যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.
অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠল আজ কবির। রাত ৩ টা পর্যন্ত তার চোখে ঘুম আসেনি। ইদানিং এটা ঘন ঘন হচ্ছে। কেন যে এরকম হচ্ছে সেটা কবির নিজেও বুঝতে পারছে না। এর মধ্যেই শব্দ করে মোবাইলটা বেজে উঠল তার।
নম্বরটা অচেনা লাগছে। কিন্তু তারপরও অনিচ্ছা সত্যেও ফোনটা ধরতে হল। প্রথমবার ধরার পর ওপাশ থেকে কোন কথা শোনা গেল না। বেশ কয়েকবার হেলো হেলো বলে রেখে দিল কবির। একটু যেন অবাক হল কবির।
মোবাইলটা রেখে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাহিরে যাবার জন্য তৈরি হতে থাকল সে। এমন সময় আবার ফোনটা বেজে উঠল। মোবাইল স্ক্রীন এ আমার সেই অপরিচিত নম্বরটা ভেসে উঠল। ফোনটা রিসিভ করল কবির। ওপাশ থেকে কোন কথা শোনা না যাওয়াতে বেশ বিরক্ত হল সে।
কিছু বলতে যাবে এমন সময় ওপাশ থেকে একটা ভরাট কন্ঠ হেলো বলে ঊঠলো। ওপাশ থেকে কোন পরিচয় না দিয়েই কবির এর সাথে আলাপ চালাতে লাগল। এটা অনেকটা অপ্রস্তুত করে তুলল যেন কবির কে। সে অনেক চেষ্টা করেও বের করতে পারল না যে কে এই ব্যাক্তি। কবির এর পারিবারিক যত ব্যাপার আছে সব লোকটা জানে।
একে একে তা বলে গেল কবির কে। আর কবির এক কথায় আশ্চর্য হয়ে গেলো।
অপরিচিত লোকটাই শেষ এ এসে জানালো কবির এর প্রেমিকার কথা যার সাথে কবির এর ৩ বছর এর সম্পর্ক। তাদের সম্পর্ক এর কথা বাসার সবাই জানে। অনেকটা মেনেও নিয়েছে তাদের ২ জনের সম্পর্ককে।
বছর খানেক হল কবির তার প্রেমিকা নিশাত এর সাথে সম্পর্কটা মেনে নিতে পারছে না। কারণ মেয়েটা কিভাবে জানি নেশাগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও নিশাত কে সে এই পথ থেকে বের করে আনতে পারে নি। পরে এক রকম যোগাযোগ বন্ধই করে দিয়েছিল কবির। নিশাত এর পরিবার এসব ব্যপার খুব ভাল মতই জানে।
সব কিছু জেনেও তারা নিশাত কে সামলাতে পারছে না। তাদের কোন কয়াথাই নিশাত এখন শোনে না। কেমন জানি বেপরোয়া হয়ে গিয়েছে সে। কথায় কথায় রাগারাগি করতে থাকে আর জিনিস পত্র ভাংতে থাকে।
কবির এর হুশ হল অপরিচিত লোকটার ডাকে।
সে জানালো যে বছর ২ আগে থেকে তাদের ২ জনের ব্যপারে লোকটা খুব ভাল জানে। এমন কি তারা যে বাসায় কিংবা হোটেল এ শারিরীক মেলামেশা করেছে তার ভিডিও নাকি তার কাছে আছে। এটা শুনে যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলো না সে। বলে কি লোকটা!! কবির নিজেও ভেবে পাচ্ছে না কি করে এটা সম্ভব!! লোকটার উদ্দেশ্য কি এটা কবির জানতে চাইল তার কাছে। সে জানালো যে মান সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাইলে তার একটা কাজ কবিরকে করে দিতে হবে।
কবির জানতে চাইল কাজ টা কি? তাকে ১০ লাখ টাকা দিলে সে কবিরকে তাদের সব ছবি আর ভিডিও দিয়ে দিবে। কবির আকাশ থেকে পড়ল যেন! সে যেন অসহায় বোধ করতে থাকল। এই সময় নিশাত এর সাহায্য খুব দরকার ছিল কিন্তু সেটা এখন আর হচ্ছে না।
লোকটাকে আধা ঘন্টা পর ফোন করতে বলল কবির। কবির অনেকটা হতাশ হয়ে গেল যেন।
নিজেকে সে হাড়িয়ে ফেলতে লাগল। কেন এমন হল সে কিছুই বুঝতে পারছে না। এদিকে কবির এর মা একবার রুম এ এসে দেখে গেলেন সে কি করছে। এই শীতেও কবির ঘামছে দর দর করে। আর তা দেখে খুবই অবাক হয়ে গেলেন মা।
সে কিছু বলতে যাবে এমন সময় তাঁকে জড়িয়ে ধরে কবির কানতে লাগল অবিরত। কবির এর মা তাঁর ছেলের এমন আচরণ দেখে ছেলেকে শান্তনা দিতে লাগল কিন্তু কবির এর কান্না থামতে চাইল না।
এরই মধ্যে কবির এর ফোনটা আবার বেজে উঠল। কবির তারাতারি ফোনটা রিসিভ করল। ওপাশ থেকে সেই অপরিচিত কন্ঠস্বর আবারও শুনতে পেল সে।
কবির কিছু বলার আগেই সেই লোক তাকে জানালো পি সি ওপেন করে একটা সাইট দেখতে। লোকটি আরো জানালো যে সে বুঝতে পারছিল কবির তাকে টাকা দেবে না। তাই সে এটা করেছে। কবির কল বন্ধ করে পি সি ছেড়ে যেই ওয়েবসাইট এর নাম তার কাছে দেয়া হয়েছে সেটা ওপেন করে তার আর নিশাত এর ৩ বছর এর যত ছবি আছে, ভিডিও আছে সব একে একে দেখল। কবির যেন কিছু বলার ভাষা হাড়িয়ে ফেলল।
রাগ আর ক্ষোভ এ কবির সেই নম্বর এ ফোন করতে লাগল বার বার। কিন্তু মোবাইল বন্ধ পেলো সে। মান সম্মান যা ছিল তা মাটিতে মিশে গেল কবির এর। নিজেকে ধরে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছিল তার। বিকেল থেকেই কবির এর মোবাইল এ একটার পর একটা ফোন আসতে লাগল এই ব্যপার এ।
কারণ কবির এর এসব ছবি এখন ইন্টারনেট এর মাধ্যমে সব ছড়িয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটা জায়গায়। আর এরই মধ্যে তার সব বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী সবাই জেনে গিয়েছে। সবার প্রশ্নবানে যেন জর্জরিত হতে থাকল কবির। নিজেকে বড় অপরাধী মনে হতে লাগল তার। রাতে শুয়ে সে কি করবে সব ডিসিশন নিয়ে নিল।
সকাল বেলা বাজারে যেতে হবে আর তাই কবির কে ঘুম থেকে জাগাতে তার মা রুম এ গেলেন। কিন্তু রুম এ যেয়ে কবির কে সিলিং ফান এর সাথে ফাঁসি দেয়া অবস্থায় দেখতে পেলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।