আকাশ ছুঁব...
লিথুয়ানিয়ার লোককথা-৩
গুঁইসাপ আর কোকিলের গল্প
রূপান্তর: অদ্বিতীয়া সিমু
অনেক অনেক আগের কথা। তখন এখানে বাস করত এক লোভী মহিলা। তার ছিল সুন্দর এক মেয়ে। যে দেখত সেই এই মেয়েকে আরেক নজর দেখার জন্য পাগল হয়ে থাকত। মহিলারও মেয়ের রূপ নিয়ে গর্বের শেষ নেই।
মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে। যার তার সংগেতো এমন রূপসী মেয়ের বিয়ে দেয়া যায় না! কি করা? আয়োজন করা হলো এক বরসভার। বানানো হলো এক জোড়া জুতো। জুতো কি জন্য? যে বলতে পারবে এ জুতো জোড়া কি দিয়ে তৈরী তার সাথেই বিয়ে হবে মেয়ের।
সবাই তৈরী।
এলো জুতো জোড়া। সবার চোখ ঘুরছে জুতোজোড়ার উপর। কি দিয়ে তৈরী? কিসের চামড়া দিয়ে তৈরী? কেউ পারছে না। কি ঘটবে! তবে কি রূপসী মেয়ের যোগ্য কেউ নেই! হঠাৎ মেঝের ফাঁক গলে উঠে এল কার যেন মাথা। কার? -গুঁইসাপ!
-এ জুতো জোড়া রক্তখেঁকো মক্ষিকার চামড়ায় তৈরী.......
হায়! হায়! ঘটল কি।
শেষপর্যন্ত এক গুঁইসাপ দিল উত্তর! কি আর করা। এই গুঁইসাপের সংগেই মেয়ের বিয়ে দিতে হলো। মা কাঁদলো ফলাফল দেখে, বাবা কাঁদলো মায়ের লোভের ফল দেখে। বাবাতো মনেমনে পণ করে রাখলো যে করেই হোক মারবে গুঁইসাপকে। মেয়েকে বলেও দিল সে কথা।
যাই হোক চোখের জলে বিদায় নিল মেয়ে স্বামীর ঘরের উদ্দেশ্যে। গুঁইসাপ বউকে নিয়ে উঠলো সাগরের ধারে তার প্রাসাদে। এরপর?
এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। তিন তিনটে বাচ্চায় ভরে উঠেছে গুঁইসাপের প্রাসাদ। সুখের সংসার ওদের।
হঠাৎ করেই মেয়ের মনে পড়লো মা-বাবাকে। কতদিন দেখা নেই তাদের সাথে! বিয়ের পর সেই যে গুঁইসাপের হাত ধরে আসা, তারপর আর যোগাযোগ নেই।
-হ্যাঁগো, কদিন মার বাড়ি বেড়িয়ে আসবখন। কতদিন বাবা-মাকে দেখি না.......
গুঁইসাপ এ কথা শুনে গম্ভীড় হয়ে গেল। বিয়ের সময় শ্বশুড়ের আচরনই বলে দিয়েছে অনেককিছু।
কিন্তু তারাতো বউয়ের বাবা-মা। তাই বলে তাকেতো দেখা করার অধিকার থেকে সে বঞ্চিত করতে পারে না।
-তুমি তোমার বাবা-মার কাছে যাও তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু তুমি অনেকদিন প্রাসাদের বাইরে যাওনি...। তাছাড়া জুতো পড়ার অভ্যাসও তুমি ভুলে গেছ...
-তুমি চিন্তা করো না... আমি শিখে নেবো...
তারপর মা-বাবার সংগে দেখা করার জন্য মেয়ে আবার জুতো পড়ার অভ্যাস করলো।
এখন মেয়ে লোহার জুতো পড়তে পারে। এবার গুঁইসাপের অনুমতি মিললো। তিন ছেলেমেয়েসহ যাত্রা করলো মা-বাবার উদ্দেশ্যে। যতদিন না আসবে গুঁইসাপ প্রাসাদ ছেড়ে সাগরে লুকিয়ে থাকবে। গুঁইসাপ বলে দিল ফিরে আসার পর কি করে আবার তাদের দেখা হবে।
-যখন তুমি ফিরে আসবে, তখন পাড়ে এস বলবে, “গুঁইসাপ, তুমি যদি বেঁচে থাক সাগরে দুধের ঘূর্ণি ওঠাও। আর যদি বেঁচে না থাক, তবে রক্তের ঘূর্ণি ওঠাও। ” আমি তোমার এই আওয়াজ শুনামাত্রই ছুটে আসব তোমার কাছে...
