চাই সুন্দর ভাবে বাঁচতে...তাই চাই একটি সুন্দর পৃথিবী......
ভূমিকা:
“ছিঁড়িতে না পারি দড়াদড়ি
খুলিতে না পারি দড়াদড়ি
সমাজের শিকলে আটকা পড়েছে পা
রান্না ঘরে খুন্তি নাড়ানাড়ি। ”
-রূদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
দু’হাজার বছর আগে গ্রিক নাটকের ক্লাইটেমনেস্ট্রার সমর্থকদের গলায় শেষ শোনা গিয়েছিল মুছে যেতে থাকা মাতৃস্বত্বের দাবী। আর ১৮৭৯ সালে ইবসেনের নায়িকা নোরা বের হয়ে এল পুতুলঘর ছেড়ে। “From below, the sound of a door slamming shut.” হেনরিক ইবসেনের নাটকের শেষ লাইনে, যা মঞ্চ নির্দেশনা হিসেবে লিখেছিলেন নাট্যকার। A Dolls House নাটকের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র ‘নোরা’ স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যাবার সময় শব্দ করে দরজা বন্ধ করে যায়।
মধ্যবর্তী সময়টা অন্ধকার নীরবতার। আর নোরা কোথায় গেল?
নারী কোথায় পৌঁছল? পৌঁছল স্বনির্ভর আত্মবিশ্বাসে, এতদিন ‘পুরুষের কাজ’ বলা যাকে, তার অধিকাংশ জয় করেছে মেয়েরা। নারী পুরুষের কাজে আর মগজে কোন দুস্তর ফারাক আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তবু, অহরহ নোরাকে ঘরে ফিরে যেতে বলে ধর্ম-আইন-দর্শন-সাহিত্য-বিজ্ঞাপন-সিনেমা-অর্থনীতি-পরিবার। বস্তুত পক্ষে, নোরার ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রসঙ্গটি নাট্যকলায় ‘নারী’ সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তার দুয়ার খুলে দেয়।
পাঁচ মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে জঙ্গলে নির্বাসনে দিয়ে যে রাজা তাঁর সিংহাসনকে নিরঙ্কুশ করেন, দীর্ঘ বারো বছরে যিনি একবারও পুত্রদের খোঁজ নেন না, সেই রাম আমাদের আদর্শ পুরুষ। সীতার পতিভক্তি ভারতের কালজয়ী আদর্শ। কিন্তু রাম যখন লঙ্কাবিজয়ের পর সীতার প্রতি সন্দেহবশত সবার সামনে কটুবাক্য বলতে থাকেন, ভরত, লক্ষণ, সুগ্রীব বা হনুমানের অঙ্গশায়িনী হতে বলেন নিজের স্ত্রীকে এবং আগুনে পুড়িয়ে মারতে যান, তখন সীতা যে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছিলেন রামের ইতরজনোচিত কাজের, তা কখনই টেলিরামায়নে বা ধর্মগুরুদের বক্তব্যে গুরুত্ব পায় না। সীতার পতিভক্তির চেয়ে স্বামী ও রাজপ্রাসাদের সাহায্য ছাড়া তপোবনে একা একা ছেলেদের মানুষ করে তোলা যে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাও ভারতবাসী মনে রাখেন না। রামমাহাত্ম্য প্রচারের মধ্য দিয়ে যাত্রায়, লোকগাঁথায়, পটচিত্রে, টেলিভিশনে ও নির্বাচনী প্রচারে ভারতীয় নারীদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে নির্বিচারে স্বামীর অনুসরণের আদর্শ।
প্রাকৃতিক লিঙ্গ নিয়ে নারী-পুরুষ জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু সমাজ ও সংস্কৃতি বেড়ে উঠার সাথে সাথে তার জন্য সামাজিক লিঙ্গ তৈরী করে দেয় গণমাধ্যমও সে দৌড়ে পিছিয়ে নেই। গণমাধ্যমে জেন্ডার রূপায়ন একটি আলোচিত এবং অতি সমালোচিত বিষয়। গণমাধ্যমের আধেয়তে নারীকে প্রান্তিক, নেতিবাচক ও যৌনবস্তু হিসেবে উপস্থাপন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মঞ্চ নাটক ও প্রচলিত গণমাধ্যমের একটি।
আলোচ্য গবেষনায় মঞ্চ নাটকে নারী-পুরুষের উপস্থাপন, গতি-প্রকৃতি, চরিত্রায়ন, রূপায়ন, দৃশ্যায়ন, ভাষা, সংলাপ ইত্যাদি বিষয়ে জেন্ডার সংবেদনশীলতা বজায় থাকছে কিনা তা যাচাই করার প্রয়াস চালানো হয়েছে।
উদ্দেশ্য:
“সেমাই যেমন ভাত নয়, মেয়েরাও তেমনি মানুষ নয়। ”
(আজাদ, ১৯৯৫)
বাংলাদেশে মঞ্চনাটকে জেন্ডার সংবেদনশীলতা বজায় থাকছে কিনা, এমন অনুসন্ধানী মন নিয়ে আলোচ্য গবেষণাটি করা হয়েছে। নাটকে আরো যেসব বিষয় দেখা হয়েছে সেগুলো হলো:
১. শব্দ, ভাষা-বিন্যাস, সংলাপ ইত্যাদিতে লিঙ্গ পক্ষপাতদুষ্টতা
১. নারী-পুরুষের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি কেমন
২. মঞ্চনাটকের উপস্থাপন গতানুগতিক ধারায় কী না
৩. নির্দেশকের উদ্দেশ্য
৪. নারী-পুরুষের দৃশ্যায়ন, চরিত্র বিন্যাস, দৃষ্টভঙ্গি, মানসিকতা
৫. নারী-পুরুষের উপস্থাপনে পক্ষপাতদুষ্টতা
৬. নাটকে নারীর পোশাক, চালচলন আবেদনময়ী করে তুলে ধরা হয় কিনা।
৭. নাটকের নারীকে পরিপূর্ন বা ভারসাম্যপূর্ন ভাবে চিত্রায়িত করা হয় কিনা।
৮. নারীকে পুরুষের অধনস্ত ভাবে উপস্থাপন করা হয় কিনা।
৯. পুরুষকে দেখানো হয় শক্তিশালী, বুদ্ধিমান, অর্থউপার্জনক্ষম, সক্রিয় ব্যক্তি হিসেবে।
১০. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীকে বুদ্ধিহীন, সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম ভাবে উপস্থাপন করা হয়।
১১. নাটকের নেপথ্য উদ্দেশ্য।
