আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিথুয়ানিয়ার লোককথা-৫

আকাশ ছুঁব...
লিথুয়ানিয়ার লোককথা-৫ লিথুয়ানিয়ার রূপকথা বোকা ছেলের রাজা হওয়ার গল্প রূপান্তর: অদ্বিতীয়া সিমু অনেক আগে বনে বাস করত এক বুড়ো লোক। তার ছিল তিন ছেলে। বড় দুই ছেলে ছিল বড়ই বুদ্ধিমান। আর ছোট ছেলেটি ছিল বোকা! তাকে সবাই বলত বোকা। সে যা-ই বলত, যা-ই করত, সবাই তাতে হাসত।

তারা যেন ওকে পাগল আর বোকা ঠাওরাতেই মজা পেত। বড় ভাইরাতো তাকে অবহেলা করেই মজা পেত। তারা যে কাপড় পরে পুরোনো হত তাই তাকে পড়তে দিত, যে খাবার খেতে তারা অপছন্দ করতো তাই তাকে খেতে দিত, এমনকি না খেলে জোর করে খাওয়াত। আর যা সে চাইত, কনই তাকে দিত না। বাড়ির যে কাজটা করতে তারা অপছন্দ করত, তাই করতে তাকে লাগিয়ে দিত।

কাজ করার সময় যখন এল, দুই ভাই পছন্দমত কাজ বেছে নিয়ে বোকাকে লাগিয়ে দিল শূকর চড়ানোর কাজে। কি আর করবে বোকা, সেতো বড়দের কথা কখনও অমান্য করে না। সে তাতেই লাগলো। শূকর চড়াতে দিনরাত রাইরে ঘুরতে হয়। যেখানে ঘাস আছে সেখানেই পাল নিয়ে যেতে হয়।

বড় কষ্টের কাজ। এক সকালে ছোটছেলে শূকরের পাল নিয়ে যাত্রা করল। সে চলছেতো চলছেই। পথে যেখানে ঘাস পাওয়া যাচ্ছে সেখানে থামছে। এরমধ্যে সন্ধ্যা নেমে এল।

ছেলে এক গাছে চড়ে রাত কাটালো। পরদিন ভোর হতেই পাল নিয়ে আবার যাত্রা শুরু। আবার যেতে যেতে দিন চলে যাওয়া। আবার গাছ খুঁজে গাছের উপর থাকা। রাতে জন্তুর গর্জন, আর শুঁয়ে শুঁয়ে ভোরের প্রতীা।

এভাবে কেটে গেল তৃতীয় দিনও। এরপর চতুর্থদিন ঘটল অবাক করা ঘটনা! ঘুম থেকে জেগে উঠল মোরগের ডাকে। ধড়মড়িয়ে উঠে শূকরের পাল রেখেই ছুটল ছেলে। জীবনের প্রথম আজ ছেলে দেখল শহর। দেখল এত কাছ থেকে এত লোক।

কিন্তু একি! সবার চোখ পানি! প্রকাশ্যেই কাঁদছে লোকজন, সবার পরনে শোকের কালো পোশাক। কি হয়েছে? বোকা ছেলে প্রশ্ন করল এক পথিককে। -তুমি কোথা থেকে এসেছ হে! জাননা কাল রাজার মেয়েকে ড্রাগনের হাতে তুলে দেবার কথা? এক এক করে অনেক কুমারী গেছে ড্রাগনের পেটে। এবার রাজকুমারীর পালা। হয়েছে কি জান, রাজ্যে আক্রমণ করেছে এক ভয়াল ড্রাগন।

তাকে থামাতে রাজা প্রতিদিন তার ভোঁজের জন্য রাজ্য থেকে একটা করে কুমারী মেয়ে দেবার ওয়াদা করেছে। তবেই থেমেছে ড্রাগন। দিয়েও আসছিল প্রতিদিন। আর কুমারী মেয়ে বাকী নাই। তাই এবার এসেছে রাজকুমারীর পালা।

