সাভার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রেশমার চিকিৎসা ও মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে তার সঙ্গে সংবাদকর্মীদের সরাসরি কথা বলতে দেয়া হয়নি।
তবে তাকে উদ্ধারকারী সেনা কর্মকর্তা মেজর এম মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর দেলোয়ার হোসেন তালুকদার, রেশমার চাচী হাজেরা বেগম ও তার ভাই জাহেদুলের কাছে রেশমা তুলে ধরেছেন ধ্বংসস্তূপের নিচের সেই ‘নির্মম’ সময়ের কথা।
অন্ধকার প্রকোষ্ঠের ভিতরে রেশমা কখনো বাইরের শব্দ শুনেছেন। বুঝতে পেরেছেন উদ্ধারকর্মীদের তৎপরতা। তখন তার মনে উঁকি দিয়েছে বাঁচার আশা।
“তখন বাঁচার জন্য চিৎকার করেছি। রড ভেঙে সঙ্কেত পাঠানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার ডাক কেউ শুনতে পায়নি। হতাশায় কেঁদেছি। প্রাণভিক্ষা চেয়েছি আল্লাহর কাছে,” শনিবার সকালে উদ্ধারকারী সেনা কর্মকর্তা মেজর এম মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে এভাবে পেরিয়ে আসা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন রেশমা।
তিনি বলেন, অন্ধকারে এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে গিয়েছেন। ক্লান্ত হয়ে কখনো ঘুমিয়ে পড়েছেন। কখন দিন হয়েছ, আর কখন রাতের অন্ধকার নেমেছে কিছুই বুঝতে পারেননি।
রেশমা বলেন, ধসে পড়ার আগে তিনি ছিলেন রানা প্লাজার তৃতীয় তলায়। ধসে পড়ার সময় একটি ভাঙা অংশ দিয়ে গড়িয়ে নিচে পড়েন, যেখানে বেশ খানিকটা জায়গাজুড়ে খালি ছিল।
“মনে হয়েছে আশপাশে আরও অনেকে আছে। কিন্তু কয়েকদিন পর বুঝতে পারি- তাদের মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হচ্ছে। তখন বাঁচার ইচ্ছে আরও জোরালো হয়। এই বুঝি আমাকে এখন উদ্ধার করবে। আশায় বুক বেধে থাকি।
আল্লাহকে ডাকতে থাকি। ”
“চিৎকার করতে করতে গলা শুকিয়ে যায়। সময় পার হতে থাকে। একসময় নিস্তব্ধতা নেমে আসে। কিন্তু আমাকে কেউ উদ্ধার করতে আসে না।
অন্ধকার থাকায় বুঝতে পারিনি কতদিন পার করেছি। ”
রেশমার বরাত দিয়ে মেজর মোয়াজ্জেম বলেন, তার হাতব্যাগে ছোট চার প্যাকেট বিস্কিট ছিল। সেগুলো অল্প অল্প করে খেয়েছেন। এছাড়া পাশের মৃত সঙ্গীদের পড়ে থাকা খাবার ও পানি সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন তিনি। প্রতিদিনই সেখান থেকে অল্প অল্প করে খেয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন।
উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়া নিয়ে রেশমাকে উদ্ধৃত করে ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “উদ্ধারের দিন বিকালে প্রথম আলোর দেখা পেয়েছি। যে ছিদ্র দিয়ে আলো ঢোকে তা অনুসরণ করে কাছে যাই। বুঝতে পারি- আশপাশে লোকজন আছে। তখন চিৎকার শুরু করি।
“কিন্তু কেউ আমার ডাক শোনেনি।
এরপর স্টিলের একটি পাইপ সংগ্রহ করি। ছিদ্র দিয়ে ওই পাইপ ঢুকিয়ে নড়াচড়া করতে থাকি। ”
রেশমাকে উদ্ধারে অংশ নিয়েছিলেন মেজর দেলোয়ার হাসেন তালুকদার।
তিনি বলেন, রেশমা যেখানে আটকা ছিলেন জায়গা বেশ খানিক খালি ছিল। সামনের দিকে অর্থাৎ পশ্চিম দিকে তিনি অনায়াসে হাটা চলা করতে পেরেছেন।
কেবল পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দিকের অংশ ধীরে ধীরে নিচু হয়ে মিশেছিল।
“রেশমা যে বিমের কারণে বের হতে পারছিলেন না সেই বিমের উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ছিল। তার উপর থেকেই ধসে পড়া ছাদ নিচু হয়ে মিশে গিয়েছিল অন্যান্য ছাদের সঙ্গে। ”
রেশমাকে প্রথমবার দেখার পর বিস্মিত হয়েছিলেন এই সেনা কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “প্রথমে রেশমার চোখ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আসলে তিনি মানুষ না অন্য কিছু। পরে ধীরে ধীরে তার সম্পর্কে নিশ্চিত হই। ”
রেশমার শারীরিক অবস্থার সবশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে সিএমএইচের চিকিৎসক কর্নেল মো. আজিজুর রহমান বলেন, উদ্ধারের পর রেশমা খুবই ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত ছিলেন। রক্তে লবণের ঘাটতি ও পানি শূন্যতায় ভুগছিলেন তিনি।
তার কিডনির কার্যক্ষমতা প্রায় ৩৫ ভাগ হ্রাস পেয়েছিল।
“তবে দ্রুত অক্সিজেনের পাশাপাশি তার শরীরে স্যালাইন ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করায় অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। ”
রেশমা যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির মালিকের স্ত্রী হাজেরা বেগমকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন রেশমা।
হাজেরা বেগম বলেন, রেশমা এতিম। ওর বাবা মারা গেছেন।
মায়ের অন্যত্র বিয়ে হওয়ায় কেউ খোঁজখবর নিতো না। স্বামী অত্যাচার করতো। একপর্যায়ে আসবাবপত্র বিক্রি করে অন্য জায়গায় চলে যায়। এরপর থেকেই মেয়েটি তার কাছে আশ্রয় নেয়।
সিএমএইচে কথোপকথনের উল্লেখ করে হাজেরা বেগম জানান, ভবন ধসে পড়ার সময় রডের সঙ্গে চুল পেঁচিয়েছিল রেশমার।
নিজেই গার্মেন্টের কাটার দিয়ে সেই চুল কেটে ফেলেন তিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।