ছাত্র
দীর্ঘ একটি লেখা পড়ুন। লেখাটা পড়ে লোভ সামলাতে পারলামনা। আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে। তাহলে শুরু করুন-----------
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক ছাত্রটি কে?
এই প্রশ্নের উত্তর হতে পারে টনি বেন (Tony Benn) যার পুরো এবং আদি নাম এন্টনি নিল ওয়েজউড বেন।
টনি বেন (জন্ম. লন্ডন, ইংল্যান্ড, ৩ এপ্রিল ১৯২৫)
তিনি একজন সাবেক লর্ড, বৃটিশ লেবার পার্টির বামপন্থী প্রবীণ নেতা, সাবেক মন্ত্রী এবং বর্তমানে ইরাক- আফগানিস্তানে আমেরিকা- বৃটেনের আগ্রাসন বিরোধী সংগঠন স্টপ দি ওয়ার কোয়ালিশন Stop the war coalition)-এর প্রেসিডেন্ট বা সভাপতি।
পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ আন্দোলনের নেতা টনি বেন ১৯৭১-এ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একনিষ্ঠ সমর্থন দিয়েছিলেন।
টনি বেন-এর জন্ম হয়েছিল লন্ডনে ৩ এপৃল ১৯২৫-এ অর্থাৎ তার বয়স এখন পচাশি-ঊর্ধ্ব।
তিনি এখনো ছাত্র? এই পচাশি বছর বয়সেও?
হ্যা।
কারণ তিনি ১৯৭৫-এ হু ইজ হু (Who’s Who) বইয়ে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে লেখেন, শিক্ষা - এখনো এগিয়ে চলেছে। (Education - still in progress)।
যেহেতু টনি বেনের শিক্ষা এখনো এগিয়ে চলেছে সেহেতু বলা চলে তিনি এখনো একজন ছাত্র।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওই হু ইজ হু বইয়ে অন্যান্য পলিটিশিয়ান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছিলেন। যেমন কেউ বা বিএ, বিএসসি, কেউ বা এমএ, এমএসসি, পিএইচডি ইত্যাদি। যদিও টনি বেন অক্সফোর্ডে ফিলসফি, পলিটিক্স ও ইকনমিকসে পড়াশোনা করেন এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে পাইলট হওয়ার জন্য এভিয়েশন বিষয়ে পড়াশোনা করেন তবুও নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে কোনো বিবরণ দেননি।
এটা কি তার নিছক বিনয় ও নম্রতা?
হতে পারে।
কিন্তু আসলেই টনি বেন এখনো শিখেই চলেছেন।
টনি বেনের শিক্ষা চলমান। তাই তিনি চলমান ছাত্র।
তার জীবন থেকে বিশ্বের ছাত্রদের শেখার অনেক কিছু আছে।
টনি বেনের জন্ম হয়েছিল ইংল্যান্ডের খুব অভিজাত পরিবারে।
তার দাদা স্যার জন বেন ছিলেন একজন লর্ড এবং তার বাবা উইলিয়াম ওয়েজউড বেন ছিলেন একজন এমপি ও লেবার সরকারের একজন মন্ত্রী। স্যার জন বেনের মৃত্যুর পর উইলিয়াম ওয়েজউড বেন বংশানুক্রমিক সূত্রে হন লর্ড এবং তার উপাধি হয় ভাইকাউন্ট স্ট্যানসগেইট (Viscount Stansgate - লক্ষ্য করুন ইংরেজি ভাইকাউন্ট বানান)।
বৃটেনের পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ আছে। ঊর্ধ্ব কক্ষটি হচ্ছে হাউস অফ লর্ডস এবং একটা সময় পর্যন্ত লর্ড সভার সদস্য হতে পারতেন শুধু লর্ডরাই। লর্ড সভার সদস্য হওয়ার জন্য তাদের কোনো নির্বাচন করতে হতো না।