১২. নাটকে নারীকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তুলে ধরা হয় মাতৃত্ব, সাজসজ্জা, রান্নাবান্না ইত্যাদির জন্য।
১৩. সংসারী, যত্নকারী, সুন্দরী, এসব টিপিক্যাল রূপে নারীকে দেখানো হচ্ছে কিনা।
১৪. নাটকে নারীদের দুর্বল, অসহায়, মানুষ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে কিনা।
১৫. নাটকে নারীদের নিস্ক্রিয়, ঘটনায় শিকার ও অধস্তন মানুষ হিসেবে তুলে ধরা হয় কিনা।
১৬. নাটকে নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কিনা।
ব্যবহৃত প্রত্যয়ের সংজ্ঞা:
নাটক:
‘নাটক’ হলো মানব জীবন সম্পর্কিত অভিজ্ঞতার এমনই এক কবিকৃত অভিনয়কৃত যা সমবেত দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা, কৌতুহল সৃষ্টি করে তাদেরই চিত্তে উদ্দিষ্ট রসপরিণাম লাভ করে বা চিত্তকে নাট্যকারের অভিপ্রেত পথে উদ্বোধিত করে।
মঞ্চ নাটক:
মঞ্চ নাটকের লেখকরা সামাজিক প্রয়োজনে নাটক লিখেছেন এবং বিষয় হিসেবে সমাজের জ্বলন্ত সমস্যা-সংকটগুলোকে দর্শকের সামনে চিৎকৃত অবস্থায় উপস্থাপিত করেছেন, তাদের ভাবিয়েছেন। সংকট মোচনের জন্য ভাবতে বাধ্য করেছেন সমাজের মানুষদের। দর্শকের চেতনায় উজ্জীবন ঘটায় নাটক এটা মঞ্চনাটকের বেলাতেও সত্য। তবে, মঞ্চনাটকের দর্শক নির্লিপ্ত থাকে সমস্যার বা সংকটের সমাধানের ক্ষেত্রে। অবশ্য, যে চেতনা তারা মঞ্চনাটক থেকে পান তা তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে কাজে লাগে বৈকি।
রাষ্ট্রের অমানিশালগ্নে বা রাষ্ট্রে যখন অগণতান্ত্রিকতা-স্বৈরাচার জাকিয়ে বসে, তখন নাটক তার তীব্র প্রতিবাদ করে- এই প্রতিবাদ করাটাও মঞ্চনাটকের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। নারী কর্তৃক নারীকে, পুরুষ কর্তৃক পুরুষকে, রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণকে শোষণ-নিগ্রহ-অত্যাচার করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় মঞ্চনাটকে।
সমাজে নারী কর্তৃক নারী, পুরুষ কর্তৃক পুরুষ ও পুরুষ কর্তৃক নারী শোষিত হয় প্রচলিত প্রথা, ধর্ম, আচার, সংস্কার, আইন, শ্রেণী শোষণ এবং সর্বোপরি পুরুষতন্ত্র দ্বারা। আর রাষ্ট্র জনগনকে নিয়ন্ত্রণ, শোষণ ও নিগ্রহ করে ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, আমলাতন্ত্র ও পুরুষতন্ত্র দ্বারা। মঞ্চনাটকের চরিত্ররা দুই ধরনের শোষণ বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছে।
তাই আমাদের দেশের মঞ্চনাটক ও রাষ্ট্রের মধ্যে বরাবরই একটা বিরোধ লেগেই আছে।
সেক্স ও জেন্ডার:
‘জেন্ডার’ শব্দটি আভিধানিক অর্থ লিঙ্গ(Sex)। সাধারণ ব্যাকরণেও জেন্ডার শব্দটি ব্যবহৃত হয় লিঙ্গ(Sex) চিহ্নিত করার জন্য। কিন্তু এভাবে জেন্ডার এবং সেক্স একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসলেও সাম্প্রতিক উন্নয়ন সাহিত্যে জেন্ডার ভিন্ন ও ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হয়। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাই আজ জেন্ডার এবং সেক্স-এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট পার্থক্য টানা হয়।
সাধারণভাবে ‘সেক্স’ হচ্ছে জৈবিকভাবে নির্ধারিত বিষয়। আর জেন্ডার হচ্ছে, সামাজিকভাবে নির্ধারিত নারী-পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ক। এর মাধ্যমে শরীরের বিশেষ কোন প্রত্যঙ্গ বুঝায় না। এটি সমাজসৃষ্ট, সমাজের মতাদর্র্শ সৃষ্ট। কাজেই যখন বলবো, ‘নারী’ বা ‘পুরুষ’ তখন জৈব লিঙ্গ (Sex) বোঝানোই মূল উদ্দেশ্য; কিন্তু যখন বলবো, ‘মেয়েলি’ কিংবা ‘পুরুষালি’ তখন জেন্ডারকে নির্দেশ করে যা একজন নারী বা পুরুষের লিঙ্গীয় বৈশিষ্ট্যকে ছাপিয়ে আরো অনেক কিছুর প্রকাশ ঘটায়, যা শারীরিক নয় বরং স্বভাব বা আচরণগত।
‘জেন্ডার’ শব্দটি প্রখম ব্যবহার করেন ব্রিটিশ নারীবাদী Anne Oakley।
Ann Whitehead জেন্ডার ধারণার একটা সংজ্ঞা দিয়েছেন, যার দ্বারা আমরা সমাজে নারী, পুরুষের জেন্ডারভিত্তিক অবস্থা ও অবস্থানকে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি। তাঁর মতে, “The relations between men and women are socially constituted and derived from biology. Therefore the term gender relations should distinguish such social relations between men and women from those characteristics, which can be derived from biological difference. In this connection sex is the province of biology. I.e. fixed and unchangeable qualities, while gender is the gender are the province of social science, i.e. qualities which are shaped through the history of the social relations and interactions.”