-কেন, কেউ কি ড্রাগনকে মারতে পারে না? -সবাই ড্রাগনকে ভয় পায়। খুবই হিংস্র জানোয়ার সেটা। জানো, রাজা ওয়াদা করেছে যে ড্রাগনটাকে মারতে পারবে, তার সংগেই রাজকুমারীর বিয়ে হবে। আর পাবে রাজত্ব। কিন্তু তবুও কেউ রাজি নয়।

সবাই ভয় পায় ড্রাগনকে। -ভাল, কিন্তু আমি পারব! চিৎকার করতে লাগল বোকা, “আমি ড্রাগন মারব। আমায় নিয়ে চল রাজার কাছে!” লোকজন বোকাকে পাগল ঠাওরালো। কেউ শুনে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। কেউবা দাঁড়িয়ে রইল তামাশা দেখবার জন্য।

রাজার কানেও খবর গেল। -কোথায় সিপাহী! নিয়ে এস যুবককে। শেষপর্যন্ত একজন সাহসী যুবকতো পাওয়া গেল। সিপাহীরা হাজির করল যুবককে রাজদরবোরে। রাজা আদেশ দিলেন অস্ত্রভাণ্ডারের সব অস্ত্র যুবকের সামনে হাজির করতে।

হাজির হল অস্ত্র- তীর, তলোয়ার, বন্দুক! কিন্তু একি যুবক হাতে তুলে নিল কুঠার! একি বলে পাগল ছেলে! - আমি জীবনে এসব হাজিরকৃত হাতিয়ারগুলোর মত অকেজো হাতিয়ার দেখিনি...! কিন্তু আমি জানি এ কুঠার কিভাবে ব্যবহার করতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে রাজা মেয়েকে বনে নিয়ে এল। লোহার শিকল পায়ে বেঁধে গাছে আটকে কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিল সবাই। শুধু রইল বোকা ছেলে। কুঠার নিয়ে বসে রইল ড্রাগন আসার অপোয়।

এত শীত! বোকা কিছু কাঠ জোগার করে আগুন জ্বালালো গরম হওয়ার জন্য। যেই আগুন জ্বালানো শেষ, ড্রাগন বাবাজীও হাজির। বড় চোয়াল হা করে প্রথমেই মুখে পুরল বোকাকে। যায় কোথায় বাবাজী! কুঠার দিয়ে দাঁতের গোড়ায় মারতে শুরু করল ছেলে। কাঠ কেটে সে বড় অভ্যস্ত।

যন্ত্রণায় ওয়াক করে ফেলতে চাইল তাকে ড্রাগন। মুখ থেকে বের করতেই ঘাড়ে চড়ে বসল বোকা। তারপর ঘাড়ের উপর কুঠারের ঠক্ ঠক্। রাজকুমারী অবাক হয়ে দেখল , কাৎরাচ্ছে ড্রাগন। যুবকের বিরতি নেই।

ড্রাগনের মাথা কেটেই ছাড়ল। তারপর কাটল রাজকুমারীর পায়ের বাঁধন। সন্ধ্যায় রাজা যখন কাঁদতে কাঁদতে দেখতে এল মেয়ের পরিনতি, দেখল মেয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে যুবকের কোলে মাথা রেখে। আন›েক্ষ জোয়ার বইল। মহাসম্মানে বোকা ছেলে রাজপ্রাসাদে ঠাঁই পেল।

এরপর এক শুভদিন দেখে বিয়ে হল রাজকুমারীর আর যুবকের। রাজকুমারী আর বোকা ছেলের সুখেই দিন কাটছে প্রাসাদে। কেটে গেছে বেশ সময়। ছেলের মন বাড়ির জন্য উতলা হয়ে উঠল। জানাল রাজকুমারীকে।