এই লর্ড সভার নিচে হচ্ছে হাউস অফ কমন্স বা সাধারণের কক্ষ। এটি নিম্ন কক্ষ হলেও বৃটেনের সব আইন প্রণয়নের ক্ষমতা এই হাউস অফ কমন্সের। এর সদস্যদের নির্বাচিত হতে হয় জনগণের ভোটে এবং নির্বাচিতরা পরিচিত হন মেম্বার অফ পার্লামেন্ট বা এমপি রূপে। অর্থাৎ নিম্ন কক্ষ হলেও হাউস অফ কমন্সের সদস্যদেরই রয়েছে প্রকৃত ক্ষমতা এবং তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৬৩ পর্যন্ত একটা সমস্যা ছিল।
হাউস অফ কমন্সের সদস্য হতে পারতেন না কোনো লর্ড। অর্থাৎ এমপি হওয়ার জন্য কোনো লর্ড নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন না।
রাজনৈতিকভাবে উচ্চাভিলাষী তরুণ ছাত্র টনি বেন এই সমস্যা নিয়ে দুর্ভাবনায় ছিলেন। তিনি অক্সফোর্ড ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর মাত্র পচিশ বছর বয়সে ১৯৫০-এ তিনি তদানীন্তন বৃটেনের সর্বকনিষ্ঠ এমপি নির্বাচিত হন।
টনি বেনের বড় ভাই মাইকেল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় একটি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন। তাই পিতার মৃত্যুর পর টনি বেনের লর্ড সভার সদস্য অটোম্যাটিকালি হওয়ার কথা ছিল। সেক্ষেত্রে তাকে এমপি-র পদ ছেড়ে দিতে হতো। এটিই ছিল টনি বেনের গভীর দুশ্চিন্তার কারণ।
পিতা জীবিত থাকতেই টনি বেন একাই আন্দোলন শুরু করেন যদি কোনো ব্যক্তি লর্ড সভার সদস্য হতে না চান এবং যদি তিনি লর্ড উপাধি পরিত্যাগ করতে চান তাহলে তাকে সেই অধিকার দিতে হবে।
টনি বেন তার উত্তরাধিকার ছেড়ে দেয়ার বহু চেষ্টা করেও নিষ্ফল হন।
নভেম্বর ১৯৬০-এ পিতার মৃত্যুর পর নিয়ম অনুযায়ী টনি বেন হন নতুন ভাইকাউন্ট স্ট্যানসগেইট। টনি বেনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। টনি বেনের এমপি পদ চলে যায়। তার নির্বাচনী আসন (বৃস্টল সাউথ-ইস্ট) শূন্য ঘোষিত হয়।
মে ১৯৬১-তে ওই আসনে উপনির্বাচনে টনি বেন আইন অনুযায়ী অংশ নিতে না পারলেও ভোটারদের অনুরোধ করেন ব্যালট পেপারে তার নাম লিখে ভোট দেয়ার জন্য। অনুগত ভোটাররা তাই করে এবং টনি বেন সবচেয়ে বেশি ভোট পান।
এই রায় নিয়ে টনি বেন ইলেকশন কোর্টে মামলা করে হাউস অফ কমন্সে ফেরার আবেদন জানান। কিন্তু ইলেকশন কোর্ট তার এই আবেদন নাকচ করে দিয়ে নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী প্রতিদ্বন্দ্বী টোরি পার্টির প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে।
টনি বেন এই সিদ্ধান্ত মেনে নেন না।
তিনি পার্লামেন্টের বাইরে তার ব্যক্তিগত আন্দোলন চালিয়ে যান। পত্রপত্রিকায় যুক্তি তর্ক দিয়ে অবিরামভাবে লিখতে থাকেন। টিভি-রেডিওতে বলতে থাকেন।
সাধারণ ভোটাররা অবাক হয়! লর্ড সভায় বসতে চান না এমন লর্ডও আছে? লর্ড উপাধি ছেড়ে দিতে চান এমন লর্ডও আছে?