অন্যদিকে, জেন্ডার সম্পর্কে Suzanne Williams- এর ভাষ্য:
“Gender is an old word which has taken on a new meaning. It is a portmanteau word, containing a set of inter-related ideas. Because this use of the word is new, a kind of shorthand, it is difficult to translate.”
Wikipedia, the free encyclopedia-তে জেন্ডারকে এভাবে সঙ্গায়িত করা হয়েছে-
The word "gender" has several definitions. Colloquially, it is used interchangeably with "sex" to denote the condition of being male or female, but in the social sciences it refers to specifically social differences, such as but not limited to gender identity. More recently, it has been equated with with "sexual orientation" and "identity" (especially LGBT sexuality). People whose gender identity feels incongruent with their biological sex may refer to themselves as "intergender".
বাংলা ভাষায় তাই এই জেন্ডার এর ধারণাগত অর্থ প্রকাশ করার কোন সঠিক প্রতিশব্দ খুঁজে পাওয়া যায়নি। মানুষ সাধারণত লিঙ্গ বা নারীদের সাথে জেন্ডারকে এক করে দেখে। এজন্য বিষয়টিতে কিছুটা দুবোর্ধ্যতা বা অস্পষ্টতা রয়ে যায়।
প্রকৃতপক্ষে: সেক্স হচ্ছে প্রাকৃতিক বা জৈবিক কারণে সৃষ্ট নারী, পুরুষের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নারী ও পুরুষের বৈশিষ্ট্য যা অপরিবর্তনীয়। আর, জেন্ডার হচ্ছে সামাজিকভাবে গড়ে উঠা নারী-পুরুষের পরিচয়, সামাজিকভাবে নির্ধারিত নারী-পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ক, সমাজ কর্তৃক আরোপিত নারী-পুরুষের ভূমিকা যা অপরিবর্তনীয়।
জেন্ডার সংবেদনশীলতা:
সংবেদনশীলতা শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘Sensitivity’ । এর অর্থ হচ্ছে ‘অনুভূতিপ্রবণতা’। মূলত সমাজে নারীর প্রান্তিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নারীর অধঃস্তন অবস্থার জন্য দায়ী মনোভাব ও আচরণকে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ করতে উদ্বুদ্ধ করে, বলা চলে পুরুষতান্ত্রিকতার ছাঁচে গড়া নারীর ইমেজকে দূরীভূত করার লক্ষ্যে বিবেক, সত্য, বস্তুনিষ্ঠতা প্রভৃতির সমন্বয়ে গড়ে উঠে জেন্ডার সংবেদনশীলতা।
নারী পুরুষ সম্পর্কে বৈষম্যসুলভ মনোভাব থেকে মুক্ত হওয়াকেই বলা হয় জেন্ডার সংবেদনশীলতা।
জেন্ডার পক্ষপাত:
নারী কে?
ধর্ম বলে: নারী থেকেই পাপের জন্ম, ধর্মাচরণে সে, পুরুষের সহকারিণী মাত্র।
আইন বলে: মা তার সন্তানের অভিভাবক নয়, ধাত্রী মাত্র। সন্তান পিতার।
শিল্প বলে: নারী সুন্দরী, যৌন উত্তেজনা সঞ্চারিণী, প্রেরণাদাত্রী।
শিল্প সৃষ্টি তার কাজ নয়।
বিজ্ঞাপন বলে: নারী মা, নারী গৃহিণী, নারী এক অতি সুন্দরী অলিক মানবী।
সাহিত্য বলে: নারী প্রেরণা, নারী উর্বশী অর্থাৎ যৌনতার প্রতীক, নারী গৃহলক্ষ্মী। যে নারী সাহিত্য সৃষ্টি করে সে পুরষের জগতে অনুপ্রবেশকারী ‘মহিলা কবি’ জাতীয়।
দর্শন বলে: মাতৃত্ব আর স্বামী সেবাই নারীর আসল দায়িত্ব যা তাকে মহীয়সী করে।
সমাজ বলে: নারী শ্রীমতী অমুক-পুরুষ বা মিসেস বা মিসেস তমুক-পুরুষ, তার নিজস্ব কোন পরিচিতি নেই। নারী অনাম্নী, অনুগত, অন্তঃপুরচারিণী।
অর্থনীতি বলে: সাবধান, এখানে নয়, কাজের জগতটা পুরষের। পুরুষ কর্তা, নারীর ভরণপোষণের দায় তার। নারী নির্ভরশীল।
পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রের, কিংবা ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি স্তরে নারী কিংবা পুরুষের বিবেচনা না করে শুধু নারী পুরুষ হিসেবে দেখার প্রবণতাকেই জেন্ডার পক্ষপাত বলে অভিহিত করা হয়।
পটভূমি:
“পুরুষেরা নারীদের রক্ষক এবং ভরণপোষণকারী। ”
সূরা: আল নিসা, আয়াত ৩৪।
সেই প্রাচীনকাল থেকেই নারী পুরুষের মাঝে বৈষম্য, সামাজিক পার্থক্য গড়ে দেয়া ইত্যাদি চলে আসছে। খৃষ্টপূর্ব ৮০০০ বছর আগে সিরিয়ার এক কৃষি গ্রামে প্রতœ-তাত্ত্বিকরা প্রথম জেন্ডার বৈষম্যের নিদর্শন পান।
