আমি যখন ভার্সিটি ভর্তি হই তখন আমি প্রথম নেট ইউস করি। শুরুতেই আমি নেই গ্রামীনফোন ইন্টারনেট সার্ভিস। যাই হোক তখন গ্রাহক কম থাকার কারনে অনেক ভাল স্পিড পেতাম। প্রায় সাড়ে চার বছর নেট ইউস করার পর সিন্ধান্ত নিলাম যে গ্রামীনফোন ছাড়বো। দুটোই, ইন্টারনেট এবং কথা বলার সিম।
কারন হচ্ছে গ্রামীনের ফেয়ার পলিসি এবং রাতের বেলা নেট ডাউন থাকে। আমার জন্য দুটোই অনের বড় প্রবলেম। কারন আমি সারাদিন ডাউনলোড করি আর রাতের বেলা ব্রাউজ়( হাবিজাবি না কিন্তু) করি। এর মধ্যে আমাদের নিজেদের যাযাবর জ়ীবন ঘুচিয়ে নিজেদের বাসায় উঠার ব্যবস্থা হয়ে যায়। অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করছিলাম যে আমরা নিজেদের বাসায় গিয়ে বিটিসিএল এর ইন্টারনেট নিব।
কিন্তু আমার আব্বজানের মাথা ওয়াইমেক্স দ্বারা ধোলাই করা ছিল তা আগে কে জানত? আব্বুর চাপাচাপিতেই অনেকটা বাধ্য হয়েই ওয়াইমেক্স নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তো এখন আব্বু বললো কোনটা নিলে ভাল হয়। বাংলালায়ন নাকি কিউবি? আমি তখন বললাম বাংলালায়ন কিছুটা সস্তা এবং ইন্টারনেট সার্ভিস ভাল। কিন্তু কাস্টমার কেয়ার বাজে। আর কিউবি এর দাম বাংলালায়ন এর তুলনায় কিছুটা বেশী, বিভিন্ন জায়গা থেকে জানলাম তাদের সার্ভিস কিছুটা সমস্যা করে, কিন্তু তাদের কাস্টমার সার্ভিস তুলনামূলক ভাল।
তো সিদ্ধান্ত হলো বাংলালায়ন নিব। কিন্তু কত স্পিড এর তা নিয়ে একটু বির্তক হয়ে গেল। আমি ২৫৬ কিলোবিট পার সেকেন্ড(কেবিপিএস)(১ কিলোবাইট= ৮ কিলোবিট) নিতে বলি। আব্বু বলে ১২৮ কেবিপিএস নিতে। শেষ পর্যন্ত সিদ্বান্ত হলো যে স্পিড যদি খুব কম হয়, তাহলে ২৫৬ নিব।
ক্ষুধার্ত ডাউনলোডারের জন্য আপাততো দরকার ইন্টারনেট। তাই রাজি হয়ে গেলাম। তো বললো তাহলে ফোন করে করে খবর দেই কানেকশন দেবার জন্য। আমি হাই তুলে বললাম “দেও”।
ফোন করার দেড় ঘন্টার মধ্যে চলে এল তাদের এজেন্ট।
এরপর শুরু হইলো তাদের অসাধারন সার্ভিস দেবার কাজ। আমি কোন ডিভাইস নিব, তা জিজ্ঞাস না করেই এজেন্ট মহোদয় ইউএসবি ডিভাইস বের করে, আমার অনুমতি না নিয়েই আমার লেপটপে লাগালো। আমি কইলাম কি করেন? তিনি বললেন একটু দাড়ান, কইতেছি। তিনি আমার লেপটপ এ ইউএসবি ডিভাইস ইন্সটল করে কহিলেন, নেন ইউস করেন। দেখেন স্পিড ঠিক আছে কিনা।
আমি তখন বললাম, “আমি তো ইনডোর ডিভাইস নিব”। তিনি একটু মনোক্ষুন্ন হলেন। হতাশ হইয়া তিনি ইনডোর ডিভাইস বের করলেন। তিনি তাহা আমার লেপটপ এ লাগালেন। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার চালু করলেন কানেক্ট করার উদ্দেশে।