এসবের উত্তরে টনি বেন জানান, তিনি চান প্রকৃত ক্ষমতা সম্পন্ন পলিটিশিয়ান হতে এবং তা হওয়া সম্ভব শুধু তাদেরই পক্ষে যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। তাই তিনি অনির্বাচিত হাউস অফ লর্ডসের সদস্য হতে চান না।
তিনি চান নির্বাচিত হাউস অফ কমন্সের সদস্য হতে।
শেষ পর্যন্ত টনি বেনের যুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয় তদানীন্তন টোরি সরকার। তারা স্বীকার করে, লর্ড সভার সদস্য সংক্রান্ত আইন সংশোধনের দরকার আছে। ৩১ জুলাই ১৯৬৩-তে সন্ধ্যা ছয়টায় পিয়ারেজ আইন (Peerage Act) পাস হয়। এই আইনে লর্ড উপাধি ত্যাগ করার অনুমতি দেয়া হয়।
টনি বেন কোনো দেরি না করে তার উপাধি ভাইকাউন্ট স্ট্যানসগেইট পরিত্যাগ করেন সেই সন্ধ্যায় ছয়টা দুই মিনিটে!
তিন সপ্তাহ পর ২০ আগস্ট ১৯৬৩-তে আবার একটি উপনির্বাচনে টনি বেন বিজয়ী হয়ে হাউস অফ কমন্সে ফিরে আসেন।
১৯৫৭-তে লন্ডনে যাওয়ার পর থেকে টনি বেন-এর ব্যতিক্রমী রাজনীতি সংক্রান্ত খবরগুলো তার প্রতি আমাকে কৌতূহলী করে তোলে। ষাটের দশকে লন্ডনে ফজলে হাসান আবেদ (বর্তমানে স্যার ও ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাতা), ব্যারিস্টার ভিখারুল ইসলাম চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট সৈয়দ ফজলে আলি, সমাজকর্মী তালেয়া রেহমান, টিভি উপস্থাপক ফজলে লোহানী প্রমুখ মিলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেসব জনসমাবেশের আয়োজন করতাম তাতে মাঝে মধ্যে টনি বেন আসতেন প্রধান অথবা বিশেষ অতিথি হয়ে। এখনো মনে পড়ে হোবর্ন-এর রেড লায়ন স্কোয়ারের কনওয়ে হল-এ আমাদের সেসব মিটিংয়ে দীর্ঘ ও সুঠামদেহী টনি বেন-এর উপস্থিতি। গায়ে থাকতো ব্রাউন রঙের কর্ডরয় জ্যাকেট অথবা কালো সুট, হাতে অবশ্যই ধূমপানের পাইপ।
এই দশকে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের আন্দোলনের পুরোভাগেও দেখেছি টনি বেন-কে। আজ যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং গোটা বিশ্ব যে পারমাণবিক যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যায়নি তার জন্য একটি বড় মাপের কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন এই নিরহংকার প্রগতিশীল বৃটিশ পলিটিশিয়ান। আমার মনে পড়ে, ৩১ জুলাই ১৯৬৩-র সন্ধ্যায় পিয়ারেজ আইন পাসের পর টনি বেন যখন লর্ড সভা থেকে পদত্যাগের অনুমতি পান তখন আমরা সবাই মিলে টটেনহাম কোর্ট রোড-এর একটি পাব-এর বেইসমেন্টে ডাইভ বার-এ ঘটনাটি মহানন্দে সেলিব্রেট করেছিলাম।
ষাটের দশকের গোড়ায় টনি বেনের এই একক আন্দোলন বৃটিশ রাজনীতিতে ঝড় তুলেছিল এবং বৃটিশ পার্লামেন্টের সুদূর প্রসারী পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। এই পরিবর্তনের পরবর্তী ফলাফলে বংশানুক্রমিক লর্ড না হলেও এখন মনোনীত ভাবে কোনো পুরুষ বা নারী হতে পারেন লর্ড সভার সদস্য।
যেমনটা হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পলা মনজিলা উদ্দীন। হাউস অফ লর্ডসে তিনি মনোনীত হয়েছেন টনি ব্লেয়ারের লেবার সরকারের আমলে এবং তার উপাধি হচ্ছে ব্যারনেস।
টনি বেন পরবর্তীকালে লেবার সরকারের ডাক ও তার বিভাগের মন্ত্রী এবং তারপর টেকনলজি মন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি বৃটিশ সরকারের কাজকর্মে আধুনিকতা এনেছিলেন। ২০০১-এ পার্লামেন্ট থেকে তিনি রিটায়ার করেন।
রিটায়ার করার কারণ স্বরূপ তিনি বলেন, পলিটিক্সে আরো সময় দেয়ার লক্ষ্যে আমি পার্লামেন্ট থেকে রিটায়ার করছি।