কঙ্কালের হাঁটু দেখে তারা অনুমান করেন যে, যেখানে মেয়েদের বিনা বিশ্রামে কঠোর পরিশ্রমে বাধ্য করা হয়েছিল। অর্থাৎ প্রাক ঐতিহাসিক কাল থেকেই সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে জেন্ডার সংবেদশীলতা বজায় ছিল। এইতো এই উনিশ শতকে এসে এ ব্যাপারে গবেষণা, পর্যালোচনা ও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে মানুষের মাঝে।
ল্যাটিন genas এবং ইংরেজি gende শব্দ থেকে জেন্ডার এর উৎপত্তি। ফরাসিতে শব্দটি ‘জব’ ও গ্রীক ভাষার 'জেন' হিসেবে এটি উচ্চারিত হয়।
দু’ভাষায়ই এর অর্থ-সৃষ্টি করা। ফাওলার ইংরেজি ব্যাকরণে প্রথম জেন্ডার শব্দটি ব্যবহার করেন। সামাজিক লিঙ্গ অর্থে জেন্ডার শব্দটি প্রথম ব্যবহুত হয় ১৯৭২-৭৩ সালে। ANN Oakley এটি ব্যবহার করেন তাঁর “Sex gender and society” গবেষণায়। তাঁর আগে ১৯৬৬ সালে আমেরিকায় একটা সংগঠন গড়ে ওঠে “National Organization for Women”. তারা তাদের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জেন্ডার ইস্যুকে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করেন এবং নারীদের অধিকার আদায় ও বৈষম্য দূরীকরণে আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেন।
আমাদের উপমহাদেশে সেই আদিম কাল থেকেই জেন্ডার বৈষম্য প্রচলিত ছিল। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নারী কেবল অবহেলিত আর বঞ্চিতই হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদও হয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিকে। পন্ডিত মদন মোহন দু’শ বছর আগে বলেচিলেন- “বালকেরা পারিলে বালিকারা কেন না পারিবে। ” ১৮৭৩ সালে মাইকেল মধুসূদন বলেছিলেন- “নারীকে মঞ্চে আনা না হলে আমি নাটক করব না।
”
নাটক আমাদের ঐতিহ্যের অন্যতম এক অশিংদার, মঞ্চে নাটক হয়ে আসছে বহু আগে থেকেই। ঢাকার যাত্রাবাড়িতে বসত সেই প্রাচীন ব্রাক্ষ্মণ যুগ থেকেই যাত্রার। সেই থেকে এ স্থানটির নামও হয়েছে যাত্রাবাড়ি। যাত্রা রূপ নিল পরবর্তীতে মঞ্চ নাটকে। অবশ্য বাংলা নাট্যমঞ্চ বলে যে রূপটি আমরা পাই তার সূচনা করেন রুশ মনীষী লেবেদেফ কলকাতায় ১৭৯৫ সালে।
বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠী নাটক মঞ্চস্থ করছে।
জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়টি একেবারে নতুন বাংলাদেশে। এ ব্যাপারে সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা খুবই সীমিত। যার প্রতিফলন ঘটে চলেছে বিভিন্ন মাধ্যমে। কিন্তু তা নিয়ে আরোচনা বা গবেষণা একেবারে হাতে গোণা কয়েকটা।
এরই পটভূমিতে আরোচ্য গবেষণাটি রচিত হয়েছে।
নাটক শব্দটি উচ্চারণ করলেই মনে আসে পৃথিবীর সেরা নাটক সফোক্লিসের “ইডিপাস”, শেক্সপিয়রের “ম্যাকবেথ”, “ওথেলো”, রবীন্দ্রনাথের “বিসর্জন”, সৈয়দ শামসুল হকের “যুদ্ধ এবং যুদ্ধ” নাটকের কথা।
মঞ্চনাটক কবে থেকে শুরু হয় সেই ইতিহাস সঠিকভাবে জানা সম্ভব না হলেও আমাদের এ উপমহাদেশে ১৮৬১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মত “নীলদর্পন” মঞ্চস্থ হয় তারও পূর্বে ১৮৬০ কিংবা ’৭০-এর দশকের মধ্যে কলকাতা থেকে বেশ কটি নাট্যদল, এমনকি মুম্বাই থেকে পাসী থিয়েটার দল নাটক করতে এসেছিল। ঐ সময় মঞ্চায়নে সি (দৃশ্যপট) ব্যবহৃত হতো। অনেক সময় কলকাতা থেকে দৃশ্যপট আঁকিয়ে এনে তা নাটক মঞ্চায়নের কাজে লাগানো হতো।
তবে সে সময় আলো, অঙ্গরচনা, পোশাক, আবহসঙ্গীতের ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনা কেমন ছিল, তা সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তবে এতটুকু জানা যায়, আলোর বিশেষ কোনো শিল্পিত রূপ না থাকলেও গ্যাসের আলো, মোমবাতি বা পেট্রোম্যাকস (হ্যাজাক) ব্যবহার হতো। তারপর থেকে আস্তে আস্তে মঞ্চনাটকের প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগতে থাকে। বিদ্যুৎ আসে, আসে উন্নত মানের প্রযুক্তি। প্লেনো কনভেক্স স্পট লাইট, ফ্রেসনেল স্পট লাইট, প্রলিপসোকাল, স্পট-লাইট, বিম স্পট লাইটসহ উন্নত মানের পোশাক, সাজ-সরঞ্জামাদি, মুখোশ।
