নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!
জোর বিতর্ক চলছে বিচার বিভাগ ও সংসদের সার্বভৌম ক্ষমতা নিয়ে। ঢাকা জেলা জজের 'অস্বাভাবিক' বৈধ নিয়োগ (জেলা জজের চাকরি শুরুই করেছেন তিনি ঢাকা দিয়ে!) প্রক্রিয়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মনো:পুত হয়নি। তাই উনারা ডেকেছেন সুপ্রীমকোর্টকে তথা এর রেজিস্ট্রারকে- ঘটনা কি তা জানতে? এ প্রেক্ষাপটে উচ্চ-আদালতের বিচারকরা বৈঠক করেছেন। এজেন্ডা- নিজেদের 'মান ইজ্জত' রক্ষার এ সংক্রান্ত ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেয়া। এবং নিয়েছেন।
তারা এ ধরনের বৈঠকে যাবেননা, যাওয়ার প্রশ্নও উঠেনা। ইনফ্যাক্ট কোন কোন পত্রিকায় এতটুকু খবর ছাপিয়েছে যে বিদ্যমান সংসদকে উনারা পুরোপুরি গনতান্ত্রিক ও কার্যকরই মনে করেননা! পুরানা বাম, অধুনা আওয়াম, বিকৃত ও অশালীন মুখভঙ্গিমায় পাবলিকলি কথা বলার জন্য কুখ্যাত সাংসদ ও এ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি বিষয়টার ঘোর বিরোধী বক্তব্য রাখলেন। সম্ভবত: আদালত অবমাননা জাতীয় ফ্যাসাদ এড়ানোর জন্য তিনি খানিকটা পেঁচিয়ে বললেন, রাস্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী সহ রাস্ট্রের সবাইই সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। তবে আইনমন্ত্রী শফিক সুর মিলিয়েছেন উনার কর্মক্ষেত্রের কলিগদের সাথেই (অবশ্য সুরন্জিত দার একখানা ওকালতি সনদ আছে, যেটা উনি বালিশের তলায় রাখেন)। তিনি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বা সার্বভৌমতাকে হাইলাইট করেছেন।
লয়ার এম এ জহিরের টিভি ফুটেজে দেয়া মতও সেরকম। তিনি নির্বাহী, বিচার ও সংসদ বিভাগককে যার যার মানইজ্জত নিয়ে সীমানার মধ্যে থাকার সাজেশন দিয়েছেন। চলুন আমরা বিষয়টা আরো একটু কষাই!
প্রথমেই দাদা সুরন্জিতের কথায় কান দিই। উনার মতে, সংসদই সবার উপরে। সবার শেষ।
এর উপর আর কিছু নাই। ভিন্ন ভিন্ন নানান কথায়ই তিনি এ সুর টানেন। বড্ড সংসদ পূজারী এ মূর্তিপূজককে আমার জিজ্ঞাসা, আসলেই কি তাই, বিশেষ করে বাংলাদেশের সংসদ? তিনি বলেন, জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন অর্থাৎ, ভোটের হিসেবে বিজয়ী, এটা। তাই উহার কাছেই সবার মাথা নত করতে হবে! অথচ প্রকৃতপক্ষে তা নয় এবং খোদ সাংসদরাই পরাধীন!!! আমাদের সাংসদরা জনপ্রতিনিধি নন। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিমাত্র! তারা প্রথমেই কোননা কোন দলের নমিনেশন কেনেন বা মাগনা পান তারপর ঐ দল ক্ষমতায় গেলে দেশবাসীকে কি কি রসগোল্লা চমচম খাওয়াবে তা জনতার কাছে ক্যানভাস করেন।
এদেশের নির্বাচন কমিশন স্থায়ীভাবে নৌকা, ধানের শীষ, পাল্লা, মোমবাতি এ ধরনের কয়েকটি প্রতীক বিভিন্ন দলের অনুকুলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়ে রেখেছে। ফলে প্রার্থী নয় বরং মার্কাকেই মানুষ পছন্দ করতে বাধ্য হয়। বহুল পরিচিত মার্কা তুলে দিয়ে সবাই 'স্বতন্ত্র' প্রার্থী হিসেবে যদি ভোট হয় তাহলেই সঠিকভাবে জনগনের প্রতিনিধিদের দ্ধারা সংসদ গঠিত হয়।
