গীতাঞ্জলী কাব্যের জন্য ১৯১৩ সালে বাঙালির প্রথম নোবেল জয় এসেছিল বিশ্বকবির হাত ধরে। ১৯১২ সালের নভেম্বর মাসে লন্ডনে ইন্ডিয়া সোসাইটির আনুকূল্যে ৭৫০ খানা গীতাঞ্জলী (ইংরেজিতে ংড়হম ড়ভভবৎরহমং) মুদ্রিত হয়। প্রধানত সোসাইটির সদস্যদের মধ্যে বিতরণের জন্যই তা প্রকাশ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ তখন আমেরিকায়। ১৯১৩ সালের মার্চ মাসে ম্যাকমিলান কোম্পানি বইটির প্রচার ভার গ্রহণ করে।
উল্লেখ্য, গীতাঞ্জলী বাংলা কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এই কাব্যে ১৫৭টি গান ও কবিতা আছে। যদিও ইংরেজি ংড়হম ড়ভভবৎরহমং গ্রন্থ ও বাংলা গীতাঞ্জলী এক নয়। বইটিতে গীতালী, গীতিমাল্য, খেয়া, উৎসর্গ ইত্যাদি কাব্য থেকে কবিতা নেওয়া হয়েছে। তৎকালীন শ্রেষ্ঠ ইংরেজ কবি ডব্লু বি ইয়েটস বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন।
রবিঠাকুরের পদকটি রাখা হয়েছিল কবির নিজের হাতে গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী জাদুঘরে। কিন্তু নিরাপত্তার ঢিলেমির সুযোগে বাঙালি হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রথম স্বীকৃতির এই সোপান চিহ্ন নোবেল পদকটি খোয়া যায়।
২০০৪ সালের এই রাতে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুরের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরায়নের রবীন্দ্র জাদুঘর থেকে রহস্যজনকভাবে 'নোবেল পদক'সহ চুরি যায় কবির ব্যবহার্য অন্তত অর্ধশত মূল্যবান জিনিস।
২৫ মার্চ ২০০৪ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিট। আর দশটা দিনের মতো কর্মচাঞ্চল্যে মেতে উঠেছে শান্তিনিকেতন।
যথারীতি ক্লাস করেছে বিশ্বভারতীর ছাত্ররা। হঠাৎ বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো খবরটা ছড়িয়ে পড়ল_ নোবেল চুরি হয়েছে। সবাই ছুটল রবীন্দ্রনাথের বাড়ি উত্তরায়নের দিকে। শুধু নোবেল কেন, আরও অনেক রবীন্দ্রস্মৃতি থেকে শুরু করে কবিগুরুর অনেক ব্যবহার্য জিনিসপত্র। এ উত্তরায়নই আজ রবীন্দ্র সংগ্রহশালা।
সংগ্রহশালার কর্মচারীরা যখন ভবনের দ্বার খুলে দেন তখনই সবার চোখে পড়ে ব্যাপারটা। শুরু হয় হৈচৈ। গোটা রবীন্দ্রভবন ঘিরে ফেলে পুলিশ। ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। সেখান থেকে চুরি হয়ে গেছে রৌপ্যপদক, ওঁ লেখা সোনার আংটি, জামার সোনার বোতাম, কাফ লিঙ্ক, মৃণালিনী দেবীর শাড়ি, সোনা-বাঁধানো নোয়া, নোবেল পুরস্কারের পদক রুপোর রেকাবি, রুপোর কফি কাপ, সামুরাই তরবারি, কফি কাপ রাখার তেপায়া, চৈনিক চামচ, কোবে শহর থেকে পাওয়া হাতির দাঁতের ঝাঁপিসহ আরও ৩৭টি জিনিস।
চুরির দিন ২৫ মার্চ ২০০৪ বুধবার ছিল শান্তিনিকেতনে ছুটির দিন। মঙ্গলবার দুপুর ১টায় বন্ধ হয়ে যায় শান্তিনিকেতন। বৃহস্পতিবার রবীন্দ্রভবন খুলতেই ধরা পড়ে চুরির ঘটনা। কিন্তু কীভাবে চুরি হয়, তা নিশ্চিত নয় পুলিশ। মঙ্গলবার বিশ্বভারতী বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই চোরেরা ভেতরে ঢুকে অবস্থান নেয়।
সারা রাত ধরে মালপত্র সরাতে থাকে। রবীন্দ্রভবনের পেছনের জানালা ভেঙে ফেলে চোর, দেয়ালের নিচে পাওয়া যায় ভাঙা গ্রিল। এই জানালা দিয়ে মালপত্র সরিয়ে নেয়। পুলিশ বলে, চোর জানালা দিয়ে ঢোকেনি। কারণ, সে ক্ষেত্রে জানালার পাল্লা ভেঙে ফেলতে হতো।
উত্তরায়নের এই বিশাল এলাকা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল মাত্র দুজন এনডিএফ কর্মী। পাওয়া গেছে ২৮ জোড়া পায়ের ছাপ। তার মধ্যে আবার দুজনের পায়ে চটি ছিল। কিন্তু সেটির রহস্য যেমন আজও উদ্ধার হয়নি, তেমনি খুঁজে পাওয়া যায়নি কবির পদকও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।