স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রীষ্টাব্দে গড়ে ওঠে একটি সংঘবদ্ধ নাট্য-আন্দোলন গ্রুপ থিয়েটার মুভমেন্ট। তারা নাটকের বিষয়বস্তু, বক্তব্য, উপস্থাপনা ও অভিনয়রীতি এবং আঙ্গিকভাবে পরিবর্তন ঘটিয়ে মঞ্চনাটককে করে তোলেন সমাজ ও জীবনঘনিষ্ট। ১৯৭২ সালে মঞ্চস্থ হয় “বুড় শালিকের ঘাড়ে রো”। ১৯৭৩ সালে “বাকি ইতিহাস” গ্রুপ থিয়েটারের পাশাপাশি সারাদেশে আরো অনেক নাট্যগোষ্ঠী গড়ে উঠে। ঢাকা নাট্যদল, পদাতিক নাট্য সংসদ, ঢাকা ড্রামা, মহাকাল চট্টগ্রামের বির্যক নাট্যগোষ্ঠী, রাজশাহী থিয়েটার, কুষ্টিয়ায় অন্যান্য সিলেটের সন্ধানী নাট্যচক্র, কুমিল্লার যান্ত্রিক নাট্যসম্প্রদায়, খুলনার খুলনা থিয়েটার প্রভৃতি।
গবেষণার পূর্বানুমান:
গবেষণাটি শুরুর আগে আমার মনে হয়েছে, আমাদের মঞ্চনাটক নির্মাতা, অভিনেতা, নির্দেশক ও প্রযোজকগণ যথেষ্ট আধুনিক মনোভাবাপন্ন, সমাজ এবং আত্মসচেতন হওয়া সত্ত্বেও জেন্ডার সংবেদনশীলতার গণ্ডি থেকে বের হয়ে আসতে পারেন নি। কেননা বিষয়টি বহুকাল ধরেই সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে মিশে আছে। যার প্রভাব নিজেদের অজান্তে হলেও অতি স্বাভাবিকভাবে তাদের মাঝে বিদ্যমান রয়ে গেছে। আমার এই পূর্বানুমান আসলেই সত্যি কিনা তা এখানে যাচাই করার প্রয়াস থাকবে।
নমুনা নির্বাচন:
আলোচ্য গবেষণার Simple Random System এ নমুনা বাছাই করা হয়েছে।
বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল ও মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চায়িত “বিনোদিনী”, “প্রাগৈতিহাসিক”, “মাধবী” ও “মেরাজ ফকিরের মা” নাটকগুলো গবেষণার নমুনা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে।
গবেষণা পদ্ধতি:
এই গবেষণা কর্মটি মূলত গুণগত আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতির গবেষণা। তবে এখানে যেহেতু মাত্র চারটি নাটক নিয়ে কাজ করা হয়েছে তাই এটি বিশ্লেষণ পদ্ধতির গবেষণার পাশাপাশি কেস স্টাডি পদ্ধতিটি ও প্রয়োগ করা হয়েছে।
গবেষণা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা:
ক. গবেষণার নমুনা হিসেবে মাত্র চারটি মঞ্চ নাটক বাছাই করা হয়েছে যা পুরো বাংলাদেশের মঞ্চ নাটককে প্রতিনিধিত্ব করছে না।
খ. নমুনা বাছাইয়ে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা থেকে যায়।
গ. চারটি মঞ্চ নাটককে ভিত্তি ধরে কোন সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়।
তথ্য উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ:
নির্বাচিত চারটি নাটকের কাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের ঘটনা নিয়ে রচিত। কাজেই কাহিনীগুলোতে বিভিন্ন সময়ের সমাজ-ব্যবস্থা ওঠে এসেছে। বিভিন্ন সময়ে সমাজে নারী, পুরুষের অবস্থা ও অবস্থানও কাহিনীগুলোতে ধরা পড়েছে। যে চারটি নাটক নমুনা হিসেবে নেয়া হয়েছে নিম্নে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরছি:
প্রাগৈতিহাসিক
মূল গল্প : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
রচনা : মাহমুদুল ইসলাম সেলিম
নির্দেশনা : লাকী ইনাম
মঞ্চ পরিকল্পনা : সাজু খাদেম
মঞ্চ সজ্জা : দীপক
মঞ্চ নির্মাণ : দুলাল
কোরিওগ্রাফি ও শিল্প নির্দেশনা : আনিসুল হক বরুণ
আলোক পরিকল্পনা : মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন
সহযোগিতা : রাকিব হোসেন পুষ্প
আলোক প্রক্ষেপণ : আকবর
আলোক সরবরাহ : সবুজ ইলেকট্রিক্স
পোষাক পরিকল্পনা : হৃদি হক
সহযোগিতা : কান্তা, সুমি, আয়েশা, রেশমা
সঙ্গীত পরিকল্পনা : কামরুজ্জামান রনি
সহযোগিতায় : মাসুদুর রহমান রামিন
এ.টি.এম.মুশফিকুর রহমান রাজ
রূপসজ্জা : শংকর, তন্ময়
