আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় প্রথমবারের মত দুই দফার "বিশ্ব ইজতেমা" শুক্রবার শুরু

>>>বৈশাখের ঐ রুদ্র ঝড়ে আকাশ যখন ভেঙ্গে পড়ে, ছেঁড়া পাল আরও ছিঁড়ে যায়...<<<
টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরের ১৬০ একরের সুবিশাল ময়দানে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আজ শুক্রবার বাদ ফজর শুরু হচ্ছে পবিত্র হজ্জের পর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মুসল্লিদের গণজমায়েত বিশ্ব ইজতেমা’র প্রথম দফা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকেই ময়দানে বুজুর্গ মুসল্লিদের উপস্থিতে ঈমান ও আমলের উপর বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়ে গেছে। এ বিশ্ব সম্মেলনে যোগ দিতে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি এখন টঙ্গীতে। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক লাখ মুসল্লি ময়দানে এসে এরই মধ্যে ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। ট্রেন, বাস, ট্রাক ও নৌকাসহ বিভিন্ন যানবাহনের পাশাপাশি পায়ে হেঁটেও লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা মাঠে যোগ দিচ্ছেন।

আগামী রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা। আর, মধ্যে ৪ দিন বিরতি দিয়ে আবার ২৮ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফা। ৩০ জানুয়ারি দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার তাবলিগি সম্মেলন। এবারই প্রথম বিশ্ব ইজতেমা দু’দফায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর এ বছর মাঠে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থানের জন্য পুরো ময়দানকে প্রথম দফায় ৪৪ খিত্তায় এবং দ্বিতীয় দফায় ৩৪ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে।

জেলাওয়ারি জামায়াতবদ্ধ মুসল্লিরা এসব নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নেবেন। আজ প্রথম দিন শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে দেশের বৃহত্তম জু’মার নামাজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও মুসল্লিদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী এখন ধর্মীয় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।

এ ছাড়াও ইজতেমা এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ৪৫টি ফ্রি মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং ইজতেমা স্থলে প্রায় ৪০টি মেডিক্যাল টিম মুসল্লীদের সেবায় সার্বক্ষণিক কাজ করছে। উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালে প্রথমবারের মতো কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন হয়েছিল। এরপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমান স্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এক নজরে ২০১১ সালের বিশ্ব ইজতেমা'র নিরাপত্তা, ট্রাফিক ও পার্কিং ব্যবস্থা বিশ্ব ইজতেমা স্থলে বিদেশি ও সাধারণ মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, আনসার ও র‌্যাব সদস্যসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলার কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকছেন। ইজতেমার প্রথম দফায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১৮ হাজার সদস্য। বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের প্রায় ১৭ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে এবং সংঙ্গে নিয়োজিত থাকবে র‌্যাবের প্রায় ৮'শ সদস্য। এছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পর্যাপ্ত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে।

যে কোন ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশ ও র‌্যাবের বোম্ব স্কোয়াড এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে অবৈধ পথে প্রবেশ বন্ধ এবং সকল প্রবেশ পথে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল থাকবে। ইজতেমা ময়দানে থাকবে র‌্যাবের অবজারভেশন পোস্ট ও র‌্যাবের একটি দল হেলিকপ্টারে করে পর্যায়ক্রমে টহলে থাকবে। পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে ইজতেমা স্থলে ২টি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ও সিসি টিভি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। নদী পথে নৌ টহল ছাড়াও মুসল্লিদের সেবা প্রদান করতে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে এবং বিশ্ব ইজতেমায় আগত মহিলা মুসল্লিদের সহায়তা করতে পুলিশ ও র‌্যাবের মহিলা সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।

