অযথা ক্যাচাল পছন্দ না, তাই তালগাছবাদীরা দূরে থাকুন
গত দুইদিন ধরে দেখছি লালনকে নিয়ে তৈরী করা মুভি নিয়ে বেশ সোরগোল হচ্ছে কেউ বলছে ধর্মগ্রন্থের মত আবার কেউ বলছে কিছুই হয়নি ভুলে ভরা, তাই নিজে দেখেই এই ব্যাপারে কিছু লিখার চেষ্ট করেছি। দেখার চোখ লাগে বোঝার মন লাগে তাই খোলা চোখে খোলা মন নিয়েই দেখা মুভি নিয়ে কিছু কথা:
লালনকে মুভিতে সম্পুর্ণ প্রকাশ করতে গৌতম ঘোষের কতগুলো মুভি তৈরী করতে হবে তা আমি জানিনা, কিন্তু তা যে একটায় সম্পূর্ণ হবেনা তা চোখ বন্ধ করে বলা যায়।
এখানে দেখতে হবে বাউল এক পথের ধারা নয়। এখানে ধর্ম ও দর্শনের অনেক পথ এসেছে তা এই দৈর্ঘের ছবিতে সম্পূর্ণ দেখানো সম্ভব না। তবে পরিচালক চেষ্ট করেছেন সব বিষয়গুলো হালকা হলেও টাচ দিয়ে যাওয়ার।
আমার সল্প জ্ঞানেই আমি যে তত্ব গুলোর দেখা পেয়েছি তা হচ্ছে একেশ্বরবাদী, নিরাকারবাদী, দেহতত্ব, ভক্তিবাদ, প্রেমভক্তি, অসাম্প্রদায়িকতা, তৎকালীন সমাজব্যবস্থা এইরকম আরও অনেক কিছুই ।
হ্যা কিছু অসামঞ্জস্যতা তো ছিলই তবুও আমি মনে করি অনেক সুন্দর হইছে এটা। অন্যের সাথে তুলনা দিয়ে সুন্দরের প্রকাশ হয়না সুন্দর সব সময় সত্যের মত সূর্যের মত।
প্রশেনজিতের অভিনয় অসাধারণ, আমার দেখা মতে ওর সেরা অভিনয়, চঞ্চল সেরা অভিনয় করেছে, পাশাপাশি রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং অন্যরাও তবে শুভা নামের মেয়েটার অভিনয় কিছুই হয়নি প্রথম ক্ষেত্রে, পরের দিকে কিছুটা হয়ত হয়েছে।
একটা কথা মনে রাখা দরকার জীবনটা নাটক বা উপন্যাস নয়, যে ডায়রী লিখলেই মুভি হয়ে যাবে, তবে জীবনে গল্পের উপাদান থাকে সেটাকে ই ঘষামাজা করে মুভি বা নাটক তৈরি করা হয়।
এক্ষেত্রে পরিচালকের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।
আমরা যারাই এখন এত লালন নাম করি, সে কিন্তু মারা যাওয়ার পর প্রায় ১০০-১৫০ বছর পর্যন্ত তৎকালিন ভদ্র সমাজে খুব পরিচিত ছিলনা। গত শতকের শেষদিকেই লালনকে নিয়ে ব্যপক গবেষণা শুরু হয়, এবং সবার দৃষ্টিতে আসে। তার আগে সবাই কিন্তু লালনকে শুধুই বাউল বা ফকির বলেই জানত। তাই তার জীবন সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায়না, সুতরাং যা আমরা জানি তার সবই যে সত্য তার নিশ্চয়তা কী? এখানে গৌতম ঘোষ যা করেছেন সেখানে অনেক কিছুই হয়তো বাস্তবে ছিলনা কিন্তু উনার যেটা প্রধান লক্ষ্য লালনকে নিয়ে মুভি করা লালনকে প্রকাশ করা তা তিনি যথেষ্টভাবে করতে পেরেছেন।
সেটার জন্য দুই একট অতিরিক্ত চরিত্রের অবতারনা অস্বাভাবিক কিছুই আমি দেখিনা।
উনারা অনেক খুজেও সিরাজ সাইয়ের গান পাননাই তবুও জলের উপর পানি যে গানটা করা হয়েছে নিজেদের লেখা ও সুরে অসাধারণ তাতেও লালনকে প্রকাশ করে।
রবীন্দ্রনাথ সময়ে যেমন অন্যান্য অনেক কবির লেখাতে রবি ঠাকুরের লেখার ছাপ পরেছিল ঠিক তেমনি লালনের সময়ের অনেকেই এই ধরনের গান করেছিল সেইখান থেকে বাছাই করাও বেশ কষ্টকর ছিল, যেমন আমি যতটুকু জানি "চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে" এটা লালনের গান না।
লালন শুধুই একটা ব্যাক্তি বা গ্রন্থ বা মুভি না, লালন একটা দর্শন, একটা পথ। তাই সল্প গন্ডীতে লালনকে বাধা শুধুই অসম্ভব না হাস্যকর ও বটে।
সব শেষে এটুকুই বলব বাংলা ভাষায় অসাধারণ একটা মুভি তৈরী হয়েছে। একপৃষ্ঠা লিখতে গেলে যেমন দুই একটা বানানে ভুল হয়ে যায় ঠিক তেমনি এই মুভি তৈরী করতেও কিছু ভুল আছে, তবে ভুল টুকু বাদ দিয়ে ভাল অংশ ই বেশী তাই সেটাই সানন্দ চিত্তে গ্রহণ করতে হবে।
রিভিউ মার্কসঃ ৪.৭৫/৫
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।