মঞ্চ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় : সাজ্জাদ আহমেদ রেজা
মঞ্চ ব্যবস্থাপনা : মেহেদী, শুভ্র, মানিক, সুমন, টিটু, রিয়াজ, শুভ
দ্রব্য সম্ভার অধিকর্তা : মানিক
সহযোগিতায়: শুভ
প্রযোজনা ব্যবস্থাপনা : মেহেদী হাসান
টিকেট ব্যবস্থাপনা : গিয়াস বাবু, ইব্রাহিম হোসেন
মিলনায়তন ব্যবস্থাপনা : অরুণ দাস
প্রযোজনা উপদেষ্টা : ড. ইনামুল হক
গানের দল : কামরুজ্জামান রনি
আদনান সোবহান
সৈয়দ জুনায়েদ
জামান খান সাগর
মোশাররফ
কাহিনী সংক্ষেপ:
স্যাঁত স্যাঁতে বর্ষাকালটা এবার ভীষণ কাল হয়ে দাঁড়ায় ভয়ানক ডাকাত ‘ভিখু’র জন্য।
বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করতে গিয়ে ওর পুরো দলটি ধরা পড়ে যায়। কাঁধে অসম্ভব জখম নিয়ে ভিখু পালিয়ে বাঁচে।
আশ্রয় নেয় এক সময়ের ঘনিষ্ট বন্ধু পেহ্লাদ বাগদীর বাড়িতে। ঘরের মাচার সামান্য আশ্রয়ে বিনা চিকিৎসা, বিনা যতেœই ভিখু সুস্থ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু ওর ডান হাতটি আর ভালো হয় না।
গাছের মরা ডালের মত অবশ অকর্মন্য হয়ে শরীরের সাথে ঝুলতে থাকে। অথচ এ অবস্থায় ওর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে বন্ধুর স্ত্রী ভুতির উপর। বাগদী কন্যা ভুতি কোন রকমে ভিখুর কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও পেহ্লাদ তা মানতে পারে চায় না। সে ভুতিকে প্রহার করে এবং ভিখুকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। যাবার আগে পেহ্লাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে ভিখু এই অপমানের প্রতিশোধ নেয়।
এবার ভিখুর গন্তব্য মহকুমা শহর। পঙ্গুত্বকে পুঁজি করে শুরু হয় ভিখুর নতুন জীবন ‘ভিক্ষাবৃত্তি’। সেখানে ওর পরিচয় পাঁচির সঙ্গে। পায়ে দগদগা ঘাঁ সম্বলিত বাউল কন্যা পাঁচী নিজেও একজন ভিক্ষুক। এক সময় পিতৃহারা এই মেয়েটি পূন্যা বাউলের হাত ধরে পথে নামে এবং পথেই খঞ্জ ভিখারী বসিরের দ্বারা তার সম্ভ্রমহানী ঘটে।
অতঃপর ওই বসিরের সাথেই সে রাত্রি যাপন করে নির্দ্ধিধায়। যদিও অন্তরে সে সবসময় পূন্যা বাউলকেই কামনা করে।
ভিখুর সাথে পরিচয় পর্বটিও খুব সুখকর ছিল না পাঁচীর জন্যে। কোন এক গ্রাম্য গানের আসরে আনমনা হয়ে পাঁচী পূন্যা বাউলের গান শুনছিল। এ সময় ভিখু এসে ওর পাশে বসে।
প্রথম দেখাতেই ওকে ভোগ করার লিপসা জেগে ওঠে ভিখুর মনে। ভিখু বাজে ইঙ্গিতবহ স্পর্শ ছুড়ে দেয় পাঁচীর দেহে। পাঁচী ঝনঝনিয়ে ওঠে। অবশেষে বসির এসে সামাল দেয়। বসিরের আঘাতে কুপোকাত হয় ভিখু।
এ যাত্রা বেঁচে যায় পাঁচী। তবে পাঁচীর দখল নিয়ে এবার কদর্য দ্বন্দ্ব শুরু হয় ভিখু ও বসিরের মধ্যে। এক রাতে বসিরকে খুন করে পাঁচীকে নিয়ে ভিখু বেরিয়ে পড়ে অজানা এক অন্ধকারের পথে।
বিনোদিনী
একক অভিনয়, সুর ও সঙ্গীত : শিমূল ইউসুফ
মুখবন্ধ ও মূখ্য উপদেষক : সেলিম আল দীন
গ্রন্থনা ও গবেষণা : সাইমন জাকারিয়া
নির্দেশনা : নাসির উদ্দিন ইউসুফ
সঙ্গীত দল : চন্দন চৌধুরী ও শান্ত চৌধুরী
সহযোগী নির্দেশনা : শিমূল ইউসুফ
আলোক নির্দেশনা ও
নির্দেশকের সহকারী : ইশরাত নিশাত
সেট ডিজাইন ও নির্মান : কামালউদ্দিন কবির
ক্যারিওগ্রাফ ও কস্টিউম ডিজাইন : মিনু হক ও শিমূল ইউসুফ
প্রপস ডিজাইন ও নির্মাণ : কিরিটি রঞ্জন বিশ্বাস
পোস্টার, স্যুভেনিয়ার ডিজাইন : আফজাল হোসেন
প্রচার ও প্রকাশনা : ইউসুফ খসরু
সহকারী প্রচার ও প্রকাশনা : মইনুল হাসান সজল ও সুদীপ ব্যানার্জী
আলো সরবরাহ : জিল্লুর রহমান
প্রযোজনা ব্যবস্থাপনা : কামাল বায়েজীদ
প্রযোজনা কর্মী : মিলু চৌধুরী, সজল, রতন, সুমিন, সাইদ ও জুয়েল
আলোক নির্দেশনা সহকারী : সাঈদ
মঞ্চ ব্যবস্থাপনা : ইউসুফ হারুণ জয়
ব্যবস্থাপনা কর্মী : রাজিব, দীপন, ওয়াসিম, লিটন, বাবুল, মুন্না, রূপা, সুমন,
শুভ্র ও সাজ্জাদ
সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা : ঢাকা থিয়েটার কর্মীবৃন্দ
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : শহীদুল্লাহ খান বাদল, গাজী গোলাম দস্তগীর, সানাউল