টনি বেন তার এই কথা রেখেছেন। ইরাকের বিরুদ্ধে বৃটেনের যুদ্ধের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন। এক পর্যায়ে তিনি বাগদাদে গিয়ে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন। ফেব্রুয়ারি ২০০৩-এ তার নেতৃত্বে বহু দলীয় যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন, স্টপ দি ওয়ার কোয়ালিশন লন্ডনে একটি জনসমাবেশে দশ লাখ প্রতিবাদীকে সমবেত করে।
সেই সময়ে টনি বেনের-ই দল লেবার পার্টি ক্ষমতায় ছিল এবং টনি ব্লেয়ার ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। টনি বেন চেয়েছিলেন ইরাকে যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং সে জন্য তিনি লেবার পার্টির দক্ষিণ পন্থীদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। টনি বেন এই আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ২০০৪ ও ২০০৮-এ তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
তার কিছুটা নরম বামপন্থী সমাজতান্ত্রিক মতামতের জন্য বৃটেনের দক্ষিণপন্থী মিডিয়া তাকে রেড বেন (Red Benn) বা কমিউনিস্ট বেন উপাধি দিয়েছিল। টনি বেন এসব প্রচারণা উপেক্ষা করেন।
এসব অপপ্রচারের ফলে এক পর্যায়ে টনি বেন নিজের পার্টিতেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তিনি তার মতাদর্শে অবিচল থাকেন।
পার্টি পলিটিক্সে তার একটি নীতি অনুকরণীয়। টনি বেন বলেন, যে কোনো বড় পার্টিতে বিভিন্ন মতের সমাবেশে ঘটতে পারে। ফলে পার্টির ভেতরে তীব্র দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে।
কিন্তু প্রয়োজনের সময় অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যান্য পার্টির বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
পরিণত বয়সেও টনি বেন বৃটেনে একক রোড শো করেছেন। তারপর গায়ক রয় বেইলি-র সঙ্গে দুজন মিলে রোড শো করেছেন। এখনো তিনি টিভি ও রেডিও-তে নিয়মিত অংশ নেন। জনসভায় যেমন তিনি সুবক্তা ঠিক তেমনি টিভি-রেডিওর টক শো-তেও তিনি সুরসিক ও সুআলোচক।
জুন ২০০৫-এ তিনি টিভি চ্যানেল ফাইভ-এর বিগ আইডিয়াস দ্যাট চেইঞ্জড দি ওয়ার্ল্ড (Big Ideas That Changed the World) সিরিজে গণতন্ত্র বিষয়ে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন। এতে তিনি বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে ওয়ালেট (মানিব্যাগ) থেকে ব্যালটে যাওয়ার পথ।
২০০৭-এ বিবিসি টু টিভির জরিপে দর্শকরা তাকে ৩৮% ভোট দিয়ে বৃটেনের নাম্বার ওয়ান পলিটিকাল হিরো নির্বাচিত করে। মার্গারেট থ্যাচার ৩৫% ভোট পেয়ে এই জরিপে হয়েছিলেন দ্বিতীয়।
অতীতে বৃটেনের দক্ষিণপন্থীরা তীব্র সমালোচনা করতেন টনি বেনকে তার সমাজতান্ত্রিক আদর্শের কারণে।
কিন্তু এখন পচাশি বছর বয়সে দলমত নির্বিশেষ টনি বেন হয়েছেন সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র।
২০০৯-এর স্টপ দি ওয়ার কনফারেন্সে তিনি বলেন, ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধ হচ্ছে স্রেফ সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ। যখন আপনার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয় তখন নিজেকে রক্ষা করার অধিকার আপনার আছে। ইরাক ও আফগানিস্তানে অভিযানের বিরুদ্ধে যারা প্রতিরোধ করছে তাদের মুসলিম উগ্রপন্থী বলাটা ডাহা মিথ্যা। আমি যখন বৃটিশ আর্মিতে যোগ দিয়েছিলাম তখন বয়স ছিল ষোল।
তখন যদি কোনো জার্মান আমার দেশে আসতো তাহলে আমার হাতে যদি একটা বেয়নেট, একটা রাইফেল অথবা একটা রিভলভার থাকতো নিশ্চয়ই তা ব্যবহার করতাম। আমি যদি দেখতাম কোনো জার্মান অফিসার তার খাবার খাচ্ছেন তাহলে পারলে কোনো জানালা থেকে আমি তার প্লেটে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়তাম। সেক্ষেত্রে আমি কি একজন মুক্তিযোদ্ধা হতাম, নাকি সন্ত্রাসী হতাম?