কিন্তু মোর লেপটপও কথা কয় না, তাহার ইনডোরও কথা কয় না। ১০-১৫ মিনিট কানেক্ট করিবার ব্যর্থ চেষ্টা করিবার পর তিনি আমাকে এক মহান সল্যুশন দিলেন। আমি যেন আমার লেপটপটি নতুন করে ফ্রেস করে ইনস্টল করি। তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এই রকম মহান সল্যুশন শ্রবন করিয়া আমার জীবন ধন্য হইয়া গেল।
এদিকে আমার ডেস্কটপ কমপিউটার কিছুক্ষন আগে ফ্রেস করিয়া ইনস্টল করিয়াছি। এখানে বলে রাখা ভাল যে আমি আমার ডেস্কটপে উইন্ডোস সেভেন এবং লেপটপে উইন্ডোস এক্সপি ইউস করি। এবং আমি সেইদিন লাকিলি ডেস্কটপ নতুন করে উইন্ডোস সেভেন ইনস্টল করেছিলাম। পাঠকগন যারা উইন্ডোস সেভেন ইউস করেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন যে, উইন্ডোস সেভেনে নেটওয়ার্ক কানেকশন করা একটু কঠিন। যারা নিয়মিত ইউস করেন তারাই কেবল এটাতে সহজে করতে পারেন।
আমি তখন বললাম আপনাদের ডিভাইসগুলো উইন্ডোস সেভেন, উবান্টু সাপোর্ট করে তো? আবার আমার কর্ণ মহান উত্তর শুনিল “ আমরা সবাই যেইটা কমপিউটারে চালাই, সেইটাতে এইটা সাপোর্ট করে। “ বুঝলাম তাকে জিজ্ঞাস করা মূল্যহীন। তাকে বললাম নেন আমার ডেস্কটপে ট্রাই কইরা দেখেন। সেইখানেও কোন রেসপন্স নাই। এখনে আরো অবস্থা আরো কাহিল হইল সেই এজেন্ট এর।
তিনি এইখানে কোন নিউ কানেকশন ক্রিয়েট করার অপশন পাচ্ছেন না। আমি বললাম কি চান? তিনি নিরবতা পালন করিলেন। তারপর তিনি তার মোবাইল চার্জ করবার জন্য একটি চার্জার চাইলেন। মোবাইল চার্জে দিয়া তিনি ফোন করিলেন তাদের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। বলিলেনঃ “উইন্ডোস সেভেন নামে কি একটা আছে বলে, সেইখানে আমি নেটওয়ার্ক কানেকশন ক্রিয়েট করার অপশন খুজে পাচ্ছি না।
” উত্তরে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার বলিলেন কিভাবে উইন্ডোস এক্সপিতে নেটওয়ার্ক কানেকশন বের করতে হয়। তো যা হবার তাই হইলো, সেই এজেন্ট আরো কনফিউসড হইল। হা করিয়া কিছুক্ষন ধ্যান করিয়া বসিয়া রইল। আমি বললাম ঠিক আছে আপনি ইউএসবি দেখান করে দেখেন। তো ইউএসবি ঠিক মতো কাজ করলো।
আমি বললাম আপনাদের স্পীড তো ডেডিকেটেড, অনেকজন কাছাকাছি ইউস করলে স্পিড তো কমে না? তিনি বুঝলেন না। আমি বললাম, ধরেন অনেকজন আপনাদের ইন্টারনেট ইউস করে। সেক্ষেত্রে কি আমার স্পীড কমে যাবে। তিনি বল্লেন, ও আচ্ছা আপনি Hacking এর কথা বলতেছেন? তখন আমি ধৈর্য্যচ্যুত। সরাসরি বললাম আপ্নারে কিছু জিগায় লাভ নাই।
