আমি খুবই সাধারণ
সুন্নাত নামায:
আমার এই ব্লগ সুন্নাত নামায সম্পর্কে। তবে আমি সুন্নাত নামায বলতে শুধু ফিকহি পরিভাষায় সুন্নাত বলতে যা বুঝায় তা বুঝাতে চাচ্ছি না। আমি চাচ্ছি ফরজ নামায বাদে অন্যান্য নামায সম্পর্কে। যা সাধারণত বিভিন্ন বইয়ে সুন্নাত, সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, নফল, ওয়াজিব প্রভৃতি হিসেবে লিখিত আছে। আমার উদ্দেশ্য ফরজ বাদে অন্যান্য সব নামাযকে নিয়ে।
কারণ বিভিন্ন নামাযকে নিয়ে বেশ মতভেদ রয়েছে। যেমন সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ও ওয়াজিব নিয়ে। তাই আমার উদ্দেশ্য সুন্নাতের প্রকারভেদকে নিয়ে তর্ক না করে সব সুন্নাতকে পালন করার চেষ্টা করা। এবং যেসব সুন্নাত বলে প্রচলিত কিন্ত তা সুন্নাত নয়, সেগুলো সম্পর্কে সতর্ক করা। আমরা যেন প্রকৃত সুন্নাতকে বাদ দিয়ে বাতিল সুন্নাতের পালন নিয়ে গলদঘর্ম না করি।
ইসলামে ফরজ নামায দৈনন্দিন পাচ ওয়াক্ত।
• ফাজর
• যোহর
• আসর
• মাগরীব
• ইশা
এছাড়া জানাযার নামাযকে ফিকহি পরিভাষায় ফরজে কিফায়া বলা হয়।
আমি শুধুমাত্র কুরআন হাদীসে বর্ণিত অন্যান্য নামায সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রথমে ফজর নামাযের আগে পরে সুন্নাত:
• ফাজর: ফাজর সালাতের আগে ২রাকআত সুন্নাত। যে নামাযে রাসূলুল্লাহ (সা সূরা কাফিরুন ও সুরা ইখলাস পড়তেন।
ফাজরের পরে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন নামায নেই। তবে ফাজরের আগে দুরাকআত সুন্নাত আদায় করতে না পারলে ফরজ নামাযের পরে পড়বে। আয়েশা রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সা: কোন নফলের প্রতি এতখানি গুরুত্ব প্রদান করতেন না,যতখানি ফজরের দু’রাকআত নামাযের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেন। (বুখারী ১ম খন্ড হা/১০৯৫)
• যোহর: যোহরের আগে দুরাকআত বা চার রাকআত ও যোহরের পরে দুরাকআত বা চার রাকআত নামায পড়ার কথা হাদীসে এসেছে।
আয়েশা রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সা: যোহরের পূর্বে চার রাকআত ও ফজরের পূর্বে দু’রাকআত নামায আদায় করা কখনো ছাড়তেন না।
• আসরের পূর্বে দুই রাকআত ও পরে কোন নামায নেই।
• মাগরিবের পরে দুই রাকআত
• ইশার পরে দুই রাকআত
এসব নামাযের ব্যাপারে হাদীসে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
যেমন হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি দিবারাত্রে ১২ রাকআত সলাত আদায় করল তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হবে।
যোহরের পূর্বে চার, পরে দুই মাগরিবের পরে দুই, এশার পরে দুই ও ফাজরের পূর্বে দুই। (মুসলিম,তিরমিযী)
বুখারীর অন্য বর্ণনায় যোহরের পূর্বে দুরাকআত সহ সর্বমোট দশ রাকআত নিয়মিত আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেক দুই আযানের (আযান ও ইকামত) এর মাঝখানে রয়েছে এক নামায। প্রতি দু আযানের মাঝে রয়েছে এক নামায। এ কথা দুবার বলে তৃতীয়বার বলেন, যদি কেউ পড়তে চায়।
(বুখারী ১ম খন্ড হা/৫৯১)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল আল মুযান্নী (রা হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা বলেন, যদি কোন ব্যক্তি চায় তাহলে আযান ও ইকামতের মাঝখানে কিছু নামায পড়ে নিতে পারে। এ কথা তিনি তিন বার বললেন। (বুখারী ১ম খন্ড হা/৫৮৮)
আনাস ইবনে মালেক (রা ) হতে বর্ণিত। মুয়াযযিন আযান দিলে, রাসুলুল্লাহ (সা এর আগমনের পূর্বে কিছু সংখ্যক সাহাব মসজিদের খুটির কাছে গিয়ে মাগরিবের আগে দুরাকআত নামায পড়ে নিতেন। এই দুয়ের মাঝে সময়ের ব্যবধান থাকত অতি সামান্য।
(বুখারী ১ম খন্ড হা/৫৮৯)
মুরছেদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল ইয়ামানী রা: বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,আম উকবা ইবনে আমের জুহানীর কাছে গিয়ে তাকে বললাম আবু তামীম সম্পর্কে আমি আপনাকে এ কথা বলে কি বিস্মিত করে দেব না যে,তিনি মাগরিবের আগে দুরাকআত নামায আদায় করে থাকেন? একথা শুনে উকবা বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাএর সময় তো আমরা এরূপ করতাম। আমি বললাম এখন করতে বাধা কি রয়েছে? তিনি বললেন “ব্যস্ততা”।
