আ স ম হাবিবুর রহমান:
সফলতা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সাফল্যের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। সফল হওয়ার জন্য চাই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আর আমাদের লক্ষকে রূপান্তর করতে হবে তীব্র আকাক্সক্ষায়। এ জন্য চাই স্বপ্ন ও সম্ভাবনায় বিশ্বাসী নতুন প্রজন্ম।
যাদের রয়েছে আশাবাদী মনোভাব। যারা পরিকল্পনা করতে ভালোবাসে। যারা পৃথিবীতে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন কিছু করতে চায় নিজের চিন্তা-ভাবনার আলোকে। যারা সুযোগ এলেই চেষ্টা করে নিজের চিন্তা-ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে, তাদের মন-মেজাজের পরির্বতন নির্ভর করে বহির্জগতকে জয় করার ক্ষেত্রে তার সাফল্য ও ব্যর্থতার ওপর। একটি অবিচলিত স্বভাব, ধৈর্য এবং বিশেষ রসবোধে সুখের অন্বেষণ খুব মূল্যবান গুণাবালি।
যেখানে সুখ আছে সেখানে সুখ বিকশিত হয়। চাপ এবং হতাশা অথবা বিষাদের পরিবেশে ভালোবাসা দ্রুত শুকিয়ে যায়। নিরাশাবাদী লোক অন্যেও ক্ষতির কারণ হয়। তাই আশাবাদী থাকা প্রয়োজন। স্বপ্নগুলোকে সবসময় আগলে রাখা প্রয়োজন।
আর প্রয়োজন কঠিন অধ্যবসায়। তাছাড়াও সফল হতে হলে সাফল্যের পথে নিজেকে বদ্ধপরিকর রাখতে হবে। সফল হওয়ার সহজ পথ এটাই। প্রাকৃতিক নিয়ম হচ্ছে, মনোশক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে মনই কাক্সিক্ষত বস্তুর দিকে আমাদের নিয়ে যাবে। এই প্রাকৃতিক নিয়মকে বুঝতে পারলে এবং সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করতে পারলে অগ্রগতির আকস্মিকতা ও দ্রুততা হবে বিস্ময়কর।
এক অদৃশ্য শক্তি নিয়মিতভাবেই আমাদেরকে সাফল্যের পথে ঠেলে নিয়ে যেতে থাকে। সাফল্যের জন্য সৃষ্টি হয় প্রয়োজনীয় মনোযোগ। সাফল্য হয় সুনিশ্চিত।
এই স্বতঃস্ফূর্ত সাফল্যকে আকর্ষণ করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে স্বপ্ন। বিশ্বাসযুক্ত সৃজনশীল কল্পনার নামই হচ্ছে স্বপ্ন।
আসলে ইচ্ছাশক্তি নয়, স্বপ্নই সাফল্য সৃষ্টি করে। ইচ্ছাশক্তি হচ্ছে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হাতিয়ার। ইচ্ছাশক্তি হচ্ছে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে চিন্তা ও কাজকে নিয়ন্ত্রিত করার ক্ষমতা। কিন্তু স্বপ্ন ছাড়া ইচ্ছাশক্তি বেশিদূর এগুতে পারে না। আসলে অন্তর্চেতনাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য দিয়ে ইচ্ছাশক্তিকে জোরদার করে।
তাই সফল হতে হলে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন স্বপ্ন তৈরি। অর্থাৎ যে লক্ষ্য আপনি অর্জন করতে চান, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ধারণা এবং বিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে। লক্ষ্যের সঙ্গে নিজেকে পুরোপুরি একাত্ম করতে হবে। আর লক্ষ্যকে সবসময় প্রজ্বলিত রাখতে হবে। আমাদের সমগ্র কল্পনা, চিন্তা ও অনুভূতিকে এই লক্ষ্যের সঙ্গে একাত্ম করতে হবে।
অর্থাৎ মানসিকভাবে নিজেকে সাফল্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।
সফল হওয়ার জন্য স্বপ্ন তৈরি করার পরই প্রয়োজন নিজেকে প্রস্তুত করা। অর্থাৎ সাফল্য গ্রহণ করার দক্ষতা অর্জনে নিজেকে পুরোপুরি সাফল্যের হাতিয়ারে রূপান্তরিত করতে প্রস্তুত হতে হবে। যা পেতে চান নিজেকে তা পাওয়ার যোগ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাজ ও মনোযোগ প্রদানে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে প্রয়োগ করতে হবে।
