রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন
রাজনীতি, রাজনীতিবিদ, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, হত্যা, হামলা, মামলা ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে আমাদের প্রতিটি দিনের অবসর কাটে তর্ক-বিতর্কে। অনেকটা তার্কিক হয়ে গিয়েছি আমরা। যেহেতু প্রতিটি ব্যক্তিরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, তাই মত প্রকাশ করতে অসুবিধা কি? সেটা সমাজের জন্য উপকারী হোক কিংবা অপকারী! এখানে বলে রাখা ভাল, উপকার আর অপকার নিয়েও এখানে বিতর্ক চালু হতে পারে। যেমন কোন মত উপকারী আর কোন মত অপকারী, তা কিভাবে, কে নির্ধারণ করবে? একজন যেটাকে উপকারী মনে করতে পারে, অপরজন তাকে অপকারও ভাবতে পারে। তাই মতামত প্রদানকে অনুৎসাহিত করা উচিত নয়।
অন্ততঃ গনতান্ত্রিক সমাজে। গণতন্ত্র! যেখানে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়ে প্রতিটি নাগরিককে প্রতিটি পদক্ষেপে। কিন্তু সেই দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক কি এসব তর্ক-বিতর্ক?
যে প্রসঙ্গে লিখতে বসা। একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি হলো- দল, মত, ব্যক্তি নির্বিশেষে রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক-অর্থনৈতিক বিষয়ে একটি জাতীয় ঐক্যমত থাকা। যা বিতর্কের মাধ্যমে তৈরী হতে পারে, কিন্তু সেটাকে বিতর্কিত করা উচিত নয়।
আমাদের হতাশ হতে হয় এখানেই। আমাদের কোন বিষয়েই জাতীয় ঐক্যমত নেই। প্রতিটি বিষয়ই এখানে বিতর্কিত। অন্ততঃ জনগণ বিভক্ত।
জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা অন্যতম।
কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তো আমাদের আছে অসীম ক্ষোভ আর অবজ্ঞা। তারা যে দেশের জন্য কোন কাজ করেন না, এমন একটা ধারণা সর্বক্ষেত্রে, যা আমাদের দেশকে রাজনীতিবিদ শূণ্য করেছে। আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন দখল করেছে প্রাক্তন আমলা, কামলা, অবসরপ্রাপ্ত সেনানায়ক আর মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা। যেহেতু রাজনীতি ছাড়া দেশ অর্থহীন, সেখানে রাজনীতি সম্পর্কে যথাসম্ভব দায়িত্বশীল আলোচনা-সমালোচনা হওয়া উচিত, কারন এরাই আমাদের দেশকে পরিচালনা করবেন, এদের ওপরই আমাদের অগ্রগতি নির্ভরশীল।
রাজনীতির বাইরে থেকে আমরা যারা রাজনীতির শুদ্ধতা কামনা করি, তারা কি করছি, তারই একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে এতো কথা।
আজকের দৈনিক সমকালে একটা সংবাদ আছে, পুলিশে কতজন কোন দলের আছে, তারা কে কে? নাম উল্লেখসহ সংবাদটি পরিবেশন করা হয়েছে। বলাবাহুল্য, আমাদের প্রশাসনে দলতন্ত্র কায়েম হয়েছে অনেক আগেই। সেখানে গোয়েন্দা সংস্থার রির্পোটের বরাদ দিয়ে যে নামসহ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, তা জনমনে কি প্রভাব ফেলবে? যে দেশের জনগণ দলীয় ভাগে বিভক্ত, সেখানে এভাবে নামপরিচয় প্রকাশ করার মাধ্যমে প্রশাসনকে জনগনের সামনে বিভক্তিকর অবস্থায় ফেলবে। আওয়ামীলীগের কর্মী সরাসরি বিএনপি সমর্থক পুলিশ অফিসারকে হুমকি দিয়ে নিজের আখের গোছানোর চেষ্টা করবে, যা আমরা কোনভাবেই কামনা করতে পারি না। প্রশাসন দলীয়করন হলেও দেশের ব্যাপক জনগণ জানে না, কোন অফিসার কোন দলের।
এটা সংবাদপত্রে প্রকাশ হওয়ার ফলে বিতর্কের পাশাপাশি সাধারন জনগণও জানতে পারলেন। বিশেষতঃ আপনি আমি তা খুঁজে না দেখলেও যারা সর্বদাই সরকার ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের উন্নয়ন কামনা করতে উৎসাহী, তারা এসব নাম টুকে রাখবেন এবং প্রয়োজন মতো তা ব্যবহার করবেন। এভাবে প্রশাসনে একটা অস্থিরতা তৈরী হবে, যার ফলে দেশের সার্বিক ক্ষতি সাধিত হবে। প্রথম প্রশ্ন, গোয়েন্দা সংস্থার এই রির্পোট কিভাবে সাংবাদিকের হাতে এলো? এটা কি দূর্নীতি নয়? দ্বিতীয় প্রশ্ন, গোয়েন্দা সংস্থার যেকোন রির্পোট হাতে এলেই কি তা সাংবাদিক হিসাবে প্রকাশ করা উচিত? এটাকে কি দায়িত্বশীলতা বলে? তৃতীয় প্রশ্ন, এই খবরটা ব্যাপক জনগণের কি জানার খুব প্রয়োজন ছিল?
সংবাদপত্রের কাজ সংবাদ পরিবেশন করা। কিন্তু কোনটি সংবাদ আর কোনটি অপসংবাদ, তা মনেহয় বিবেচনা করা প্রয়োজন।
ঋণাত্বক সংবাদ, তথ্য, উপাত্ত পরিবেশন করার মাধ্যমে এভাবেই আমরা দেশের রাজনীতি, সমাজ, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অরাজকতা তৈরী করতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছি, আর সবদোষ গিয়ে পড়ছে নন্দঘোষের ওপর। দায়িত্বশীল সংবাদিকতা মানে কি ক্ষতিকর হলেও তা প্রকাশ করা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।