আসা যাক সংসদের ভেতরে। প্রথাগত: চাটুকারিতার কথা বাদই দিলাম।
মহান সাংসদ সুরন্জিত কি পারেন তার মহান নেত্রী হাসিনার মতের বাইরে ঐ পূজনীয় সংসদে কিছু বলতে। না। আইনত:ই পারেননা। সেরকম কিছু করলে আম ছালা দুইই হারাবেন! সুতরাং, জনগন চুলোয় যাক খোদ জনপ্রতিনিধি(?)রাও 'অধীনের বিনীত' সাংসদ হওয়া ছাড়া আপাতত: গত্যন্তর নেই। কাঠামোগত এ সীমাবদ্ধতার বাইরে বিদ্যমান তৈলমর্দন, চুরি, বর্জন, চাপাবাজি, ঠগবাজি, মাগিবাজি, হত্যালীলার সাথে জড়িয়ে যাওয়া সুরন্জিতের মহাপ্রভু সংসদের কথা নাইবা বললাম।
সুরন্জিতের আরো ভুল আছে। খোঁড়া এ সাংসদরা হাঁ চিৎকার দিয়ে একজন রাস্ট্রপতি নির্বাচন করেন। হোক না লুথা একটা পজিশন। তিনিই নিয়োগ দেন স্বাধীন কমিশনগুলো, যেমন- দূদক, পিএসসি, নিক ও উচ্চ-আদালতের বিচারপতি। এসব ক্ষেত্রের লোকজনের জবাবদিহিতা তার কাছে।
সুতরাং সুরন্জিতবাবু ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খেতে চাচ্ছেন। ঘাস খেতে চাইলে রাতের আঁধারে চুপিচুপি বঙ্গভবনে যান! অন্তত: লোক হাসবেনা।
আরো বলি, মন্ত্রিপরিষদও সে অর্থে নির্বাহী ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেনি। হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। সুতরাং, বাকিরা হবু মন্ত্রী গবু মন্ত্রী মাত্র! অজ্ঞাতকারনে এদেরকে খালেদা/হাসিনা কোন প্রধানমন্ত্রীই বিশ্বাস করেনি।
করেছে গাছের আম ও তলা ২টাই খাওয়া মোদাচ্ছের, আলাউদ্দিন, ইমাম, এলাহী, মশিউর এদেরকে। মোটকথা এ ছোট্টচক্রই দেশ চালায় বা চালাচ্ছে! কেন জানি এ চক্রটি বরাবরই পরদেশের দালালী, দূর্নীতি ও অকৃতজ্ঞতার জন্য বিখ্যাত থাকে! যাহোক সে চক্রের মন্ত্রনাদুস্ট প্রধানমন্ত্রীদের হাতেই এ দেশ জিম্মি থাকে (১৯৯১-২০১০)। কাঠামো ও অ-কাঠামো দুদিক থেকেই। সংসদীয় কমিটির যে ফরজে আইন কাজ, উক্ত মন্ত্রনালয়গুলোর দেখভাল করা তা কি তারা করে? করতে পারে? সুরন্জিত কি পারেন?
মাসদার হোসেন মামলার পর শম্বুকভাবে যে কাজটি হয়েছে তাকে বড়জোর তোড়ায়বাঁধা ঘোড়ার ডিম জাতীয় স্বাধীন বিচার বিভাগ বলা যায়। পুরাবিভাগের বিচি এখনো আইনমন্ত্রনালয়ের পুঁচকে কোন সচিবের হাতে বন্দী! সুরন্জিত ভাল করতেন- শফিক সাহেবকে ডাকলে।
বরং সেটাই হত ন্যায্য- আসলেই তিনি যদি তা চান।
তবে সংসদ, সাংসদ, কমিটি, কমিশন, বিচারক বা প্রেসিডেন্ট সবাই কাজ করেন সংবিধানের আওতায়। এটাই মৌলিক গাইডলাইন। চেক এন্ড ব্যালেন্স হিসেবে থাকবে সবাই। যেহেতু ২০০+ হাঁ, হাইকোর্টের রায়(!).বা গণভোট এটাকেও পাল্টেদিতে পারে তাই এটাও সার্বভৌম নয়।
প্রকৃতিগত ভাবে মানুষ, মানুষের তৈরী সংগঠন (রাস্ট্র) বা কোন গাইডলাইন সার্বভৌম নয়!! মানুষেরা যখন খুব ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, ব্যর্থ হয়ে বা উপায়হীন হয়ে "ভিন্ন' কোন সত্তার সাহায্য কামনা করে সেটাই সার্বভৌম। আর তিনি আল্লাহ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।