আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ

গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের অবস্থা সম্পর্কে এখন আর গোপন করার কিছুই নেই। সিটি নির্বাচনে সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর ভরাডুবির পর জেলা আওয়ামী লীগের চিত্র ফুটে উঠেছে সারা দেশে। জেলায় উল্লেখ করার মতো নেই তেমন কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম। চলছে একে অপরকে দোষারোপের প্রতিযোগিতা। মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে।

প্রায় ৯ বছরে কমিটি গঠন তো দূরের কথা, একটি পূর্ণাঙ্গ সভা পর্যন্ত করতে পারেনি ক্ষমতাসীন দলটির জেলা কমিটি। বেশির ভাগ নেতা একে অপরকে দেখতে পারেন না দু চোখে। সইতে পারেন না একে অপরের কথা বা কাজ। দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকেই একে অপরের মুখ পর্যন্ত দেখেন না। দীর্ঘ ৯ বছরেও জেলা কমিটির একটি বর্ধিত সভা করতে পারেনি জেলা আওয়ামী লীগ।

এখানে পাঁচটি উপজেলার মধ্যে প্রায় সব কটির কমিটিই অকার্যকর। শুধু কাপাসিয়া উপজেলা কমিটি কিছুটা সক্রিয়। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জেলা কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা দলীয় চাদর গায়ে দিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। সংগঠনের ব্যাপারে তারা উদাসীন। এসব কারণেই মূলত দেশের সবচেয়ে আলোচিত দ্বিতীয় ‘গোপালগঞ্জ’ গাজীপুরে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়েছে ভরাডুবি।

পাশাপাশি দলের চরম ভরাডুবি হয়েছে ৫৭টি ওয়ার্ডে। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নিয়ে গেছে ৩৯টির নেতৃত্ব। এ ছাড়া নির্বাচনে জেলার ৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের বেশির ভাগই খুইয়েছে আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্বের কারণে সমপ্রতি অনুষ্ঠিত গাজীপুরের কালিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে দলের ভড়াডুবি হয়েছে। কালিগঞ্জে বিএনপি সমর্থিত মেয়র মো. লুত্ফুর রহমান অর্ধেক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে।

নেতৃত্ব নিয়ে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অন্তঃকোন্দলের কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটি বিভক্ত হয়ে পড়েছে মূলত দুই শিবিরে। জেলা আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত এমন জনশ্রুতি আছে সর্বত্র। এ ক্ষেত্রে জেলা সভাপতি ও গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও সদরের কিছু অংশ) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে রয়েছে একটি গ্রুপ। এ গ্রুপে আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ও জেলা সাধারণ সম্পাদক, মেয়র পদে সদ্য পরাজিত অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। অন্যদিকে গাজীপুর-২ (টঙ্গী ও সদরের কিছু অংশ) আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের নেতৃত্বে রয়েছে একটি গ্রুপ।

এ গ্রুপে আছেন গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও সদরের কিছু অংশ) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রহমত আলী ও গাজীপুর-৫ (কালিগঞ্জ ও সদরের কিছু অংশ) আসনের সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, ‘গাজীপুর আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিংই নেই। যদি গ্রুপিং থাকত, তাহলে আমরা আমাদের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারতাম না। ’ তবে জেলা সভাপতি মোজাম্মেল হক এমপি দলীয় মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান নিজের কর্মকাণ্ডের কারণেই পরাজিত হয়েছেন বলে জানান। অন্যদিকে জেলার সবচেয়ে প্রবীণ নেতা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রহমত আলী গাজীপুর আওয়ামী লীগ থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এমন অভিযোগ রয়েছে।

এ সম্পর্কে অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে দলীয় নেতাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ করতে পারি না। একটু চলাচল করলেই আমার বমি বমি ভাব হয়। ’আর জাহিদ আহসান রাসেল এমপি জানালেন, কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব নেই জেলা আওয়ামী লীগে। জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে পাঁচজনই আওয়ামী লীগের পক্ষে জয়ী এমপি। অথচ দলীয় একটি কর্মসূচিতেও এ পাঁচজন এক হয়ে কখনো অংশ নিতে পারেননি।

জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, জেলা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করার জন্য একটি গ্রুপ এখানকার এমপিদের কান ভারী করে তাদের কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করে চলেছেন। তিনি বলেন, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ডে জোরালো সম্পৃক্ততা নেই। ক্ষমতায় আসার পর এমপিদের পকেটস্থ কিছু নেতা দলের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত। টিআর, কাবিটা-কাবিখার কাজে ব্যাপক লুটপাট করে চলেছেন তারা। এমনকি টেন্ডারবাজি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা।

জেলা কর আইনজীবী পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধান জানান, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় গাজীপুরে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। গাজীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াজউদ্দিন মিয়া ও জেলা শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান জানান, দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল অনেকটাই কমে এসেছে।  

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.