জুমআহর আগে পরে সুন্নাত:
জুমআহর নামাযের আগে নির্দিস্ট কোন সুন্নাত নেই। তবে তাহ্যিয়াতুল মাসজিদ নামায সহ যেকোন সংখ্যার নামায পড়তে পারে।
জু্মআহর নামাযের আগে নির্দিষ্ট করে দেওয়া চার রাকআত নামায-এর হাদীসটি সহিহ নয়।
জুমআহর পরে দু রাকআত্ ও চার রাকআত নামায পড়ার হাদীস এসেছে।
ইবনে উমার (রা) হতে বর্ণিত । রাসুলুল্লাহ (সা যোহরের পূর্বে দু’রাকআত,যোহরের পরে দু রাকআত, মাগরিবের পরে দুরাকআত, এবং এশার পরে দু’রাকআত নামায পড়তেন। আর জুমআহর পর নিজ গৃহে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত কোন নামায পড়তেন না।
ফেরার পরেই দুরাকআত পড়তেন।
তাহ্যিয়াতুল মাসজিদ (মাসজিদ দখলের নামায):
এ নামায হল মাসজিদের হক। যখনই কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখনই সে দুরাকআত সালাত আদায় করবে। দুরাকআত সালাত আদায় না করা পর্যন্ত বসা অনুচিত। এমনকি জুমআহর খুতবার সময় মসজিদে আসলেও দুরাকআত সংক্ষিপ্তভাবে পড়ে বসে পড়া।
আবু কাতাদাহ ইবনে রাবয়ীল আনসারী (রা হতে বর্ণিত। নাবী (সা বলেন,তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে প্রথমে দু’রাকআত নামায পড়ে নিবে তারপর বসবে। (বুখারী ১ম খন্ড হা/১০৮৯)
আনাস ইবনে মালেক(রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা আমাদেরকে দুরাকআত নামায পড়ালেন এবং তারপর তিনি চলে গেলেন। (বুখারী ১ম খন্ড হা/১০৯০)
তোমাদের কেউ জুমআর দিবসে যখন মসজিদে আসবে এমতাবস্থায় যে, ইমাম খুতবা দিচ্ছেন,তখন সে যেন সংক্ষেপে দু’রাকআত সালাত আদায় করে।
(মুসলিম,আবুদাউদ,বুখারী ১ম খন্ড হা/১০৯১-৯২)
খুতবার সময় নামায নেই বলে হাদীসটি অসংখ্য সহীহ হাদীসের বিরোধী ও জাল।
হাদীসটি তাবারাণী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে ইবনে উমার (রাহতে নিম্নের ভাষায় উল্লেখ করেছেন, “তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে এমতাবস্থায় যে, ইমাম মিম্বারের উপরে তখন ইমামের খুতবা শেষ না করা পর্যন্ত আর কোন সালাত পড়া যাবে না এবং কোন কথাও বলা যাবে না।
উক্ত হাদীসটিকে ইবনে হাজার আসকালানী তার ফাতহুলবারী গ্রন্থের দ্বিতীয়খন্ডে দুর্বল ঘোষণা দিয়েছেন। আর আলবানী এটাকে বাতিল বলেছেন। (সিলসিলাহ যইফাহ হা/৮৭)
তাহ্যিয়াতুল ওযূ:
ওযূ করার পরে এই নামায পড়তে হয়।
এই নামায প্রচলিত না হলেও এর ফযীলত অনেক।
বিলাল (রা নিয়মিত এই নামায আদায় করতেন।
আবু হুরাইরা (রা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন ফজরের নামাযের পর বিলালকে জিজ্ঞেস করলেন, হে বিলাল!ইসলাম গ্রহণের পর তোমার সবচাইতে আশাব্যন্জক কাজের কথা আমাক বল। কেননা, বেহেশতে আমি তোমার জুতার আওয়ায শুনতে পেয়েছি।
বিলাল বলেন, দিন বা রাতের মধ্যে যখনই আমি ওযূ করেছি তখনই সেই ওযূ দ্বারা আমার সামর্থ অনুসারে সালাত আদায় করেছি। এ ছাড়া তো আর কিছুই করিনি।
তাহাজ্জুদ নামায বা কিয়ামুল-লাইল:
রাত্রি বেলা তাহাজ্জুদ নামায আদায় সম্পর্কে কুরআনে নির্দেশ করা হয়েছে যে,
আর হে নাবী তুমি রাতের বেলায় তাহাজ্জুদ আদায় কর। এ দায়িত্ব তোমার জন্য অতিরিক্ত । তোমার পরওয়ারদিগার অবশ্যই তোমাকে মাকামে মাহমুদে প্রেরণ করবেন।
(সুরা বানী ইসরাইল:৭৯)
তাহাজ্জুদ নামায রাতের শেষ অংশে পড়ার সময়। সকল নফল নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামায সর্বোত্তম।
তাহাজ্জুদ নামায দু দু রাকআত করে। এই নামাযের সংখ্যা হাদীসে ১১রাকআতের কথা এসেছে। যেখানে এক রাকআত বিতর যোগ করার কথা বলা হয়েছে।
আবার কোন হাদীসে রাকআতের সংখ্যা ফাজরের আগে সুন্নাতকে যোগ করে তের রাকআত বলা হয়েছে।
চাশতের নামায:
সালাতুত্ তাসবীহ:
সালাতুল আওয়াবীন:
বিতর নামায:
ঈদের নামায:
জানাযার নামায:
ভয়ের সালাত:
ইসতিখারার সালাত:
কুসূফের সালাত (চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহনের সালাত):
ইসতিসকার সালাত:
এগুলোর বর্ণনা পরবর্তী ব্লগে প্রকাশ করবো ইনশাআল্লাহ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।