আরেফিন ও মাসুদুল হক।
কাহিনী সংক্ষেপ:
আজ থেকে প্রায় একশ কুঁড়ি-পঁচিশ বছর পূর্বের একজন রক্ষিতা-পতিতার জীবনাবোধ, শিল্পসাধনা এবং শিল্পসৃষ্টি তাঁকে বিশ্ব শিল্প সভার যে সুউচ্চস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে, অথচ তাঁরই ব্যর্থ জীবনের হৃদয় চূর্ণ করা আর্তনাদ এটি।
বিনোদিনী দাসীর আত্মজীবনী ‘আমার কথা’ ‘আমার অভিনেত্রী জীবন’ এবং তাঁর রচিত কবিতা গান এবং অভিনীত নীলদর্পণ, মেঘনাদবধকাব্য, মৃণালিনী, চৈতন্যলীলা নাটক সমূহের অংশ বিশেষের শিল্পরূপ উপস্থাপিত হয়েছে এ মঞ্চ নাটকে। শতবর্ষের ও অধিককাল আগে নারী অভিনয় শিল্পী হিসেবে বিনোদিনী বাংলার মঞ্চে এসেছিলেন এক রক্ষিতা পরিবার থেকে। তারপর বাংলার নাট্যমঞ্চকে সমাজের চোখে সম্মানজনক স্থানে তুলে দিযে পুরুষ ও তৎকালের অভিজাত মানব সমাজ কর্তৃক প্রতারিত হয়ে আত্মাভিমানে মঞ্চ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন বহুদূরে।
মাত্র ১০ টাকা মাহিনায় মাতামহী, বিনোদকে থিয়েটার অলাদের আকুল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। বিনোদ ছিল পিতৃ-মাতৃহীন।
তার পাশে ভাড়া থাকত ভাঙ্গা-বাঈজী সে বাবুদের গান শুনিয়ে মনোরঞ্জন করত। পোয়াতি ক্ষেত্রমনিকে পুরুষ তাকে জোর করে উলঙ্গ অবস্থায় ভোগ করতে চায় এবং অন্যত্র বিয়ে করেন। অবশেষে বিনোদিনী চাইলেও থিয়েটার ছাড়তে পারেন না, কারণ তাকে পাওয়া টাকা দেয়া হবে না।
মেরাজ ফকিরের মা
মঞ্চ পরিকল্পনা : হাসান আহমেদ
মঞ্চ ব্যবস্থাপনা : খুরশীদ আলম
সহযোগী : সাইফ জোয়ারদার/আনিসুর নহমান কাজল/আতিকুর
রহমান/মুুজিবুর রহমান জুয়েল
আলোকসম্পাত : স্পট লাইট
আলোক পরিকল্পনা : ঠান্ডু রায়হান
সহযোগী : জিল্লুর রহমান
পোশাক পরিকল্পনা : ফেরদৌসী মজুমদার
আবহসংগীত : প্রদীপ কুমার নাগ
ধ্বনি সংযোজনা : আবদুল্লাহ আল মামুন জুয়েল/আহসানুল কবির
গান রচনা : কাজি আবু জাফর সিদ্দিকী
রূপসজ্জা : জাকির
প্রপস : এম. এ. হান্নান
প্রযোজনা সমন্বয়কারী ও নির্দেশকের সহকারী : মারুফ কবির
সহ-নির্দেশনা : ফেরদৌসী মজুমদার
প্রযোজনা অধিকর্তা : রামেন্দু মজুমদার
কাহিনী সংক্ষেপ:
পলাশপুর গ্রাম বাংলাদেশের অনেক গ্রামের মধ্যে একটি। তেমন কোনো বিশেষত্ব নেই।
অন্য আর দু’দশটা গ্রামের মতন এ গ্রামেও যথেষ্ট দারিদ্র্য আছে, কুসংস্কার আছে, শোষক-শোষিতের চিরন্তন সংঘাত আছে।
এই গ্রামেরই এক সম্পন্ন গৃহস্থ মোজাহের মণ্ডল। বয়স প্রায় সত্তর। কিন্তু এখনও বেশ পাকাপোক্ত। আমুদে প্রকৃতির দিলখোলা লোক।
সংসারে অভাব অভিযোগ নেই। মণ্ডলের সহধমির্নী আলোবিবি তার সংসারটা সত্যিই আলো করে আছে। আলোবিবির বয়সও পঞ্চাশ থেকে ষাটের মধ্যে। কিন্তু তিনিও স্বামীর মতনই এখনও যথেষ্ট মজবুত। অ™ভুত এব ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই নারী।
তিনি যেন মোজাহের আলীর সংসার ও জীবনটাকে একাই আগলে রেখেছেন।
মোজাহের আলীর তিনটি ছেলে। বড় ছেলে গ্রামেই থাকে। তার নাম মেরাজ ফকির। বয়স পঁয়তাল্লিশ।
সে এই গ্রামের দুই ফকির বা পীরের একজন। বিবাহিত, এক কিশোর পুত্র ও এক কন্যার জনক। মেজছেলে সেরাজ শহরে থাকে। সরকারি চাকুরে। ছিমছাম সংসারী।
আর ছোটছেলে ভবঘুরে। বর্তমানে যাত্রা করে বেড়ায়। কাজেই মোজাহের আলীর সংসারকে বড়ই বিচিত্র এক সংসার বলা যায়। কিন্তু অকস্মাৎ ঘটে এক ঘটনা। দীর্ঘ ঊনচল্লিশ বছর পর আকস্মিকভাবে মেরাজ জানতে পারে তার গর্ভধারিণী মার ধর্ম আর তার ধর্ম অভিন্ন নয়।
আলোবিবি আসলে আলোরানী অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের। ধর্মের ভিন্নতার কারণে পুত্র কি অস্বীকার করতে পারে মাতাকে? গর্ভধারিণী স্তন্যদায়িনী জননীকে কোনো পুত্র কি পারে অস্বীকার করতে নিছক ধর্মমতে ভিন্নতার কারণে? মানবিক সম্পর্ক আর বাহ্যিক আচার সর্বস্ব-দুইয়ের মধ্যে কোনটির রয়েছে নাড়ি ছেঁড়া টান? ধর্ম ব্যবসাকে পুঁজি করে, ধর্মের অপব্যাখ্যা করে নারীকে লাঞ্ছিত করে এক শ্রেণীর স্বার্থলোভী অসৎ মানুষ সমাজের প্রগতিকে ঠেকিয়ে রাখার যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে দেশজুড়ে তারই প্রতিফলন এই নাটকে উঠে এসেছে।