টনি বেনের একটা অভ্যাস হলো নিয়মিত ডায়রি লেখা। প্রতিদিনের ঘটনা তিনি ছোট করে হলেও তার ডায়রিতে লিখে রাখেন। এসব ডায়রির ওপর ভিত্তি করে তিনি একাধিক রাজনৈতিক বই প্রকাশ করেছেন এবং তার আত্মজীবনী লিখেছেন।
রাজনীতি অন্তঃপ্রাণ টনি বেন কি প্রেম করেছিলেন?
টনি বেনের বয়স যখন চব্বিশ তখন অক্সফোর্ডে উর্সটার কলেজে একটা টি পার্টিতে তার পরিচয় হয় আমেরিকায় জন্ম হওয়া এক ছাত্রী ক্যারোলাইন মিডলটন ডিক্যাম্প-এর সঙ্গে। ক্যারোলাইনের বয়স তখন ছিল তেইশ।
প্রথম পরিচয়ের পর হয় নয় দিনের তুমুল প্রেম। নয় দিন পর ওই শহরের একটি পার্কের বেঞ্চে টনি বেন বিয়ের প্রস্তাব দেন ক্যারোলাইনকে।
বহু পরে এ বেঞ্চটি টনি বেন কিনে নেন অক্সফোর্ড শহর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এবং তা স্থাপন করেন পশ্চিম লন্ডনে হল্যান্ড পার্ক এলাকায় তার বাসভবনের বাগানে।
টনি ও ক্যারোলাইনের চার ছেলেমেয়ে এবং দশ নাতি-নাতনি হয়। ২০০০ সালে ৭৪ বছর বয়সে ক্যান্সারে মারা যান ক্যারোলাইন। বেনের সন্তানরাও রাজনীতিতে এসেছেন।
রাজনীতিতে নাম সংক্ষিপ্ত করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন টনি বেন। তার পিতৃদত্ত নাম ছিল এন্টনি নিল ওয়েজউড বেন।
তিনি এন্টনি-কে সংক্ষিপ্ত করেন টনি-তে। বাদ দেন নিল ও ওয়েজউড।
ধারণা করা হয় তার অনুকরণে উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন নিজের নাম দেন বিল ক্লিনটন এবং এন্টনি চার্লস লিনটন ব্লেয়ার হন টনি ব্লেয়ার।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ছিল বৃটেনের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে টনি বেন পাইলট হয়ে সাউথ আফৃকা ও রোডেসিয়া-য় ফ্লাই করেন।
কিন্তু ঘটনাটি নিয়ে টনি বেন তার নামের আগে কোনো বিশেষণ যোগ করেননি।
ডাক ও তার মন্ত্রী থাকার সময়ে তদানীন্তন বৃটেনের সর্বোচ্চ ভবন পোস্ট অফিস টাওয়ার-এর উদ্বোধন তিনি করেন। পোস্ট অফিসের তত্ত্বাবধানে জাইরো ব্যাংক (Giro Bank) নামে ব্যাংক চালু করেন। বৃটিশ ডাকটিকেট থেকে রানীর ছবি বাদ দেয়ার প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেলেও ডাকটিকেটে তখন থেকে রাণীর ছবি সিলুয়েটে ছাপা হতে থাকে।
টনি বেনের প্রতি তার নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা খুবই অনুগত থাকার অন্যতম কারণ ছিল, তিনি নির্ধারিত দিন ও সময়ে রাজধানী থেকে নিয়মিতভাবে যেতেন নির্বাচনী এলাকায় এবং ভোটারদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনতেন।
টনি বেনের একটি উক্তি মনে রাখা উচিত। তিনি বলেন, ভুল করাটা জীবনেরই অংশ। … অভিজ্ঞতাই হচ্ছে আসল শিক্ষক।
দুটি নেশায় টনি বেনের গভীর আসক্তি ছিল এবং আছে।
তিনি ধূমপান করেন পাইপে। হাতে পাইপ অথবা মুখে ধূমায়িত পাইপ ছাড়া টনি বেনের ছবি কল্পনা করা যায় না। তার দ্বিতীয় আসক্তি হচ্ছে চায়ে। তিনি দিনে-রাতে বহু কাপ চা খান।
তিনি জীবনে এক ফোটা মদ খাননি এবং ১৯৭০ থেকে ভেজিটারিয়ান হয়ে যান।
সকাল সাতটায় তিনি লাইব্রেরিতে কাজ শুরু করেন এবং রাত বারোটায় ঘুমাতে যান।
টনি বেনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ঠিকানা হলো: tonybenn.com ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে টনি বেনের জীবন থেকে বাংলাদেশের ছাত্ররা কী শিখতে পারে?