স্বপ্ন যতো দূরর্বতী বা যতো কঠিন হোক না কেন আপনি যদি আপনার মনকে লক্ষ্যের জন্য প্রস্তুত করতে পারেন এবং সফল প্রয়াসকে সেই লক্ষ্যে নিবেদিত করতে পারেন, আপনি সফল হবেনই। সাফল্যের প্রাকৃতিক নিয়মেই আপনি ক্রমান্বয়ে বিকশিত হবেন। সাফল্যের ফুল প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রস্ফুটিত হয়। একটি ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় আরেকটি ধাপের দিকে। তাই আপনাকে প্রো-অ্যাকটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শুরু করতে হবে।
যেখানে আছেন সেখান থেকেই শুরু করতে হবে। ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবেন স্বপ্নের চূড়ান্ত লক্ষ্যপানে। আপনি প্রথম কাজটি প্রথম করলেই আপনার অচেতন মন পরর্বতী ধাপে করণীয় সম্পর্কে সচেতন মনে তথ্য ও উদ্দীপনা প্রেরণ করবে। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্যের জন্য স্বপ্নকে সবসময় মনের সামনে রাখতে হবে এবং সে পর্যায়ে নিজেকে উত্তীর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় গুণ, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা অর্জনের প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই যে, প্রতিটি সফল মানুষ নিজের জ্ঞাতসারে হোক বা অজ্ঞাতসারে এই প্রাকৃতিক নিয়মকেই কাজে লাগিয়েছেন।
স্বপ্নের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি অন্তরায় আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করি। বড় চিন্তা করতে গিয়ে, সদুূরপ্রসারী লক্ষ্য স্থির করতে গিয়ে ছোট ছোট কাজ, ছোট ছোট পথের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি না। আমরা বুঝতে পারি না ছোট ছোট ইটই হচ্ছে বিশাল ভবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী, পায়ে চলা পথই এক সময় রাজপথে গিয়ে মিশে যায়, ছোট ঝরনাই নদী হয়ে মিষে যায় বিশাল মহাসমুদ্রে। প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজ প্রতিদিন সমাপ্ত করলে মাস-বছর-যুগ শেষে তাই পরিণত হয় বিশাল সাফল্যে। আমরা যদি শতাবর্শী প্রাচীন বট গাছের দিকে তাকাই, তাহলে এর ডাল-পালা-কান্ড-মূল আমাদের বিমোহিত করে।
কিন্তু যে বীজ থেকে এই মহীরুহ সৃষ্টি হয়েছে, সে কথা একবার ভাবুন। একটি বট গাছের ফল কাকের পেটে গিয়ে বিষ্ঠা আকারে এই মাটিতে পতিত হয়েছিল। যে বিষ্ঠার সঙ্গে ছিল ছোট বীজটি। দিন মাস বছর পেরিে ছোট বীজটিই দিগন্ত আচ্ছন্নকারী মহীরুহে পরিণত হয়েছে। আসলে জন্মগ্রহণ করেই কেউ সফল হয় না, সিঁড়ি বেয়েই ধাপে ধাপে সাফল্যের শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছাতে হয়।
কারণ বাস্তবতার আগে প্রয়োজন ধারণার। ধারণার সঙ্গে বিশ্বাস, একাগ্রতা ও দৃঢ়তা যুক্ত হয়েই সাফল্য আসে। এই মহাবিশ্বে শুধু মানুষই সফল হয়, স্মরণীয় হয়, বরণীয় হয়। কারণ মানুষের রয়েছে চেতনারূপী এক মহাশক্তিশালী চালিকাশক্তি। আর ব্যক্তি চেতনা বিশ্বজনীন মহাচেতনারই একটি ক্ষুদ্র অংশ।
সৎ, সুন্দর ও কল্যাণদায়ক চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে সঞ্চারিত হয় মহাচেতনা। মহাচেতনাই তখন হয়ে ওঠে আমাদের নীরব সহযোগী। এই প্রাকৃতিক নীরব সহযোগী সম্পর্কে সচেতনতা আপনার সাফল্যের সবচেয়ে বড় ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তাই আর অপেক্ষা নয়। আজ, এখন থেকেই সফলতার সোনার হরিণকে ধরার জন্য আমাদের কাজ শুরু করা প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।