আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামীলীগের উন্নয়নের বিলবোর্ড তত্ব ও শুভংকরের ফাঁকি



প্রথমে আসি উড়াল সেতুগুলোর ব্যাপারে। আপনারা জানেন দেশের প্রথম উড়ালসেতু হিসেবে খিলগাঁও ফ্লাইওভার চালু হয় ২০০৫ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের অপরাপর ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয়। আর ঢাকা শহরের কোথায় কোথায় উড়াল সেতু দরকার সেই পরিকল্পনাও নেয়া হয় গত সরকারের আমলে। অথচ লীগ এই সরকারের আমলে হওয়া সব উড়াল সেতুর কৃতিত্ব নিজেরা দাবী করছে।

যেন অন্য সরকার থাকলে এ কাজগুলো হতো না। ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধিও নাকি এই সরকারের সফলতা। দেশে বিপুল পরিমান ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত রেখে ভারতে তা রপ্তানি করছে এই সরকার। দেশের মানুষ চাহিদামত নেটের সংযোগ নিতে পারছে না বেশি দামের কারণে অথচ এই সরকার বলছে নেটের গ্রাহক বৃদ্ধি তাদের সফলতা। আমি তো বলব অন্য কোন সরকার থাকলে নেটের গ্রাহকের পরিমান আরো বাড়ত।

এবং আরো সুলভ মূল্য পেত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে এত বেশী কেন ? কারণ দেশে নতুন সকল ধরনের শিল্প কারখানা স্থাপন বন্ধ আছে। এ কারণে বড় অংকের আমদানী দাবী পূরণ করতে হচ্ছে না দেশকে। আর শিল্প কারখানা স্থাপন বন্ধ রেখে মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো একমাত্র আহম্মকেরই কাজ। কারণ এই অবস্থা দেশের অর্থনীতির জন্য মংগলজনক নয় ক্ষতিকর।

ফরেন রেমিটেন্সের পরিমান বাড়াতে সরকারের অবদান কতটুকু ? লিবিয়ায় সংকটকালীন সময়ে দেশের হাজার হাজার প্রবাসীকে ফিরিয়ে আনতে সরকার কতটুকু আন্তরিক ছিল। ভূমধ্যসাগরে না খেয়ে বাংলাদেশীর মৃত্যুর খবরও আমরা পড়েছি। সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশীদের আকামা পরিবর্তনজনিত সমস্যার কথাও আমরা জেনেছি। এত এত সমস্যার পরও দেশের মানুষে দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছে। গণমানুষের এই কৃতিত্ব ছিনতাই করে সরকার আসলে কী চায় ? ফরেন রেমিটেন্সের কারণে বাংলাদেশে আরো কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে।

সেগুলো হল-প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বৈদিশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি। অথচ এই সরকার জনগণের এইসব কৃতিত্বকে নিজেদের বলে প্রচার করে আত্মতুষ্টি পেতে চায়। দারিদ্র্যের হার কমা আর স্বাক্ষরতার হার বাড়ার কৃতিত্বও দাবী করছে সরকার। কী হাস্যকর দাবী তাদের! এগুলো তো বহু আগে থেকেই নেয়া কর্মসূচীর অংশ। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হল, দারিদ্র্য বিমোচনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, যিনি এ কারণে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী তাকে এবং তার প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার মিশনে নেমেছে এই সরকার।

তারপরও তারা দারিদ্র্য বিমোচনের কৃতিত্ব নিতে চায়! সরকারের আরেকটা দাবী হল বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি। এবার দেখি বিনিয়োগ বাড়ছে কোন কোন খাতে। বাড়ছে টেলিযোগাযোগ এবং আবাসন খাতে। আপনারাই বলুন নতুন মোবাইল কোম্পানীরে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়া এবং আবাসন খাতে ইন্ডিয়ার সাহারা কোম্পানীকে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়া সরকার কি দেশের উপকার করছে না ক্ষতি করছে ? সরকারের আরেকটা হাস্যকর যুক্তি হল সমুদ্রসীমা জয়। আর এটা হল সবচেয়ে বড় শুভংকরের ফাঁকি।

কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যার যতটুকু প্রাপ্তি তাকে ততটুকুই প্রদান করা হয়েছে। এমন তো আর নয় যে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ বিশাল অংশ উদ্ধার করেছে। বরং তারা বলছে ১৯৭৪ সালের সমুদ্রসীমা থেকে বর্তমান রায়ের কারণে বাংলাদেশকে বেশ কিছু অংশ মিয়ানমারকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশকে বরং কমই দেয়া হয়েছে। জেলেদেরকে খাদ্য সহায়তা প্রদানও নাকি তাদের একখান কৃতিত্ব।