এর উত্তর হলো, অন্তত পাচটি বিষয়ে তার জীবন ছাত্ররা অনুসরণ করতে পারে।
এক. আজীবন ছাত্র থাকা যেতে পারে। তবে সে জন্য পড়া ও লেখালেখি উভয়ই চালিয়ে যেতে হবে।
স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির শিক্ষা এবং ডিগ্রি পাওয়াই শেষ পর্যায় নয়। এসব প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরেও বই, ইন্টারনেট, টিভি, রেডিও, নিউজপেপার প্রভৃতির মাধ্যমে যিনি শিক্ষা নিতে থাকবেন তিনি নিজেকে ছাত্র রূপে পরিচয় দিতে পারবেন। সবাই জানেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনে অধিক বয়সী ছাত্রদের ভিড় তীব্রভাবে সমালোচিত হচ্ছে। এই সমালোচনা সঙ্গত। আমার সময়ে (১৯৫০-১৯৫৬) বাংলাদেশে ছাত্রদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হয়ে যেত একুশ থেকে পচিশ বছরের মধ্যে।
তারা ম্যাট্রিক পাস করতো ষোল বছর বয়সে, গ্র্যাজুয়েট হতো বিশ-একুশ বছর বয়সে এবং এমএ পাস করতো একুশ-বাইশ বছরে। কোনো কারণে এক-দুই বছর ড্রপ হলেও তারা শেষ পরীক্ষায় পাস করতো চব্বিশ-পচিশ বছর বয়সের মধ্যেই।
দুঃখের বিষয়, সেশন জট এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে সেই বয়সসীমা এখন আর নেই। এখন কেউ কেউ শুধু রাজনীতি করার সুবিধায় ছাত্র থেকে যাচ্ছেন অধিক বয়স পর্যন্ত। এই প্রবণতা ব্যক্তির জন্য অমঙ্গল বয়ে আনছে এবং ছাত্র সমাজের জন্য নিন্দা নিয়ে আসছে।
এই সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠতে হলে টনি বেনের মতোই ব্যক্তিকে আজীবন পড়া ও লেখা চালিয়ে যেতে হবে।
সুতরাং বাংলাদেশে যারা ছাত্র সংগঠন করছেন তারা প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে আত্মজিজ্ঞাসা করতে পারেন আজ কী পড়েছি, কী জেনেছি, কী বুঝেছি এবং কী শিখেছি ও কী লিখেছি?
