১০ জানুয়ারী ২০১২
রাশেদ যখন আমাকে ফোন করল তখন বিকেল ৫:৩০ মিনিট। মামা কই তুই। আমি বললাম আমি ক্যাম্পাসে মামা, কেন কি হইসে। আরে কি হয় নাই সেটাই বল, পিয়া তো যাইতেসে আজ। সাড়ে ৮ টায় ফ্লাইট।
সময় আছে দৌড় দে। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।
২৬ জানুয়ারী ২০০৩
ক্যান্ট পাবলিকে প্রথম পা রাখলাম আমি। সবে মাত্র ক্লাস সেভেন এ। বাবা মার মনে এক অদ্ভুত ভূত চেপেছিল সেই সময়।
লালমনিরহাট এ থাকলে ছেলে নষ্ট হয়ে যাবে, কোন ভাবেই তাকে রাখা যাবে না। প্রথম ক্লাস। কেউ পরিচিত নেই। সবার শেষ বেঞ্চ এ বসলাম। পাসেই মেয়েদের সারি।
একটা মেয়ে বলল তুমি কি নতুন। মেয়েটার দিকে তাকালাম। ছোট্ট মেয়েটি। কিন্তু চোখ গুলো খুব মায়াবি, কাজল দেয়া চোখ। ছোট্ট নাক, রহস্যময় হাসি।
আমার পাগল হতে বেশি সময় লাগলো না। মনে মনে মাকে বললাম, মা তোমার বউমা পেয়ে গেছি। আমি প্রতীক, তুমি? আমি পিয়া।
১০ জানুয়ারী ২০১২
ঢাকা পরিবহনে ঝুলে আছি। গন্তব্য এয়ারপোর্ট।
পিয়া। দুই বর্ণের একটি ছোট নাম, কিন্তু নাম ছোট হলেও আমার মনের সবচেয়ে বড় জায়গা জুড়ে আছে ওর নামটি। লোকে বলে যে প্রথম ভালবাসা নাকি কখনই ভোলা যায় না, আমি বলব কথাটা মিথ্যা। কেননা প্রথম ভালবাসা ভোলা সম্ভব না, কখনই না, যতই চেষ্টা করা হয় না কেন। সেই ২৬ জানুয়ারী থেকে আজ পর্যন্ত যদি সত্যি করে কোন মেয়েকে ভালবেসে থাকি তবে সে পিয়া।
বাসে দাড়িয়ে অতীত স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম। কি পাগলই না ছিলাম সে সময়। ক্লাস এ বসে ওর দিকে তাকিয়ে থাকা, মিনিটে ওর কতবার চোখের পাতা পড়ে টা গোনা(২২ বার), হাত কেটে ওর নাম লেখা, ক্লাস শেষে ওকে দিনের শেষ দেখা দেখার জন্য দাড়িয়ে থাকা, ওকে দেখার জন্য বন্ধুদের নিয়ে (ওর বাবার ভয়ে) ওর বাসার সামনে ঘোরাঘুরি করা, পাশাপাশি একটু সময় থাকার জন্য scrabble টীমে জয়েন করা, ও লিপস্টিক লাগা গ্লাস চুরি করা কত কিছুই না করেছি ওর জন্য। সেই পিয়া। যার জন্য বন্ধুদের উপহাস, স্যারের বকা, সতীন প্রেমিকদের হুমকি কত কিছুইনা সহ্য করে গেছি।
মারামারি করেছি বদরগঞ্জ গ্রুপের সাথে। সেই পিয়া। কেন জানি আমি ওকে ভুলতেই পারি না। হাত কেটে লেখা ওর নাম মুছে গেছে। কিন্তু মন থেকে মুছে ফেলতে পারছি না।
সেই পিয়া আজ চলে যাচ্ছে।
