আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছু কল্পকথা (কিংবা গল্প) : কি হত,যদি জামায়াতে ইসলামীর মত কোন ধর্মসর্বস্ব রাজনৈতিক দলের অধীনে বাংলাদেশ কয়েকদিন অবস্থান করত?

দিতে পারো একশ ফানুস এনে! আজন্ম সলজ্জ সাধ, একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই ... ... ...

শফিক,ছাত্রলীগের এক শক্তিশালী ক্যাডার। সাধারণত সে ঘুম থেকে সকাল ১০ টার আগে উঠে না। কিন্তু আজ তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে পড়ে। কারণ ভোরবেলায় সে দুঃস্বপ্ন দেখেছে,ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন। তাই ভয় পেয়ে গেছে।

এই ভীত ভাবটা দূর করার জন্য সে বাসার ছাদে চলে আসে;উদ্দেশ্য কিছুক্ষণ ঠান্ডা বাতাসে থেকে মাথাটা ঠান্ডা করা। সেটা এখন বেশ গরম হয়ে আছে। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি সে তার ঘরে চলে আসে। নিজের জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে নেয়,সাথে দুটো পাউন্ড বিস্কুটও আনে। এরপর বেডরুমে এসে টিভিটা ছেড়ে বসে।

এখন সে খানিকটা ভালো বোধ করছে। এ চ্যানেল সে চ্যানেল করতে করতে সে আপাতত একটা বাংলা চ্যানেলে ঠাঁই নেয়। কিছুক্ষণ কফির স্বাদ নিতে ব্যস্ত থাকায় সে ব্রেকিং নিউজটা চট করে খেয়াল করে না। যখন করে,তখন তার বুক কেঁপে উঠে। একটা আর্তচিৎকার প্রায় তার মুখ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল,কিন্তু তা শেষতক গলায় এসে আটকে যায়।

সে বুঝতে পারে তার আর সময় নেই। বাঁচতে হলে তাকে এখনই পালাতে হবে। যদি সে তা না পারে,তবে আজ এখানেই তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হবে! ব্রেকিং নিউজটা ছিল এরকম – “মহামান্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে তাদের নিজ নিজ বাসভবনে ভোররাত্রিতে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনা আনুমানিক ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে সংঘটিত হয়। হত্যাকারীর প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়নি।

..................দেশের দুই প্রধান দলের বিভিন্ন ক্যাডারদের বাসায়ও অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ” খোঁজ নিয়ে জানা যায় জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র শিবিরের কর্ম এটি। তারা অনেকদিন ধরে এ কাজটা করার জন্য উৎ পেতে ছিল। তবে ভালো সুযোগ পাচ্ছিল না। তারা অনেক ধৈর্যও ধারণ করেছিল এতদিন।

কিন্তু যখন তারা খবর পায় মার্চের ২৬ তারিখ যুদ্ধাপরাধীদের চূড়ান্ত বিচারকার্য সম্পাদন করা হবে,তখন তাদের নেতা মুহম্মদ ‘এক্স’ আর ঠিক থাকতে পারে না। দলের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় নেতাদের খবর দেয় বনানীর ... নাম্বার রোডের ... নাম্বার বাড়িতে চলে আসার জন্য। সে সেখানে সবার সাথে বসে দেশ ধ্বংস করার নীল নকশা তৈরি করবে। খবর পেয়ে দেশের বাঘা বাঘা শিবির নেতা,দলের শীর্ষস্থানীয় সদস্যরা ঢাকা আসতে শুরু করে। যারা আগেই ঢাকায় ছিল তারা বনানীর আশেপাশে অবস্থান নেয়।

এ খবর সাংবাদিকদের নজর এড়ায় না। তারা রিপোর্ট তৈরি করে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার হেডলাইন হয় এরকম – • জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ঢাকা আগমন;গন্তব্য বনানী • আবার জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ঢাকা আগমন;কোন দূর্যোগের পূর্ভাবাস কি এটি? • জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন নেতাদের ঢাকায় আসা হয়েছে,সম্ভাব্য গন্তব্য বনানী মুহম্মদ এক্সের কাছে এ সকল রিপোর্টের খবর চলে যায়। সে তার অতি যত্নে তৈরি করা দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলে, “সব হারামীগুলোকে সাজা দেয়া হবে। কেবল কিছু সময়ের অপেক্ষা।

