‘ইউনিপে টু ইউ-তে আমার ২১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা আছে। সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে আমি এ বিনিয়োগ করেছি। ইউনিপে টু বন্ধ হয়ে গেলে আমি পথে বসে যাব। আমি আত্মহত্যা করব। ’
সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসকাবের সামনে দেশজুড়ে আলোচিত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ইউনিপে টু ইউ’র সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত এক বিনিয়োগকারী এ কথা বলেন।
নিজেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও অনেক অনুরোধেও সাংবাদিকদের সামনে তিনি নিজের নাম প্রকাশ করেননি।
শুধু এ কর্মকর্তা নন, হতাশ ও আতঙ্কিত আরও কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী এদিন সকাল ১১টা থেকে এক ঘণ্টাব্যাপী চট্টগ্রাম প্রেসকাবের সামনে এসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।
এ সময় ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের অনেকেই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা প্রকাশের পাশাপাশি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নগরীর মুরাদপুরে ইউনিপে টু’র চট্টগ্রাম কার্যালয় রমনা ট্রেড সেন্টারের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়।
সিএমপি’র পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল মান্নান বাংলানিউজকে জানান, লোকজন রাস্তায় এসে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছিল না। এজন্য মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট থেকে পুলিশ কিছু লোকজনকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে তারা উত্তেজিত হয়। তবে পরে তারা নিজেরাই সরে যায়।
তবে চট্টগ্রাম প্রেসকাবের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হয়।
এ সময় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনিপে টু’র এজেন্ট সাখাওয়াত হোসেন, শিপলু হোসেন, জমির উদ্দিন, মিল্টন বিশ্বাস, রিকু দত্তসহ আরও কয়েকজন বিনিয়োগকারী।
বক্তারা ইউনিপে টুকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার জন্য ডেসটিনিকে দায়ী করেন।
তারা ইউনিপে টু’র জন্য সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা প্রনয়ণেরও দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, সরকারকে একটি কুচক্রী মহল ভুল বুঝিয়ে ইউনিপে টু সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে। সরকারকে বুঝতে হবে এ ব্যবসা বন্ধ হলে লাখ লাখ মানুষ পথে বসবে।
মানববন্ধনে অংশ নিতে আসা এক বিনিয়োগকারী নূরুদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, তিনি এক সপ্তাহ আগে দশ লাখ ৪২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
অথচ এখন পর্যন্ত তিনি এক টাকাও আয় করতে পারেননি।
কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া নূরুউদ্দিন বলেন, ‘আমার পেছনে আরও এক হাজার বিনিয়োগকারী আছে। ইউনিপে টু বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের কী হবে? আমি তাদের কী জবাব দেব?’
স্কুল শিক্ষক তপন চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘আমার সঙ্গে চার হাজার বিনিয়োগকারী আছে। আমাদের বিনিয়োগের পরিমাণ দেড় কোটি টাকা। শোনা যাচ্ছে ইউনিপে টু আমাদের আর টাকা ফেরত দিতে পারবে না।
তাহলে আমরা কোথায় যাব?’
শিক্ষার্থী ও বিনিয়োগকারী (বিডি-০৬৩) মৃন্ময় বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৬ মাস আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ইউনিপে টু’র উদ্বোধন হয়েছে। সরকার তখন চোখ বন্ধ করে রেখেছিল কেন? ডেসটিনি আমাদের নামে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। সরকার তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে। আমরা এর জবাব আগামী নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে দেব। ’
অপর এক বিনিয়োগকারী (বিডি-০৮০) রিকু দত্ত বাংলানিউজকে জানান, চট্টগ্রামে ইউনিপে টু’র ৪১ জন এজেন্টের অধীনে বিনিয়োগকারী আছে প্রায় ছয় লাখ।
এসব বিনিয়োগকারীর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক, শিক্ষার্থী, বেকার যুবক-যুবতী, ছোট ব্যবসায়ী রয়েছে।
কোম্পানী সম্পর্কে না জেনে বিনিয়োগ করলেন কেন বাংলানিউজ’র এমন এক প্রশ্নের জবাবে সেন্ট্রাল প্লাজার অন্তরা টেইলার্স শপের কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন আছে। ’
এদিকে ইউনিপে টু নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা ও ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিনিয়োগকারীরা।
View this link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।