আমাদের সময়ের তুলনায় বর্তমানে, বিশেষত কমপিউটারের মাধ্যমে স্বশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ইচ্ছাকৃতভাবে প্রলম্বিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরিবর্তে তাৎক্ষণিক স্বশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ নিতেই হবে। না হলে নেতাকর্মীরা ভুয়া ছাত্র নামে অভিযুক্ত হতে পারেন।
কমপিউটারে ইন্টারনেটে পড়তে হলে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিও জানতে হবে।
তাছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি অনেকাংশেই এখন বিদেশিদের দ্বারা প্রভাবিত অথবা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সুতরাং ভবিষ্যতে যারা রাজনীতি করবেন তাদের এখন থেকেই ভালো ইংরেজি জানতে হবে যেন তারা বিদেশিদের সঙ্গে ভালোভাবে কমিউনিকেট করতে পারেন।
এছাড়া ছাত্রদের যন্ত্রমনস্ক হতে হবে। তাদের বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল এবং মোটরকার ড্রাইভিং শিখতে হবে। টনি বেন এই বয়সেও নিজেই মোটরকার চালিয়ে লন্ডন থেকে বহু দূরে নির্বাচনী এলাকা বৃস্টলে যান।
বর্তমান যুগে পলিটিশিয়ানদের মোবাইল অর্থাৎ চলৎক্ষম হতে হবে।
দুই. টনি বেনের মতো টার্গেটেড ও ফোকাসড ব্যক্তি হতে হবে। বর্তমানে ছাত্র সংগঠনগুলো লক্ষ্যহীনতায় ভুগছে।
● গত শতাব্দীতে চল্লিশের দশকে এই ভূখণ্ডের ছাত্রদের প্রধান লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা।
● পঞ্চাশের দশকে ছাত্রদের প্রধান লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা।
● ষাটের দশকে প্রধান লক্ষ্য ছিল আইয়ুব খান তথা পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত সামরিক শাসনের অবসান ঘটানো।
● সত্তরের দশকে ছাত্রদের দুটি লক্ষ্য ছিল। প্রথমত. মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয়ত. শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত একদলীয় শাসন ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র চর্চার দিকে এগিয়ে যাওয়া।
● আশির দশকে ছাত্রদের লক্ষ্য ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের সমাপ্তি ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
এই দশকের শেষ বছরের শেষ মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বর ১৯৯০-এ এরশাদ সরকারের পতন হয়। এই পতনে ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ও সাহসী ভূমিকা পালন করেছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এই দশকে এরশাদের সঙ্গে আপসকামী রূপে সমালোচিত হন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে সংগ্রামী নেত্রী রূপে আবির্ভূত হন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।
১৯৯১-এর নির্বাচনে এসবের সুফল পায় বিএনপি এবং তারা সরকার গঠনে সমর্থ হয়।
বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।
● নব্বইয়ের দশকে দেখা যায় ১৯৯১-এর পর থেকে ছাত্র সংগঠনগুলো লক্ষ্যহীন হয়ে পড়েছে। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রদের সামনে কোনো টার্গেট ছিল না। দেশকে দুইবার স্বাধীন করা, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পর ছাত্রদের লক্ষ্য হতে পারতো দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা। কারণ ভূমিহীন কৃষক, পানি ও বিদ্যুৎহীন বস্তিবাসী এবং কর্মহীন বেকার মানুষের কাছে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র একেবারেই মূল্যহীন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ধরে রাখতে হলে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো আন্দোলন করতে পারতো।
কিন্তু নব্বইয়ের দশক এবং বর্তমান শতাব্দীর প্রথম দশকে সেই ছাত্র আন্দোলন হয়নি। ফলে লক্ষ্যহীনতায় আবর্তিত ছাত্ররা তাদের শক্তি ও গুরুত্ব অনেকটা হারিয়েছে। ছাত্ররা পড়ে গেছে বিরাট এক শূন্যতায়, বিশাল এক ভ্যাকুয়াম-এ।
● সর্বশেষ এ দুই দশকে দেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর উত্থান ঘটেছে যেখানে জড়ো হয়েছে বিত্তশালী পরিবারের সন্তান যাদের অনেকেই মেধাবী ও উচ্চাভিলাষী।
