গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস নেতা স্বামী অসীমানন্দ ২০০৭ সালে সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করলেন। সেইসঙ্গে তিনি এক বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে ৪২ পাতার স্বীকারোক্তিতে গতকাল জানিয়েছেন, কেবল দিল্লি-লাহোর সমঝোতা এক্সপ্রেস নয়, মালেগাঁও মসজিদ, হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদ ও আজমীরের খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর মাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেক হিন্দু সংগঠনই যুক্ত ছিল।
অসীমানন্দ জানান, আরএসএস নেতা ইন্দ্রেস কুমার সন্ত্রাসী কাজকর্মে তাকে সাহায্য করেছিলেন। তার ডানহাত ছিলেন হিন্দুত্ববাদী নেতা সুনীল যোশী। মধ্যপ্রদেশের দেওরাশে ২০০৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর মৃত এই সুনীল ছিলেন ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মালেগাঁও বিস্ফোরণে অন্যতম অভিযুক্ত।
তেহেলকা ম্যাগাজিন হিন্দু নেতা অসীমানন্দের ৪২ পাতার স্বীকারোক্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, ফৌজদারি আইনে ১৬৪ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দেয়া এই স্বীকারোক্তিকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। অসীমানন্দ পরিষ্কার জানিয়েছেন, ভারতের মুসলিমরা তাদের বোমা বিস্ফোরণের টার্গেট ছিল, সেইসঙ্গে মুসলিম ধর্মীয় স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একতরফাভাবে সেই সম্প্রদায়কে হুমকি, ভয় দেখানো এবং হত্যা করাই ছিল তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
অসীমানন্দকে ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর সিবিআই হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদ ও আজমীরের দরগায় বিস্ফোরণের অভিযোগে গ্রেফতার করে। প্রসঙ্গত, সমঝোতা এক্সপ্রেসে ৪৭ জন, মালেগাঁও মসজিদে ২৩ জন এবং ২০০৭ সালের ১৮ মে মক্কা মসজিদে বিস্ফোরণে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল অসীমানন্দ, সন্দ্বীপ দারগে ওরফে পরমানন্দ, রামচন্দ্র কালসাংরা ওরফে রামজি ও বিষ্ণু প্যাটেলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
২০০৭ সালের ৯ জুন সিবিআই এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। শুধু মক্কা মসজিদই নয়, ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ বা সমঝোতা বিস্ফোরণের প্রধান মাথা হিসেবে প্রজ্ঞা ঠাকুর, কর্নেল পুরোহিত, দয়ানন্দ পাণ্ডের সঙ্গে উঠে এসেছিল অসীমানন্দের নামও। মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা বেশ কয়েকবার মধ্যপ্রদেশ, গুজরাটসহ বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান চালালেও তার খোঁজ পায়নি। সন্দ্বীপ এবং রামজি সম্পর্কে খোঁজ দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কার দেবে বলেও সিবিআই ঘোষণা করেছে। সিবিআই জানিয়েছে, ২০০৯ সালের প্রথম দিক থেকে নিজের পরিচয় গোপন করতে শুরু করেন অসীমানন্দ।
তার আসল নাম নবকুমার সরকার। নাম পাল্টে তিনি স্বামী ওঙ্কার নাথ বলেও নিজের পরিচয় দেন। হরিদ্বারে তিনি নাম ভাঁড়িয়েই ছিলেন।
হুগলির কামারপুকুরের বাসিন্দা নবকুমার পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে বর্ধমান মিডনিসিপ্যাল হাইস্কুলে পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরে স্কুলের চাকরি ছেড়ে তিনি গুজরাট যান এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ পরিচালিত একটি আশ্রমে (বনবাসী) যোগ দেন।
প্রায় আট বছর আগে সেই আশ্রমের সঙ্গে স্থানীয় গির্জার বিরোধ বাধে। তার জেরে সেখানে বড় ধরনের গোলমাল ছড়িয়েছিল।
অসীমানন্দ তার স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, যেহেতু সমঝোতা এক্সপ্রেসে পাকিস্তানিরা যাতায়াত করে, তাই সেটিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো তার লক্ষ্য ছিল। সেইসঙ্গে মালেগাঁও মুসলিম অধ্যুষিত বলেই তাদের নিশানা ছিল। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়েও তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছিল বলে অসীমানন্দ জানিয়েছেন।
তার কথা, গুজরাটের অক্ষরধাম মন্দিরে বোমা বিস্ফোরণের বদলা নিতে চেয়েছিল তার সংগঠন। একটি বোমার বদলায় একটি বোমা বিস্ফোরণই ছিল তাদের পরিকল্পনায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।