আকাশ ছুঁব...
লিথুয়ানিয়ার লোককথা-৪
মৃত্যুদেবী আর চিকিৎসকের গল্প
রূপান্তর: অদ্বিতীয়া সিমু
অনেক অনেক আগের গল্প। বাস করতো এক দরিদ্র পরিবার। নুন আনতে তাদের পান্তা ফুরায়। কিন্তু ইশ্বর বোধহয় দারিদ্রতা বোঝেন না। ঘর আলো করে দিয়ে দিলেন ফুটফুটে এক ছেলে।
তাদের মাথায় দারিদ্রতার বোঝা। “কি করবো আমরা? আমরা এতটাই গরীব, কি করে খরচ চালাবো? কি করে করবো ছেলের ব্যাপ্টিজমের জন্য পয়সা জোগার?” ছেলের বাবা মনেমনে ভেবে রাখলো কাল যাকে বের হয়ে প্রথম দেখবে তাকেই প্রস্তাব করবে ছেলের ধর্মপিতা হবার জন্য, আর মহিলাকে করবে ধর্মমা হবার জন্য।
সকাল হলো। ঘর থেকে বের হতেই এক লোকের সাথে দেখা।
-পথিক, আমি খুবই দরিদ্র।
তুমি কি আমার ছেলের ধর্মপিতা হতে রাজি আছ?
রাজি হয়ে গেল পথিক। এবার লোকটি চললো ধর্মমার খোঁজে। পথেই দেখা এক অপূর্ব রূপসী মহিলার সাথে। সাতপাঁচ না ভেবেই লোকটি তাকে প্রস্তাব করলো তার ছেলের ধর্মমা হবার জন্য। মহিলা সানন্দে রাজি।
যাক্, শেষপর্যন্ত ভালয় ভালয় ছেলের ব্যপ্টিজম শেষ হলো। বিদায় নিল ছেলের ধর্মপিতা।
এবার ছেলের ধর্মমার বিদায় নেবার পালা।
-জান, এই ছেলের ধর্মমা কে?
ছেলের বাবা-মাতো অবাক!
-আমরা কি করে জানবো আপনি কে!
-আমি মুত্যুদেবী।
ভয়ে সিঁটিয়ে এল ছেলের বাবা-মা।
-তোমরা ভয় পেয়োনা। আমি ওর ধর্মমা। ওর দায়িত্ব এখন থেকে আমার। ও বড় হয়ে অনেক বড় চিকিৎসক হবে। আর, হ্যাঁ.....মনে রাখবে ও বড় হয়ে চিকিৎসক হলে বলে দিও, “যদি মৃত্যুদেবীকে পায়ের কবাছে দেখে তবেই যেন ও চিকিৎসার অঙ্গীকার করে; আর যদি আমাকে দেখে রোগীর মাথার কাছে তবে কখনই যেন বাঁচানোর অঙ্গীকার না করে।
”
-ঠিক আছে দেবী।
এরপর ধীরে ধীরে কেটে গেছে কত সময়! ছেলে বড় হয়ে হয়েছে মস্ত ডাক্তার। মা-বাবা ছেলেকে জানিয়ে দিল তার ধর্মমার হুশিয়ারী। ছেলেও অরে অরে মনে রেখেছে ধর্মমার কথা। মেনেও চলছে।
তার নামডাক বেড়েই চলেছে।
আর এদিকে হয়েছে আরেক ঘটনা। রাজকুমারী অসুস্থ। রাজবৈদ্যরা ফেল করলো। কত চিকিৎসক ফিরে গেছে! এর মধ্যে রাজার কানে গেল এই যুবক চিৎিসকের কথা।
ছুটলো পেয়াদা। হাজির করা হলো চিকিৎসককে। রাজা বললেন, “তুমি শুধু আমার মেয়েকে সুস্থ করে দাও। আমি তোমাকে সব দিব। ” ছেলের মনে লোভের নেশা জাঁকিয়ে বসলো।
রাজকুমারীর ঘরে ঢুকলো ছেলে। একি, ধর্মমা রাজকন্যার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে! ছেলে তোয়াক্কা করলো না । অঙ্গীকার করে বসলো সুস্থ করে তোলার। মৃত্যুদেবী কিছুটা রাগান্বিত হলেন। তবুও ছেলের প্রথম ভুল বলে মা করে কুমারীর পায়ের কাছে চলে গেলেন।
