আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবাদপত্র ও সাংবাদিক যেখানে অসহায়

আধারে দেখা বৃত্তান্ত আলোয় প্রকাশ

‘মাথায় কাফনের কাপড় বেধে আন্দোলনে করে যাও, দেখো কোন ফল পাও কিনা?’ এক সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে এভাবে কথাগুলো বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। রবীন্দ্র-উত্তর যুগের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার সেলিম আল দীন এ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের ‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে মুক্ত চিন্তা নিয়ে প্রগতিশীল জ্ঞানের চর্চায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রগণ্য। কিন্তু মুক্তচিন্তা ও প্রগতিশীল জ্ঞান চর্চার এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছরে বিভিন্ন সময়ে ১৫ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র এক বছরে এ সংখ্যক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা নিঃসন্দেহে দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

আবার শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনের কতিপয় কর্মীর হাতেই এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আর এর বিচারের কথা বলতে গেলে একজন শিক্ষকের কথা উল্লেখ করলেই আসল কথা বেরিয়ে পড়বে, ‘যারা ক্ষমতায় থাকে তাদেরকে আসলে অনেক কিছুই থেকে রেহাই দিতে আমরা বাধ্য’। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের প্রতি বাধ্যগত আচরণের ফলেই আজ পর্যন্ত সাংবাদিক নির্যাতনকারী কথিত রাজনৈতিক কর্মীকে বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। এখানাকার সাংবাদিকদের কঠোর আন্দোলন স্বত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রহসনমূলক বিচারের খেলা খেলেছেন অনেক। মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ চত্বরে একটি ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রেজাউল হক কৌশিকসহ ৫ সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হন।

ঘটনার বিচারের দাবিতে সাংবাদিকরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাংবাদিকদের ডেকে একান্তে বৈঠক করে বিচারের আশ্বাস দিয়ে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে। যার প্রতিবেদন আজও প্রকাশিত হয়নি। ঠিক ওই মাসেই কালের কণ্ঠের জাবি প্রতিনিধি ইমনসহ আরো ৪ সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে শামীম নামের এক ছাত্রলীগ ক্যাডার। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত বিচারে আশ্বাস দিয়ে নিরাশ করেননি।

ওই ক্যাডারকে জুনের গ্রীষ্মকালীন বন্ধ উপলক্ষে একমাসের জন্য বহিষ্কার করেন। যে বহিস্কার সম্পর্কে ওই ক্যাডার পরবর্তীতে বলেন, ‘গ্রীষ্মকালে সবাই এক নোটিশে ছুটি পায়, ইচ্ছা করলে কেউ বাড়িতে নাও যেতে পারে। কিন্তু ভিসি আমাকে স্পেশাল ছুটির নোটিশ দিয়ে একমাসের জন্য বাড়িতে আম-কাঠাল খেতে পাঠায়’। এর আগে জানুয়ারি মাসে দৈনিক দিনকালের প্রতিনিধি সাজ্জাদ পারভেজকে বাস থেকে নামিয়ে লাঠি দিয়ে মারধর করে মীর মশাররফ হোসেন হলে আটক করে রাখে হিরোইনসেবী কয়েক ছাত্রলীগ কর্মী। দিনকাল একটি দলীয় পত্রিকা।

সুতরাং বিরোধি দলীয় কোন ব্যক্তির জন্য ছাত্রলীগের কাউকে বিচার করা আওয়ামী সরকারের আমলে আমাদের প্রশাসন করতে পারেনা এমন অজুহাতে সে ঘটনার বিচার করা হয়নি। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতা-২০১০ । এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি পলাশ মাহমুদ(ইনকিলাব) সাধারণ সম্পাদক সাইদ জুনায়েদসহ(বাসস) ৫ সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

তারাই অপরাধীদের ধরে গাড়িতে করে উপাচার্যের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে সাংবাদিকদের সাথে মিটিংএ বসেন উপাচার্যসহ প্রশাসনের ব্যক্তিরা। লিখিত অভিযোগ দিলে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়ে উপাচার্য মিটিং শেষ করেন। কিন্তু অভিযোগ দেয়ার সাথে সাথে বাতাস উল্টো দিকে মোড় নেয়। উপাচার্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বলতে থাকেন সমিতির সভাপতি-সেক্রটারী থাকতে চাইলে চুপ থাকো।

উপাচার্যের এমন আচরণে বিস্মিত হওয়ার কোন কারণও নেই। কেননা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তার ভেতরে নেই। সরকারের উচ্চ পদস্থ একজন উপদেষ্টার মাধ্যমে ভিসি প্যানেল নির্বাচন ছাড়াই অগনতান্ত্রিক উপায়ে তিনি ওই চেয়ারে বসে আছেন। ক্ষমতায় বসার সাথে সাথে দেড় শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সমর্থন বাড়িয়েছেন। আর ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বহিস্কার করে, জেলে পাঠিয়ে, হল থেকে বিতাড়ন করে নিজ এলাকার কয়েকজনকে দিয়ে নব্য ছাত্রলীগ গঠন করে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছেন।

যদিও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পরিষদ থেকে এখানে সব ধরনের সাংগাঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। তারপরও ভিসি তার অনুগতদের দিয়ে স্বঘোষিত কমিটি ও নেতা তৈরি করে ছাত্রলীগের ‘আইওয়াশ’ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। বাধা দেওয়ার মত সব চ্যানেল বন্ধ শুধু সাংবাদিক ছাড়া। সাংবাদিক সমিতির নির্বাচনে নিজের কিছু লোককে পদে বসিয়ে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি হতাশ হন। যার ফলে স্বঅঞ্চলের লোকজন দিয়ে গঠিত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দিয়ে নির্যাতন চালিয়ে সংবাপত্রের মুখ বন্ধ রাখতে চান।

তবে এবারের সাংবাদিক নির্যাতনের মূল কারণ ছিল সরাসরি টাকা আত্মসাৎ করা। ড. ওয়াজেদ মিয়া গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের জন্য পছন্দের ঠিকাদারকে কাজের সুযোগ দিলে ২০ লাখ টাকা কমিশন পাওয়া যাবে। এ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে উপাচার্য টালমাটাল হয়ে সাংবাদিক নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছেন। আর কোন সংবাদ যদি প্রশাসনের বিপক্ষে যায় তাহলে ফোন করে ওই সাংবাদিককে গালিগালাজ করেও যখন তার গায়ের ঝাল মেটেনা তখন সব ধরনের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কুৎসা গেয়ে কিছুটা গা পাতলা করেন। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা অনেক সচেতন বলতে হয়।

কারণ তারা সমিতির নির্বাচনের সময় উপাচার্যের স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত যেমন মেনে নেয়নি, তেমনি উপাচার্যের গঠিত পুলিশ(ছাত্রলীগ) বাহিনীর অত্যাচারও সাংবাদিকরা মুখ বুঝে সহ্য করেনি। সব সময় আন্দোলন চলেছে, সম্প্রতিক ঘটনায়ও চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশে একটি স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদপত্রের সৈনিকদের কেননা একটু নিরাপত্তার জন্য আন্দোলন করতে হবে? সত্য প্রকাশ করে বলেই সাংবাদিক শত্র“, আর শত্র“কে দমিয়ে রাখতে রাখালের মত লাঠি হাতে নেয়া কি কোন শিক্ষিত মানুষের কাজ? (লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) ংঁংযরষহরংযরঃয@মসধরষ.পড়স

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.