তো এখন রেজিস্টেশন এর জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগে। আমার কোনটারই ফটোকপি করা নাই। তারপর তিনি আমাকে তেল মারার উদ্দেশ্যে বললেন, থাক যখন নাই, আর কি করবেন। আপনার জন্য লাগবে না। তো রেজিস্টেশন ফর্ম পূরন করার পর তিনি চলে গেলেন।
তার ২ ঘন্টা পর আমার লাইন এক্টিভেট করলেন।
তো এক্টিভেট করার পর আমি ইন্টারনেট ইউস করার পর তো খুব খুশি। আরে ব্রাউজিং স্পীড তো সেই রকম ফাস্ট। ইচ্ছামত ডাউনলোড শুরু করলাম। যেহেতু আনলিমিটেড ডাউনলোড তাই কোনো সমস্যা নাই।
তবে সেই বিখ্যাত এজেন্ট বলে গিয়েছেন, আপনি যদি একটানা ৪-৫ ঘন্টা ডাউনলোড করেন তাহলে ১-২ সেকেন্ড এর জন্য লাইন ডিসকানেক্ট হয়ে আবার রিকানেক্ট হবে। সেইটা তো কোনো প্রবলেম না। এক আইডিএম আছে, তাছাড়া টরেন্ট এর জন্য এইটা কোনো সমস্যা না। তো শুরু হইল আমার ডাউনলোড। তো পরীক্ষা চলেতেছে বইলা বেশী ডাউনলোড করা হইল না প্রথম মাস।
তবে আমি মোটামুটি খুশি। এর মাঝে ২ বার আমাকে মেইল করে জানানো হলো যে ইন্টারনেট একদিনের জন্য সমস্যা করতে পারে। আমি ত ভাবলাম কেডা কইছে এর কাস্টমার কেয়ার খারাপ। আহা কি সুখ, কি সুখ।
কিন্তু পৃথিবীর অমোঘ নিয়ম অনুযায়ী সুখ দীর্ঘস্থায়ী হলো না।
হঠাৎ নেট কানেকশন ডিসকানেক্ট করলো। কি প্রবলেম জানার জন্য ২-৩ দিন ঘুরানোর পর তারা জানালো যে আমাকে বিল দিতে হবে। তো দিলাম। পরীক্ষার মাঝে কিছুদিনর জন্য বন্ধ ছিল। সেই বন্ধে আমি শুরু করলাম ডাউনলোড।
৪-৫ দিন পর দেখি নেট স্লো। আমি ভাবলাম নেটওয়ার্কে কোন সমস্যা। তাই কিছু মনে করলাম না। কিন্তু দেখি কোনো ভাবেই স্পিড ঠিক হয় না। পরে তারা জানলাম ফেয়ার ইউজেশ পলিসির বাঁশ।
আমার তো মাথায় হাত। এখন কি হইবো। তাগোরে কইলাম আমি যখন নেট নিছি তখন তো এই পলিসি ছিল না। তারা বলে এখন থেকে সবাই এই নিয়মের ভিতর পড়বে। প্রায় ২২০০ টাকা দিয়া মডেম কিনলাম মাত্র একমাস হইলো।
এখনই এই অবস্থা।
যাই হোক আমি তাদের এই পলিসি সর্ম্পকে জানার জন্য একটা মেইল সেন্ড করার প্লান নেই। সেই সাথে একটা ট্রেপও তৈরি করি। আমার এক ফ্রেন্ডকে বললাম তুই মেইল সেন্ড কর যে, আমি তোমাদের নেট সর্ম্পকে আগ্রহী। এবং ফেয়ার ইউজেশ পলিসি সর্ম্পকেও জানতে চাইতেছ।
আমিও রাতে মেইল সেন্ড করলাম, সেও একই সময়ে রাতে সেন্ড করলো। ফলাফল হইলঃ তাকে পরেরদিন সকালেই ফোন কইরা নেট কানেকশন দেওয়ার জন্য এজেন্ট আসতে চাইতেছে। আর আমাকে ৫ দিন পর মেইলে এর রিপ্লাই দিছে। তখন বুঝলাম সিংহ কখন মিউ মিউ করে।
শেষ কথাঃ সিংহকে বিড়ালের ডাক শেখানোর জন্য তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।