দেশের জনগণের কাছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার যে অঙ্গীকার বর্তমান সরকার করেছে তা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবার বিপুল চাহিদা পূরণ করতে নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে বিটিআরসি। তথ্যপ্রযুক্তি এবং টেলিযোগাযোগ সুবিধা সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে দেশের মানুষের জীবনধারা হয়ে উঠেছে আরও সমৃদ্ধ ও গতিশীল। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ব্যবসা খাত হয়ে উঠেছে খুবই সহজতর ও ফলপ্রসূ। নতুন নতুন টেলিযোগাযোগ সেবা ও ব্যবস্থাদি প্রবর্তন, প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ তার নিজস্ব জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।
বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা এবং সহযোগিতার ফলেই বিটিআরসি’র পক্ষে ভয়েস কল, এসএমএস ট্যারিফ হ্রাস, আন্তর্জাতিক বহির্গামী কলের ট্যারিফ হ্রাস, আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের পরিমাণ বৃদ্ধি, টেলিফোন ও ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য হ্রাস সম্ভব হয়েছে। বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিটিআরসি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে বিটিআরসি প্রদান করেছে আইপি টেলিফোনি সার্ভিস প্রোভাইডার লাইসেন্স, কল সেন্টার লাইসেন্স; চালু করেছে ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সার্ভিস, এডুকেশন লাইন, টেলিহেলথ, কৃষি জিজ্ঞাসা, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট, মোবাইল রেমিট্যান্স সার্ভিস, মোবাইলে লটারি টিকিট বিক্রয়, রেলওয়ে টিকিট বিক্রয়, ব্যাংক ইনফরমেশন, ব্লাকবেরী সেবা, কলব্লক সার্ভিস, মোবাইল ব্যাকআপ সার্ভিস, লাইভ শেয়ারবাজার তথ্যাদি, বিবিসি জানালা এবং মোবাইলে বাংলা কী-প্যাড। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের লক্ষ্যে ‘বিডিমার্ট’ গঠন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ইন্টারনেট ভিত্তিক অপরাধ দমনে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়া বর্তমান বছরের মধ্যেই টেলিটকসহ অন্যান্য বেসরকারি অপারেটরদের থ্রিজি, ফোরজি ও এলটিই টেলিকম সেবার জন্য লাইসেন্স প্রদান করা সম্ভব হবে।
বিশ্বের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে তথ্যপ্রযুক্তি এবং টেলিকম সুবিধায় আনার চলমান প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত করাই বিটিআরসির অন্যতম লক্ষ্য বলে স্বদেশ খবর প্রতিবেদককে জানিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস। তিনি আরো জানান, বিটিআরসি তার এই অঙ্গীকার পূরণে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিতে সদা প্রস্তুত। দেশ তথা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বিটিআরসির এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বিটিআরসির বর্তমান চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস।
বিটিআরসির সাধারণ উদ্দেশ্যাবলী
২০০২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে কয়েকটি সাধারণ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে বিটিআরসি।
এগুলো হলোÑবাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত এবং সুসংহত করতে পারে এমন একটি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সুশৃঙ্খল উন্নয়ন এবং তাতে উৎসাহ দান; দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য, যুক্তিসঙ্গত ব্যয় নির্ভর ও আধুনিক মানের টেলিযোগাযোগ সেবা ও ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করা; জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিযোগিতা করার মতো আধুনিক মানের টেলিযোগাযোগ সেবা ও ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা; টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার অবসান ও নতুন নতুন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রবর্তন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।
বিটিআরসি’র সাফল্য
২০১১-১২ অর্থবছরে টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে টু-জি লাইসেন্স নবায়ন, নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কার্যক্রম গ্রহণ ও ব্যান্ডউইথের মূল্যহ্রাসের মাধ্যমে দেশের জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক তথা সার্বিক জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধিসহ মোবাইলে বাংলা কী প্যাড প্রবর্তন, মোবাইল ব্যাংকিং, কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ও বেসরকারি সেবা প্রাপ্তি সহজলভ্য করা হয়েছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, আধুনিক টেলিযোগাযোগ সার্ভিস থ্রিজি’র লাইসেন্স প্রদানের লক্ষ্যে কমিশন হতে গাইড লাইন প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। থ্রিজি নিলাম ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে টেলিকমিউনিকেশন ব্যক্তিত্ব আবদুল্লা ফেরদৌসকে। বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেলিটকসহ মোট ৫টি অপারেটরকে থ্রিজি লাইসেন্স