মাধবী
মঞ্চ পরিকল্পনা : মুস্তাফা মনোয়ার
সহযোগী : কিরিটী রঞ্জন বিশ্বাস
আলোক পরিকল্পনা : নাসিরুল হক খোকন
সহযোগী : জিল্লুর রহমান
জামাল উদ্দিন টুটুল
সঙ্গীত পরিচালনা : দেবজিত বন্দোপাধ্যায়
সহযোগী : জগলুল আলম
পোশাক পরিকল্পনা : ফেরদৌসী মজুমদার
সহযোগী : পরেশ আচার্য্য
শোকানুল ইসলাম শাহী
কোরিওগ্রাফী : মিনু হক
মঞ্চ ব্যবস্থাপনা : ফিরোজ খান
সহযোগী : মুজিবুর রহমান জুয়েল
ধ্বনি সংযোজনা : কামরুজ্জামান চঞ্চল
সহযোগী : মেহেলী রোজ
রূপসজ্জা : দুলাল ভুঁইয়া/জাকির হোসেন
পরচুলা : মহম্মদ আলী
প্রপস্ : সৈয়দ মিরাজুল পলাশ
সহ-নির্দেশনা : মারুফ কবির
প্রযোজনা সমন্বয়কারী : শোকানুল ইসলাম শাহী
প্রযোজনা উপদেষ্টা : আবদুল্লাহ আল-মামুন
ফেরদৌসী মজুমদার
কাহিনী সংক্ষেপ:
মহাভারতের উদ্যোগ পর্বে উল্লেখিত একটি উপদেশমূলক কাহিনী মাধবী নাটকের ভিত্তি। ভাবা যেতে পারে পাঁচ হাজার বছর আগের ঘটনা এটি। সাম্প্রতিককালে নাট্যকাররা বিষয়বস্তুর অšে¦ষণে অনেকেই মহাভারতের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন, কারণ এ মহাকাব্য নাটকীয় উপাদানের এক অনাবিষ্কৃত খনি।
নতুন নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে যেসব বিষয়কে নাটকে ব্যবহার করতে আগ্রহী নাট্যকাররা।
ঋষি বিশ্বামিত্রের শিষ্য গালব দ্বাদশ বর্ষ গুরুর আশ্রমে শিক্ষা সমাপ্ত করে গুরুদক্ষিণা দেবার জন্য বার বার আগ্রহ দেখালে বিশ্বামিত্র ক্রুদ্ধ হয়ে তার দর্প চূর্ণ করার মানসে আটশত অশ্বমেধ ঘোড়া গুরুদক্ষিণা হিসেবে দিতে বলেন। অশ্বমেধ ঘোড়ার শরীর সাদা রং-এর, আর কানের রং কালো। এ কঠিন গুরুদক্ষিণা সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে গালব একদিন রাজা যযাতির কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করে। দানশীল রাজা যযাতি রাজ্যপাট ত্যাগ করে আশ্রমবাসী হয়েছেন।
এ গুরুদক্ষিণা সংগ্রহে গালবকে সাহায্য করা যযাতির আত্মসম্মানে আঘাত হানে। রাজসিক আত্মমর্যাদায় গরীয়ান যযাতি তাঁর একমাত্র কন্যা মাধবীকে এ কাজে সহায়তার জন্য গালবকে দান করেন। বিশেষ বরপ্রাপ্ত মাধবী এমন সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম যারা চক্রবর্তী রাজা হতে পারবে এবং মাধবী ইচ্ছা করলেই আবার সৌন্দর্য ও কৌমার্য ফিরে পাবে। মাধবীর শুল্কস্বরূপ যে কোন রাজা গালবকে আটশত অশ্বমেধ ঘোড়া দেবে এটাই স্বাভাবিক।
মাধবীকে নিয়ে গালব প্রথমেই অযোধ্যার রাজা হর্যশ্ব-এর কাছে গেল।
কিন্তু তাঁর কাছে দু’শর বেশি অশাএমধ ঘোড়া নেই। মাধবীর অনুরোধে অনিচ্ছাসত্ত্বেও গালব এক বছরের জন্যে মাধবীকে রাজার রানীমহলে থাকতে দিতে রাজি হল এই শর্তে যে পুত্র জন্ম দেবার পর রাজা মাধবী মুক্ত করে দেবেন। এভাবে আরো দুই রাজা- কাশীরাজ দিবোদাস ও ভোজনগরের রাজা উশীনরের রানীমহলে মাধবীকে এক বছর করে থাকতে হয়। তিন রাজার ঔরসে তিন পুত্র জন্ম দেয়ার বিনিময়ে মাধবী গালবের জন্যে ছয়শত অশ্বমেধ ঘোড়া সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। সমগ্র আর্যাবর্তে আর কোন রাজার কাছে ঘোড়ার সন্ধান না পেয়ে একদিন হঠাৎ মাধবী গালবের অজ্ঞাতসারে ঋষি মিশ্বামিত্রের আশ্রমে উপস্থিত হয়ে একদিন হঠাৎ মাধবী গালবের অজ্ঞাতসারে ঋষি বিশ্বামিত্রের আশ্রমে উপস্থিত হয়ে বাকি দুইশত অশ্বের বিনিময়ে তাকে গ্রহণ হয় এবং গালব আটশত অশ্বমেধ ঘোড়া প্রদান করে বিশ্বামিত্রকে গুরুদক্ষিণা দিতে সমর্থ হয়।
গালবের দীক্ষান্ত সমারোহ আর মাধবীর স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করা হয়েছে যযাতির আশ্রমে। মাধবী এবার অনুষ্ঠান করে তার যৌবন ফিরিয়ে না এনে গালবের সামনে উপস্থিত হলে গালব নানা অজুহাতে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।