একটি অনিয়মিত লিটল ম্যাগাজিন
এম আর আলম বিপ্লব, সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা)
চিড়ে কুটি ধাপুর-ধুপুর, চিড়ে কুটি ঢেঁকিতে দামান(জামাতা) এসেছে বাড়িতে’ এক সময় গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে গৃহবধূরা ঢেঁকিতে ধান ও চিড়ে বানতো আর মনের আনন্দে গীত গাইত। কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার ঐহিত্যবাহী ঢেঁকি শিল্প প্রায় বিলুপ্ত হতে চললেও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ফলগাছা গ্রামের সেন পরিবার গুলো জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ঢেঁকি শিল্পকে হাতিয়ার হিসাবে আকড়ে ধরে বেঁচে আছে। তারা ঢেঁকিতেই মাষ কলাইয়ের ডালের পেষ্ট করে বড়ি বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে দারিদ্র্য জয় করেছে। সেন পাড়ার প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারের ঘরে ঘরে ঢেঁকি রয়েছে। ভোর রাতে তাদের ঢেঁকির শব্দ পেয়েই আশের পাশের গ্রামের মানুষ জেগে ওঠে।
এক সময় গ্রাম বাংলায় সর্বত্র ঢেঁকির প্রচলন ছিল। কিন্তু যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম-গঞ্জে আগের মতো এখন আর ঢেঁকির ঢেঁকুর ঢেঁকুর শব্দ শুনতে পাওয়া যায় না। অথচ ১ যুগ আগেও গ্রাম অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঢেঁকি ছিল। ছিল ঢেঁকি ঘর। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ঐহিত্যবাহী ঢেঁকি এখন বিলুপ্ত প্রায়।
শব-এ-বরাত, ঈদ-পূজা পার্বণসহ নতুন ধান ঘরে ওঠার আ গ্রাম্য বধূরা ঢেঁকি মেরামতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। ঢেঁকি ঘর লেপে পুছে প্রস্তুত করে রাখতেন তারা। ঘরে ঘরে চিড়ে ও চালের গুড়া তৈরী করার প্রস্তুতি চলতো। বাড়িতে মেহমান এলে শীত মৌসুমে পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যেত। এ জন্য গ্রামের বধূরা ভিড় জমাতেন ঢেঁকি ঘরে।
তারা রাত ভর ধান থেকে চাল ও চিড়ে করতো আর মনের আনন্দে গ্রাম্য ভাষায় গীত গাইত ‘চিড়ে কুটি ধাপুর-ধুপুর, চিড়ে কুটি ঢেঁকিতে দামান(জামাতা) এসেছে বাড়িতে। ’ এক সময় ঢেঁকি গৃহস্থালির নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যে অন্যতম প্রধান উপকরণ ছিল। এটি ছিল গৃহস্থ বাড়ির একটি অংশ। গৃহিনীরা ঢেঁকিতে ধান ভেঙ্গে চাল তৈরি করতেন। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পালা করে চলতো তাদের ধান ভেঙ্গে চাল তৈরির কাজ।
আধুনিকতার যান্ত্রিক যুগে ঢেঁকির ঢেঁকুর ঢেঁকুর শব্দ গ্রাম্য বধুদের মন থেকে হারিয়ে গেলেও উপজেলার ফলগাছা গ্রামের ৩ শতাধিক সেন পরিবার জীবিকার তাগিদে এখনও ঢেঁকি ব্যবহার করছে। তারা ভোর রাতে ঢেঁকিতে মাষ কলাইয়ের পেষ্ট তৈরী করছে। আবার সকালে সেই পেষ্ট ফেনিয়ে ফেনিয়ে ডালের বড়ি তৈরী করছে। ঢেঁকির কল্যানেই মাষ কলাইয়ের তৈরীকৃত বড়ি বাজারে বিক্রি করে তারা দারিদ্র্য জয় করেছে। তাদের তৈরীকৃত মাষ কলাইয়ের ডালের বড়ি গ্রাম-গঞ্জের বাজার ছাড়িয়ে এখন শহরের বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে।
ফলগাছা গ্রামের সেনপাড়ার গৃহবধূ শান্তনা রানী ও সাধনা রানী জানান, ঢেঁকি আছে বলেই আমরা মাষ কলাইয়ের পেষ্ট তৈরী করে বড়ি বাজারে বিক্রি করতে পারছি। ঢেঁকিই আমাদের দারিদ্র্য জয় করতে সাহায্য করেছে।
স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন বিপ্লব পল্লী উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলু জানান, ডালের বড়ি তৈরী করেই এখানকার প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার দারিদ্র্য জয় করেছে। তারা অত্যন্ত পরিশ্রম করে ভোর রাতে ঢেঁকিতে মাষ কলাইয়ের পেষ্ট তৈরী করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।