উপমহাদেশের বৃহত্তম ও কিশোরগঞ্জবাসীর গর্ব ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহময়দান। সোয়ালাখ থেকে সোয়ালাখিয়া এবং তা থেকে শোলাকিয়া। নামের সঙ্গেসাদৃশ্যপূর্ণ সোয়ালাখ মুসুল্লির সংখ্যা অনেক আগেই পেরিয়ে গেলেও এর জৌলুসশুধু বেড়েই যাচ্ছে। প্রতিবছর ঈদের সময়টাতে শুধু দেশ থেকে নয় দেশের বাইরেথেকেও অসংখ্য মুসুলির আগমনে শোলাকিয়ার ময়দান হয়ে ওঠে প্রাণচন্চল। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মৃতপ্রায় নরসুন্দা নদীর উত্তর পাশে অবস্তিত ইতিহাসবিখ্যাত এই ঈদগাহ ময়দান।
দেশের নানা প্রান্তের মানুষের এই মিলনকে উপভোগ
করার জন্য ঈদের এই সময়টাতে অনেক পর্যটকও ভিড় করেন শোলাকিয়ায়।
এমাঠের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় এমাঠের গোড়া পত্তন হয় ১৮২৮ সালে। ঐ বছরেস্থানীয় সাহেব বাড়ির সৈয়দ আহমদ (রা) এর জায়গায় তারই ইমামতিতে প্রথম ঈদেরজামাত অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ঈশাখার অধস্তন বংশধর ও স্থানীয় হয়বতনগরেরদেওয়ানবাড়ির দেওয়ান মান্নান দাদ খানের বদান্যতায় এর কলেবর ও আনুসঙ্গিকসুবিধা আরো বেড়ে যায়।
মাঠের নামকরন নিয়ে অনেক জনশ্রুতি থাকলেও সর্বাধিক প্রচলিত মতানুসারে জানাযায় প্রথম ঈদ জামাতে এমাঠে লোক সংখ্যা হয়েছিলো ১ লাখ ২৫ হাজার বাসোয়ালাখ।
এ থেকে লোক মুখে পরিবর্তিত হয়ে সোয়ালাখ থেকে শোলাকিয়া হয়েছে। এছাড়া অপর ধারণা মতে মুঘল আমলে রাজস্ব আদায়ের জন্য যে অফিস ছিলো সেইঅফিসের অধিনে পরগনার রাজস্বের পরিমান ছিলো সোয়ালাখ টাকা। এটাও শোলাকিয়া
নামের উৎস হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
মাঠের আয়তন সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য মতে মাঠে মোট জায়গার পরিমান ৬.৬১ একর। পশ্চিমসীমারেখা উত্তর-দক্ষিণে ৩৩৫ ফুট,পূর্ব সীমারেখা
উত্তর-দক্ষিণে ৩৪১ ফুট এবং উত্তর সীমারেখা পূর্ব-পশ্চিমে ৭৮৮ ফুট, দক্ষিণসীমারেখা পূর্ব-পশ্চিমে ৯৪১ ফুট।
মাঠের ভেতরে মোট কাতার সংখ্যা ২৬৫ টি এবংপ্রতি কাতারে ৬০০-৭০০ জন হিসাবে মোট লোকসংখ্যা হয় ১,৮৫,৫০০ জন। কিন্তুুনামাজের সময় আশেপাশে ঘরবাড়ি ও ফাঁকা আঙিনায় আশ্রয় নেয়াদের সহ এসংখ্যাচার লাখ ছাড়িয়ে যায়।
শোলাকিয়ায় ইমামতি করা আলেমদের সঠিক হিসাব না পেলেও জানা যায় হয়বতনগরেরবাসিন্দা বিশিষ্ট আলেম মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন অনেক দিন ইমামতি করেন। পরবর্তিতে ৩০ বছর ইমামতি করেন হয়বতনগর আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুলখায়ের মুহম্মদ নুরুললাহ। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে আবুল খায়ের সাইফুল্লাহখতিবের দায়িত্ব পালন করলেও এখন ইমামতি করছেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ।
ঈদের সময় শোলাকিয়াকে ঘিরে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর আশেপাশে বসেছোট ছোট পণ্যের মেলা। মেলায় টুপি,তসবি,আতর সহ নানা গৃহস্থালি পণ্য পাওয়াযায়। এ আয়োজন শোলাকিয়ার ঐতিহ্যকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
ঈদের জামাত উপলক্ষে আশেপাশে আবাসিক হোটেল গুলোতে ভিড় বাড়ে।
পাশাপাশিবাড়িতে বাড়িতে স্বজনদের আনাগোনা বেড়ে যায়। ঢাকা থেকে শোলাকিয়া যাওয়ারজন্য সড়ক ও রেল পথে সু ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ঈদ জামাত উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন ওবাস সার্ভিস চালু করা হয়। এছাড়া শোলাকিয়ায় আগত অতিথিদের জন্য জেলা প্রশাসন বিশেষ আয়োজন করে থাকে। এভাবে সমগ্র আয়োজনে ঈদের সময় শোলাকিয়া হয়ে ওঠে অনন্য।
ঢাকার মহাখালি বা সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে সারাদিনই বাস ছেড়ে যায়। সময় লাগে কম বেশি ৪ ঘন্টা। এছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস বা কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে করে যেতে পারেন শোলাকিয়া দেখতে। এক্ষেত্রে সময় লাগবে সামান্য বেশি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।