” সবাই চলে এলে নির্দিষ্ট দিনে সে আলোচনা করে দিনক্ষণ ঠিক করে নেয়। সম্ভাব্য তারিখ হয় ২৫ তারিখ,মার্চ মাস। এ তারিখটা তাদের প্রিয় তারিখগুলোর মধ্যে একটা। তারা প্রস্তুতি নিতে থাকে। হাতে সময় আছে এক মাসের মত।

এ সময়ের মধ্যে ভালো রকমের প্রস্তুতি নেয়া যাবে বলে এক্সের ধারণা। আপাতত দলের নেতাদের আর ছেলেদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। সাথে চলে যায় কিছু ভারী অস্ত্র। তবে ওইখানে আরো অনেক অস্ত্রের ভান্ডার আছে। তাই এ বিষয়ে তেমন মাথা ব্যথা নেই এক্সের।

সে শুধু জোর দিচ্ছে ছেলেদের প্রস্তুতির উপর। পাশাপাশি অপেক্ষা করছে ২৫ তারিখের। একদিন,দুইদিন করতে করতে অবশেষে মার্চ মাসের ২৫ তারিখ চলে আসে। এর কয়েকদিন আগেই এক্সের লোকেরা ঢাকায় এসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়ে নেয়। তারা কোন প্রকারের রিস্ক নিতে চায়নি;তাই এখানে এসে তারা নিজেদের বাসার মধ্যে গুম করে রাখে।

এটা এক্সের নির্দেশ। সে চাইছে না তার ঘটনার আগে অন্য কিছু ঘটুক। ভোর রাত্রে তাদের যাত্রা শুরু হয়। বেশিরভাগ নেতা আর ছেলেপিলে যায় শেখ হাসিনার বাসভবনে,আর কিছু লোক আগেই খালেদা জিয়ার ভাইয়ের বাড়িতে হামলা করে বসে। অন্যরা ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীদের বাসায় হামলা চালায়।

হাসিনা-খালেদার ব্যাপারটা ঘটতে প্রায় ১ ঘন্টার মত সময় লাগে। বেশি সমস্যা হয় শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে। তিনি বেশি প্রটেকশানে ছিলেন বলে সমস্যাও হয় বেশি। কিন্তু এক্সের কঠোর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত লোকদের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারে না Army-Rab-Police এরা। তারা সব ধ্বংস করে সামনে এগিয়ে যায়,তাদের স্বপ্ন পূরণের আশায় এক ছুটে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে।

খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় না বুদ্ধিজীবীগুলোকে মারতেও। সেদিন রাত্রে ঢাকায় হুমায়ূন আহ্‌মেদ,মুহম্মদ জাফর ইকবাল,আনিসুল হক,নির্মলেন্দু গুণ,কবির চৌধুরী,হাবিবুর রহমান প্রভৃতি স্বনামধন্য কবি লেখকেরা অবস্থান করছিলেন। তাঁদের কেউই রক্ষা পায় না এক্সের বাহিনীর হাত থেকে। “সবগুলোকে মারতে হবে” – এটাই ছিল এক্সের নীল নকশার মূলমন্ত্র।

তার শিষ্যরা তাই কাউকেই বাদ রাখেনি। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের জিম্মি করে ফেলে। তারা দাবি করতে থাকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে হবে। যদি তা না করা হয়,তবে সব মন্ত্রীদের মেরে ফেলা হবে। অতর্কিত হামলার কারণে প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে হাইকোর্টের অনেকেই মারা পড়ে।

সে ক্ষেত্রে তাই বিচারকার্য সম্পাদন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। উপরন্তু এক্স বাহিনীর হুমকি শুনে তারা পিছু হটে। পরিস্থিতির কারণে তারা মানতে বাধ্য হয় তাদের কথা। এ কথা মুহম্মদ এক্স শোনা মাত্রই উল্লাসে ফেটে পড়ে। পাশাপাশি দল নিয়ে চলে যায় জাতীয় কারাগারে থাকা নিজামী,মুজাহিদদের আনার জন্য।

