার ওপর মুসলমানদের প্রভাব শীষ©ক প্রবন্ধে বলেছেন
• ‘মুসলমান আগমনের পূবে© বঙ্গভাষা কোনো কৃষক রমণীর ন্যায় দীনহীন বেশে পল্লী কুটিরে বাস করিতেছিল। … বাঙ্গলা ভাষা মুসলমান প্রভাবের পূবে© অতীব অনাদর ও উপেক্ষায় বঙ্গীয় চাষার গানে কথাঞ্চিত আত্মপ্রকাশ করিতেছিল। পণ্ডিতেরা নস্যাধার হইতে নস্যা গ্রহণ করিয়া শিখা দোলাইয়া সংস্কৃত শ্লোকের আবৃত্তি করিতেছিলেন এবং‘তৈলাধার পাত্র’ কিম্বা ‘পাত্রাধার তৈল’ এই লইয়া ঘোর বিচারে প্রবৃত্ত ছিলেন। তাঁহারা হষ©চরিত হইতে ‘হাবং দেহি মে হরিণি’ প্রভৃতি অনুপ্রাসের দৃষ্টান্ত আবিষ্কার করিয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করিতেছিলেন এবং কাদম্বরী, দশকুমার চরিত প্রভৃতি পদ্য রসাত্মক গদ্যের অপূব© সমাসবদ্ধ পদের গৌরবে আত্মহতারা হইতেছিলেন। …সেখানে বঙ্গভাষার স্থান কোথায়?ইতরের ভাষা বলিয়া বঙ্গভাষাকে পণ্ডিতমণ্ডলী দূর দূর করিয়া তাড়াইয়া দিতেন, হাঁড়ি-ডোমের স্পশ© হইতে ব্রাহ্মণেরা যেরূপ দূরে থাকেন বঙ্গভাষা তেমনই সুধী সমাজের কাছে অপাs‡Zq ছিল তেমনি ঘৃণা, অনাদর ও উপেক্ষার পাত্র ছিল।
কিন্তু হীরা-কয়লার খনির মধ্যে থাকিয়া যেমন জহুরীর আগমনের প্রতীক্ষা করে, বঙ্গভাষা তেমনিই কোন শুভদিন, শুভক্ষণের জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিল। মুসলমান বিজয় বাঙ্গলা ভাষার সেই শুভদিন, শুভক্ষণের সুযোগ আনয়ন করিল। … বঙ্গ-সাহিত্যকে একরূপ মুসলমানের সৃষ্টি বলিলেও Amy× হইবে না। ’
উপরি D³ DׄwZ হতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মুসলমানরাই বাংলা ভাষাকে স্বমহিমতায় সমুন্নত করেছে। বস্তুত মুসলিম মননে মাতৃভাষাপ্রীতি সঞ্চারিত হয়েছে ইসলামের মাতৃভাষার ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপের কারণে।
সুতরাং নিজ মাতৃভাষা বাংলা ভাষার স্বকীয়তা রক্ষা করা অপরিহাh© বিষয়। পবিত্র কুরআন মজিদ ও হাদিসে নববী তথা ইসলামের আলোকে ধম©প্রাণ মানুষের সৎ মনোভাব প্রকাশের দ্বারা মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্ব ও কত©ব্য, ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা এবং সবে©vপরি বিশ্বমানবতার কল্যাণে মাতৃভাষার চচা, অনুশীলন, সংরক্ষণ ও উৎকষ© সাধনে ভাষাশহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাবোধ প্রদশ©নে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে|
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।