অথচ এই প্রকল্পের উদ্বোধনই করেছিল গত সরকার। ঝাটকা ধরে ফেলার কারণে যখন ইলিশ হয়ে উঠেছিল সোনার পাথর বাটি, তখন খাদ্য প্রকল্প চালু করে ইলিশের সোনালী দিন ফিরিয়ে এনেছিল গত সরকারই। হজ্জ পালন গত আমলের চেয়ে এই আমলে বেশি লোক করেছে। এটাও তাদের সফলতার একটি! অথচ সৌদি সরকার প্রতি বছর প্রতি দেশের জন্য একটা কোটা করে দেয়। এর বেশি লোক হ্জ্ব করতে পারে না।

আরো বড় কথা হল, বেশি লোক যদি হজ্ব করেই সেখানে সরকারের অবদান কোথায়? এটাতো জনগণের কৃতিত্ব! এখানেও জনগণের কৃতিত্ব ছিনতাই করে ধার্মিক সাজার চেষ্টা !!! রপ্তানী আয় বৃদ্ধিও এ সরকারের অন্যতম কৃতিত্ব হিসেবে দাবী করা হয়েছে। এখানে সরকারের আবদান কোথায়? সব রপ্তানী কি সরকার করেছে ? বরং গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে, নতুন বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে সরকার আরো বেশী রপ্তানী আয় থেকে দেশকে বঞ্চিত করেছে। ছিহ্ দেশের মানুষের সাথে এত প্রতারণা !! জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির একটা হাস্যকর পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। যেখানে দেখানো হয়েছে ২০০৬ সালে ১৩৬% বৃদ্ধি পেয়েছিল আর ২০১৩ সালে ৩৮%। আপনারা জানেন, জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি আন্তর্জাতিক অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল।

বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়লে এদেশেও বাড়াতে বাধ্য হয়। আর এই সরকার এক বছরে তিনবারও জ্বালানী তেলের দাম বাড়িয়েছিল সেটাও আপনারা জানেন। এখানে আমার বক্তব্য হল, কৃতিত্বটা সরকারের নয়। আন্তর্জাতিক অর্থনীতির গতি-প্রকৃতিই কেবল এই কৃতিত্ব নিতে পারে। দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা এই আমলে বেড়েছে।

আর বিশেষজ্ঞগণ বলছেন এই খাতেই সবচেয়ে বেশি হরিলুট হয়েছে। কুইক রেন্টালের নামে কুইক দুর্ণীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্ণীতি হয়েছে এই খাতে। আর এত দুর্ণীতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ঠিক কিন্তু এর বিনিময়ে দেশের কী পরিমান সম্পদ দুর্নীতিবাজদের পকেটে গেছে সে হিসাব কিন্তু তারা দেয়নি। হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য সেবার পরিমান বৃদ্ধিও তাদের কৃতিত্ব হিসেবে দাবী করছে তারা। অথচ এগুলো হলো চলমান প্রক্রিয়া যা যে কোন সরকার এলেও চলতে থাকবে।

এমনি আরো অনেক ভূয়া কৃতিত্ব দাবী করে এই সরকার বলছে তাদেরকে যেন আবার ক্ষমতায় আনা হয়। তাদের এই সব মামাবাড়ির আবদার দেখে দেখে আমার শুধুই হাসি পায়। মানুষকে কি তারা আসলেই মফিজ পাইছে নাকি !! এত গেল তাদের কৃতিত্বের দাবী করা ক্ষেত্র গুলো। কিন্তু যেই ক্ষেত্রে তারা কৃতিত্ব দাবী করে নাই সেই ক্ষেত্রগুলার কী হবে? দেশে কি আর কোন ক্ষেত্র নাই। তাইলে বুঝেন এইবার সেই সব ক্ষেত্রে তারা কত ব্যর্থ ! আর পদ্মা, হলমার্ক, সাগর-রুনী, গণহত্যাসহ আরো অনেক বিষয় অপ্রাসংগিক বলে এখানে বললাম না।

এবার আপনারাই বলেন, উন্নয়নের বিলবোর্ড প্রচারণা কি আসলে সরকারের সফলতার কথা বলে নাকি ব্যর্থতাগুলো চোখে আঙগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.