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা বোঝে তাদের ওপর বিনিয়োগকারী পিতা-মাতারা চান, তারা ভালো রেজাল্ট করে ভালো চাকরি করবে এবং পিতা-মাতাকে রিটার্ন দেবে। এসব কারণে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা সংগঠন ও রাজনীতিবিমুখ।
তাই এখন অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের ওপর গুরুদায়িত্ব পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করা। এখানেই রয়েছে ছাত্রদের ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির বিষয়টি। দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির ওপরই নির্ভর করছে আজ যারা ছাত্র, ভবিষ্যতে তাদের কর্মসংস্থান হওয়া।
ছাত্র জীবনের পর যদি ছাত্রদের কর্মসংস্থান না হয় তাহলে কিছু ছাত্র আজীবন ছাত্র থেকে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে যেমনটা এখন হচ্ছে। এই অনাকাক্সিক্ষত অবস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সচেতন ছাত্রদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে অবিলম্বে। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য বা লং টার্ম টার্গেট।
কিন্তু ছাত্র সংগঠনের আশু লক্ষ্য বা ইমিডিয়েট টার্গেট হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যেন ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা। ছাত্ররা নিশ্চয়ই দেখছে, দেশের আকাশসীমার মধ্যে ঢুকে পড়েছে বিদেশি ফোন অপারেটিং কম্পানি ও বিদেশি টিভি চ্যানেল।
এই মুহূর্তে দেশের স্থল সীমান্ত আগ্রাসনের মুখে পড়েছে গোপন চুক্তিতে ট্রানজিটসহ অন্যান্য সুবিধা দানের প্রস্তাবে।
সত্তরের দশকে জিয়াউর রহমানের তারুণ্য, স্মার্টনেস ও মুক্তিযোদ্ধা ইমেজ এবং তার প্রবর্তিত বহু দলীয় গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পুনরুদ্ধার ছাত্রদের, বিশেষত বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
তিন. টনি বেনের মতো গভীর দেশপ্রেম থাকতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আবার প্রয়োজন হলে তার মতো মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে কিছু বিদেশি মোবাইল ফোন কম্পানি বাঙালিকে দেশপ্রেমের শিক্ষা দিচ্ছে যাতে লাভবান হচ্ছে মিডিয়ার একাংশ এবং বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর একাংশ।
এসব পৌনঃপুনিক ও বিরক্তিকর বিজ্ঞাপনী দেশপ্রেমের ঊর্ধ্বে উঠে সত্যিই সাহসী হওয়ার চেষ্টা ছাত্রদের করতে হবে। নেতানেত্রীর অফিসের সামনে ভিড় না করে যেখানে দরকার সেখানে সাহস দেখাতে হবে। বলা বাহুল্য, বর্তমানে দেশে স্বৈরাচারী দুঃশাসন শুরু হয়েছে। এটিকে পরাজিত করতে ছাত্রদের অনেক সাহসের দরকার হবে।
চার. দলের মধ্যে নিজের মতামত প্রকাশ করতে হবে।
কিন্তু প্রতিপক্ষ মোকাবেলার সময়ে সব অন্তর্দ্বন্দ্বের উপরে উঠে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দলের প্রতি অনুগত থাকতে হবে।
পাচ. নিজের নির্বাচনী এলাকায় কাজ করতে হবে। সেখানে সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা শুনতে হবে এবং সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করতে হবে। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কাজে যদি অন্য কারো সহযোগিতা নাও পাওয়া যায় তাহলে টনি বেনের মতো একাই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
রাজনীতির বাইরেও মানুষের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবন থাকে। মুভি দেখুন, গান শুনুন, খেলা দেখুন।
আর প্রেম?
অবশ্যই দায়িত্বশীল প্রেম করবেন। তবে টনি বেনের মতো পার্কের কোনো বেঞ্চ আপনি খালি অথবা চাদাবাজমুক্ত না-ও পেতে পারেন এবং পেলেও পরবর্তীকালে তা কেনার সামর্থ আপনার নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডেটিংয়ের সময়ে একটা সুন্দর কিন্তু ছোট টেবিল ক্লথ ভাজ করে সঙ্গে নিয়ে যান পার্কে অথবা নদীর তীরে।
বিয়ের পর সেটিই সুভেনির হিসেবে রেখে দিতে পারেন আপনার ঘরে!
টনি বেনের মতো জ্ঞানী ও গুণী, প্রতিবাদী ও সাহসী, আধুনিক ও নিয়মনিষ্ঠ, একা ও দলগত আন্দোলনকারী এবং প্রেমিক ও পারিবারিক ব্যক্তি হওয়ার আদর্শ নিয়ে ছাত্রদের এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে এর কোনো বিকল্প নেই
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।