আর ছেলেকে সাবধান করে দিলেন আর যেন এমন ভুল না করে। ছেলে হাতজোড় করে মাফ চাইলো ধর্মমার কাছে। সুস্থ হয়ে উঠলো রাজকন্যা। রাজা অনেক উপঢৌকনসহ বিদায় দিলেন চিকিৎসককে।
এর কিছুদিনপর আবার ছেলের ডাক পড়লো রাজার বাড়ি।
কি হয়েছে? আবারও রাজকুমারী শয্যাশায়ী। চিকিৎসক দেখতে পেল এবারও মৃত্যুদেবী মাথার কাছে দাঁড়িয়ে। ছেলের মনে রাজার উপঢৌকনের লোভ আবারও জাঁকিয়ে বসলো। এবারও সে রাজকুমারীকে সুস্থ করে দিবার কথা দিল।
-রাজকুমারী সুস্থ হয়ে উঠবে।
একি বলছে ছেলে! হায়, ছেলে এবারও লোভের কাছে পরাজিত হলো! রক্তচু মেলে তাকালেন মৃত্যুদেবী। কিন্তু এবারও কৃপা করলেন ছেলের উপর। রাজকন্যা সুস্থ হয়ে উঠলো। উপঢৌকন নিয়ে মহা আনন্দে বাড়ী ফিরলো ছেলে। কিন্তু ঘরে কে দাঁড়িয়ে? স্বয়ং মৃত্যুদেবী!
-পুত্র, তুমি তোমার মায়ের কথা মাননি।
এবার তোমার শাস্তি পাবার পালা। আমি তোমাকেই মারতে এসেছি...
ছেলেতো লোভীই নয়, চালাকও বটে!
-মা, আমার ইচ্ছা হলো মৃত্যুর আগে নিজের কফিন তৈরী করে তার মধ্যে শুয়ে মরব আমি।
-ঠিক আছে, তাই হোক।
একটা বেশ মজবুত করে কফিন বানালো ছেলে।
-মা, কফিনে কি করে শুতে হয় তাতো জানি না।
যদি দেখিয়ে দেন।
মৃত্যুদেবী বুঝলো না ছেলের মনের খবর। যেই না শুয়ে দেখাতে গেল ছেলেকে কফিনের ডালাটা দড়াম করে আটকে দিল ছেলে। ভাল করে বন্ধ করে ফেলে দিল পাহাড়ের পাদদেশে।
এরপর কেটে গেছে সাতবছর।
দেশে চিকিৎসকের জয়-জয়কার। কাউকে মৃত্যু স্পর্শ করে না।
এদিকে পাহাড়ের ধারে রোজ খেলে একদল শিশু। তারা একদিন শুনতে পেল কেউ গান গাইছে। কে গান গাইছে! কৌতুহলী ছেলেমেয়েরদল আবিষ্কার করলো সেই কফিন।
যেই না খুললো, অমনি বের হয়ে এল মৃত্যুদেবী।
-আমি প্রথমে মারবো চিকিৎসককে...
এদিকে চিকিৎসক রোজকার মত কাজ শেষে বাড়ী ফিরছে। বড্ড খুশী। আজ বেশ রোজগার হলো। গান গাইতে গাইতে বাড়ী ফিরছে।
পথে এক ভিুক বসা।
-আমাকে ভিক্ষা দিন...
হাসতে হাসতে মজা করতে লাগলো ছেলে।
-আমার জীবন দিলাম ভিক্ষা...
-আমেন।
আর যায় কোথায়! কোথায় ভিখারী, সামনে দাঁড়িয়ে মৃত্যুদেবী। মরণ হলো ছেলের।
চিকিৎসকের বাড়ীতে হলো আন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ভোজ উৎসব। সে ভোজসভায় ধর্মমা মৃত্যুদেবীও ছিলো।
*ব্যাপ্টিজম: মুসলমানদের যেমন ছেলেদের সুন্নতে খাৎনা হয়, হিন্দুদের পৈতা পড়ানো, তেমনি খ্রীষ্টানদেরও ব্যাপ্টিজম করা হয়। যার মানে খ্রীষ্ট ধর্মে শরীক করা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।