আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাহান মণির নাবিকদের মুক্ত করতে দর কষাকষি অব্যাহত

বাংলাদেশ

সোমালীয় জলদসু্যদের এখন জাহাজ ছিনতাইয়ের ভরা মৌসুম। আবহাওয়া পরিক্রমায় আগামী এপ্রিল থেকে সাগর অশান্ত হতে শুরু করবে। ফলে এ শীতের সময়ে তারা আরব সাগর থেকে একের পর এক জাহাজ ছিনতাই করে জমা রাখে দেশটির অদূরবতর্ী জলসীমার গালফ অব এডেন এলাকায়। এরপর সারা বছর ধরে চলে মুক্তিপণ আদায়ের বাণিজ্য। গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জাহান মণি হাইজ্যাকের পর ইতোমধ্যে আরও দুটি জাহাজ ছিনতাই হয়েছে।

এ নিয়ে সেখানে জিম্মি থাকা জাহাজের সংখ্যা ২৮টি এবং জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রয়েছে বিভিন্ন দেশের ৬ শতাধিক নাবিক। এদিকে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশী জাহাজের ২৬ নাবিককে উদ্ধারে জাহাজের মালিক পক্ষ ও সরকারের তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও গত ৩ দিন ধরে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলপ্রসূ সমঝোতার মধ্য দিয়ে যে কোন সময় বাংলাদেশী নাবিকরা ছাড়া পাবেন বলে আশাবাদী জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান। এমভি জাহান মণির মালিক প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের টেকনিক্যাল ম্যানেজার চৌধুরী গোলাম রাহিমাত উল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, গত ২/৩ দিনে জলদসু্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। তিনি বলেন, সাধারণত জলদসু্যরা নিজেদের প্রয়োজনে যোগাযোগ করে থাকে।

কোন জাহাজের মালিক পক্ষ ইচ্ছে করলেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে_ তা নয়। বিভিন্ন সময়ে তারা কোম্পানি এবং নাবিকদের দিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলায় চাপ সৃষ্টির জন্য। এ ৰেত্রে জাহাজে ৭ দিনের খাবারও নেই, এতদিনের মধ্যে ছাড়িয়ে নিতে হবে ইত্যাদি বলে থাকে। এটাই মুক্তিপণ আদায়ে তাদের টেকনিক। এতে স্বজনদের আশাহত হবার কারণ নেই উলেস্নখ করে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় সকলেই ফিরে আসবেন।

এ জন্য সরকার এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তৎপরতা রয়েছে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম এ প্রসঙ্গে বলেন, বেশি তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না। যদি এদিক থেকে বেশি তাড়াহুড়ো জলদসু্যরা বুঝতে পারে তাহলে আমাদের বাংলাদেশী নাগরিকদের ওরা মার্কিন নাগরিকের সমপর্যায়ের মনে করবে। তারা ধরে নেবে যে, জিম্মিদের বিনিময়ে অত্যনত্ম চড়া দাম পাওয়া যাবে। সুতরাং আমাদের উচিত ধৈর্য ধারণ করা।

এ বিষয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে এ্যাসোসিয়েশনের কথা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশী নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে জলদসু্যদের সঙ্গে বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে দেন দরবার চলছে। এক্ষেত্রে টাকা কাকে দেয়া হবে তা ঠিক করার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হচ্ছে। বাংলাদেশী নাগরিকদের স্বজনদের উদ্দেশে এ্যাসোসিয়েশনের এ নেতা বলেন, সাধারণত জলদসু্যরা জিম্মিদের ক্ষতি করে না। কারণ মুক্তিপণ পেতে হলে আটক মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। সুতরাং জাহাজে খাদ্যের সঙ্কট থাকলেও তারা অনত্মত জিম্মি মানুষদের সুস্থ রাখার জন্য হলেও খাবার সরবরাহ করে।

তিনি জানান, অতি সমপ্রতি একটি জাহাজ মুক্ত হয়েছে ৮ মাস পর। অথচ জাহাজে এতদিনের তেল, পানি ও খাবার থাকে না। সুতরাং ধরেই নেয়া যায় যে, জলদসু্যরা তাদের প্রয়োজনে এসব সরবরাহ করেছে। এদিকে শিপিংয়ের সঙ্গে সংশিস্নষ্টরা বলছেন, সোমালীয় জলদসু্যদের জন্য এখন জাহাজ ছিনতাইয়ের ভরা মৌসুম। কারণ কিছুদিন পরেই শীত চলে গেলে সাগর উত্তাল হয়ে উঠবে।

তখন আর এভাবে জাহাজ ছিনতাই করা যাবে না। ফলে জলদসু্যরা এ কয়েক মাসের মধ্যে যত বেশি সম্ভব জাহাজ ছিনতাই করে জড়ো করার মিশনে নেমেছে। জাহাজ আটক থাকলে টাকা পাওয়া যাবে। সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারি অর্থাৎ নববর্ষের প্রথম দিনেই তারা আরব সাগর থেকে ছিনতাই করেছে আলজিরিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজ। সেটিরও গন্তব্য সেই গালফ অব এডেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.