তিন ছেলেমেয়েসহ মা-বাবার বাড়ি পৌঁছল মেয়ে। খুশীতে ভরে উঠলো ঘর। তিন নাতি-নাতনী পেয়ে বড় খুশী মা-বাবা।
কিন্তু কোথায় যেন অখুশীর ছাপ! দিন কাটছে আনন্দেই। মেয়ে এবার চাচ্ছে মা-বাবা তাকে বিদায় দিক। কিন্তু তারা বিদায়ের নাম মুখেই আনছে না! বাহানা করে ধরে রাখছে মেয়েকে। মেয়ে অস্থির হযে উঠেছে। মা-বাবাও চুপেচুপে ফিকির করছে।
লোক লাগিয়েছে। খবর এল গুঁইসাপ প্রাসাদে নেই। তবে কোথায়? কে জানে! চুপেচুপে বড় নাতিকে শুধালো নানা-নানী। কিছুই বললো না নাতি। মেঝ নাতনীও কিছু বললো না।
ছোটটা খুব পটপটি। নানা-নানী ছোটকেই শুধালো এবার। ছোটটি টের পেল না বিপদের কথা। বলে দিল বাবা-মায়ের গোপন কথা। আর যায় কোথায়! মেয়েকে বললো কদিনপর যেতে।
এদিকে ঘটালো ভয়ংকর ঘটনা!
মেয়ে তখন স্বামীরঘরে যাবার শেষপ্রস্তুতি নিচ্ছে। মা-বাবা চুপিচুপি পৌঁছলো সাগরপাড়ে। মা মেয়ের গলা নকল করে বললো, “গুঁইসাপ, তুমি যদি বেঁচে থাক সাগরে দুধের ঘূর্ণি ওঠাও। আর যদি বেঁচে না থাক, তবে রক্তের ঘূর্ণি ওঠাও। ”
গুঁইসাপতো মহাখুশী।
ফিরে এসেছে বউ, ফিরে এসেছে কলিজার ধন ছেলেমেয়ে। দুধের ঘূর্ণি উঠিয়ে মাথা তুললো সাগরপাড়ে। আর যাবে কোথায়! সংগেসংগে বাবা ছুড়লো গুলি। রক্তের ঝড় উঠে হারিয়ে গেল গুঁইসাপ। আবার চুপিচুপিই ঘরে ফিরে গেল মা-বাবা।
এবার বিদাযের পালা মেয়ের। চোখের জলে তিন সন্তানসহ স্বামীরঘরে যাত্রা করলো ময়ে। জানে না কি অনর্থ ঘটে গেছে! পৌঁছল সাগরপাড়ে।
- গুঁইসাপ, তুমি যদি বেঁচে থাক সাগরে দুধের ঘূর্ণি ওঠাও। আর যদি বেঁচে না থাক, তবে রক্তের ঘূর্ণি ওঠাও.....
রক্তের ঘূর্ণি উঠে এল! একি! পাগলের মত বারবার চিৎকার করতে লাগলো মেয়ে।
বারবারই রক্তের ঘূর্ণি উঠছে! মনে পড়লো বাবার পণের কথা। বড় ছেলেকে শুধাল মেয়ে, “তুই বলেছিস?” ; “না, মা। ” ; মেঝ মেয়েকে শুধাল; “না, মা। ”। ছোট মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অপরাধীর মত।
মেয়ে বুঝল কি ঘটেছে। ক্ষোভে দুঃখে পাগলপ্রায় মেয়ে এবার চিৎকার করে উঠলো...
-আজ থেকে বড় হবে ওক গাছ, তোমাকে সবাই শ্রদ্ধা দিবে। মেঝ হবে হলুদ ফুলওয়ালা লাইম গাছ, তোমার ফুল আর শাখাতে সাজবে বালিকারা। আর তুমি... আমার ছোট্ট বাঁচাল শিশু, তুমি হবে বাঁধা সৃষ্টিকারী পাথর, ভেঙে ফেলবে দুইচাকার ঘোড়াগাড়ির শলাকাও...
দুঃখে কাঁদছে মেয়ে।
-আর আমি ... আমি হব কোকিল।
যে ডেকে ডেকে খূঁজে ফিরবে তার গুঁইসাপকে.......
বলতে বলতেই কুহু কুহু রবে উড়ে গেল কালো কোকিল, পড়ে রইলো ওক গাছ, লাইম গাছ, আর পাথর। আজো কোকিল করুণ স্বরে ডেকে ফেরে তার গুঁইসাপকে, ..... কুহু ..... কুহু .....
[অনুবাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন....]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।