পুলিশ ও র‌্যাবের সহযোগিতা পেতে সরাসরি যোগাযোগ করতে ইতিমধ্যে কয়েকটি মোবাইল নম্বর আয়োজক ও মুসল্লিদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় ট্রাফিক ব্যাবস্থা/ যানবাহন চলাচলের নির্দেশিকাঃ ২১ থেকে ২৩ জানুয়ারি প্রথম দফা এবং ২৮ থেকে ৩০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফা অর্থাৎ দু’পর্বের ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদের নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য ২২ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা এবং ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টঙ্গী ও এর আশেপাশের এলাকায় গাড়ি পার্কিং করতে ও যানবাহন চলাচলে ঢাকা মহানগর পুলিশ ঢাকা ও গাজীপুর জেলা পুলিশ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। এগুলো হচ্ছে-উল্লেখিত সময়ে ধৌর ব্রিজ থেকে আব্দুল্লাহপুর হয়ে প্রগতি সরণি এবং টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত (বিমানযাত্রী, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যতিত) সব যানবাহন বন্ধ থাকবে। ঘোড়াশাল থেকে পূবাইল-কালীগঞ্জ হয়ে আগত যানবাহন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের আগে মরকুন (কে-২) পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে ঘোড়াশাল হয়ে ঢাকাগামী যানবাহন কাঁচপুর/যাত্রাবাড়ী সড়ক ব্যবহার করবে।

ইজতেমায় গমণেচ্ছু মুসল্লি, উত্তরার অধিবাসী, বিমানযাত্রী, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য সব যানবাহন চালকদের বিমান বন্দর সড়কের পরিবর্তে মিরপুর-সাভার সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ঢাকা মহনগরের যেসব মুসল্লি পায়ে হেঁটে ইজতেমা স্থলে যাবেন তাদের শাহজালাল বিমানবন্দর গোল চত্বর আজমপুর-আব্দুল্লাহপুর হয়ে টঙ্গী ব্রিজ পরিহার করে তুরাগ নদীর ওপর নির্মিত বেইলি ব্রিজ অথবা কামারপাড়া ব্রিজ ব্যবহার করতে হবে। মুসল্লিদের যানবাহন পার্কিংয়ের জন্যও রয়েছে নির্দিষ্ট স্থানঃ ঢাকা বিভাগ (ঢাকা জেলা ও গাজীপুর জেলা ব্যতীত) : সোনারগাঁও সড়ক ও জনপথ সড়কের আগ থেকে পশ্চিম প্রান্ত। ঢাকা জেলা (ঢাকা মহানগর ব্যতীত) : আশুলিয়া কলেজ এবং আশুলিয়া স্কুল মাঠ। ঢাকা মহানগর এলাকাঃ সাধারণ পার্কিং ১- নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকার খালি জায়গা।

সাধারণ পার্কিং ২- উত্তরা ৬নং সেক্টর ও রাজউক কলেজের আশেপাশের খালি জায়গা। গাজীপুর জেলাঃ টঙ্গীর কে-২ অথবা নেভি সিগারেট কারখানা সংলগ্ন এলাকা, কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল প্রাঙ্গণ ও সংলগ্ন এলাকা, মেঘনা টেক্সটাইল মিল সংলগ্ন রাস্তার উভয় পাশে, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি মাঠ, গাজীপুর সদরে চান্দনা চৌরাস্তা ট্রাক টার্মিনাল, চান্দনা হাইস্কুল মাঠ, ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের মাঠ। চট্টগ্রাম বিভাগঃ উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউছুল আজম ও গরীবে নেওয়াজ রোডের উভয় পাশে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগঃ উত্তরা ১০ নং সেক্টরের খালি জায়গা এবং কামারপাড়া হাউজিং মাঠ। খুলনা বিভাগঃ উত্তরা ১০ ও ১১ নং সেক্টর সড়কের উভয় পাশে।

বরিশাল বিভাগঃ উত্তরা ১৮ নং সেক্টরের খালি জায়গায়। সিলেট বিভাগঃ উত্তরা ১২ নং সেক্টর, বরিশাল বিভাগ পার্কিং ধৌর ব্রিজ ক্রসিং সংলগ্ন এলাকা। >>> সর্বোপরি মহান আল্লাহ্’র কাছে সবারই চাওয়া সুখ, সমৃদ্ধি ও দ্বীনের পথে, সঠিক ভাবে, সৎভাবে ও সম্মানের সহিত নিজে ও অপরের সুন্দর জীবন যাপন। এবং ভবিষ্যতের অর্থাৎ আখিরাতের জন্য নিজেকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করা। মহান আল্লাহ্ যেন সবাইকে এই তৌফিক দেন ।

বিশ্ব ইজতেমা সফল হোক। আমিন। বি.দ্র. তথ্য, ছবি, ট্রাফিক ব্যবস্থা ও পার্কিং এলাকাসহ সমস্ত সূত্র ইন্টারনেট (বিভিন্ন গণাধ্যমের ওয়েবসাইট) থেকে সংগৃহীত ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।