আমি পড়তে ভালোবাসি
http://www.onnbd.com তালা (সাতক্ষীরা) : কেউ বলে মুচি, কেউ বলে চামার, কেউবা বলে চর্মকার, আসলে তারা রিশি। বর্তমানে রিশি হিসাবেই তাদের পরিচিতি। তারা বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজ হিসেবে চামড়া, বাঁশ ও বেতের কাজ করে থাকে। অনেক আগে থেকেই রিশিরা লোকবাদ্যযন্ত্র তৈরী ও বাজানোতে পারদর্শীতা প্রদর্শনের জন্য চামড়ার কাজের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় বিভিন্ন ভাবে নিগৃহিত হতে হয়েছে তাদের। তার পরও বাঙ্গালীর ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখে চর্চা করে যাচ্ছে নিজ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতি।
তবে সমাজের কাছে তারা এখনও নিগৃহীত। রিশিরা হিন্দু স¤প্রদায়ের তথাকথিত সবচেয়ে নিচু বর্ণের মানুষ! তাই, তাদের সাথে কথিত উচ্চ বর্ণের কেউ মিশতে চাইনা। তাদের ছোয়াও যেন পাপ!
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, রিশি স¤প্রদায় দু’শ্রেণীতে বিভক্ত। এর একটা বড় বেগী অপরটা ছোট বেগী। যারা পরিচ্ছন্ন ভাবে পেশা পরিচালনা করে তাদের বলা হয় বড় বেগী আর যারা মরা গরুর চামড়া ছেঁলা বা ভক্ষণ করে তাদের বলা হয় ছোট বেগী।
এ’ দু’শ্রেনীর মধ্যে পরস্পর বিয়ে হয় না। তৈলকূপী রিশি পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি তৈরী করছে গৃহবধূ কল্পনা রাণী। বাবার বাড়ী থাকতেই তার এ কাজ শেখা। কল্পনা ঝুড়ি, ডালা, কূলা, খারায় সহ বাঁশ দিয়ে অনেক কিছু তৈরী করতে পারে। দৈনিক তার আয় হয় ৮০-১০০ টাকা।
নিমাই রিশিকে দেখা যায়, বেত দিয়ে ধামা তৈরী করতে। তিনি বলেন, বেত এখন আর পাওয়া যায় না। এলাকার ঝোপ-ঝাড় না থাকায় বেতের গাছ দেখাই যায় না। তাই বেতের কাজ খুব কম করা হয়। আবার অনেককে দেখা গেছে, চামড়া দিয়ে ঢোল, তবলা সহ নানাবিদ বাদ্যযন্ত্র তৈরি করতে।
আর এ সব কাজের মধ্য দিয়ে এখনও রিশিরা ধরে রেখেছে দিন দিন বিলুপ্তির দিকে ধাপিত হওয়া বাঙ্গালীর ঐতিহ্যবাহী সব সংস্কৃতি।
জানা যায়, হিন্দু ধর্মের বর্ণ ব্যবস্থার সর্ব নিম্নে রিশিদের অবস্থান! এরা এখনও অস্পৃশ্যতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এক সময় ছিলো এদের ছায়া উচু বর্ণের মানুষের গায়ে পড়লে তাদের স্নান করতে হতো। দিনের আলোতে রিশিরা উচু বর্ণের গ্রামে ঢুকতে পারতো না। বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
রিশিরা এখন জুতার দোকান, জুতা সেলাই, ছাতা, ব্যাগ সংস্কার, আধুনিক সেলুন’র দোকান থেকে শুরু করে সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় অনেক কাজের সাথে যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন হাট-বাজারে তারা গড়ে তুলেছে আধুনিক সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সংস্কৃতি চর্চায় ডরশিরা অনেক এগিয়ে এবং অনেক আগে থেকেই ডরশিরা ঢাক-ঢোল, সানাই, বাঁশি, খোল, ড্রাম তৈরী ও বাজানোতেও পারদর্শীতা দেখিয়ে আসছে। হিন্দুদের পূজা এবং বিয়েতে ঢাক-ঢোল ও সানাই গুরুত্বপূর্ণ হলেও ডরশিদের পূজা মন্ডপ বা বিয়ের আসর স্পর্শ করা এক রকম নিষিদ্ধই বলা চলে। এই জনগোষ্ঠী এখনও সামাজিকভাবে নিগৃহীত।
এদের নিয়ে সমাজে অনেক খারাপ ভাষার চর্চা আছে। এদের মাঝে বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা প্রকট। নারী ও শিশুরা বেশি অবহেলিত। স্বাস্থ্য সেবা পাইনা বললেই চলে। এদের মধ্যে শিক্ষার হার খুবই কম।
ভূমিহীনের সংখ্যাও বেশি। আর্থিক উন্নতির দিক থেকেও পিছিয়ে আছে এই সম্প্রদায়। তবে, এদের বিভিন্ন দিকের মানন্নোয়নের জন্য তালাস্থ বে-সরকারি সংস্থা “ভূমিজ ফাউন্ডেশন” দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসায় তা’ থেকে উপকৃত হয়ে জীবন যাত্রার মান এখন বেশ উন্নতি করার পাশাপাশি সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।