কিছু লোককে পাঠায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল,পত্রপত্রিকার অফিসে। টিভি চ্যানেলগুলোতে সাথে সাথে প্রচারিত হয় মুহম্মদ এক্স এবং তার দলের কুকীর্তির কথা। আর পত্রপত্রিকাগুলোতে পরদিন খবর বের হয়। হেডলাইনগুলো হয় এমন – •ঢাকার বিভিন্ন স্থানসহ গোটা দেশ জামায়াতে ইসলামীর কবলে চলে গেছে;যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য আপাতত স্থগিত ঢাকায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ;পুরো দেশ থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন;হোতা জামায়াতে ইসলামী;যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ প্রধানমন্ত্রী,বিরোধীদলীয় নেত্রী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী হত্যা;সকল কর্ম জামায়াতে ইসলামীর;যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য বন্ধ ঘোষণা নিজামী,মুজাহিদ প্রভৃতিদের জেল থেকে ছাড়িয়ে আনার পর দেশ পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। শিবিরের বিভিন্ন ছেলেরা জাতীয় স্মৃতিসৌধ,শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা ভেঙে ফেলে।

পাশাপাশি চলতে থাকে জনগণের উপর অত্যাচার। পথে ঘাটে চলতে থাকে নারীদের উপর অত্যাচার। খুন,ধর্ষণ,রাহাজানি অনেক কিছুই হতে থাকে সে সময়টাতে। রাস্তায় দেখা যেতে থাকে মুসুল্লিদের,মানুষের হঠাৎ দাঁড়ির প্রতি নজর দিতে দেখা যায়। নারীরা বোরকার প্রতি আবার ঝুঁকে পড়ে।

১০ বছরের মেয়ে থেকে ৬০ বছরের বুড়ি,সকলেই বোরকা পরে চলাচল করতে থাকে। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রশিবিরের দৌড়াত্ব বেড়ে যায়। তাদের কথা মত ছাত্র-ছাত্রীদের চলতে হয়। একটু এদিক সেদিক হলেই লাশ পড়ে থাকে এদিক সেদিক। নিজ মতামত প্রকাশের জন্য যেসকল ওয়েবসাইট কিংবা ব্লগ মানুষ পছন্দ করত (যেমন সামহোয়্যার ইন ব্লগ,আমার ব্লগ,মুক্তব্লগ,সচলায়তন,প্রথম আলো ব্লগ),সেখানেও জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন ক্যাডার ও অনুসারীরা তাদের ক্ষমতা প্রকাশ করতে থাকে।

কর্তৃপক্ষও কিছু বলতে সাহস পায় না। কারণ তাদের কাছে ইতিমধ্যেই মৃত্যুর হুমকি চলে গেছে। অন্য ব্লগাররাও এর প্রতিবাদ করতে ভয় পায় নিজ প্রাণের মায়ায়। কারণ এক ব্লগার প্রতিবাদ করায় তাকে খুঁজে হত্যা করা হয়েছে। যে ফেসবুক বাংলাদেশের অনেক মানুষের কাছে প্রিয়,সে ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর কারণ হিসেবে তারা বলে, “এর মাধ্যমে দেশের যুবসমাজ ধর্মের পথ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাদের ধর্মের পথে আনার জন্য এ কাজ আমরা করেছি। ”পাশাপাশি টুইটার,মাই স্পেস,আওয়াজ ডট কম প্রভৃতিও তাদের রোষানলের শিকার হয়। জনগণ এক সময় দিশেহারা হয়ে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল বের হয়।

শিবিরের ছেলেরা ,দলের নেতারা হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। ভয়ে মানুষ আবার ঘরের মধ্যে সেঁদিয়ে পড়ে। এমনটা চলে অনেকদিন। শেষে বহিঃ বিশ্বের হস্তক্ষেপে জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা পিছু হটে। তারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়।

আর ফেলে যায় এক ভগ্ন বাংলাদেশকে। বি দ্র : এটা নিছকই একটি গল্প। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাহিনীর প্রয়োজনে বাস্তবের কয়েকজনকে গল্পে স্থান দিতে হয়েছে,এর বেশি কিছু করা হয় নি। আর এর পিছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কিংবা চাল কিছুই নেই। তবে কেবল একটা কথাই বলার চেষ্টা করা হয়েছে।

তা হচ্ছে “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে। যদি তা না করা হয়,তবে দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে এবং জামায়াতে ইসলামের মত ধর্মসবস্ব দলগুলোকে উল্লাসের সুযোগ করে দেয়া হবে। তাই আমি চাই যুদ্ধাপরাধীদের প্রকৃত বিচার হোক। ’’

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।