তারপর এক শুভণ দেখে তারা সোনায় মোড়ানো গাড়ি চড়ে রওয়ানা হলো গাঁয়ের উদ্দেশ্যে। বনের কাছে আসত্ইে ছেলে নেমে গেল গাড়ি থেকে। কি ব্যপার! ছেলে বউকে বলল, “তুম যাও, আমি আসছি। তুমি ঘুণারেও বুঝতে দিও না যে, তুমি আমার বউ। তুমি রাজকুমারীর পরিচয়েই মেহমান হবে আমার বাড়ির।

আর আমি যেভাবে বললাম সেভাবেই সব করবে। ” রাজকুমারীতো হেসে লুটিয়ে পড়ে। তবে সে রাজী হল। এরপর ঠিক সন্ধ্যের সময় পুরোনো পোশাকে বাড়ি হাজির হলো ছেলে। হাতে একটা লাঠি নিয়ে শূকরের পাল তাড়াতে তাড়াতে চলল খোয়াড়ের দিকে।

-চল্, হট্..হট্... বাবা আর বড় দুই ভাই ছুটে এল। -চুপ্, চুপ্ বোকা! ঘরে মেহমান হয়ে এসেছে রাজকুমারী চিল্লানো বন্ধ করো। বোকা ছেলে তার চেহারাটা আরও বোকা মতন করে আরও জোরে চিল্লাতে লাগলো। -দেখোনা , শুকরগুলো বনে থাকতে থাকতে কি বেয়ারা হয়ে গেছে! তাইতো ওদেরকে ডাকতে হচ্ছে...চল্, হট্... বাবা আর ভাইয়েরা কি করবে, মাথা নিচ ুকরে ঘরে চলে গেল। ছেলে খোয়াড় থেকে গিয়ে সোজা টেবিলে চলে গেল।

-মা, খাবার আন। বড্ড েিদ পেয়েছে... মাও বোকার চিল্লানো থামার জন্য জলদি খাবার নিয়ে এল। -শোন , ঘরে রাজকুমারী আছে। একটু আস্তে কথা বলো। বাবা এসে চেয়ার টেনে বসল।

- এতদিন কোথায় ছিলে? -যেতে যেতে এক শহরে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে সবাই আমাকে সম্মান দিয়ে রাজা বািনয়ে দিল। কি আর করব। রয়ে গেলাম... বলে আবার খেতে শুরু বরল ছেলে। বাবা মাথা নিচু করে রইল।

বোকা ছেলে তার, কি বলতে কি বলে! তার কথার কোন দাম আছে নাকি! এদিকে মা রাজকুমারীর জন্য রাতের খাবার তৈরী করেছে। কিন্তু কে রাজকুমারীকে খাবার খাওয়াবে! সবাই ভয় পাচ্ছে। বড় ছেলেকে শুধাল মা। সে রাজি নয়। মেঝ ছেলেরও একই উত্তর।

এগিয়ে গেল ছোট ছেলে। -আমিই দিব রাজকুমারীকে খাবার। আমি ওকে খুব ভালবাসি। ও আমার বউ হবে। মা মুখে কাপড় চাপা দিয়ে হাসল বোকা ছেলের কথা শুনে।

যাক্, তবুতো রাজকুমারীকে খাবার দিতে রাজি হয়েছে! বোকা ছেলে এবার রাজকুমারীর যে ঘরে আছে সে ঘরে ঢুকল খাবার নিয়ে। খাবারের বোলটা নিয়ে রাজকুমারীর কাছে গেল। টেবিলে এত জোরে আছাড় মেরে রাখল যে বোল ফেটে খাবার বাইরে ছিটকে পড়ল। -“গেল!গেল!” বলতে বলতে সে ছুটে ঘরের বাইরে চলে গেল। রাজকুমারীর হাসতে হাসতে তখন বেহাল অকস্থা।