প্রদান করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, থ্রিজি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর; যার আবেদনের শেষ তারিখ এ মাসের ১২ আগস্ট। থ্রিজি’র জন্য প্রতি মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ডলার। একটি অপারেটরকে ন্যূনতম ৫ স্পেকট্রাম ক্রয় করতে হবে। পরামর্শক নিয়োগ করায় আশা করা যায় শীঘ্রই থ্রিজি সার্ভিস জনগণের হাতের নাগালে চলে যাবে এবং গ্রামবাংলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় আনা এবং টেলিযোগাযোগের সকল ক্ষেত্রে উন্নত ও দ্রুততর সেবা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিটিআরসি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকল্পে এ পর্যন্ত ১৪০টি প্রতিষ্ঠানকে সাইবার ক্যাফে (আইএসপি) লাইসেন্স প্রদান করেছে।
স্বল্প সময়ে ও কম ব্যয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের বিকল্প হিসেবে টেরিষ্ট্রিয়াল ক্যাবল সংযোগ গ্রহণের জন্য বিটিআরসি থেকে ৬টি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ৮৩টি গেটওয়ে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি আইপি বেইজড ভয়েজ কলকে আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ৩৭টি আইএসপি প্রতিষ্ঠানকে আইপি-টিএসপি লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। বিটিআরসি সারা দেশে একটি সাধারণ ও একক টেলিযোগাযোগ সম্প্রসারণ নেটওয়ার্ক তৈরি এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২টি প্রতিষ্ঠানকে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন (এনটিটিএন) নেটওয়ার্ক লাইসেন্স এবং পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অফ বাংলাদেশকে দেশব্যাপী অপটিক্যাল ফাইবার টেলিযোগাযোগ সঞ্চালন নেটওয়ার্ক লাইসেন্স প্রদান করেছে। এসব সার্ভিস চালু হওয়ায় গ্রামবাংলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় আনাসহ জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নেটওয়ার্ক বিস্তারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বিটিআরসি।
বিটিআরসির কার্যকরী ভূমিকার ফলে মোবাইল পেনিট্রেশন বিগত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি ৩৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ব্যান্ডউইথের মূল্য হ্রাসের কারণে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বিশেষত: মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বিগত বছরের তুলনায় ৪২ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ কোটি ৬৫ লাখে উন্নীত হয়েছে। বিটিআরসির মতে, এভাবে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের টেলিডেনসিটি ৮৫ শতাংশ এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক ৩০ শতাংশে উন্নীত হবে। বিটিআরসি মনে করে, সারাদেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট পেনিট্রেশন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নসহ জীবনযাত্রার মান বেড়েছে এবং মোবাইল মানি ট্রান্সফার, ই-ব্যাংকিংসহ কৃষি, শিল্প ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ও বেসরকারি সেবা প্রাপ্তি সহজলভ্য হয়েছে।
বিটিআরসি মনে করে, বাংলাদেশের মোবাইল ফোন গ্রাহকরা বর্তমানে বিশ্বে অন্যতম কম কলরেটের সুবিধা ভোগ করছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের অনুমোদিত কলরেট প্রতি মিনিট সর্বনিম্ন ২৫ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ২ টাকা নির্ধারণ করা আছে। বাংলাদেশে ২০০১ সালে গড় কলরেট ছিল ৯ টাকা ৬০ পয়সা; যা গত ১০ বছরে ৮ টাকা ৭৭ পয়সা কমেছে। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকাংশে কমানো হয়েছে, যা বর্তমানে মাত্র ১০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টুয়েন্টিওয়ান প্রকল্পের আওতায় বিএসটিআই কর্তৃক প্রদত্ত ‘মোবাইলফোন বাংলা কী-প্যাড স্পেসিফিকেশন’ এর ওপর ভিত্তি করে গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে মোবাইল ফোনে বাংলায় এসএমএস আদান-প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ খাতের পাশাপাশি বিভিন্ন স্যাটেলাইট সার্ভিসসমূহ যাতে উন্নত ও সহজলভ্য সেবা পেতে পারে সে লক্ষ্যে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকার কর্তৃক ‘প্রিপারেটরি ফাংশনস এন্ড সুপারভিশন ইন লঞ্চিং এ কমিউনিকেশন এন্ড ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট’ শীর্ষক প্রকল্প গৃহীত ও অনুমোদিত হয়েছে, যা বিটিআরসি কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিটিআরসির ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে একদিকে যেমন জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি করে যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে, তেমনি দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
জুন ২০১২ সালে মোট মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ৯ কোটি ৩৭ লাখ ৮৮ হাজার ২৭৬ এ উন্নীত হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ। এ সময়ে মাসিক গ্রাহকের ধারাবাহিক বৃদ্ধির হার প্রায় ২ শতাংশ ছিল।
মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মার্কেটের সাম্যাবস্থা ইতিবাচক দিকে অগ্রসর হওয়ায় মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা শীঘ্রই ১২ কোটিতে উন্নীত হবে বলে বিটিআরসি আশা করছে।
একই সময়ে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বিশেষত মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ বছর ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ৪২ শতাংশেরও বেশি। এ সময়ে মাসিক বৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ। এছাড়া ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের নেটওয়ার্ক বিস্তার এবং আইএসপি অপারেটরদের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের হার বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বছর ব্রডব্যান্ড গ্রাহক সংখ্যা ২ মিলিয়নে পৌঁছেছে, যার ঘনত্ব ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। তারহীন ব্রডব্যান্ড সেবার জনপ্রিয়তা ব্রডব্যান্ড সেবার ভবিষ্যৎ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে বিটিআরসি আশা করছে।
বিটিআরসি থেকে ইস্যু করা লাইসেন্সসমূহের কার্যক্রম:
ক. ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে সার্ভিস (আইজিডব্লিউ)- আন্তর্জাতিক ইনকামিং ও আউটগোয়িং বৈধ পথে কল পরিচালনার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব অর্জন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। সরকারের অনুমোদনক্রমে বিটিআরসি থেকে এ পর্যন্ত ২৪টি আইজিডব্লিউ লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে।
খ. ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ সার্ভিস (আইসিএক্স)- আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কল ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে।
সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বিটিআরসি থেকে ২৩টি আইসিএক্স লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে।
গ. ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিস (আইআইজি)- ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য এবং গ্রাহকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করার জন্য এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। বিটিআরসি থেকে আইআইজি লাইসেন্স ইস্যুর পরিমাণ ৩৪টি।
ঘ. ব্রডব্যান্ড ওয়ারলেস এক্সেস সার্ভিস (বিডব্লিউএ)- সেলুলার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভয়েস সার্ভিস প্রদানের পাশাপাশি উচ্চতর গতিসম্পন্ন ডাটা সার্ভিস প্রদান এবং গ্রামবাংলাকে ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত করার জন্য এই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
ঙ. ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল সার্ভিস (আইটিসি)- দেশের স্থলপথে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করে পাশের অন্যান্য দেশের সাথে এবং মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সুপার হাইওয়ে অর্থাৎ সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে সংযোগ স্থাপন করে বিরতিহীনভাবে টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করা এই সার্ভিসের লক্ষ্য।
বিটিআরসি থেকে আইটিসি লাইসেন্স ইস্যুর সংখ্যা ৬টি।
এছাড়া বিটিআরসি থেকে আরো কয়েকটি সার্ভিসের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যেমন পিএসটিএন অপারেটর লাইসেন্স, এনটিটিএন লাইসেন্স, ভেহিকল ট্রেকিং লাইসেন্স, আইপিটিএসপি লাইসেন্স, আইএসপি লাইসেন্স, সাইবার ক্যাফে লাইসেন্স, কল সেন্টার লাইসেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (আইআইএক্স) লাইসেন্স ইত্যাদি।
রাজস্ব আয়
২০১১-১২ অর্থবছরে বিটিআরসির বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৩০২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আর রাজস্ব ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
অর্থবছরে প্রকৃত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৯৫৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং রাজস্ব ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে ৩ হাজার ৯১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মোবাইল ফোন অপারেটর, পিএসটিএন, আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, আইআইজি, আইএসপি ও ভি-স্যাটসহ বিভিন্ন টেলিকম অপারেটরদের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি, লাইসেন্স নবায়ন ফি, রেভিনিউ শেয়ারিং ফি, এবং স্পেকটার্ম চার্জ ও সার্ভিস চার্জ আদায় বাবদ বিটিআরসি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়।
সবশেষে বলা যায়, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের বর্তমান অবস্থার উন্নতি হবে। এভাবে সবার জন্য নব প্রযুক্তির সমন্বয়ে মানসম্মত ও সুলভ মূল্যে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিটিআরসি কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতেও বিটিআরসির এ সফল অগ্রযাত্রা দেশ ও জনকল্যাণে অব্যাহত থাকবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।