বাসের হর্নে বর্তমানে ফিরে এলাম। ৬:৩০ বাজে। তখনও আমি ফার্মগেটে। খুম জ্যাম।
পৌছাতে কি পারব।
১১ জুন, ২০০৭
আমাদের ssc পরীক্ষার ফল দিবে। শাওনের সাথে স্কুলে চলে এলাম। পিয়া আসবে। তিন মাস দেখি না ওকে।
আজ কথা বলব। ও এল, গোলাপি রঙের কামিজ পড়ে। এত্ত সুন্দর লাগছিল ওকে। ভগবানকে তো বলেই ফেললাম, আমার স্বর্গ দরকার নেই, দরকার নেই সেই রুপবতি হুর পরীর। শুধু চাই এই মানবী নামক দেবীকে।
আমি ওকে দেখলাম, চোখের পলক না ফেলে, মন ভরে। কিন্তু একি ও এসেছে ওর বাবার সাথে। আশেপাশে ঘুরলাম অনেকক্ষণ। কিন্তু না, ওর বাবা ওকে কোথাও যেতেই দিল না। খুব চেষ্টা করেছিলাম কথা বলার জন্য।
পারিনি। রেজাল্ট ভাল করেছিলাম। কিন্তু সেই আনন্দ কিভাবে যেন হারিয়ে গিয়েছিল।
তবে সে কষ্ট বেশিদিন ছিল না। বাবা চেয়েছিল ঢাকার কোন কলেজে ভর্তি হতে।
আমি হইনি। আমারদের কলেজই ভর্তি হয়েছিলাম। কারন সেই পিয়া...
১০ জানুয়ারী ২০১২
৭:৪৫। সবে মাত্র এয়ারপোর্টে নামলাম। যেদিন ভাগ্যের দরকার ছিল, সেইদিনই পেলাম না।
পিয়া কে কল করলাম।
-পিয়া কোথায় তুমি, আমি প্রতীক
-প্রতীক, তুমি, তুমি কোথায়
-আমি এয়ারপোর্টে। পিয়া আমি একটু দেখা করতে চাই কোথায় তুমি
-আমি ইমিগ্রেসন পার হয়ে এসেছি, অনেক দেরি হয়ে গেছে প্রতীক
-একটু দাঁড়াও। আমি আসছি
টিকেট কেটে ইমিগ্রেসন এ চলে এলাম। মাঝখানে কাঁচ।
দুই পাসে আমরা দুইজন। ওকে ফোন করলাম।
-অনেক দেরি হয়ে গেছে প্রতীক, আমার প্লেন এর সময় হয়ে গেছে।
আমি চুপ করে আছি। খুব কষ্ট লাগছিল।
-দেখা হবে প্রতীক, ভাল থেকো।
আমি আর একটি কথাও বলিনি। ওপারে ও, এপারে আমি। ইচ্ছে করছিল কাঁচ ভেঙ্গে ওপারে গিয়ে ওকে বলি, আমি তোমাকে ভালবাসি, যে কথাটা আমি ওকে কখনই বলতে পারিনি। বাস্তবতা যতটা শক্ত ছিল, কাঁচের ওই দেয়ালটা তাঁর চেয়ে বেশি শক্ত।
একটু পর হারিয়ে গেল ও। আমি তখনও তাকিয়ে আছি । আমি কাঁদছিলাম। হাজারো মানুষের ভিড়ে সেই কান্না কেউ দেখতে পারেনি। আবার ওকে ফোন করলাম, যদি শেষ বারের মত ওর কণ্ঠ শুনতে পারি।
কিন্তু যান্ত্রিক কণ্ঠ বেজে উঠল আমার কানে।
আজ
না, আমি ওকে ভুলতে পারিনি। শত চেষ্টা করেও। জীবনে অনেকের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল, সবাই বলেছিল আমি তাদের ভুলে যাব কিনা কিন্তু আমি তাকেই ভুলে যাইনি যে আমাকে কোন দিন মনে রাখতে বলেনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।