মা দরজার ফাঁক দিয়ে সব দেখল। তাকে রান্নাঘরে ডেকে আচ্ছামত বকল, এই স্বভাবের জন্য। -মা, যে সারাদিন শূকর চড়িয়ে বেড়ায সে ভাল শিা কোথা থেকে পাবে? -তুমি যাই কর না কেন, তুমি পাল্টাবে না! এরপর এক বাটি স্যুপ নিয়ে বোকা আবার ঢুকল রাজকুমারীর ঘরে। এবার সামনে গিয়েই বাটি উল্টে দিল। রাজকুমারীর স্কার্ট গেল ভেসে।

ছেলে এক দৌঁড়ে ঘরের বাইরে চলে এল। রাজকুমারীর হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছে। -তোর লজ্জা পাওয়া উচিত। তুই কি লজ্জা পাবি, নিজেই একটা শূকর! দিলিতো রাজকুমারীর স্কার্ট নষ্ট করে! বোকা বোকা মুখ করে দাঁড়াল ছেলে। -সন্দেহ নেই।

ওর বোধহয় আরেকটা আছে... তারপর সে রাজকুমারীর জন্য নিয়ে এল এক বাটি শালগমের ঝোল। এনে রাখল রাজকুমারীর কোলের মধ্যে। -এখানে কিছু শালগম ...তোমার জন্র। রাজকুমারীর এসব দেখে হাসতে হাসতে মরণ দশা। এ্বার রাতে শুতে যাবার সময় হল।

একটা ঘরতো ছেড়ে দেয়া হয়েছে রাজকুমারীর জন্য। বোকা ছেলে থাকবে কোথায়! তার বিছানায় বড় এক ভাই শোবে। মা এবার উপায় বের করল। -তুই এক কাজ কর, খোয়াড়ের এক কোণ পরিষ্কার করে শুয়ে পড়গে। -রাজার জন্য খোয়াড় হতে পারে না! আমি রাজকুমারীর পাশেই শুয়ে পড়ব।

সবার চু চড়কগাছ! বলে কি বোকা, রাজকুমারীর ঘরে, রাজকুমারীর সাথে! -তুই সবসময় বোকাই রইবি। তুই কি বলছিস, তুই নিজে জানিস? -তুই একবার চেষ্টা করেই দেখনা! তোর কি যে হাল হবে.....! -রাজকুমারী দেবে বের করে,তারপর বুঝবে মজা! বাবা-মা আর বড় ভাইরা হো হো করে হাসতে লাগল। -দেখ কি হয়! ও আমার বউ। বোকা ছেলে ঢুকে গেল রাজকুমারীর ঘরে। ওরা অবাক হয়ে দেখল, রাজকুমারীর রাগের কোন আভাস নেই।

এদিকে রাজকুমারী স্বামীকে উষ্ণ অভিবাদন জানাল। আর সারাদিনের ঘটনা বলে হাসতে লাগল। সবাইতো ভয়ে অস্থির। সকালবেলা খুলল রাজকুমারীর ঘরের দরজা। দামী পোমাকে বের হয়ে এল বোকা ছেলে, আর সংগে রাজকুমারী।

এবার বিশ্বাস হল মা-বাবার, বিশ্বাস হল বড় ভাইদের। আর কোনদিন তাকে কেউ বোকা বলে ডাকেনি, ঠাট্টাও করেনি। শ্বশুড় ছেলেকে কথা মত রাজত্ব দিল। বোকা ছেলে এভাবেই হয়ে উঠল রাজা। হুম্, জানো, আমিও তাদের দেখতে গিয়েছিলাম।

তারা আমাকে অনেক গিফট্ দিয়েছিল। তোমরাও চাইলে যেতে পার। এখনো হয়ত তারা রাজত্ব করছে...। [সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা। ...আজ আমার বান্ধবী সঙ্গিতাকে মনে পড়ছে...।

যার কাছ থেকে প্রতি বড়দিনে পেতাম দাওয়াত....আর অনেক আনন্দিত স্মৃতি....। এ গল্পটা আজ তাকেই উৎসর্গ...। তুই ভাল থাকিস সঙ্গী...তোর বিয়ের নিমণ্ত্রণ পেরাম। ...]
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।